জলবায়ু
ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট: খাদ্য, জ্বালানি, সারের ঘাটতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহ্বান
সদ্য অনুষ্ঠিত ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের ঘাটতির ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
তারা সমসাময়িক বাস্তবতাকে তুলে ধরে এমন পুনর্বক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপাক্ষিকতারও আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাদের সম্মিলিত জবাব দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অধিবেশনে, মন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক ভৌগলিক পরিবেশের ক্রমবর্ধমান বিভক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের জন্য কীভাবে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যায় সে বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেন।
ভারত ১২ থেকে ১৩ জানুয়ারি এই দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক। সামিটটি ভার্চুয়াল ফর্ম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এতে মোট ১০টি সেশন ছিল।
এতে বাংলাদেশসহ গ্লোবাল সাউথের ১২৫টি দেশের নেতা ও মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র গঠনমূলক পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ: মোমেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতাদের নিয়ে ১২ জানুয়ারির উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
এর পরে আটটি মন্ত্রী পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলো উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগগুলোকে সমাধান করার জন্য নিবেদিত হয়েছিল।
১৩ জানুয়ারি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত নেতাদের একটি সমাপনী অধিবেশনের মাধ্যমে শীর্ষ সম্মেলনটি সমাপ্ত হয়।
জ্বালানি মন্ত্রীদের অধিবেশনে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার মধ্যে জ্বালানিতে অ্যাক্সেস, শক্তির উৎসের বৈচিত্র্যের মাধ্যমে জ্বালানির সাশ্রয়ীতা নিশ্চিত করা, নবায়নযোগ্য এবং বিকল্প জ্বালানি উদ্ভাবনের জন্য সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগাভাগি করা এবং জৈব জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ছিল মিথস্ক্রিয়াটির মূল বিষয়।
বাণিজ্য/বাণিজ্য মন্ত্রীদের অধিবেশনে, মন্ত্রীরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার কৌশলগুলো তুলে ধরেন; যোগাযোগ এবং বাণিজ্য সময়োপযোগী করা; জটিল প্রযুক্তি এবং সংস্থানগুলোতে ব্যবহার নিশ্চিত করা; তৃণমূল উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং সর্বোত্তম অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়া; এবং সরবরাহ চেইনের বৈচিত্র্য আনা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় কোস্ট গার্ড জাহাজ চট্টগ্রাম পৌঁছেছে
মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন যে মহামারি পরবর্তী একটি টেকসই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়ন, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক বাজারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর নির্ভরশীল হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের অধিবেশনে, অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাল পাবলিক পণ্যের বিকাশ, ঐতিহ্যগত ওষুধের প্রচার, জনসাধারণের সক্ষমতা তৈরি এবং আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক বিকাশের উপায় ও উপায় এবং জ্ঞান ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন হিসাবে মন্ত্রীরা কোভিড মহামারি চলাকালীন ভারতের ভ্যাকসিন মৈত্রী উদ্যোগের বিশেষভাবে প্রশংসা করেছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীদের অধিবেশনে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত করার ধারণাগুলো তুলে ধরেন, যা ভবিষ্যতে দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি করতে পারে।
মন্ত্রীরা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষায় সমতা ও গুণমান প্রদানের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো বিনিময় করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছেন।
ভারত তার ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি ভাগ করে নিয়েছে যা এক্সেস, ইক্যুইটি, কোয়ালিটি, ক্রয়ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতার মূল স্তম্ভের ওপর তৈরি করা হয়েছে।
ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির জন্য ধারনা ভাগ করে নেয়ার সেশনে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর তার জি২০ প্রেসিডেন্সির জন্য ভারতের মূল অগ্রাধিকারগুলো ভাগ করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত ভয়েস অব-এ অংশীদার দেশগুলো থেকে উৎপন্ন মূল্যবান ইনপুটগুলো নিশ্চিত করতে কাজ করবে। গ্লোবাল সাউথ সামিট জি২০ আলোচনা সহ বিশ্বব্যাপী যথাযথ স্বীকৃতি পায়।
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ: মোমেন
