সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ
নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতেই সিপিডির অসত্য তথ্যনির্ভর সংবাদ সম্মেলন: তথ্যমন্ত্রী
নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অসত্য তথ্যনির্ভর সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার বক্তৃতা ১৯৮১-১৯৮৬’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সিপিডির প্রতিবেদনের ভুল চিহ্নিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সিপিডির এই প্রতিবেদন আমি পড়েছি। উনারা বলেছেন আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৭৫ শতাংশ আসে বৈদেশিক সাহায্য থেকে, যা সম্পূর্ণ অসত্য, ‘অ্যাবসোল্যুটলি রং অ্যান্ড বোগাস’। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। আগে আরেকটু কম ছিল। একটা গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন এ রকম ভুল কীভাবে থাকে। সুতরাং এই প্রতিবেদনে আরও ভুল আছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ রকম প্রচার করার উদ্দেশ্য কি মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিবদ্ধ করা? সেই প্রশ্ন অনেকেই রেখেছে।”
ড. হাছান বলেন, ‘বিভিন্ন বড় বড় গ্রুপ যে ঋণ নিয়েছে, সেগুলোকে সন্নিবেশিত করে সিপিডি বলতে চেষ্টা করেছে যে, ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আমি মনে করি, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম যে হয়নি বা হচ্ছে না সেটি নয়, অনিয়ম কিছুটা হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় আগে বহুবার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে গবেষণার কিছু নাই। এগুলো সব লোন ইস্যু বা ঋণের বিষয়, এগুলো সবাই জানে। উনারা পত্রপত্রিকা ঘেঁটে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রেস কনফারেন্সে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল। সেই প্রতিবেদনেও অনেক ভুল। এই সময় মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিবদ্ধ করার জন্যই এটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাক ‘ফিউজ’ হয়ে গেছে: তথ্যমন্ত্রী
একইসঙ্গে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, “দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং সরকার যাতে সঠিকভাবে কাজ করে সে প্রয়োজনে ভুল ধরে দেওয়ার জন্য সিডিপির মতো প্রতিষ্ঠান দরকার আছে, গবেষণারও প্রয়োজন আছে। কিন্তু যখন এই গবেষণায় এতবড় ভুল থাকে যা ‘গ্রস মিসটেক, নট সিলি মিসটেক’ আর প্রতিবেদন হয় অসত্য তথ্যনির্ভর, তাহলে সেই প্রতিবেদন এবং যারা তা প্রকাশ করে তাদের নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।”
নির্বাচনবিরোধী প্রচারণার ওপর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিএনপি কীভাবে নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে-এ প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা বাস্তবায়ন কমিশনই করবে। যখনই কমিশন এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেবে অবশ্যই প্রশাসন সেটি প্রতিপালন করবে। আমি মনে করি যে, এই নির্দেশনা সুষ্ঠু, অবাধ, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক।”
নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেউ কেউ গোলটেবিল বৈঠক করছে এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা লম্বা, গোল বা চ্যাপ্টা টেবিল মিটিং করছে তাদের হাঁকডাক তো শোনা যাচ্ছে না, পত্রিকার পাতায়ও স্থান পাচ্ছে না। নির্বাচন অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। প্রতি আসনে গড়ে সাড়ে ৬ জন প্রার্থী। ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।”
বিএনপিনেতা রিজভী ও মঈন খানের মন্তব্য ‘সরকার লুটপাটের অর্থ দিয়ে ডামি নির্বাচন করছে’- এর জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির ডামি নেতারা কী বলল এতে কিছু আসে যায় না। ওদের আসল নেতা তারেক রহমান আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রুহুল কবির রিজভী আর মঈন খান তো ওদের ডামি নেতা। এরা দুজনই ডামি নেতা বলেই ডামি শব্দটা বেশি পছন্দ করে এবং তারা কী বলল, কিছু আসে যায় না। আর লুটপাটের জন্য তো উনারাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, পরপর পাঁচবার উনারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং সেই লুটপাটের অর্থ দিয়ে তারা এখন দেশে আগুনসন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের সরকার লুটপাটকারীদের ধরার ব্যবস্থা করছে এবং আরাফাত রহমান কোকোর টাকা ফেরত এনেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই এসে বাংলাদেশে সাক্ষী দিয়ে গেছে।’’
পিআইবির পরিচালক ড. কামরুল হক, সহসম্পাদক আকিল উজ জামান খান, গবেষক পপি দেবী থাপা এবং মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন প্রমুখ গ্রন্থমোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী
ধ্বংসাত্মক রাজনীতি নির্মূল করে মানবিক রাষ্ট্র গঠনই বিজয় দিবসের প্রত্যয়: তথ্যমন্ত্রী
১১ মাস আগে
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে: ড. দেবপ্রিয়
৭ জানুয়ারির আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি এই তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।’ আসন্ন নির্বাচন একতরফা হলে দেশের সংকট আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ চলতি সপ্তাহে ঢাকায় ইউএনবির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন।
এসময় ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং একদলীয় নির্বাচন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়াবে। কারণ বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ একটি সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও খুব প্রয়োজন।
বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দল তৈরি করে তাদের ইচ্ছামতো নিবন্ধন দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে বলে বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আগামী নির্বাচন আগের গত নির্বাচনের মতো হবে, না কি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক হবে তারা তা পর্যবেক্ষণ করছেন।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা সহ্য করে আসছে, অথচ মহামারির পরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও অনেক দেশ এক্ষেত্রে উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, এখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি, যা আগে দেখা যায়নি।
তার মতে, টাকার ক্রমাগত দরপতনের কারণে আমদানি মূল্যস্ফীতির মুখে পড়তে হচ্ছে জনগণকে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কমানোর কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি এক-চতুর্থাংশ কমে যাওয়ায় রাজস্ব উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডের অদক্ষতার কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সবসময়ই অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে: আহসান মনসুর
ড. দেবপ্রিয় বলেন, নির্বাচনের বছরের মধ্যেও সরকার স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করতে পারে না।
তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এই স্থবিরতা যাবে না। সব খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।
তিনি আরও বলেন, আমদানির ব্যাপক পতন অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টি করেছে এবং কয়েকটি সিন্ডিকেট এটিকে দাম বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।
ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক আয় বাড়ানো সত্ত্বেও রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে, দুর্নীতি ও অর্থপাচার কমছে না; জবাবদিহিতার অভাবে এগুলো ঘটছে।
তিনি বলেন, সরকার টপ টু বটম কোথাও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না, কারণ রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতা না থাকায় তারা আমলা ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার উপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও কিছু প্রভাবশালী দেশ হস্তক্ষেপ করছে, যা আগে কখনো হয়নি। এগুলো সবই এখানে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল এবং তারা (বিদেশিরা) রাজনৈতিক মতবিরোধ ও সরকারের নৈতিক বৈধতার অভাবের সুযোগ নিচ্ছে।
গত নির্বাচনের বৈধতা প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সংবিধানের বিবেচনায় ওই নির্বাচনগুলো বৈধ হলেও, রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতার অভাব ছিল।
তিনি বলেন, একটি দেশ শক্তিশালী হয় যখন তার স্বাধীন রাষ্ট্রীয় অঙ্গগুলো শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা উভয় পক্ষ পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করছে।
শ্রম অধিকারের বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব কাজের পরিবেশ, অযথা হয়রানি এবং শ্রম অধিকার কর্মীদের জোরপূর্বক গুম করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পশ্চিমা জনগণ; যারা বাংলাদেশের পোশাক এবং অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা, তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে খুবই সচেতন ও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক খাতেই সংস্কার করতে হবে। যেমন- বিপুল খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করা, অর্থপাচার কমানো, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং নির্ভয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করা।
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশি পণ্য, জনশক্তি ও রেমিটেন্সের রপ্তানি গন্তব্যের কথা মাথায় রেখে দেশকে বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে অবরোধ ও হরতালের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: ড. আতিউর
নির্বাচনের আগে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত
১ বছর আগে
সম্পত্তি কর থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা যাবে: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্পদের বৈষম্য কমাতে এবং রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে সম্পত্তি কর এবং উত্তরাধিকার কর আরোপের প্রস্তাব করেছে।
সিপিডি বলছে, তাদের সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলে সম্পত্তি কর থেকে অতিরিক্ত ৬ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।
বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘স্টেট এন্ড স্কোপ অব প্রোপার্টি ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক সিপিডি সংলাপে এ প্রস্তাব আসে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, সম্পত্তি কর, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং উত্তরাধিকার কর সঠিকভাবে আদায় করা সম্পদের বৈষম্য কমানোর সুযোগ তৈরি করবে।
উত্তরাধিকার কর হলো সম্পদ করের একটি রূপ, সম্পত্তির ওপর আরোপ করা হয় এবং অর্থ, সম্পদ বা উত্তরাধিকার থেকে অর্জিত হয়।
দেবপ্রিয় বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান সম্পদ এবং আয়ের বৈষম্য কর সংগ্রহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর ন্যায্যতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।
আরও পড়ুন: ১৫০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা তহবিল অযোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য ব্যয়: সিপিডি‘র জরিপ
