অনাবৃষ্টি
কুড়িগ্রামে অনাবৃষ্টি ও ব্যাপক লোডশেডিংয়ে আমনের খেত ফেটে চৌচির
কুড়িগ্রামে অনাবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকেরা।
মৌসুমের শুরুতেই খরায় আমনের অনেক বীজতলা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এতে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রান্তিক চাষিরা।
বৃষ্টি না হলে আমন ফসলের আশানুরুপ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষকেরা।
আমন আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত ও জমিতে লাগানো চারা বাঁচাতে এখন কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। বর্ষানির্ভর আমন চাষে এখন অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে খরচ বাড়ছে কৃষকের।
জেলার কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন। এর মধ্যে সদরের হলোখানা, ভোগডাঙ্গা, পাঁচগাছী, উলিপুর উপজেলার থেতরাই, বজরা, ধামশ্রেণী ও রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, নাজিমখা ও ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ।
বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকেরা গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের খেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে রয়েছে ৩০ হাজার সেচযন্ত্র। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার হেক্টর আমন বীজতলা।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাণীশংকৈল মিষ্টি আলু চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন
এই মৌসুমে এভাবে অনাবৃষ্টি থাকলে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
কৃষকরা বলছেন, জুনের শেষ সপ্তাহ ও জুলাইয়ের প্রথম চার-পাঁচ দিন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠের অনেক জমিতে পানিও জমে গিয়েছিল। কিন্তু তখন জমি প্রস্তুত না হওয়ায় ও বীজতলার চারার বয়স কম থাকায় কৃষকেরা ধানের চারা লাগাতে পারেনি।
সাধারণত জুলাইয়ের এক-দুই সপ্তাহ পর থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এখন বৃষ্টির দরকার, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ১৫-২০ দিন ধরে কুড়িগ্রামে ভারি বৃষ্টি হয়নি। এই সময়ে কখনো টিপটিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হলেও বর্ষানির্ভর আমন চাষের জন্য তা নগন্য।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন হায়দার বলেন, গত ১৫ দিন ধরে আমাদের এলাকায় ভারি বৃষ্টি হয়নি। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে।
একদিকে খরা আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবাদ করার চেয়ে না করাই ভালো মনে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের চৈতার খামার গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৃষ্টি তো নাই, তার উপর ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং। এভাবে চলতে থাকলে এবার আবাদ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিলে প্রচুর খরচ। আর বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমনের সময় পার হলে ফলন ভালো হয় না।’
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কৃষক চাঁদ মিয়া বলেন, ‘গত বছরও আষাঢ়-শ্রাবণ মাস ঠিকমতো বৃষ্টি ছিল না। এবারো একই অবস্থা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এর খরচও বেড়েছে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পুরো আগস্ট মাসজুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব।
আরও পড়ুন: ‘শাম্মাম’ চাষে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক মণ্ডল
কালবৈশাখীর কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে শার্শার আম চাষীরা
১ বছর আগে
খরা: খুলনায় আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কা
অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান চাষ প্রক্রিয়া প্রায় দেড় মাস বিলম্বিত হওয়ায় খুলনা জেলার ৮০ হাজারের বেশি কৃষকের আশঙ্কা যে তারা এ বছর উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্ষা মৌসুমে ৯৩ হাজার একশ’ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার পাঁচশ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর খুলনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২১ সালের জুন মাসে ৩৮৮ দশমিক ৮৯ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৫০৬ মিলিমিটার ও আগস্ট মাসে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ বছরের জুন মাসে ৯৪ দশমিক ৩৬ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৯১ দশমিক ২৭ মিলিমিটার এবং ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬১ দশমিক ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পড়ুন: দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-ভাঙা রেলপথের কাজ
চলতি মৌসুমে জেলায় তিন হাজার ছয়শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আউশ, এক হাজার তিনশ’ ১৬ হেক্টর জমিতে পাট, ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, দুইশ’ ৭৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ, দুইশ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সীম, আট হাজার দুইশ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও দাকোপ উপজেলায় নদী থেকে পানি উত্তোলন করে আমন আবাদ করা হচ্ছে। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার নদীর পানি এখনো নোনা থাকায় এ দুই উপজেলায় নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বীজতলা একশ’ শতাংশ সম্পন্ন হলেও আমন উৎপাদন কম হবে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন রোপনের অগ্রগতি কম। রোপনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আমন আবাদ হয়েছে। সাড়ে চারশ’ একর জমির উৎপাদিত পাট নদীর জোয়ারের পানিতে, আবার অন্য কোথাও গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে মাটি চাপা দিয়ে পঁচানো হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহায়তায় সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমন চাষে বিলম্বের পাশাপাশি পানখালী ইউনিয়নে তরমুজ ও সবজির উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
