খাদ্যশস্য
ডক্টর আবেদ চৌধুরীর পঞ্চব্রীহি ধান: উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা
বৃষ্টির মৌসুমে বন্যা সমস্যার অন্যতম প্রধান শিকার হয় দেশের শস্যখেতগুলো। বিশেষ করে ধানখেতের বিনষ্ট মোটা দাগে দেশকে খাদ্য ঘাটতি ও কৃষিভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। প্রতি বছর প্রধান খাদ্যশস্যের ওপর এই চাপ প্রশমনে এক যুগান্তকারী উপায় হতে পারে পঞ্চব্রীহি ধান। অভিনব এই ধানের উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রেলিয়া নিবাসী বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদ ডক্টর আবেদ চৌধুরী। ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ধানের এই জাতটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠতে সক্ষম। জাতটির এক রোপণেই ৫ বার ফলন পাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
চলুন, পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পঞ্চব্রীহি ধান: এক রোপণে ৫ ফলন
‘পঞ্চ’ মানে ৫, আর ‘ব্রীহি’ অর্থ ধান। একবার রোপণে একই শস্য থেকে বছরের ভিন্ন মৌসুমে মোট ৫ বার ফলনের কারণে ধানের নাম হয়েছে পঞ্চব্রীহি। ধান উৎপাদনের এই নতুন পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন অস্ট্রেলিয়া নিবাসী বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদ ডক্টর আবেদ চৌধুরী। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের এক সেমিনারের মাধ্যমে তিনি এই উদ্ভাবনের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তার এই পদ্ধতিতে প্রথমবার ফসল তোলার পরে ধান গাছ সম্পূর্ণ না কেটে আরও চারবার ফলন পাওয়া যায়।
পঞ্চব্রীহি ধানের সুবিধা
ধান গাছের সাধারণত একবার ফলন পর্যন্ত আয়ু থাকে। কিন্তু এই ধান প্রথমবার ফসল তোলার পর ৪ বার পর্যন্ত বাড়তে পারে। যে কোনো ঋতুতে বৃদ্ধি পাওয়া এই শস্য প্রায় সারা বছর ধান দিতে পারায় এটি বর্ষজীবীর কাতারেও পড়ে।
আরও পড়ুন: প্রধান খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ: কৃষিমন্ত্রী
সাধারণ ধানের ক্ষেত্রে বোরো কাঁটার পরে আউশ রোপণ করা হয়। তারপর আউশের মৌসুমে ফসল তুলে ধরা হয় আমন। এভাবে প্রতিবার চাষের সময় জমি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো দূষিত গ্যাস নিঃসরণ হয়। কিন্তু পঞ্চব্রীহির ক্ষেত্রে এক চাষেই ৫ বার ফলন পাওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা ৮০ ভাগ হ্রাস পায়।
চাষাবাদ অন্যান্য ধানগুলোর মতো সহজ হওয়ায় সামগ্রিক খরচও অনেকটা কম হয়।
উদ্ভাবনের নেপথ্যের গবেষণা
পূর্বে ডক্টর আবেদ চৌধুরী তার পিএইচডি গবেষণাকালে ‘রেকডি’ নামক একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন। এই উদ্ভাবন ৮০’র দশকে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছিল। তার উদ্ভাবিত ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থার অধীনে একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
ধান গবেষণার জন্য ডক্টর আবেদ চৌধুরী বেঁছে নিয়েছিলেন নিজের জন্মস্থান সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা। সেখানকার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ধান নিয়ে গবেষণা করেন। শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে। এগুলোর মধ্যে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি ছিল ফিলিপাইন ও চীন সহ বিভিন্ন দেশের কয়েকটি ধান।
তার গবেষণার সহযোগী ছিল গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত ও নিরক্ষর কৃষকগণ, যারা মাঠপর্যায়ের গবেষণায় পুরোটা সময় পরিশ্রম করেছে।
আরও পড়ুন: পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন: বাকৃবি অধ্যাপক
কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধানের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে হাইব্রিড ঘটানো হয়। অতঃপর যে জাতগুলোর ধান পেঁকে যাওয়ার পর কাটা হলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলোকে আলাদা করা হয়। এভাবে বেশ সুক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয় মোট ১২টি জাত।
এরপর টানা ৩ বছর চলে চাষাবাদ। এখানে দেখা যায় জাতগুলোর প্রত্যেকটিই দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের চেষ্টা করা হলে সেটিও সফলতা পায়। পরিশেষে ৪টি জাত বাদে বাকি সবগুলো চতুর্থবার ফলন দেওয়া পর্যন্ত টিকে থাকে।
অতঃপর গবেষণালব্ধ এই ৪টি জাতের ওপর আলাদাভাবে মনোন্নিবেশ করে আরও সুক্ষ্মভাবে গবেষণা শুরু হয়। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে ২ বিঘা পরিমাণ জমিতে রোপণ করা হয় বোরো ধানের এই ৪টি জাত। উপযুক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগের পাশাপাশি নেওয়া হয় সঠিক সেচ ও পরিচর্যা। এর ফলে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল চলে আসে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার উচ্চতার গাছে। পরে পরিকল্পনামাফিক মাটি থেকে ঠিক ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ধান কেটে সংগ্রহ করা হয়।
