বাদাম
স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার উপকারী
একাডেমিক পড়াশোনা, গবেষণাধর্মী কাজ ও কর্মজীবনের উন্নতির জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি আরও একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে স্মরণশক্তি। প্রতিটি মানুষেরই স্বাভাবিক বিকাশের পরিচয় বহন করে এই শক্তি। শুধু তাই নয়, নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনে এর তুলনামূলক উপস্থিতির ভিত্তিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে বিশেষত্ব সৃষ্টি হয়। চর্চা বা সাধনার পাশাপাশি এই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কিছু পুষ্টিকর খাবার। সময়মতো সুফল পেতে এই খাবারগুলোতে শৈশব থেকেই অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। চলুন, স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সেরা খাবারগুলোর তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে উপকারী ১০টি খাবার
হলুদ
যে কোনো রান্নায় বহুল ব্যবহৃত এই উপকরণে রয়েছে পুষ্টি উপাদান কারকিউমিন। এটি মূলত এক ধরনের যৌগ, যার মধ্যে আছে উৎকৃষ্ট প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণে কাজে লাগে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় ও স্মৃতিশক্তি হারানোর ঝুঁকি হ্রাস করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে সতেজ রাখে। এভাবে তরকারিতে নিয়মিত হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। এটি আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ (স্মৃতিশক্তির পর্যায়ক্রমিক অবনতি) রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
চর্বিযুক্ত মাছ
মলা, ঢ্যালা, আইলা, টুনা, সরপুটির মতো সামুদ্রিক মাছগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই অপরিহার্য চর্বিগুলো মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমেগা -৩ স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখে।
এই পুষ্টি উপাদান কোষগুলোর কাঠামোগত অখণ্ডতায়ও অবদান রাখে। নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া মস্তিষ্ক জনিত যাবতীয় সমস্যা রোধ করে সামগ্রিক মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য-উপাদানের একটি বৃহৎ অংশের যোগান দেয়। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ভারী খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ রাখা উচিৎ।
পালং শাক
ঘন পাতাযুক্ত এই সবুজ শাক ভিটামিন কে, ই, ও ফোলেট সমৃদ্ধ। ভিটামিন কে স্ফিংগোলিপিড গঠনে সহায়তা করে, যেটি মূলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ গঠন ও কোষের সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন-ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
আর ফোলেট জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোতে সাহায্য করে, যার কারণে বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের সাধারণ অবনতির ঝুঁকি কমে। নিয়মিত পালং শাক খাওয়া মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায় এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিরুদ্ধে মস্তিষ্ককে রীতিমতো দুর্গ বানিয়ে তোলে। প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত এক বেলা পালং শাক রাখা হলে দীর্ঘ মেয়াদে কাঙ্ক্ষিত জ্ঞানীয় সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
বাদাম
আখরোট, কাজু বাদাম, এমনকি চিনাবাদাম শুধু মস্তিষ্কের জন্যই নয়; সমস্ত দেহের জন্য বেশ উপকারী। এই বাদামগুলো ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মস্তিষ্ক-সহায়ক উপাদানে ভরপুর। ভিটামিন-ই মস্তিষ্কের কোষের অম্লতা-জনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর চর্বি মস্তিষ্কের ভেতরে কোষের গঠনে অংশ নেয় এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতায় সাহায্য করে। বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে, যা জ্ঞানীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সরাসরি অংশ নেয়। বাদাম স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি দারুণ সংযোজন হতে পারে। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম নিত্যদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট। বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে এগুলোকে আরও মুখরোচক করে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
গাজর
বিটা-ক্যারোটিনের এই চমৎকার উৎসটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। বিটা-ক্যারোটিন মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই স্ট্রেসের কারণে জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোর ধীরে ধীরে অবনতি হয়। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ সমুন্নত রাখে।
গাজরে থাকা ভিটামিন সি ফ্রি-র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে। বার্ধক্য-জনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত গাজর খাওয়া যেতে পারে। সালাদ, জুস, এমনকি রান্না করা খাবারের মাধ্যমেও গাজর অন্তর্ভুক্ত করা যায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
মুরগির ডিম
এই বহুমুখী ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারটি কোলিন ও ভিটামিন বি-১২ সহ একটি সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। কোলিন হলো অ্যাসিটাইলকোলিনের প্রধান উপাদান, যেটি স্মৃতি ধরে রাখা ও কোনো কিছু শিখতে সাহায্য করে। যে কোনো বয়সেই জ্ঞানীয় কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রাখতে ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করার জন্য পর্যাপ্ত কোলিন গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
ভিটামিন বি-১২ স্নায়বিক অংশগুলোর অখণ্ডতা বজায় রেখে মস্তিষ্ককে অটুট রাখে। এটি স্নায়ু তন্তুর সুরক্ষা এবং কোষগুলোর মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ নিশ্চিত করে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন মুরগির ডিম খাওয়া আবশ্যক। শুধু সকালের নাস্তাতেই নয়, অন্যান্য তরকারির সঙ্গে ডিমের অতিরিক্ত সংযোজন খাবারটিকে বেশ উপাদেয় করে তোলে। এছাড়া শুধু সিদ্ধ ডিমও প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কুমড়োর বীজ
পুষ্টির পাশাপাশি সুস্বাদু সবজিগুলোর মধ্যে চালকুমড়ো অন্যতম। এর বীজে আছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে অংশ নিয়ে কোনো কিছু শেখা এবং স্মৃতি ধারণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। এটি নিউরোট্রান্সমিটার সিগন্যালিং নিয়ন্ত্রণ তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক নিউরোপ্রোটেকশনে অবদান রাখে, যা যে কোনো পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য জরুরি।
কুমড়োর বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে। তাই স্মৃতিভ্রষ্ট থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত এই বীজ খাওয়া আবশ্যক। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে জুড়ে নিমেষেই এটি উপাদেয় মিশ্রণ তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
মসুর ডাল
ফোলেট, আয়রন ও ফাইবারে ভরপুর এই সহজলভ্য খাবারটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। সেরোটোনিন, ডোপামিন ও নোরপাইনফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণের কাজ করে ফোলেট। এর মাধ্যমে মেজাজ, স্মৃতিশক্তি ও যাবতীয় জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।
পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ স্মৃতিভ্রষ্ট সম্পর্কিত নানা ধরণের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। অন্যদিকে আয়রনের কাজ হলো মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন করে জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া চালু রাখা।
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যাবলির জন্য মস্তিষ্কের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অংশও ঠিক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অন্ত্র সুস্থ থাকলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় রসদ থেকে বঞ্চিত হয় না। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করে ফাইবার।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ফুলকপি
ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ফুলকপি। ভিটামিন কে-এর কাজ মস্তিষ্কের কোষ গঠনে দরকারি উপাদান সরবরাহ করা। সালফোরাফেনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। ফুলকপিতে থাকা যৌগগুলো জ্ঞানীয় কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্মরণশক্তি উন্নয়নে সহায়ক। বার্ধক্যে স্মরণশক্তির অবনতি থেকে বাঁচতে কম বয়স থেকেই ফুলকপির খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। রান্না ছাড়াও সালাদে বা সাইড ডিশ হিসেবে ফুলকপি একটি উযুক্ত খাবার।
কমলা
নানা ধরনের সতেজ ফলের মধ্যে স্মরণশক্তির জন্য সহায়ক ফল হলো কমলা। বাদাম ও গাজরের মতো এটিও মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে, কেননা এতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সহায়তা করে, যা সঠিক মানসিক অবস্থার জন্য দরকার।
এছাড়া কোলাজেন সংশ্লেষণেও এটি একটি আবশ্যিক উপাদান, কারণ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ ও রক্তনালীগুলোর গঠন বজায় থাকে। প্রতিদিন অন্তত একটি পুরো কমলা খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতাকে উন্নত রাখার সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
তাছাড়া বয়সের সঙ্গে জ্ঞানীয় অবনতির ঝুঁকি কমাতেও এই অনুশীলন আবশ্যক। সরাসরি ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি কমলার তাজা জুস একটি জনপ্রিয় কোমল পানীয়।
পরিশিষ্ট
এই ১০টি পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে। হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে কমলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি খাবারেই রয়েছে অনন্য পুষ্টিগুণ। পুরো সপ্তাহের খাদ্যাভাসে এই খাবারগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে যে কোনো কাজের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তরোত্তর অনুশীলনও চালিয়ে যেতে হবে যুগপৎভাবে। এরই দৌলতে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত যে কোনো প্রতিযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
৫ মাস আগে
গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রে তৈরি হওয়া ল্যাকটেজ নামক পাচক এনজাইম দুগ্ধজাত খাবারের ল্যাকটোজ বা চিনিকে ভেঙে তা হজমের জন্য উপযোগী করে তোলে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ল্যাকটেজ যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় ল্যাকটোজ হজমে। ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স নামে পরিচিত হজমের এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় পেট ব্যথা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট ব্যক্তিরা গরুর দুধসহ দুধের তৈরি নানান ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলেন। এতে একদিকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকলেও অন্যদিকে তারা বঞ্চিত হন ক্যালসিয়ামের মতো অপরিহার্য পুষ্টিগুণ থেকে। কিন্তু দুধ ছাড়াও এমন কিছু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার আছে যেগুলো সামগ্রিকভাবে দুধের পুষ্টির যোগান দিতে পারে। চলুন, গরুর দুধের সেই স্বাস্থ্যসম্মতো বিকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে গরুর দুধের ১০টি উৎকৃষ্ট বিকল্প
বীজ জাতীয় বা দানাদার খাবার
নিয়মিত শরীর চর্চায় শণ, তিল, চিয়া, সয়ার মতো বীজগুলো রীতিমতো সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। তন্মধ্যে চিয়া বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। এমনকি এই পরিমাণ বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্যে থাকা ক্যালসিয়াম থেকেও বেশি।
আরও পড়ুন: কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
চিয়া বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবারের জন্যও সুপরিচিত। এই বীজগুলোতে রয়েছে ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ সুস্থ হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। দুই টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় ১.৭৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
এক টেবিল চামচ তিলের বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০.৮৮ গ্রাম। তিলের বীজে আরও আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি (বিশেষত পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট), যা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতায় অবদান রাখে। এছাড়াও তিলে আছে খনিজ, ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
বীজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সয়াবিন বা সয়া দিয়ে বানানো খাবারগুলো যেমন সয়ার দুধ ও দই। এ ধরনের ফোরটিফাইড বা সংরক্ষিত খাবারগুলো মূলত গরুর দুধে অ্যালার্জি থাকা লোকদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণেই তৈরি। রান্না করা সয়া খাবারের তুলনায় অপরিপক্ক কাঁচা বীজগুলোতেই ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে বুফে খেতে যেসব রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন
দুধের উৎকৃষ্ট বিকল্প সুষম খাবার হিসেবে কাজ করতে পারে মটরশুঁটি। এই সবুজ বীজে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, ফাইবার, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। এটি ভূমিকা রাখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, হিমোগ্লোবিন তৈরিতে, হৃদপিন্ডের সুস্থতা, ও চোখের জ্যোতি বাড়ানো সহ ওজন নিয়ন্ত্রণে।
বাদাম
প্রোটিন, ফাইবার ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ চিনা বাদাম, পেস্তা, আখরোট, কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়; বেশ উপাদেয়। এছাড়াও অন্যান্য খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, তামা এবং সেলেনিয়ামের পাশাপাশি আছে ভিটামিন ই, বি-২, ও ফোলেট। বাদামে থাকা উপাদান দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে অবদান রাখতে পারে।
এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়ামের অনুপাতে কাঠ বাদাম সবার থেকে এগিয়ে। এক আউন্স কাঠ বাদামে থাকে প্রায় ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
সয়া দুধের মতো বাদামের দুধও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। সুষম খাবারের সঙ্গে মুখরোচক খাবারের সংমিশ্রণে বাদামের কোনও জুড়ি নেই। কম ক্যালোরি সম্পন্ন বাদাম দুধে গরুর দুধের তুলনায় কার্বোহাইড্রেট থাকে অনেক কম। ওজন ঠিক রাখার জন্য বেশ সুখ্যাতি থাকলেও এগুলো হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে তাদের এই খাবারগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বাঁধাকপি
চর্বি, চিনি ও কোলেস্টেরল-মুক্ত এবং স্বল্প পরিমাণে সোডিয়াম ও ক্যালরি যুক্ত বাঁধাকপি দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের সেরা উৎস। দুই কাপ কাঁচা বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়াম থাকে প্রায় ১.৮ গ্রাম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই সবুজ সবজি কোষ প্রাচীরের ক্ষয়কে বিলম্বিত করতে পারে।
অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাবারের ন্যায় বাঁধাকপিতেও আছে অক্সালেটের মতো যৌগ, যেগুলো ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই এই অক্সালেটের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বাঁধাকপি ভালোভাবে রান্না করে নেওয়া উচিৎ। রান্না ছাড়া সেদ্ধ করে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সালাদ হিসেবেও রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
ব্রকলি বা সবুজ ফুলকপি
একই গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ হওয়ায় বাঁধাকপির মতো ফুলকপিও ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। বিপাকের সময় শরীরে নানা ধরনের ফ্রি র্যাডিকেল নামক জৈব অণু তৈরি হয়। খুব বেশি পরিমাণে এই ফ্রি র্যাডিকেল এতটাই বিষাক্ত যে তা কোষের ক্ষতি সাধন করে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই জৈব অণুগুলোর পরিমাণকে মাত্রা ছাড়াতে দেয় না।
দেহের শক্ত হাড়ের জন্য ক্যালসিয়ামের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে কোলাজেন। এই কোলাজেন তৈরিতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন সি। রক্ত জমাটের পাশাপাশি হাড়ের গঠনে কাজ করে ভিটামিন কে। আর এই ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও কে সবই থাকে ব্রকলিতে। এক কাপ হিমায়িত ব্রকলিতে প্রায় ০.৮৭ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
ছোট মাছ
মানবদেহের কাঠামোকে সুদৃঢ় করে রাখে হাড়গুলো, আর এই হাড়ের দৃঢ়তা প্রদানের দরকারি উপাদান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছের মধ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর ছোট মাছ আর দুধ একই পরিমাণে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
ছোট মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ গ্রাম প্রতি ৮.৬ থেকে ১ হাজার ৯০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, আয়রন এবং জিঙ্ক, যেগুলো দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি ও রক্তের সুস্থ পরিচলনে অবদান রাখে। গ্রামে ও শহরে অধিক বিক্রিত ছোট মাছগুলোর মধ্যে পুটি, কাচকি, মলা-ঢ্যালা ও দারকিনা অন্যতম।
মিষ্টি আলু
তিন বেলা খাবারে সঙ্গে মিষ্টি আলুর সংযোজন হতে পারে প্রতিদিনের সর্বোচ্চ পুষ্টির নিশ্চয়তা। একটি বড় মিষ্টি আলু খাওয়া মানে প্রায় ০.৬৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশ করা। কম ফ্যাটযুক্ত এই সবজিতে আছে ভিটামিন সি, এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এই পুষ্টিগুলো বার্ধক্যজনিত প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে উপযোগী।
সরিষা শাক
শাক-সবজি ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস পরিচালনার শুরুটা হতে পারে সরিষা শাক দিয়ে। থায়ামিন (বি-১) নিয়াসিন (বি-৩) এবং পাইরিডোক্সাইন (বি-৬) সহ বি ভিটামিনের এক বিরাট উৎস এই শাক। এরা মূলত হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় কাজ করে। তবে সরিষায় থাকা ভিটামিন কে অংশ নেয় হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং ফ্র্যাকচার থেকে রক্ষা করতে। কাটাছেড়ার সময় ধমনীতে ক্যালসিয়ামের প্রাচীর গড়ে রক্তক্ষরণ রোধ হয়। এই প্রাচীর গড়াতে যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় তার জন্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে ভিটামিন 'কে'।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
এক কাপ রান্না করা সরিষার শাকে ১.০৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এর সঙ্গে বাঁধাকপি যুক্ত করে তৈরি খাবার দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে।
পালং শাক
দেশের সাধারণ উপাদেয় সবজি পালং শাকের প্রধান উপাদান ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, এবং পটাসিয়াম। প্রতি কাপ শাকে ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি বিদ্যমান। দাঁত ও হাড়ের যত্নে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে পালং শাক রাখাই শ্রেয়।
এতে থাকা ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি শরীর যথাযথভাবে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারছে কি না তা নিশ্চিত করে। কম ক্যালরি থাকায় এটি ওজন কমানোর জন্যও উপযুক্ত। এছাড়াও এই শাকে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষমতা, যেটি ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
ঢেঁড়শ
বিস্ময়কর হলেও দুগ্ধজাত খাবারের ভালো একটি বিকল্প হচ্ছে ঢেঁড়শ। এক কাপ ঢেঁড়শে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ০ দশমিক ৮২ গ্রাম। এছাড়াও একটি সুষম খাবার হওয়ার জন্য যতটুকু পুষ্টি প্রয়োজন তার সবটুকুই আছে এতে। ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফোলেট এবং ফাইবারের এই উৎকৃষ্ট বাহক ব্যবহৃত হয় নিত্যদিনের তরকারিতে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম সামগ্রিকভাবে শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।
এর উপযোগীতার মধ্যে আরও রয়েছে বদ হজম দূরীকরণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য।
শুকনো ডুমুর
সুস্বাদু ফল ও মিষ্টি জলখাবারের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের একটি উপযুক্ত জৈব উৎস হচ্ছে ডুমুর। আধা কাপ শুকনো ডুমুর প্রায় ১.২১ গ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের উপস্থিতি হাড়ের রক্ষণাবেক্ষণে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
ডুমুর প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি, তাই এতে আলাদা করে কোনও চিনি দেওয়া লাগে না। তাই চকোলেট, কেক এবং বিস্কুটে মতো প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির ক্ষেত্রেও এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো দূর করতে সহায়তা করে।
শেষাংশ
সর্বপরি, এই ১০টি খাবার গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাসের সহায়ক হতে পারে। বাদামসহ বীজ জাতীয় দানাদার খাবারের সাইড ডিশগুলোর যে কোনোটি যথেষ্ট নিত্যদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে। এরকম হাল্কা নাস্তার তালিকায় দারুণ প্রতিস্থাপন হতে পারে শুকনো ডুমুর অথবা মিষ্টি আলু। দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে তরকারিতে রাখা যেতে পারে বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক বা সরিষা শাক। এছাড়া ঢেঁড়শ কিংবা ছোট মাছ দিয়েও পরিপূর্ণ করা যেতে পারে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা।
সবমিলিয়ে, এই খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়া মানেই দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ জীবনের মাইলফলক রচনা।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
১০ মাস আগে
কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক: বিকল্প কিছু স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার
প্রায় সব বয়সের লোকেদেরই হাল্কা নাস্তা হিসেবে প্রিয় পছন্দ কেক ও বিস্কুট। জন্মদিন সহ বিভিন্ন উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে সবচেয়ে ভালো লাগা উপহারগুলোর মাঝে অনায়াসেই জায়গা করে নেয় এই মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো। কিন্তু খাবারগুলো যে কতটা ক্ষতিকর তা দুঃখজনকভাবে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। নিত্য দিনের খাদ্যাভাসে এই খাবার দু’টির উপস্থিতি দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। কিন্তু কেক ও বিস্কুটের বিকল্প হিসেবে এমন কিছু খাবার রয়েছে, যা নিমেষেই মুক্তি দিতে পারে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি থেকে। চলুন, কেক ও বিস্কুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোর পাশাপাশি সেই বিকল্প পুষ্টিকর খাবারগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
কেক ও বিস্কুট খেলে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়
কেক ও বিস্কুট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, কারণ এতে থাকে প্রচুর চিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অধিক পরিমাণে খাওয়া হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ হতে পারে।
এ ধরণের বেকারি পণ্যগুলোতে সাধারণত তরল উদ্ভিজ্জ তেল, মাখন, পাম এবং নারকেল তেল ব্যবহার করা হয়। ফলে, এগুলোতে থাকা চর্বিগুলো কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, পাম তেল সস্তা এবং খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক তেলগুলোর মধ্যে একটি। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া শর্করা এবং স্টার্চ সম্পন্ন খাবারের কারণে দাঁতে ক্যাভিটিস হতে পারে। কেক ও বিস্কুটের কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন: জবা ফুলের চা: গুণাগুণ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও বানানোর পদ্ধতি
সাধারণ মিষ্টি বিস্কুটে প্রতি ২৫ গ্রামে শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম লবণ থাকে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া এতে দেহে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, বিধায় শরীর ভরপুর অনুভূত হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
এ ধরণের বেকারি পণ্যে থাকে বিউটিলেটেড হাইড্রোক্সাইনিসোল (বিএইচএ) এবং বুটিলেটেড হাইড্রোক্সিটোলুইন (বিএইচটি)। এগুলো হলো প্রিজার্ভেটিভস যা মানুষের রক্তের জন্য ক্ষতিকর।
১ বছর আগে