অংশগ্রহণকারী দেশগুলো প্রশংসার সঙ্গে স্বীকৃত যে শীর্ষ সম্মেলন ফলপ্রসূ কথোপকথন তৈরি করেছে এবং তাদের অগ্রাধিকার এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে একটি কর্মমুখী সূচির মাধ্যমে একটি নতুন পথ নির্ধারণ করেছে। তারা সূচির এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধানের জন্য অনুসন্ধানের মধ্যে তার বৃহত্তম স্টেকহোল্ডার, গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অর্থমন্ত্রীদের অধিবেশনে, মন্ত্রীরা গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন চাহিদার অর্থায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জন, আর্থিকখাতে ডিজিটাল পাবলিক পণ্যের বাস্তবায়ন এবং ফলাফল-ভিত্তিক এবং আর্থিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অংশীদারিত্বের বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
পরিবেশ মন্ত্রীদের অধিবেশনে স্থায়িত্বের সঙ্গে বৃদ্ধির ভারসাম্য রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণে সর্বোত্তম অনুশীলনের ভাগাভাগি করা এবং ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর চালু করা পরিবেশের জন্য লাইফ বা জীবনধারার গুরুত্বের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল।
মন্ত্রীরা ইক্যুইটি অ্যান্ড কমন বাট ডিফারেনসিয়েটেড রেসপনসিবিলিটিস অ্যান্ড রিস্পেক্টিভ ক্যাপাবিলিটিস (সিবিডিআর-আরসি) নীতি অনুসারে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় জলবায়ু অর্থায়ন এবং ক্ষতি ও ক্ষতির তহবিল সরবরাহের জন্য দ্রুত জলবায়ু ব্যবস্থা এবং সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-টোকিও ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ ঘনিষ্ঠ ও গভীর সম্পর্ক উন্নীত করার সুযোগ দেখছে
২০২৫ সালের মধ্যে জলবায়ু অর্থায়ন দ্বিগুণ চায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো
বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো দাবি করেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ জলবায়ু অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জাতিসংঘের চলমান জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের নতুন এই রোডম্যাপ দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
মিশরের শারম আল শেখ শহরে ৬ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান কপ২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে শনিবার স্থানীয় সময় রাত পর্যন্ত চলে কপ সম্মেলন।
জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জলবায়ু বিশেজ্ঞদের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) কপ সম্মেলন সাপ্তাহিক ছুটি।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির গবেষণা: হাওরের ইকোসিস্টেম সার্ভিসে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ
চলমান জলবায়ু সম্মলেনে বাংলাদেশ থেকে আগত জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ইউএনবিকে জানিয়েছন, বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার জন্য নতুন রোডম্যাপ দাবি করছে।
তারা এই দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বলে, আগে অর্থায়নের যে পরিমাণ হিসাব করা হয়ছিল, বর্তমান বাস্তবতার আলোকে তা অনেক কম। ফলে বর্তমান বাস্তবতায় ২০১৯ সালে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, ২০২৫ সালে তা দ্বিগুণ করতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য জিয়াউল হক ইউএনবিকে বলেন, উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন বিষয়ে একটি রোডম্যাপ করার দাবি করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর কোন বছর কোন খাতে অর্থায়নের জন্য কী পরিমাণ অর্থায়ন করবে তা ওই রোডম্যাপে উল্লেখ থাকবে।
বিশেষ করে, জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে অর্থ প্রদানে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই আলোচনায় বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর যথাক্রমে চার ট্রিলিয়ন ও সাত ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যা বর্তমান অর্থায়নের চেয়ে বেশি।
তাই অর্থায়নের এই ফারাক দূর করার জন্য সব পক্ষের জোরালো আলোচনা দরকার।
জিয়াউল হক বলেন, বর্তমানে শারম আল শেখে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোকে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে।
প্যারিস চুক্তিতে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই গোলের লক্ষ্য কি, গ্লোবাল গোল বলতে কী বুঝায়, কিভাবে এই গোল বাস্তবায়ন হবে তা বলা নেই।
এবারের সম্মেলনে সেই গোল ঠিক করার কাজ চলেছে। যা আগামী বছর আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অভিযোজন তহবিলে প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর জো বাইডেনের এই ঘোষণা গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ: ইউএবনবিকে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য মির্জা শওকত আলী ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এবার জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে সোচ্চার। বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু তহবিলে কোন অর্থ প্রদান করছে না। মহামারি করোনার কারণে দ্বিপক্ষীয় অর্থায়নও সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। বিশেষ করে গত জলবায়ু সম্মেলনে অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও উন্নত দেশগুলো কোন অর্থই প্রদান করেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন পেতে আলোচনা চলছে এখনও।
