ভ্রমণপিপাসু
ভারত পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ঠিকানা: ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রথম পছন্দ ভারত উল্লেখ্য করে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেছেন, বর্তমানে ভারত পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।
রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পেনিন্সুলা হোটেলে ‘ওয়েলকামস টু ইন্ডিয়া, এ ট্যুরিজম প্যারাডাইস' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির পরিদর্শনে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, বৈচিত্র্য যাকে বলে সেটি ভারতেই কেবল পাওয়া সম্ভব। মরুভূমি, বরফ, পাহাড়, সমুদ্র, পর্বত, বৃষ্টি সবই পাওয়া যাবে একটি মাত্র দেশে। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয় ভারতে যেসব ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে যেমন তাজমহল, কুতুব মিনার, এসব দেখতে পর্যটকরা আসেন। একদিকে হিন্দুদের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র, অন্যদিকে মুসলমানদের আজমীর, পাঞ্জাবে গোল্ডেন টেম্পল, বুদ্ধ গয়া, জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের জন্মস্থান।
তিনি আরও বলেন, কী নেই ভারতে। তাই কথায় আছে যা নেই ভারতে, তা নেই পৃথিবীতে।
তিনি বলেন, ভারতে পর্যটকদের পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ পর্যটক যান। গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ছিল প্রথম স্থানে, যেখান থেকে সর্বোচ্চ পর্যটক ভারতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয় ভারতে চিকিৎসার জন্য প্রচুর মানুষ বাংলাদেশ থেকে যান। পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য যারা ভারতে যান তাদের সব সময় স্বাগতম জানায় ভারত সরকার। ভারত পর্যটকদের সুবিধার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ভ্রমণের জন্য ভারত এখন স্বর্গ।
তিনি ভারত ভ্রমণ করে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ করেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মী, ব্যবসায়ী এবং ট্যুরিজম সম্পর্কিত ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: ভারত-বাংলাদেশ ‘ভেরি স্পেশাল পার্টনার’: ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
শাবি উপাচার্যের সাথে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ
১ বছর আগে
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পাহাড় হাইকিং ও ক্যাম্পিং ভ্রমণপিপাসুদের সবচেয়ে প্রিয় ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে অন্যতম। রোমাঞ্চকর ট্রেইলগুলোর প্রতি ধাপে ধাপেই যেন ওত পেতে থাকে হাজারও বিপদ। এই রুদ্ধশ্বাস যাত্রার সঙ্গে যখন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যোগ হয় তখন সেই রোমাঞ্চও হুমকির মুখে পড়ে। পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সর্তকতা না নেয়া হলে পুরো যাত্রাটাই অশুভ হয়ে যেতে পারে। তাই চলুন, দুর্ঘটনাগুলোর কারণ ও নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে করণীয় জেনে নেয়া যাক।
পাহাড়ি অঞ্চলে মৃত্যুর কারণ
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুই কারণেই স্থানীয় সহ পর্যটকদের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, যা অনেক সময় তাদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। সাধারণত বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ী এলাকার প্রকৃতির কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। বৃষ্টিতে ঢাল, গর্ত, খানা-খন্দ, চূড়া সহ পাহাড়ের প্রতিটি পথ পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ অবস্থায় রাস্তা খুব ভালো করে চেনা থাকার পরেও স্থানীয়রা বিপদে পড়েন। আর রাস্তা না জানা পর্যটকদের জন্য দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
পাহাড়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর আরো একটি কারণ হলো পাহাড়ে ভূমিধ্বস। সাধারণত নদীর পানিতে ক্ষয় হয়ে, ঢালে গর্ত হয়ে, বৃষ্টির পানি জমে, ভূমিকম্পের কারণে ভূমিধ্বস হয়ে থাকে। এছাড়া বন উজাড়, ঢালের উপর বাড়ি-ঘর বা অন্যান্য কাঠামো বানানো, পাহাড় কাটা, সাপ্লাইয়ের পাইপলাইন ফুটো হয়ে পানি পড়া, যে কোন ধরণের কৃষি কাজের মত মানুষ সৃষ্ট কারণও দায়ী ভূমিধ্বসের জন্য। মৌসুমী বর্ষার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাহাড়ে প্রায়ই বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় সমূহ
আবহাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জেনে নেয়া
এটি অবশ্যই সর্বপ্রথম কাজ; তাছাড়া গন্তব্য যখন পাহাড়ী এলাকা, তখন এর কোন ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। পাহাড়ে দিনের বেলা বেশ উষ্ণ হলেও গ্রীষ্মের রাত এবং ভোরবেলা বেশ ঠান্ডা হয়। তাই সব ধরণের আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল। তবে বৃষ্টির ব্যাপারে সাবধান!
এর জন্য ভ্রমণকারিদের যাত্রার শুরুতেই পাহাড়ী এলাকার আবহাওয়া সম্বন্ধে জানতে হবে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই সিলেট বা চট্রগ্রামের তাপমাত্রা জেনে নেয়া যায়। ভেজা আবহাওয়ায় যাওয়ার পাহাড়ী রাস্তা তো পিচ্ছিল হয়ই; পাশাপাশি গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়ার দীর্ঘ পথটুকুও দুর্গম হয়ে ওঠে।
পার্বত্য অঞ্চলে বাজ পড়া একটি সাধারণ ঘটনা, তাই বজ্রপাতের সময় পাহাড়ে আটকা পড়া এড়াতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়ার কোন বিকল্প নেই। অবস্থা শান্ত হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে তারপর বের হওয়া উচিত। এটি প্রতিকূল পরিবেশে অবহেলার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পড়া থেকে বিরত থাকা যাবে।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
উপযুক্ত জামাকাপড় ও জুতা পরা
ঠান্ডা বা গরম যে কোন পরিবেশের জন্য উপযুক্ত পরিধেয় বাছাই করা উচিত। আর পাহাড়ী এলাকার ক্ষেত্রেও পোশাক বিশেষ ভাবে বেছে নিতে হবে। ক্লান্তিকর হাইকিং-এর সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য শরীরকে আরামদায়ক রাখতে উপযুক্ত পোশাক এবং জুতা সঙ্গে নেয়া জরুরি। এর জন্য ভ্রমণের আগেই পোশাক ও জুতা কিনে রাখতে হবে।
চট্রগ্রাম ও সিলেটের জন্য সাধারণত মজবুত জুতা, থার্মাল এবং হালকা ওজনের ডাউন ফেদার জ্যাকেটই যথেষ্ট। অবশ্য শীতের সময় সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গরম কাপড় নিতে হবে।
ব্যাগ যথাসম্ভব হালকা রাখা
শীতে কাপড়-চোপড় বেশি লাগে মানে এই না যে ব্যাগ ভর্তি করে যাত্রা করতে হবে। পাহাড় চড়ার জন্য হালকা থাকা আবশ্যক। কেননা ব্যাগে প্যাক করা সমস্ত কিছু নিজেকেই বহন করতে হয়। ভ্রমণের জন্য যাবতীয় গ্যাজেট থেকে যেগুলো না নিলেই নয় সেগুলোই শুধু নিতে হবে। বেশি পোশাক নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য সরঞ্জামগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রেখে প্যাক করতে হবে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- ভ্রমণকারির জন্য ব্যাগের ওজনটি সহজে বহন করার মত হচ্ছে কিনা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি না নেয়া
ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত দুঃসাহসিক কাজ করতে যেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার সময় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। কোন দুর্গম ট্রেইল পাড়ি দেয়া, অজানা কোন রাস্তায় আন্দাজ করে হেঁটে যাওয়া, লাফিয়ে কোন বড় গর্ত পার হওয়ার মত কাজগুলো অনেকেই ছোট করে দেখেন।
তাছাড়া অনেকে তাড়াহুড়া অথবা শর্টকাটে যাওয়ার জন্য বিপজ্জনক রাস্তা বেছে নেয়। এখানে মনে রাখা ভালো যে, পর্বতগুলো কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। তাই সতর্কতামুলক কাজে দেরি হলে কোন সমস্যা নেই। বরং তা অনেক খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচাবে।
সঙ্গে একজন গাইড নেয়া