তিনি বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য এবং ক্রমবর্ধমান সম্পদ বৈষম্যের প্রবণতা মোকাবিলায় রাজস্ব আদায় ও কর ব্যবস্থায় ন্যায্যতাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সুতরাং, সম্পদ কর প্রবর্তন এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।’
বর্তমানে, দেশে ‘সম্পদ কর’ হিসেবে উল্লেখ করা কোন নির্দিষ্ট কর নেই। ছয় ধরনের কর এবং শুল্ক রয়েছে, যেগুলোকে মোটামুটিভাবে সম্পদ-সম্পর্কিত কর হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছে-ভূমি উন্নয়ন কর, হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প ডিউটি, সম্পদ সারচার্জ এবং উপহার কর; যদিও এর প্রয়োগ সীমিত।
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও আত্মীয়দের কাছ থেকে উপহার পাওয়া সম্পদের ওপর কোনো নির্দিষ্ট কর আরোপ করা হয় না বা কোনো প্রকার উত্তরাধিকার ট্যাক্স নেই।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ইইউ-এর বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রধান মাউরিজিও সিয়ান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ,
ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং চার্টার একাউন্টেন্ট স্নেহাশিষ বড়ুয়া প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে: সিপিডি
২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি
১ বছর আগে
ডিজিটাল অর্থনীতিতে ট্যাক্সিং ২০২৬ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত কর-জিডিপি অনুপাত অর্জনে সহায়তা করতে পারে: সিপিডি
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত আলোচনায় বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে কর আরোপ করা এবং দেশীয় ও অনাবাসী উভয় বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকি রোধ করা আইএমএফ কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।
তারা উল্লেখ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ডিজিটাল অভিযোজনের মাধ্যমে কর কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী ৩ বছরে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমান ৭ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিপিডি কর্তৃক আয়োজিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত ‘ডিজিটাল অর্থনীতিতে ট্যাক্সিং: ট্রেড-অফস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ’- শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান এই বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন; যাতে তিনি ডিজিটাল অর্থনীতিতে কর আরোপের কিছু ক্ষেত্র এবং ২০২৬ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব বৃদ্ধির সুযোগ তুলে ধরেন।
তিনি দেখিয়েছেন যে বিভিন্ন নীতি পরিকল্পনায় উচ্চ রাজস্ব ও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ট্যাক্স-জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, কিন্তু প্রকৃত অনুপাত তার অর্ধেকের নিচে ছিল।
বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৩৪ লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে।
আইএমএফের সুপারিশ অনুসারে, কর-জিডিপি অনুপাত ২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ০ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা রয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ বেশি।
প্রেজেন্টেশনে সুপারিশ করা হয়েছে যে ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজন ও নেটফ্লিক্সের মতো অনাবাসী টেক জায়ান্টগুলোকে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে এনবিআরের মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি কর ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক।
সাবেক অর্থ সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে ব্যক্তিগত করদাতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, যাদের কর দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে: সিপিডি
তিনি বলেন, জনগণকে আয়কর দিতে উৎসাহিত করার জন্য ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য বার্ধক্য সুবিধা চালু করা যেতে পারে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত কেন বাড়ছে না তা সরকার ও সংসদের আগে পড়া উচিত। ফাঁক খুঁজে পাওয়ার পরে, এটি সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও একটি বাধা, তাই সরকার সাইবার অপরাধ থেকে রক্ষা করার জন্য অন্যান্য আইনের বিধান রাখতে পারে।
সিপিডির বিশিষ্ট সহযোগী ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য পাঁচটি পয়েন্ট তুলে ধরেন এবং বলেন যে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, নির্ভীকতা, দক্ষ মানবসম্পদ এবং কর আদায়ের পদ্ধতিতে সরলতা নিশ্চিত করা কর আদায় বাড়াতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্কলন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আহসান আদেলুর রহমান এমপি এবং এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডির আলোচনায় ইইউ কর্মকর্তা, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান, সাবেক অর্থ সচিব, অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আগামী জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের বিশেষ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব সিপিডির
২০২২ সালে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে: সিপিডি
১ বছর আগে
দেশের রপ্তানি, সরকারি ব্যয় কমে যাওয়াটা বড় উদ্বেগের: সিপিডি
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সোমবার বলেছে, সরকারের ব্যয় এবং রপ্তানি কমে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগ এবং অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩ বছর আগে