বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মন্তব্য 'মিথ্যা ও বানোয়াট': পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জাতিসংঘের তিন বিশেষ দূতের (এসআর) উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মনে হচ্ছে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে 'মিথ্যা ও বানোয়াট' তথ্য দিয়ে সরকারকে ‘কলঙ্কিত করার ইচ্ছায় তারা প্রভাবিত’ হয়েছেন।
ওএইচসিএইচআর-এর ১৪ নভেম্বরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের একতরফা পর্যবেক্ষণ বিশেষ করে তাদের সঙ্গে সরকারের সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপটে অসৎ ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জাতিসংঘের তিন বিশেষ দূতের (এসআর) পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন তুলতে সরকারকে বাধ্য করেছে।’
বিশেষ দূত তিনজন হলেন- মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষায় বিশেষ দূত আইরিন খান, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংঘের স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কিত বিশেষ দূত ক্লিমেন্ট ন্যালেটসোসিভোল এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিশেষ দূত মেরি ললর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দূতদের মন্তব্য এবং তাদের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্বলিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সময়টি কৌতূহলপূর্ণ।
বাংলাদেশের জবাবে বলা হয়, বাংলাদেশের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) আগের দিন অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর দেশের মানবাধিকার নিয়ে তারা তাদের মন্তব্য তুলে ধরেন। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তাদের সুপারিশ করার সময় মানবাধিকার উপভোগের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনি, নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রশংসা করেছে।
বিশেষ দূতদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে মূলত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে বর্তমান শ্রমিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, আদিলুর রহমান খান ও রোজিনা ইসলামের মতো অন্যান্য ব্যক্তিগত মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ যেখানে আইনের শাসন বিদ্যমান। সে অনুযায়ী, তিনটি মামলা স্বাধীন বিচার বিভাগের আইন আদালতে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে, সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন: কোয়াত্রার সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে না: মোমেন
বিশেষ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তার বিরুদ্ধে মামলাটি তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানির শ্রমিকদের তাদের মুনাফার ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করার বিষয়ে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সুতরাং এটি বিস্ময়কর যে বিশেষ দূতরা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলছে যখন সরকার প্রকৃতপক্ষে শ্রম ও মানবাধিকার রক্ষা করছে।’
তা ছাড়া, ইউপিআর অধিবেশনে, দেশে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করার সময়, বিশেষ দূতদের উত্থাপিত বেশিরভাগ বিষয় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল স্পষ্ট করেছে।
মানবাধিকার এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলকে আশ্বস্ত করে বলেছে, বিভিন্ন দেশের সুপারিশ বাস্তবায়নে তারা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সরকার বুঝতে পারছে না ইউপিআরের সময় দেওয়া সুপারিশগুলো তুলে ধরতে সরকারকে কোনো সময় না দিয়ে এত তাড়াহুড়ো করে বিশেষ দূতদের এই জাতীয় মন্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা কী।’
সরকার বিশেষ দূতদের আচরণকে তাদের নিজ নিজ ম্যান্ডেটের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও উপযুক্ত নয় বলে মনে করে। তারা মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ পদ্ধতির অংশ যা স্বাধীনভাবে কাজ করে।
এছাড়াও এতে আশা করা হয় তারা তাদের মানবাধিকার লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সমর্থন করার জন্য মানবাধিকার সম্পর্কে প্রতিবেদন ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাদের স্বীকৃতি বা গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যবহার করবে।
বাংলাদেশ সরকার আশা করে, বিশেষ দূতদের আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের আদেশ পালনে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ থাকবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুঃখজনকভাবে বিশেষ দূতদের ক্ষেত্রে এটি ঘটেনি, যারা এই ধরনের নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ নিয়ে এসেছিল। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টাকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছে তারা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান ওয়াশিংটনের
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইউপিআর সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে ইউপিআর পরীক্ষার আওতায় ছিল মাত্র চৌদ্দটি দেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মজার বিষয় হলো, বিশেষ দূতরা কেবল বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তারা অগণিত উন্নতির বিষয়ে নীরব ছিল কারণ এই পরীক্ষার রিভিউতে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ দূতরা প্রশংসা করেছে।’
‘এটি করে তারা বিশেষ দূত হিসেবে তাদের জাতিসংঘের পরিচয়কে অসম্মান করেছে। তারা মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারের অপব্যবহার করে তাদের ব্যক্তিগত ও পক্ষপাতদুষ্ট মতামত প্রচার করে বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে,’ বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সরকার ইউপিআরের সময় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সুপারিশকে গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউপিআর-এর পরপরই একই বিষয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন করে বিশেষ দূতরা সদস্য দেশগুলোর সুপারিশ এবং পর্যবেক্ষণকে এক প্রকার অসম্মান করেছে।
আরও পড়ুন: শ্রম অধিকার রক্ষায় সরকার ও শ্রমিকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে যুক্ত তা তুলে ধরেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী: মুখপাত্র মিলার
তারা ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ, উন্মুক্ত ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের ওপর জরুরি এবং গুরুত্ব আরোপের জন্য মানবাধিকার কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ প্রতি আহ্বান জানান। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর উচ্চতর নৈতিক অবস্থান নেওয়া এবং ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদন গ্রহণে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেন তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের আহ্বান তাদের কর্তব্যের আহ্বানের চেয়ে অনেক বেশি। এই তিন বিশেষ দূতের মধ্যে একজন বাংলাদেশের এবং সম্প্রতি তিনি সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণে অভূতপূর্ব উৎসাহ দেখিয়েছেন। তিনি অন্যান্য দেশের বিষয়ে আপেক্ষিক নীরবতা বজায় রেখেছেন। এত আংশিক, পক্ষপাতদুষ্ট, বিষয়ভিত্তিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মনোনিবেশ করার ফলে বিশেষ দূতরা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।’
বাংলাদেশ সরকার একটি সুষ্ঠু মানবাধিকার ব্যবস্থার জন্য বিশেষ পদ্ধতির স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের ভূমিকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে,‘যদিও তারা আশা করে যে বিশেষ দূতরা তাদের স্বীকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন, তবে এটি আশা করে যে মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় তাদের আদেশগুলো নিরপেক্ষভাবে পূরণ করতে সহায়তা করবে এবং তাদের বিষয়ভিত্তিক ঘোষণার প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহৃত না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকবে।’
আরও পড়ুন: মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার দেশগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে প্রায়ই নীরব থাকে: শাহরিয়ার
১ বছর আগে
যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মামুনের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলার প্রতিবাদ আরইউজের
দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) বিভিন্ন ধারায় মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)।
মঙ্গলবার দুপুরে আরইউজের সভাপতি রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক এক বিবৃতিতে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠ স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর চরম আঘাত।
আরও পড়ুন: অবিলম্বে ইউএনবি’র সাংবাদিক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ
বিবৃতিতে আরইউজে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের কণ্ঠারোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হলে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের ধারা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তারা সাংবাদিক মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিক মামুনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় আরইউজে কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আরইউজে সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক রাজশাহীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২৩ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে ‘আওয়ামী লীগের জরিপের কাজ শেষ পর্যায়ে, বর্তমান এমপি বাদের তালিকা হবে দীর্ঘ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ সংবাদের জেরে ৩০ জুলাই ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) দবিরুল ইসলামের সমর্থক প্রভাত শাহা বালিয়াডাঙ্গী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর
বাবুলসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে করা ডিএসএ মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ আদালতের
১ বছর আগে
সাংবাদিক রাহীদ এজাজের মায়ের মৃত্যুতে ডিকাবের শোক
দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রাহীদ এজাজের মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব)।
৩ বছর আগে