একজন পর্বত আরোহীর দক্ষতা যে স্তরেরই হোক না কেন, প্রতিটি যাত্রাই ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকির হাতছানি দেয়। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একজন পেশাদার গাইডকে সঙ্গে রাখা। সে শুধু ঝুঁকির সম্ভাবনা কমানোর কৌশলগুলো ব্যবহারেই সাহায্য করবে না, পুরো পাহাড়ী ট্রেইলটার একজন গাইড হিসেবেও কাজ করবে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি পূরণ করে সে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। এক কথায়, সার্বিক ক্ষতি থেকে দূরে রেখে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে একজন গাইড পুরো পর্বত আরোহণটাকে নিশ্চিন্তে উপভোগ করার জায়গা করে দেয়।
পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার ও পানি নেয়া
যে কোন দীর্ঘ ভ্রমণের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হাইড্রেটেড থাকা এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য খাবার খাওয়া। এ জন্য বিভিন্ন ফলমুলের পাশাপাশি হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণের জন্য একটি রিফিল-যোগ্য পানির বোতল সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
পর্বতারোহণের সময় সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরে খাদ্যের ভালো যোগান অপরিহার্য। এটি হাইকিং করার সময় যাত্রা অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত হাইকিং করার সময় ৩০০০ থেকে ৬০০০ ক্যালোরি খরচ হতে পারে, যা অবিলম্বে পুষিয়ে নেয়া দরকার।
আরো পড়ুন: ভারতের মেডিকেল ভিসা: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা প্রসেসিং ফি
আরও যে জিনিসগুলো সঙ্গে রাখা দরকার
সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে বাঁচতে এক জোড়া সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন রাখা যেতে পারে। এর থেকেও দরকারি জিনিস হলো ফ্ল্যাশলাইট এবং পাওয়ার ব্যাঙ্ক সঙ্গে রাখা। যে কোন সময় বিপদ-আপদে ফোন করার দরকার হতে পারে। তাই অযথা ফোনের ব্যাটারি নষ্ট করা যাবে না।
বিশ্রামের জন্য বিরতি নেয়া
হাইকিংয়ের সময় বিশ্রামের জন্য সময় নেওয়া একটি মৌলিক উপায়, যা ভ্রমণকে নিরাপদ, আনন্দদায়ক এবং সতেজ করে তোলে। দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়বিদরা ক্লান্ত হওয়া এড়াতে নিজেদের গতি বাড়ায়। কিন্তু একজন ভাল হাইকারকে উল্টোটা করতে হয়; অর্থাৎ ধীরগতিতে চলে যেতে হয়। এই বিশ্রাম নেয়ার হারটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তন হয়। এই সময়টা নিছক বসে থাকা নয়; প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপভোগের একটি উপায়।
সর্বদা সতর্ক থাকা
পাহাড়ী রাস্তায় চলার সময় প্রতিটি পদক্ষেপে মনযোগ দিতে হবে। একটি ছোট ভুল পদক্ষেপের জন্য মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। একটি পিচ্ছিল পাথর বা কাদা মাটিই যথেষ্ট গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য। তাই নিরাপদে থাকার জন্য প্রয়োজনে গতি কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। ঘন ঝোপ-ঝাড়, গর্ত, পিপড়ার ঢিবি, ঝিরি পথ পেরনোর সময় সতর্ক থাকা উচিত। কোন ভাবেই বেকায়দা পড়ে পা যেন মচকে না যায় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বিষাক্ত প্রাণী ও পোকামাকড়ের ব্যাপারে সচেতন থাকা
পাহাড়ী এলাকার প্রাণী ও পোকামাকড় শহরের মত ঝুঁকিহীন নয়। খুব ছোট কোন প্রাণীও বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। পাহাড়ী পিপড়া ও মশাগুলো বেশ বিপজ্জনক হয়। এগুলোর জন্য পোকামাকড় নিরধোক নেয়ার পরেও সতর্ক থাকতে হবে। কোন কোন এলাকাগুলো এ ধরণের উপদ্রব বেশি তার জন্য গাইড বা স্থানীয়দের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
শেষাংশ
দুর্ঘটনা এড়িয়ে নিরাপদ পাহাড় ভ্রমণে প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা হলে পুরো ভ্রমণটা আনন্দদায়ক হয়ে থাকবে। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো নিঃসন্দেহে জীবনের জন্য এক স্মরণীয় স্মৃতি স্বরূপ। কিন্তু তা করতে যেয়ে বেঘোরে প্রাণ হারালে সেই স্মৃতির আর কোন মূল্যই থাকবে না। তাই নূন্যতম নিরাপত্তার বেষ্টনীতে থেকে উত্তেজনাকর কার্যকলাপগুলো চেষ্টা করা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে, বন্ধু-বান্ধবকে নিজের মুখে পাহাড় ভ্রমণের বিস্ময়কর গল্প বলার জন্য হলেও এই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
২ বছর আগে
কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
কমলদহ ও সহস্রধারা-২ দুটি ঝর্ণাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত এবং সবচেয়ে সহজ ঝিড়ি পথগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ষাকালে ভারী বর্ষণের দরুণ স্বাভাবিকভাবেই দেশের অন্যান্য ঝর্ণার মত এ দুটিও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তাই জুন-জুলাইয়ের যে কোন দিন চলে যাওয়া যেতে পারে সীতাকুণ্ডের পথে এ দুটি ঝর্ণা দেখার জন্য। এক কমলদহ ঝর্ণা দেখতে যেয়ে যখন পুরো ট্রেইল জুড়ে আরো ঝর্ণার দেখা মিলে, তখন পুরো ভ্রমণটাই যেন ষোল আনা পুর্ণ হয়। চলুন, কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণের ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার উপায়
কমলদহ সহ আরো বেশ কিছু অপূর্ব ঝর্ণার সমন্বয়ে গঠিত মোটামুটি সহজ কমলদহ ট্রেইল। কম সময়েই পুরো ট্রেইলটি ঘুরে আসা যায় বিধায় ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় স্থান এই কমলদহ। সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট বাজার থেকে মহাসড়ক ধরে ঢাকার দিকে কিছুদূর এগিয়ে গেলে রাস্তার ডানে পড়বে একটি ইটভাটা। এর পাশ দিয়েই নেমে গেছে একটি মাটির পথ। এই পায়ে হাটা পথটিই চলে গেছে কমলদহের ঝিরিপথ পর্যন্ত। এক ঘণ্টার ট্রেইল পথের পুরোটা পায়ে হেটেই পার হতে হবে।
তিন ধাপের কমলদহ ঝর্ণাকে নিচ থেকে দেখলে শুধু প্রথম ধাপই চোখে পড়ে। বাকিগুলো দেখার জন্য ঝর্ণার একদম উপরে উঠতে হয়। উপরের দিকে ট্রেইল দুটি ঝিরি পথে ভাগ হয়ে গেছে। ঝিরি পথ দিয়ে সামনে এগোতে থাকলেই একটার পর একটা ঝর্ণা আর ক্যাসকেড চোখে পড়বে। বায়ের ঝিরি পথ ধরে সোজা এগিয়ে যাওয়ার পর পড়বে ছাগলকান্দা ঝর্ণা। এর শীর্ষে উঠতে হলে পাশের পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে উঠতে হবে।
পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
ছাগলকান্দা ঝর্ণা থেকে ফিরতি পথে হাতের বায়ে আরেকটি ঝিরিপথ পড়ে। এ পথে সামনে এগুলেই একটা ক্যাসকেড পড়বে। এই ক্যাসকেড বেয়ে উপরে ওঠার সময় সাবধান থাকতে হবে। ওপরে উঠে সামনে আবারো দুটি ঝিরিপথ, যার শেষ প্রান্তে আকস্মিক দুটি ঝর্ণা অবাক করে দেবে। ঝর্ণা দুটি উপভোগ করে কমলদহ ঝর্ণার কাছে প্রথমে যেখানে ঝিরিপথ দুভাগ হয়েছিল সেখানে ফিরে আসতে হবে।
এবার ডানের ঝিরি পথে যেতে হবে যেখানে কাছেই অপেক্ষা করছে দারুণ একটি ঝর্ণা। এই ঝর্নার পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে পাওয়া যাবে আরো একটি ঝিরিপথ। এ পথে এগিয়ে গেলে পড়বে আরেকটি ক্যাসকেড। এর উপরের ঝিরিপথে স্বাগত জানাবে ছোট্ট একটি ঝর্ণা। ঝর্ণাটির পাথর বেয়ে উপরে উঠে যাওয়ার সময় মনে হবে কোন অন্ধকার সুরঙ্গ গিলে ফেলতে যাচ্ছে। এই পথটি ২ মিনিট পরই পৌছে দেবে পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার কাছে।
এই ঝর্ণা দেখার পর ফিরতে হবে সেই ছোট ঝর্ণার ক্যাসকেডের কাছে। ক্যাসকেড পার হয়ে হাতের বামে পাহাড়ে ওঠার ছোট্ট রাস্তা পাওয়া যাবে। পাহাড়ে ওঠার পর দেখা যাবে রাস্তা আবারো দুভাগ হয়ে গেছে। যেটি পাহাড়ের উপরের দিকে সে রাস্তা ধরে এগোলে তুলনামূলক বড় রাস্তায় তিন মোড়ে পড়বে। এখানে ডান দিকের রাস্তাটি ঝরঝরি ঝর্ণার পথ। আর সামনে এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে পাঁকা রাস্তা। এ পথে নায়নআশ্রম ও ফরেস্ট অফিস হয়ে সোজা বড় দারোগার হাট স্টেশনে পৌছা যাবে।
পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
সহস্রধারা-২ ঝর্ণায় যাওয়ার উপায়
কমলদহের মত সহস্রধারা-২ ঝর্ণার ট্রেইলটিও সহজ। তবে এই ট্রেইলে ঝর্ণা ছাড়াও আছে চমৎকার সহস্রধারা লেক, ওয়াটার ডেম, এবং পুরোনো মন্দির। সহস্রধারা-২ ঝর্ণার ট্রেইলে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগার হাট বাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মাটির রাস্তা পর্যন্ত আসতে হবে। এখানে ভাড়া ২০ টাকা নিতে পারে। মেটে পথ ধরে সহস্রধারা লেক পর্যন্ত যেতে প্রায় ২৫ মিনিট হাটতে হবে। সহস্রধারা-১ নামে পরিচিত ঝর্ণাটির অবস্থান সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভেতর।
মাটির রাস্তা ধরে হেটে গেলে প্রথমেই পড়বে সহস্রধারা সেচ প্রকল্প; এটিই সহস্রধারা লেক নামে পরিচিত। ঝর্ণার পানি ব্যবহার করে সেচ প্রকল্পের কাজ চলে। এই পথটি উভয় পাশে প্রচুর গাছ-গাছালিতে ভরপুর। এখানেই পুরোনো মন্দির, বুদবুদকুন্ড এবং ওয়াটার ডেম সব একসাথে পাওয়া যায়।
মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় প্রতি বছর স্থানীয় মেলা বসে। লেকের বামপাশের পথ ধরে এগিয়ে গেলে ঘাট থেকে সহস্রধারা-২ ঝর্ণায় যাওয়ার নৌকা পাওয়া যাবে। নৌকা ভাড়া মাথাপিছু ৪০ টাকা পড়তে পারে। লেক দিয়ে ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এই ঝর্ণাটি মুল সহস্রধারা ঝর্ণা নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। খুব সরু ও তুলনামূলক উচু এই ঝরনাটির ওপরে ওঠা বেশ কষ্টকর।