সে বছর মে মাসের প্রথম দিকে প্রথম পর্যায়ে কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয় ৪ টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন পর পর প্রতি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ফলন আসে ২ থেকে ৩ টন। সব মিলিয়ে জাতগুলো থেকে হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফসল পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
পঞ্চব্রীহি ধান চাষের পদ্ধতি
বছরের যে কোনো সময়ে রোপণ করা যায় এ ধান। চারাগুলো রোপণ করতে হয় পরস্পরের থেকে ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে। এতে করে প্রত্যেকটি গাছ মাটি থেকে সমান শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।
বছরের প্রথমে বোরোর মৌসুমে এ ধান পাঁকতে ১১০ দিন সময় নেয়। অন্যান্য ধানের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথমবার ধান কাটার পরে জমিকে আবার প্রথম থেকে প্রস্তুত করতে হয়। কয়েক সপ্তাহ এমনকি গোটা মাস খালি রাখার পর জমিতে আউশ বা আমন লাগানো যায়। কিন্তু এখানে ঐ বোরোর গাছ থেকেই ৪৫ দিন অন্তর অন্তর ২ বার আউশ এবং সবশেষে ২ বার আমন ধান পাওয়া যায়। প্রথমবারের তুলনায় পরের ফলনগুলোতে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ৫ বারের ফলন মিলিয়ে মোট উৎপাদন প্রায় ৫ গুণ বেশি হয়।
ধানের বীজ সংগ্রহের সময় পৃথক কোনো প্রক্রিয়া নেই। অন্যান্য ধানের মতো কৃষকরা নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। অন্য ধানের মতো একই ভাবে চারা তোলার আগে বীজতলায় রোপণ করতে হয়।
নির্দিষ্ট পরিমাপে ধান কেটে নেওয়ার পর মোড়া অংশগুলোতে থাকা লতাপাতা ও ঘাস ছেটে সার দিতে হয়। পোকামাকড় ধরলে অন্য ধানের মতোই সামান্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। খুব শক্ত ধান পঞ্চব্রীহির বেড়ে ওঠার জন্য পরিচর্যার এটুকুই যথেষ্ট। কেননা ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা এই গাছ নষ্ট করতে পারে না।
আরও পড়ুন: জিনোম সেন্টারকে কাজে লাগিয়ে পাটের উৎপাদন বাড়াতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের সম্ভাবনা
হেক্টর প্রতি ২০ টন উৎপাদন করা সম্ভব এই নতুন ধান। কিন্তু তার জন্য দেশের প্রতিটি কৃষকের জন্য এই ধান সহজলভ্য হতে হবে।
ডক্টর আবেদ চৌধুরীর মতে, এ নতুন ধান চাষ পদ্ধতি সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে গেলে আগামী ৫০ বছর দেশবাসীর খাদ্যের যোগান নিয়ে আর চিন্তার অবকাশ থাকবে না। এই চাষ একদিকে যেমন সময় বাঁচায়, অন্যদিকে অর্থের দিক থেকেও সাশ্রয়ী।
পঞ্চব্রীহি নিয়ে এখনও গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। এই জাত থেকে শুধু ৫ বার নয়, ভবিষ্যতে ১৫ বা ২০ বারও ধান পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ডক্টর আবেদ।
ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে বীজগুলো বিনামূল্যে দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. আবেদ। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকগণ নতুন এই চাষাবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবেন।
শেষাংশ
প্রতি বছর বন্যা প্রবণ দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্যসংকটের একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে পঞ্চব্রীহি ধান। একবার রোপণ করে ৫ বার ফলনে কমে যাবে কৃষকদের সময়, শ্রম ও খরচ। মাঠ পর্যায়ে ঘন ঘন চাষাবাদের পাশাপাশি উত্তরোত্তর গবেষণা নতুন ধান উৎপাদন পদ্ধতিটিকে আরও বিকশিত করে তুলতে পারে। এর নিরিখে কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করতে পারে ডক্টর আবেদের সৃষ্টি করা মাইলফলক।
আরও পড়ুন: বছরে চার ফসলের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে ব্রি৯৮ আউশ ধান: কৃষিমন্ত্রী
৫ মাস আগে
খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা ৩৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশের খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা ৩৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে।
তিনি বলেন, ২১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা আছে। বর্তমানে খাদ্যশস্য ২০ লাখের ওপর মজুদ আছে।
বাড়তি খাদ্যশস্য রাখার জায়গা হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন: খাদ্যমন্ত্রী
রবিবার (২ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর এলাকায় এক হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নবনির্মিত এলএসডি’র উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ৮টি আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এতে করে আরও সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি সারাদেশে ৫ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতার আরও ২০০টি পেডি সাইলো নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৩০টি অনুমোদন হয়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, পেডি সাইলো নির্মিত হলে প্রান্তিক কৃষক সহজেই ধান সরবরাহ করতে পারবেন। কৃষক ভেজা ধান নিয়ে এলেও তা রাখার সুযোগ থাকছে। ভেজা ধান রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা শুকিয়ে যাবে।
ভেজার অভিযোগে আর কোনো কৃষকের ধান ফেরত নিয়ে যেতে হবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঈদের আগে পর্যন্ত ৭ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ধান-চাল ক্রয়ের অভিযান সন্তোষজনক।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে টিসিবি ডিলারদের মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারের মাঝে ৫ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হবে। এতে করে বছরে ১ কোটি পরিবারের জন্য ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি ওএমএস কার্যক্রম চলবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ৫ তারিখে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় একটি অর্জন হতে যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন, বিপণন, সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি আইন সংসদে পাস হবে। এই আইন পাস হলে আশা করা যাচ্ছে সবার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আইন হবে এবং খাদ্য শস্য বিপনন, সংরক্ষণ ও ছাটাই বিষয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন: চাল আমদানিতে সরকারকে এক ডলারও ব্যয় করতে হবে না: খাদ্যমন্ত্রী
সরকার কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চায়: খাদ্যমন্ত্রী
১ বছর আগে
খাদ্যশস্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার খাদ্যশস্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চলতি আমন মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাল ফলন ও বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় খুশি কৃষকেরা।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রাম এলাকায় ধানের মাঠ ও পাকা ধান কাটা মাড়াই পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
এসময় চাষিদের সঙ্গে কথাও বলেন এবং চলতি মৌসুমের ফসল, দরদাম ছাড়াও অন্যান্য চাষাবাদ ও গ্রামীণ অর্থনীতির খোঁজখবর নেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আমন ধান ছাড়াও সামনে ইরি মৌসুম আসছে। তাই দেশে খাদ্য ঘাটতি বা দুর্ভিক্ষের কোন সম্ভাবনা নেই।
এজন্য আতঙ্কিত হয়ে অবৈধভাবে মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করতে আহবান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিশ্বে খাদ্য শস্যের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে: খাদ্যমন্ত্রী
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মাঠে ৪৯ জাতের একটি ধান দেখলাম। এটি একটি চিকন জাতের ধান।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, এই ধান তারা বিঘাতে ২৪ মণ হারে পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এবছর সরকার কৃষককে নায্য মূল্য দিতে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ করবে। আমরা আশা করছি, কেউ সিন্ডিকেট করে কোন ভাবেই কৃষককে ঠকাতে পারবে না। এছাড়া বাজার মনিটরিং ও সংগ্রহ কার্যক্রম তদারকি করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মজুত পরিস্থিতি ভালো রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুদ আছে। তারপরও কৃষকেরা যেন ধানের ন্যায্য মূল্য পায়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ভোক্তারা যেন নায্যা মূল্যে চাল পায় এজন্য প্রয়োজন হলে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় আরও বাড়ানো হতে পারে জানান মন্ত্রী।
ফসলের মাঠ পরিদর্শনের সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব শহিদুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আব্দুল খালেকসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: চকচকে চাল বর্জন করে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চাল খাওয়ার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
সরকার ৩ লাখ টন ধান ও ৫ লাখ টন চাল কিনবে: খাদ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে
বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্যশস্য সরবরাহের আশ্বাস কানাডার
সংকটকালে বাংলাদেশকে কানাডা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাদ্যশস্য সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ কানাডা থেকে কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পটাশিয়াম সার আমদানি করে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'পটাশিয়াম মূলত তিনটি দেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরবরাহ হয়। বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা। আমরা কানাডা থেকেও আনি, তাদের সঙ্গে সরকার টু সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি বছরই তারা একটা ভালো অ্যামাউন্ট আমাদের সরবরাহ করে। ইতোমধ্যে বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, তাদের কাছ থেকে আমরা পটাশিয়াম আনতে পারছি না। রাশিয়া থেকে আনতাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেটাও বন্ধ রয়েছে। এই মুহূর্তে সবাই কানাডার উপরে নির্ভর করছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'উনারা কথা দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত এটা ব্যক্তিগতভাবে দেখবেন যাতে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম কানাডা থেকে পেতে পারি।'
আরও পড়ুন: হাওরের ফসলের ঝুঁকি কমাতে কাজ চলছে: কৃষিমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলাস কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এসময় বেলারুশ ও রাশিয়া থেকে আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কানাডাকে পটাশিয়াম সার সরবরাহ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানানা কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
মন্ত্রী বলেন, ‘কানাডা থেকে আমরা অনেক কৃষি পণ্য আমদানি করে থাকি, যে সকল পণ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। কিংবা ভালোভাবে আমরা উৎপাদন করতে পারিনা। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, সয়াবিন, অন্যান্য তেল ও খাদ্যপণ্য আমরা কানাডা থেকে আনি।
তিনি আরও বলেন, করোনা ও সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে একটা বিরাট সংকটের আশঙ্কা করছে সবাই। ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে একটা ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে।
আরও পড়ুন: দেশে খাদ্য সংকটের বিএনপির আশা পূরণ হবে না: কৃষিমন্ত্রী
২ বছর আগে
খাদ্যশস্য সংগ্রহে কৃষক যেন হয়রানির শিকার না হয়: খাদ্যমন্ত্রী
চলতি বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে নতুন ফসল ঘরে তুলতে পারলে খাদ্যের সমস্যা হবে না জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, খাদ্যশস্য সংগ্রহে ধানকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং কৃষক যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয়।
মঙ্গলবার মন্ত্রীর মিন্টো রোডস্থ সরকারি বাসভবন থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সাথে 'অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভা'য় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন:ধান-চালের দর বেঁধে দেয়ার সুফল পাচ্ছে সবাই: খাদ্যমন্ত্রী
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, কৃষকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে; তাদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য ধান-চাল কেনার ক্ষেত্রে ধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এবারের বোরো মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এবং ১১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হবে। যা করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না: খাদ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো আমাদের দেশও একটা মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে; খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলেমিশে, ভালো আচরণ করার মাধ্যমে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিত্য-নতুন উদ্যোগ নিয়ে চলমান বোরো সংগ্রহ শতভাগ সফল করতে হবে।
‘বর্তমান সময়ে করোনার সঙ্গে আমরা যেমন যুদ্ধ করছি; তেমনি করোনা পরবর্তী খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার জন্যেও আমাদেরকে এখন থেকেই যুদ্ধ করতে হবে,’ বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করতে হবে: খাদ্যমন্ত্রী
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা করোনা মোকাবিলা করে এই সংগ্রহ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
খাদ্যশস্য সংগ্রহে যাতে কোন অনিয়ম না হয় সেজন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তীক্ষ দৃষ্টি রাখতে বলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এছাড়া সংগ্রহ কার্যক্রমে সকলকে সহযোগিতা ও করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, মুখে মাস্ক পরার আহ্বান জানান তিনি।
কোন কৃষক যেন খাদ্যগুদামে ধান দিতে এসে ফেরত না যায় এবং কোনভাবেই যেন কৃষক হয়রানি না হয় সেজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সতর্ক করেন খাদ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি গুদামের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খামালের উচ্চতা বৃদ্ধি করাসহ কিছু দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থেকে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, কোনোভাবেই পুরান চাল নেয়া যাবেনা। চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে সংগ্রহকৃত চাল এবারের বোরো ধানের চাল। পাশাপাশি বস্তার গায়ে স্টেনসিল ব্যবহার করার নির্দেশ দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি জেলার করোনা মোকাবেলা পরিস্থিতি, চলতি বোরো ধান কাটা-মাড়াই, সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মন্ত্রী।
ভিডিও কনফারেন্সে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলার জেলা প্রশাসকরা, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকগণ ও মিল মালিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
৩ বছর আগে
চুক্তিভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে বিদেশে বড় সুযোগ নেয়ার দিকে নজর বাংলাদেশের
বাংলাদেশ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে চুক্তিভিত্তিক কৃষির সুবিধা গ্রহণ করে বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহ দেয়ার জন্য সমন্বিত উপায়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে চায়।
৩ বছর আগে