তিনি আরও বলেন, আলোচনার শুরুতেই নেগোসিয়েশনের টেবিলে অর্থ নিয়ে উন্নত দেশগুলো এবারও অর্থ প্রদান না করার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করছে। তারা এবার অর্থ না দেয়ার জন্য নতুন কৌশল হিসাবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশিক মন্দাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
উন্নত দেশগুলো বলছে, বৈশ্বিক মন্দার কারণে তাদের কাছে কোন অর্থ নেই। ফলে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য আগামী বছর কোন অর্থ দিতে পারবে না।
জলবাযুর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে উন্নত দেশগুলো বলছে, বৈশ্বিক মন্দার কারণে উন্নত দেশগুলোই এখন সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাদের কাছে কোন অর্থ নেই। ফলে মন্দা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোন অর্থ প্রদান করা সম্ভব নয়।
তবে উন্নত দেশগুলোর এই বার্তায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হতাশ নয়।
এটি যে তাদের নতুন কৌশল তা তারা বুঝতে পারছে। তাছাড়া খোদ আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাব জলবায়ু আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা হিসাবে অর্থায়ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু করা হয়েছে।
বাংলাদেশে থেকে আগত এক পর্যবেক্ষক আমিনুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, বাইডেনের বক্তব্য প্যারিস চুক্তির সঙ্গে মেলে না।
যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ, বড় কার্বন দুষণকারী। তাদের উচিত উন্নত দেশগুলো যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদান করা এবং অন্য দেশগুলোকেও বলা তাদের অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদানের জন্য।
বাইডেন এডহক ভিত্তিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজন ৬০০ বিলিয়ন ডলার।
ওই অর্থের অংশ দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
আরও পড়ুন: কপ-২৭ এর আগে জলবায়ু অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আহ্বান বাংলাদেশের
জলবায়ু কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রশংসিত ‘নদীরক্স’
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের সৃজনশীল ও কার্যকর ভূমিকা রাখছে এমন সব নেতৃত্বের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল সুইডেনে।
‘ক্রিয়েটিভ ক্লাইমেট লিডারশিপ-স্ক্যান্ডিনেভিয়া’শীর্ষক এ আয়োজনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি হিসেবে অংশ নিলেন দেশের জনপ্রিয় শারমিন সংগীতশিল্পী সুলতানা সুমি।
২ নভেম্বর সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হওয়া এ সম্মেলনে অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এ আয়োজনে অংশ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে জনসচেনতায় নিজের সংগীত উদ্যোগ ‘নদীরক্স’এর কথা তুলে ধরেন সুমি।
জলবায়ু, নদী, তারুণ্য আর সংগীতের শক্তিকে এক করে ‘নদীরক্স’ সুমির নেতৃত্বে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সল্ট ক্রিয়েটিভ। দেশের বিপন্নপ্রায় নদীগুলো নিয়ে গান গাইছে দেশের জনপ্রিয় সব ব্যান্ডগুলো। সে গানগুলো প্রকাশের পাশাপাশি দেশব্যাপী কনসার্টও শুরু করেছেন সুমি। যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য তার।
এবার সে যাত্রায় যুক্ত হল জলবায়ু রক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতিতে ভূমিকা রাখা আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব।
সম্মেলনে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে তার এ উদ্যোগ। যাতে দারুণ আপ্লুত সুমি।
আরও পড়ুন: মুক্তি পেল ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’
তিনি জানান, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইরান, সুইজারল্যান্ড, ইউকেসহ আরও বেশকিছু দেশের বৈশ্বিক পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালযয়ের শিক্ষক, শিল্পী, নীতি নির্ধারকগণ উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে। কিভাবে সৃজনশীল উপায়ে আরও বেশি করে মানুষকে পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন করা যায় তার উপায় নিয়ে কথা বলতেই এ আয়োজন।
এতে উপস্থিত হয়েছিলেন পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে দেয়া গ্রেটা থুনবার্গের ‘ফ্রাইডেইজ ফর ফিউচার’এর প্রতিনিধিরাও।
খুলনায় গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট শুরু ২০ অক্টোবর
প্রথম গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট ২০২২ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আগামী ২০ অক্টোবর বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। কিভাবে আজকের তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে সেই পথ অনুসন্ধানে খুলনায় তিন দিনের এই কর্মসূচিতে একত্রিত হচ্ছে ৭০টি দেশ থেকে ৬৫০ জন তরুণ (১৫০ জন সশরীরে এবং ৫০০ জন অনলাইনে)।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইজাজ আহমেদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবতার সামনে সবচেয়ে বড় সংকট। গত ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশি যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পর আমি এখন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তরুণদের, বিশেষ করে দক্ষিণ মেরুর তরুণদের সংগঠিত করার জন্য একটি বৈশ্বিক সংস্থা চালু করছি।’