২ বছর আগে
ঠাকুরগাঁওয়ে অনাবৃষ্টিতে আমন চাষ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
আমনের ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা ধান রোপন করতে পারছেন না। এছাড়া ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা পড়েছেন নতুন সমস্যায়। এ অবস্থায় জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে জেলা কৃষি অফিস।
দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর একটি জেলা ঠাকুরগাঁও। বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে আমন চাষ করে অধিকাংশ মানুষ। যেখানে সেচ সুবিধা রয়েছে সেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি ও জেলার পীরগঞ্জ, হরিপুর, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক আমন চারা রোপন করছেন। সেচ এলাকায় কৃষক আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথায় চারা রোপন করছেন। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখনো বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষক।
অপরদিকে ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা পড়েছেন সমস্যায়। আমনের ক্ষেতে পানি নিতে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুতচালিত পাম্প ব্যবহার করে সেচ কাজ করার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না থাকায় তাও ব্যাহত হচ্ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপগুলিও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে ঠিকমত চলতে পারছে না। ফলে নানামুখী সমস্যায় রয়েছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার ভেলজান গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহে এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
সদর উপজেলার পারপুগী এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ৩ একর জমিতে আমন চারা লাগাবেন। জমি প্রস্তুতও করেছেন, কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমন লাগানোর সময় পার হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয় এ জেলায়। প্রত্যেক বছরের ন্যায় এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উচু জমিগুলোতে পানি থাকছে না।
তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেচ পাম্পগুলোও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হবে। কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য দাম পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পড়ুন: ফরিদপুর জেলা কারাগার: ৯১৪ বন্দির জন্য একজন ফার্মাসিস্ট, নেই চিকিৎসক
চলাচলের অনুপযোগী ফরিদপুর পৌরসভার শতাধিক কিলোমিটার সড়ক
২ বছর আগে
খুলনাঞ্চলে যেসব কারণে বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি
টানা আট মাস অনাবৃষ্টি, মাত্রাতিরিক্ত দাবদাহ, গরম বাতাসের ঝড়ো হাওয়া ও প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা না থাকায় খুলনায় এবার বোরোর আশানুরূপ ফলন হয়নি। ধান মাড়াইয়ের পর ১০ শতাংশ চিটে পাওয়া যাচ্ছে। উৎপাদনে বেশি ঘাটতি হয়েছে হাইব্রীড জাতের।
কর্তৃপক্ষ আশাবাদী ছিলেন মৌসুমে খুলনা জেলায় ২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদিত হবে, তা হয়নি।
খুলনা জেলায় এ মৌসুমে ৫৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল। আবাদ হয় ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ডুমুরিয়া জেলায়, ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে ধান কাটলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক
কৃষি কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শেষ হয়েছে। অল্প-স্বল্প মাড়াই বাকি। প্রতি হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের ধান ৪.৯৬ মেট্টিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ৪.৯৫ মেট্টিক টন।
আরও পড়ুন: সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কিনবে সরকার
খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. আতিকুল ইসলাম জানান, টানা আট মাস অনাবৃষ্টি। বোরো সেচের ওপরেই নির্ভরশীল। বীজতলা থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত ভূ-গর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। কালবৈশাখীর ঝড়ে ১১০ হেক্টর জমির বোরো আক্রান্ত হয়। দাপদাহ জনিত কারণে ১৯ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতি হয়। পুরো মৌসুমে বোরো ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহনশীল। গত মাসে খুলনায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বয়ে যায়। সবমিলিয়ে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে আগাম জাতের বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করলেন কৃষিমন্ত্রী
জেলায় হাইব্রীড জাতের বোরো আবাদের পরিমাণ বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। জেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
৩ বছর আগে
খুলনায় মাঠে মাঠে সোনালি ধান কাটার উৎসব
দিগন্ত জোড়া সোনালি ধান। পাকা ধানের শীষ দুলছে বাতাসে। ধানের ঘ্রানে মৌ মৌ চারদিক। খুলনার মাঠে মাঠে ধুম পড়েছে বোরো ধান কাটার। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ধান কাটা চলবে এপ্রিলের শেষ সময় পর্যন্ত।
খুলনায় টানা ৮ মাস অনাবৃষ্টি, কালবৈশাখীর ঝাপটা, লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ চাষির অনুকূল ছিল না। তবু বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধানের সোনালি শীষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো কৃষক পরিবারকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উঠবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: হাওরে ৯৯ ও সারা দেশে ৩৯ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মওসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
এবার খুলনা জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় শত্রুতা করে বোরো ধানের ৬ বিঘা বীজতলা নষ্টের অভিযোগ
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান শেখ বলেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার সুরভী-১ নামে একটি নতুন জাতের ধান লাগিয়েছি। এর আগে ২৮ ধান লাগাতাম। তবে রোগবালাই, পোকার আক্রমণের কারণে এবার সুরভী ধান লাগিয়েছি। ধানটি খুব পুষ্ট (পুরু) হয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে ধান লাগাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
বর্তমানে ধানের মণ ১ হাজার টাকা বলে তিনি জানান। তিনি এবার ৪০ মণ ধান পাবেন বলে আশাবাদী।
একই মাঠে ধান কাটছিলেন মো. রাকিবুল হাসান শেখ।
তিনি বলেন, আমি কৃষি, ঘের ও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এখন ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটছি। আশপাশের অনেক মাঠের ধান বৈশাখের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কাটা হবে। সুরভী ধানটি খুবই সুন্দর। ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে আগাম জাতের বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করলেন কৃষিমন্ত্রী
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ধানের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো।
তিনি বলেন, গত বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর। এ বছর আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর। যা গতবারের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৯২ টন। আর চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হাজার ৬৩২ টন। উপজেলায় চালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে আউশ আবাদ হয় ৩২০ হেক্টর এবং আমন ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর।
তিনি বলেন, এ বছর ৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ২ কেজি করে হাইব্রিড এসএলএইটএইচ বীজ, ৫৪০ জন কৃষককে ২ কেজি হাইব্রিড ধান বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। আর ১০-১৫ দিন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় বাম্পার ফলন পাবেন।
তার উপজেলাটি খাদ্য উদ্বৃত্ত একটি উপজেলা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। আর এই সময় যে ধান রোপণ করা হয় সেটি বোরো ধান। খুলনা জেলা একটি লবণাক্ত এলাকা। এখানে লবণসহনশীল ধান রোপণ করা হয়।
তিনি বলেন, এবার ৫৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়। মধ্য অক্টোবর থেকে ধান রোপণ শুরু হলেও কেউ কেউ দেরি করে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন। যে কারণে মধ্য মার্চের পরিবর্তে এবার মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ধান কাটা চলবে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তিন শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার এক হাজার ৪০ টাকা মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাফিজুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু প্রায় সাত মাস বৃষ্টি নেই এখানে। কৃষকরা খাল থেকে পানি নিয়ে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় খালের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। খালগুলোতে পানির গভীরতাও কমেছে। কোথাও কোথাও তাপদাহে ফুল ঝরে গেছে, দেখা দিয়েছে চিটা। লবণাক্ততা ও পানি সংকটে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েন। তারপরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী এই কৃষি কর্মকর্তা।
৩ বছর আগে
খুলনাঞ্চলে পানি সমস্যায় তরমুজ চাষে বিপর্যয়
কয়েক বছর থেকে খুলনা জেলার কয়রায় তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। প্রথমে দু-একজন কৃষক তরমুজ চাষ করে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার উপজেলার আমাদি ও বাগালি ইউনিয়নে ৫ গুণ বেড়েছে তরমুজ চাষ।
কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন লাভবান হবেন তবে দুর্যোগ প্রবণ এ উপকূলে গত কয়েক মাস অনাবৃষ্টি ও স্থানীয় পানির উৎস খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় খরতার প্রভাব পড়ছে তরমুজের উপর। অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে ঝরছে খরতার তাপ। কৃষকের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘেরের পানির ওপর মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ
পানির অভাবে গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ফল নষ্ট হচ্ছে। দূরের ডিপ থেকে পানি কিনে টেনে এনে কোন রকমে বাঁচিয়ে রেখেছে গাছগুলো, তবুও অনেকের কপালে জুটছে না পানি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ে তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল রূপসার ২০ চাষির
আমাদি ইউনিয়নের হরিকাটি গ্রামের শিপালী সরদার বলেন, গত বছর এলাকায় তরমুজের ফলন ভালো দেখে অন্যের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার প্রথম তরমুজ চাষ করেছেন। তবে পানির চরম সমস্যায় ভালো ফলন পাওয়া নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।
তিনি বলেন, খালে পানি না থাকায় ডিপ থেকে পানি কিনে আনতে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের চন্দ্র শেখর মন্ডল এবার প্রথম ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তার এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে পানির সমস্যার কারণে আসল টাকা উঠবে কিনা সংশয়ে রয়েছেন।
এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল চাষাবাদে কৃষি অফিসের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা দেখা মেলেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জমির ভিতরে থাকা খালগুলো খননের মাধ্যমে ও স্যালো বসানোর মাধ্যমে পানির সমস্যা সমাধান করতে পারলে তরমুজ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল হবে বলে সচেতন মহল জানান।
আরও পড়ুন: খুলনায় লবণাক্ত এলাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন
পাইকগাছা কৃষি অফিসার কয়রা উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানির সমস্যার নিরসনের জন্য খালগুলো খনন করে কৃষকের কাছে যাতে ইজারা দেয়া হয় সেজন্য জেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে। পানি সমস্যার কারণে গাছগুলোতে একটা ভাইরাস দেখা দিয়েছে, তার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তবে বৃষ্টি না হলে রোগ পুরোপুরি নিরাময় হবে না।
৩ বছর আগে