পড়ুন: বর্ষাকালে বাংলাদেশের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান
সহস্রধারা ছাড়াও এই ট্রেইলটি আরো ২ থেকে ৩ টি ঝর্ণার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। এ সবকিছু দেখে ছোট দারোগার হাটে ফিরতে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যায়।
২ বছর আগে
সিঙ্গাপুর ভ্রমণ: সাগরের উপকন্ঠে অভিজাত উদ্যাননগরী
করোনা মহামারির ফলে দীর্ঘ লকডাউনের পর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে পর্যটন দেশগুলো। সেই সারিতে আছে উদ্যাননগরী হিসেবে খ্যাত পরিচ্ছন্ন শহরের দেশ সিঙ্গাপুরও। ২০১৯ এর সমীক্ষানুযায়ী, পৃথিবীর সর্বাধিক ভ্রমণকৃত শহরগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর শীর্ষ পাঁচ-এ অবস্থান করছে। সিঙ্গাপুর পর্যটন বোর্ড-এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৯১ লাখ দর্শনার্থী সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছিল যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে তিনগুণ। কি কারণে দেশটি এত বেশি দর্শনার্থীদের আকষর্ণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, এর বিশেষত্বটাই বা কি- সে ব্যাপারে বিস্তারিত নিয়েই এবারের ফিচার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ।
সিঙ্গাপুর-এর দর্শনীয় জায়গাগুলো
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী ৭২৮.৬ বর্গকিলোমিটারের এই ছোট্ট দেশটির সৌন্দর্য্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের কাছে এক অপার বিস্ময়।
প্রথমেই বলা যায় ঐশ্বর্যময় মেরিনা বে স্যান্ডস-এর (Marina Bay Sands) কথা। এই রিসোর্ট কমপ্লেক্সটির বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে এর শপিং মল যার মাঝ দিয়ে খাল প্রবাহিত হয়েছে, আর্টসায়েন্স মিউজিয়াম এবং মেরিনা বে স্যান্ডস স্কাইপার্ক অবজারভেশন ডেক যেখান থেকে ডাবল হেলিক্স ব্রিজ (Double Helix Bridge), বন্দর, সমুদ্র তীরবর্তী বাগান ও দিগন্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়বে।
এখানকার মূল আকর্ষণ হলো মার্লিয়ন (Merlion) যেটি হলো সিংহের মাথা এবং মাছের দেহের সমন্বয়ে একটি অদ্ভূত ভাস্কর্য। মুখ থেকে ফোয়ারা বের হতে থাকা এই ৭০ টন ওজন এবং ৮.৬ মিটার লম্বা ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে সিঙ্গাপুরের এক পৌরাণিক প্রাণির আদলে।
বিশ্বের বৃহত্তম দৈত্যাকার নাগোরদোলায় চড়তে হলে যেতে হবে সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার-এ। এখান থেকে দিগন্তরেখার পাশাপাশি মাধ্যাকর্ষণের ভয় মিশ্রিত দৃষ্টি বিস্তৃত হবে ইন্দোনেশিয়ার স্পাইস দ্বীপপুঞ্জ এবং মালয়েশিয়ার জোহর প্রণালী পর্যন্ত।
৩ বছর আগে
ভ্রমণপিপাসু মানুষে মুখরিত মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা পাড়ে গড়ে উঠেছে মিনি কক্সবাজার খ্যাত মোহনপুর পযর্টনকেন্দ্র। শত শত ভ্রমণপিপাসু ও বনভোজনকারী দলের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এলাকাটি।
৩ বছর আগে