‘২০২০-২১ অর্থবছরে (প্রথম প্রান্তিক) বাংলাদেশ অর্থনীতিতে’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সিপিডি এ পর্যবেক্ষণের কথা জানায়।
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বিশিষ্ট ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বক্তব্য দেন। জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুর ইসলাম খান এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সিপিডি বলেছে, প্রাক কোভিড পরিস্থিতির তুলনায় ২০২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারি ব্যয় অনেক কমেছে।
এতে দেখা য়ায়, ২০২০ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ৩৫.১ শতাংশ কমেছে এবং উন্নয়ন ব্যয় যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যমান পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন: সরকারকে সিপিডি
অপারেশনাল ব্যয়ও কম ছিল জানিয়ে সিপিডি বলছে, ‘মহামারিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য এমনটা ঘটেছে।’
এডিপি থেকে ২০২১ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে বরাদ্দ দেয়া তহবিলের মাত্র ৭৫ শতাংশ ব্যয়ে অনুমোদন করেছে অর্থ বিভাগ, বলছে সিপিডি।
কোনো পরিস্থিতিতেই অপারেশন ব্যয়ের বাকি ২৫ শতাংশ খরচ করা যাবে না জানিয়ে এতে বলা হয়েছে, বাকি ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রেখে দেয়া হয়েছে কেননা অর্থ বিভাগ আশঙ্কা করছে যে মহামারির কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।
সিপিডির তথ্যমতে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৬.৯ শতাংশ কমেছে এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার ১২.২ শতাংশ অর্জন করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: গ্রহণযোগ্য তথ্য-উপাত্তের জন্য স্বাধীন কমিশন দরকার: সিপিডি
সিপিডি বলছে, ‘রপ্তানি আয়ের অস্থিরতা ২০২১ অর্থবছরে অব্যাহত থাকবে। এ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির মাসে মোট রপ্তানি আয় (-) ১.১ শতাংশ কমেছে।’
এতে উল্লেখ করা হয়, বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার ২১.৮ শতাংশে পৌঁছাতে হলে ২০২১ অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৭০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।
সিপিডি অবশ্য বলছে, বড় ও মাঝারি শিল্পের ২০২১ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর সময়ের উৎপাদন ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিবিএসের তথ্য অনুসারে ২০২০ অর্থবছরের একই সময়ের যা ছিল ৫.৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশের বেশি হবে না: সিপিডি
এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানিতে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের দেশীয় চাহিদার ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়ার কথা ভাবা উচিত কেননা শিগগিরই বিশ্বব্যাপী রপ্তানি চাহিদা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে উৎসাহ দেয়ার জন্য সরকারের দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে ভাবা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বহির্মুখী রেমিট্যান্স প্রবাহের কোনো তথ্য না থাকাটা অস্বাভাবিক।
ড. ফরিদা কায়উম বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে।
দুর্বল-ব্যবস্থাপনার ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজ তহবিল বিতরণ করার অনুমতি দেয়া উচিত হবে না কারণ তারা অর্থনীতিতে আরও সমস্যা তৈরি করবে বলে সুপারিশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এবারের বাজেট প্রচলিত, করোনা পরিস্থিতি উত্তোরণে দিকনির্দেশনার ঘাটতি রয়েছে: সিপিডি
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় খাদ্য মজুদের উপরে সরকারকে আরও বেশি নজর দেয়া উচিত।
এই মুহূর্তে আমাদের খাদ্য মজুদের পরিমান ৭ লাখ মেট্রিক টন, যা দেশের প্রয়োজনীয় ১৫ লাখ টনের প্রায় অর্ধেক উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখন চালের বাজারে সংকট তৈরির পরিস্থিতিতে দাম বাড়িয়ে সুবিধা নিতে পারে।
তিনি বলেন, সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে জি-টু-জি ভিত্তিতে চাল আমদানির মাধ্যমে এর মজুদ ১০ লাখ মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সরকারের নেয়া টিকা কর্মসূচির প্রশংসা করে সিপিডি তার মূল্যায়নে বলেছে, করোনার সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকে ভালো করেছে।