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের বিশ্বব্যাপী এবং বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে। জিওয়াইএলসি’র লক্ষ্য তরুণদের জলবায়ু বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ব্যক্তিগতভাবে ও যৌথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তরুণদের নেতৃত্বের দক্ষতা তৈরি এবং জলবায়ু অভিবাসনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা চালু করতে সক্ষম করা।
ইজাজ আহমেদ বলেন, আমরা খুলনাকে জিওয়াইএলসি সম্মেলনের উদ্বোধনী স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি কারণ খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি অঞ্চল। খুলনায় সম্মেলনে যোগদানকারী এই ১৫০ জন তরুণ উপকূলীয় এলাকার লাউডোভ-এ উপকূলীয় বনায়নেও অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে আমরা স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু সহিষ্ণু বিভিন্ন কার্যক্রম এর প্রচার এবং মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে যুবকদের ক্ষমতায়নের লক্ষে সামিটে অংশ নেয়া ১০ জন প্রতিনিধিকে তাদের জলবায়ু সহিষ্ণুতা ও জলবায়ু অভিবাসন বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০০০ ডলার অনুদান প্রদান করা হবে।
জিওয়াইএলসি চেয়ারম্যান নিল ওয়াকার বলেন, তরুণরা শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দাবি জানায় না, তারা পথও দেখায়।
তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব, উদ্ভাবন, উদ্যোগী মনোভাব সাফল্যের পথ দেখায়। তবে আমাদের বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ দরকার। জিওয়াইএলসি সারাবিশ্বের তরুণদের আদর্শ, ধারণা এবং প্রতিভাকে ফলাফলে রূপান্তর করতে কাজ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হোয়েগ হেনরিকসেন, বিওয়াইএলসি নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ ও তরুণ জলবায়ু কর্মী শাকিলা ইসলাম বক্তব্য দেন।
'জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা'
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিরাপত্তাজনিত সমস্যা এবং এটি অবশ্যই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) নিয়মিত আলোচনা করা উচিত।
মঙ্গলবার রাজধানীতে ‘জলবায়ু কূটনীতি: বাংলাদেশের জন্য সীমাবদ্ধতা এবং পছন্দ’ শীর্ষক হাইব্রিড সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলো কমাতে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন’ উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধান নির্গমনকারীদের দ্রুত প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার এটি উপযুক্ত সময়।
তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।
‘জলবায়ু কূটনীতি: বাংলাদেশের জন্য সীমাবদ্ধতা এবং পছন্দ’ শীর্ষক হাইব্রিড সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলম উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশ বিশ্ব জলবায়ু কূটনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতিত্বে আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশ একটি বৈধ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু দুর্বলতার স্থিতিস্থাপকতা থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে 'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' নিয়েছে দেশ।
তিনি বলেন, ‘এটি প্রকৃতপক্ষে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য একটি যুগান্তকারী নীতি নির্দেশিকা’।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট: বিশ্বনেতাদের ‘মুনাফার চেয়ে মানুষকে’ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান তরুণদের
জলবায়ু অভিবাসীদের ব্যাপারে অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে: ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও শোষণের শিকার কয়েক মিলিয়ন ‘জলবায়ু অভিবাসীর’ ব্যপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে না।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান আন্তঃসম্পর্কযুক্ত এই বিশ্বে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে বাস্তুচ্যুতি বিশ্বকে নিরাপত্তা ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’
‘এনভায়রনমেন্ট অব পিস: সিকিউরিং আ জাস্ট এন্ড পিসফুল ট্রানজিশন ইন আ নিউ ইরা অব রিস্ক’-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তার বক্তব্যে মন্ত্রী জলবায়ু-নিরাপত্তা সম্পর্ক এবং (উদ্ভূত) চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি এনফোর্সমেন্ট মেকানিজম সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরির গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
শুক্রবার আয়োজিত স্টকহোম+৫০ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাইডলাইন হিসেবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এই বৈঠকের আয়োজন করে।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মোমেন তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীদের পুনর্বাসনের বোঝা ভাগাভাগি করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তা চায় বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত স্টকহোম+৫০ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সভায় দেয়া বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সভার পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে মোমনে বলেন, সকলের জন্য একটি স্থিতিশীল, সুস্থ ও উন্নত বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অবস্থান সম্পর্কে নতুন করে ভাবার সুযোগ দিয়েছে স্টকহোম+৫০।
তিনি ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ এবং ‘প্লান্টারি ইমার্জেন্সি’-পরিকল্পনাসহ বিশ্বকে বাঁচাতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
জাতিসংঘের আহ্বানে ও কেনিয়া সরকারের সহায়তায় সুইডেন এই স্টকহোম+৫০ সভার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল কেনার বিষয়ে নয়াদিল্লির পরামর্শ চায় ঢাকা
১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত মানব পরিবেশ সংক্রান্ত জাতিসংঘের সম্মেলনকে স্মরণ করে এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশ কর্মের ৫০ বছর উদযাপন করতে ‘স্টকহোম+৫০: এ হেলদি প্লানেট ফর দ্য প্রোসপারিটি অব অল-আওয়ার রেসপন্সিবিলিটি, আওয়ার অপরচুনিটি’- থিমের অধীনে এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রায় ১৫০ জন সদস্য, জাতিসংঘের বিশেষায়িত বিভিন্ন এজেন্সি, আইজিও এবং আইএফআই এর সদস্যরা সভায় অংশ নেন।
স্টকহোম+৫০ সভার পাশাপাশি মোমেন ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও ভালোভাবে বুঝতে, তাদের জন্য ভাবতে ও করণীয় পদক্ষেপ অন্বেষণ সংক্রান্ত একটি আন্তঃপ্রজন্মীয় গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন।
এছাড়াও তিনি ইউনাইটেড ন্যাশন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) প্রশাসক এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বৈঠকে ইউএনডিপির প্রশাসক আচিম স্টেইনার প্যারিস চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
এসময় মোমেন আকস্মিক বন্যার জন্য আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্যায় সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো, ম্যানগ্রোভ রোপণ করে কার্বন সিঙ্ক তৈরি করার জন্য ইউএনডিপির সহায়তা চেয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন এবং স্টকহোম+৫০-এর বিভিন্ন সংলাপ সেশন এবং গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।
আরও পড়ুন: তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ‘লজ্জাজনক’: মোমেন
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য অংশীদারিত্ব: বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকারমূলক জলবায়ু পদক্ষেপ বিষয়ক আলোচনা শুক্রবার
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রকৃত বাস্তবতা এবং বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে পরিস্থিতি প্রশমনের প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা তুলে ধরা হবে ‘বিল্ডিং অন দ্যা আউটকামস অব কপ২৬: প্রায়োরিটি ক্লাইমেট অ্যাকশনস এহেড অব কপ২৭’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে। শুক্রবার এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের অংশীদারিত্বে ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) আয়োজিত এই ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে জলবায়ু অংশীদারিত্ব জোরদার করার উপায় নিয়েও আলোচনা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন উইং) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিসিএডি) পরিচালক অধ্যাপক ড. সালিমুল হক, এর উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজান আর খান এবং এনভায়রনমেন্ট, ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড রিসার্চ সিস্টেম-এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট ড. হাসিব মো. ইরফানউল্লাহ ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে যোগ দেবেন।
ইউএনবি’র পরিচালক নাহার খান ওয়েবিনারটি পরিচালনা করবেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইউএনবি ফেসবুক পেজ এবং এর ইউটিউব চ্যানেলে এর প্রিমিয়ার হবে।
যুক্তরাজ্যের সভাপতিত্বে গত ৩১ অক্টোবর -১৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ২৬ তম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ২৬)অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বৃহস্পতিবার
কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনের ফলে প্যারিস চুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের লক্ষ্যগুলোর প্রতি পদক্ষেপ নিতে সবদল একত্র হয়েছে।
কপ২৬ এর সভাপতি হিসেবে, যুক্তরাজ্য বলেছে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ করতে হবে। কারণ তারা গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তিটি নিশ্চিত করার জন্য আগামী মাসগুলোতে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করবে এবং পরিকল্পনাগুলোকে কাজে পরিণত করবে।
চারটি লক্ষ্য সামনে রেখে যুক্তরাজ্য সভাপতিত্ব করবে। সেগুলো হলো- কার্বন নির্গমন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা; জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল নিশ্চিত করা; অর্থ সরবরাহ করা এবং একসঙ্গে কাজ করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সভাপতিত্বের সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা।
ইউএনএফসিসি-এর কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস (কপ২৭) এর ২৭তম অধিবেশন এই বছরের নভেম্বরে মিশরের শার্ম এল-শেখে অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছে দেশ: টিআরএনবি ওয়েবিনারে বক্তারা
বাংলাদেশে করোনার প্রভাব নিয়ে কসমস ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন: জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তার নিশ্চয়তা চায় ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বিশ্ব নেতাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সমূহের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন দেশের সম্ভাব্য পরিণতির দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
শনিবার ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে’ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এক প্যানেল আলোচনায় দেয়া বক্তব্যে ড. মোমেন এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ জার্মানির শহর মিউনিখে শুক্রবার থেকে তিন দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিউনিখ নিরাপত্তা সূচক ২০২২-এর জন্য করা জরিপে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনকে শীর্ষ নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামানও বাংলাদেশ থেকে এ বছর সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের হার খুবই নগণ্য। তবুও জি-২০ দেশসমূহের কর্মকাণ্ডের কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু দূষণের কারণে এই দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বছর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু অর্থ চুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভূরাজনীতি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ছে, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনে লবণাক্ততা বাড়ছে। বনের নদী-খালে মিঠা পানির প্রবাহ ক্রমশ কমে যাচ্ছে।এদিকে পলিমাটি জমে বনের বেশকিছু খাল ভরাট হয়ে গেছে। এতে করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সুন্দরবনে অতিমাত্রায় লবণাক্ততায় সুন্দরী গাছ মরে যাচ্ছে, বন্যপ্রাণীরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর ওপর অবাধে বন্যপ্রাণী শিকার ও নদী-খালে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ ধরার তৎপরতা তো রয়েছেই। এসব নানা কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এ অবস্থায় সুন্দরবনকে রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি তোলা হয়েছে। জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের দাবি ২১ বছরেও সাড়া পায়নি। অনেক দাবির মধ্যে সুন্দরবনের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও রয়েছে।
এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ‘সুন্দরবন দিবস’। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলায় গত ২০০২ সাল থেকে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করা হচ্ছে। করোনার কারণে বিগত বছরের মতো এবারও বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও বরগুনায় ভার্চুয়ালি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
তবে ২১ বছরেও জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের সাড়া মেলেনি। সুন্দরবন দিবস পালনের আয়োজকরা প্রথম থেকেই জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের দাবি জানিয়ে আসছে।
দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি বলা হয়। সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের’ আবাসস্থলও। তাছাড়া দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন। বিভিন্ন সময়ে সুপার সাইক্লোনে নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে সুন্দরবন। সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনও বলা চলে।
আরও পড়ুন: সাত মাসেও আলোর মুখ দেখেনি ‘সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প’
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন এলাকায় ২০টির ওপর খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া জয়মনি থেকে দাসের ভারানী পর্যন্ত ভোলা নদী, খড়মা খাল ও আড়ুয়ারবেড় খালের ৩০ কিলোমিটার এলাকা ভরাট হয়ে গেছে। সুন্দরবনের মধ্যে লবণাক্ততাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুলনার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, ২০০১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রূপান্তর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাপাসহ ৭০টি সংগঠন যৌথভাবে ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনের দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে।
তিনি জানান, আজ পর্যন্তও জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের সাড়া মেলেনি। ২০০২ সাল থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন জেলাগুলোতে সুন্দরবন একাডেমি, সুন্দরবন বিভাগ, বিভিন্ন প্রেসক্লাব ও বিভিন্ন সংগঠন ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করে আসছে।
নির্বাহী পরিচালক জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এ বছরও ১৪ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়ালি ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান।’
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে। মিঠা পানির উৎস কমে গেছে। বনের বেশকিছু খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে আছে এবং বিভিন্ন এলাকায় চড় জেগেছে। বনে লবণ পানির আধিক্য বেশি। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সুন্দরীসহ বিভিন্ন গাছ নানা রোগে মারা যাচ্ছে। লবণ পানি খেয়ে বন্যপ্রাণী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, তারা সুন্দরবন সংরক্ষণ ও বনসংলগ্ন মানুষের জীবন জীবিকার মানউন্নয়নের জন্য সুন্দরবন পরিচালনার ক্ষেত্রে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি পূরণ হলে বন এবং বনসংলগ্ন মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানা ভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জীবিকার জন্য বনের ওপর মানুষের চাপ রয়েছে। বন রক্ষায় বনসংলগ্ন স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
আমীর হোসাইন আরও জানান, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন: দুর্যোগে অরক্ষিত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
সুন্দরবনের ইতিহাস:
সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থল ভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ ও জল ভাগ এক হাজার ৮৭৩ বর্গ কিলোমিটার। অষ্টাদশ শতব্দীতে সুন্দরবনের আয়তন ছিল বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের তিনটি অভয়ারণ্যকে বিশ্বঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভায়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে। মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০০ হেক্টর বনের মধ্যে এখন তিন লাখ ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর অভয়ারণ্য এলাকা। আগে ছিল মাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর।
সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি ইকোসিস্টেম। এই বনে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর উত্তম আবাসস্থল। ২০০১ সালে সুন্দরবনের প্রশাসনিক এলাকা দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। পূর্ব বন বিভাগের কার্যালয় বাগেরহাটে ও পশ্চিম বিভাগের কার্যালয় খুলনায় অবস্থিত।
নামকরণ
সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ প্রজাতি ‘সুন্দরী গাছ’। কারো কারো মতে সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। আবার সমুদ্রের কাছে অবস্থান হওয়ায় ‘সমুন্দর’ শব্দ হয়ে প্রথমে ‘সমুন্দবন’ ও পরে ‘সুন্দরবন’ নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
লবণাক্ততা
সুন্দরবনের পূর্ব থেকে পশ্চিমে ও উত্তর থেকে দক্ষিণে লবণাক্ততার পরিমাণ পর্যাক্রমে বেশি। সুন্দরবনের সর্বত্র মাটির লবণাক্ততার পরিমাণ ২-৪ দশমিক ৫ ডিএস/এম। তবে শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছয় ডিএস/এম মধ্যে থাকে। পানির লবণাক্ততার ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনকে তিনভাবে ভাগ করা হয়েছে, স্বাদু পানির অঞ্চল, মধ্যম লবণাক্ত পানির অঞ্চল এবং লবণাক্ত পানির অঞ্চল।
জীববৈচিত্র্য
সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বনজদ্রব্য
সুন্দরবনের প্রধান বনজদ্রব্য হচ্ছে সুন্দরী, পশুর, গেওয়া, ধুন্দুল ও কাকড়া গাছ। এছাড়া গোলপাতা, হেতাল, ছন, মাছ, মধু ইত্যাদি সুন্দরবনে রয়েছে।
প্রাণী
সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির অধিক বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি ও ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী অর্ন্তভুক্ত। ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৪৩ প্রজাতির মলাঙ্কা রয়েছে সুন্দরবনে।
বন্যপ্রাণী
সুন্দরবনের প্রধান প্রধান বন্যপ্রাণী হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বন্যশকুর, বানর, কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছো বিড়াল ও বন বিড়াল ইত্যাদি।
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি, এক থেকে দেড় লাখ হরিণ, ৫০ হাজার বানর, ২৫ হাজার বন্যশকুর ও ২৫ হাজার উদবিড়াল রয়েছে।
নদী-খাল
সুন্দরবনে নদী-খাল জালের মতো জড়িয়ে আছে। সুন্দরবনে ৪৫০টি ছোট বড় নদী-খাল রয়েছে। বনের প্রধান নদীগুলো হচ্ছে পশুর, শিবসা, আড়পাঙ্গাসিয়া, শেলা, মরজাত, ভদ্রা, যমুনা, রায়মঙ্গল ও ভোলা ইত্যাদি।
পর্যটন স্থান
গোটা সুন্দরবন জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। এর মধ্যে করমজল, কটকা, কচিখালী, দুবলারচর, হিরণপয়েন্ট, কলাগাছিয়া, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকায় পর্যটকরা বেশি ভ্রমণ করে থাকেন।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র