ফেনী
ফেনীতে দুই তৃতীয়াংশ জমিতে আবাদ হয়নি, খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় কৃষক
আগস্টের বন্যার কারণে ফেনীর কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গত মৌসুমের অর্ধেক জমিতেও এবার আমন চাষাবাদ হয়নি। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধু কৃষিজাত ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
জমি খালি পড়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক কৃষকেরা। প্রণোদনাসহ সার, বীজের সহায়তার কথা থাকলেও তা কাগজে কলমে। ঘরে ধান তোলার কথা থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা। ক্ষতি পোষাতে চাইছেন সরকারি সহায়তা।
জেলার সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঞাঁসহ জেলার সবখানে ফসলের মাঠের এমন চিত্র।
ফেনীতে চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছরে জেলায় আমনের আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তার মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন খেত, ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদ করা ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফলবাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ এবং ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় শুধু কৃষিজাত ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে মাত্র ১৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যেখানে গত আমন মৌসুমে (২০২৩ এর ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ২৬০ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান। অনাবাদি রয়েছে ১ হাজার ৮৭ হেক্টর জমি।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট এগ্রিকালচার কৃষিপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম’
সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমিই খালি রয়েছে। ঘরের খোরাকি কীভাবে মেটাবে সেই চিন্তা মাথায়। ধান আবাদের যেটুকু জমি ছিল। বন্যার প্রভাবে ফসলি জমি থেকে খালি পড়ে আেছে। তাই সম্ভব হয়নি আমন আবাদ।
সোনাগাজী এলাকার আরেক কৃষক এসহাক আহমেদ বলেন, বন্যার পর আরেক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকা। আর্মিওয়ার্মসহ নানা ধরনের পোকায় যেমন নষ্ট হচ্ছে ধান তেমনি নষ্ট হচ্ছে সবজিসহ সব ধরনের ফুল-ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফেনীর অতিরিক্ত উপপরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, বন্যার কারণে মাঠের অনেক জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আবাদি জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে। তবে বীজ ও প্রণোদনাসহ সার্বিক সহায়তা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আমন আবাদ বিঘ্ন ঘটায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমে সবজি আবাদ, রবি ফসল এবং বোরো আবাদে কৃষকদের উৎসাহ যোগাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে সরকার জেলার ৬ উপজেলায় ৬০ হাজার কৃষককে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় এনেছেন। এদের মধ্যে উপসি জাতের ৫ কেজি বীজ, ৫ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সারসহ মোট ২৫ কেজি কৃষি উপকরণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫ হাজার, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১১ হাজার, ফুলগাজী উপজেলায় ৯ হাজার ৫০০, পরশুরাম উপজেলায় ৭ হাজার, দাগনভূঞা উপজেলায় ১৩ হাজার ও সোনাগাজী উপজেলায় ৪ হাজার ৫০০ কৃষক রয়েছেন।
ফেনীস্থ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কৃষকদের উৎসাহিত করছে সরকার। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছেন। এরই মধ্যে উপকারভোগী ৭০ ভাগ কৃষকের হাতে পুনর্বাসন কর্মসূচির বীজ-সার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ৫ কৃষি-ইকোলজিক্যাল এলাকায় কাজ করবে ইউএনডিপি
১ সপ্তাহ আগে
ফেনীতে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর সোনাগাজী উপজেলার মান্দারি ইসলামিয়া নুরুল উলুম মাদরাসার সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মান্দারি ইসলামিয়া নুরুল উলুম মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরুল আবছারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এলাকাবাসী জানান, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১৮ নভেম্বর ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে সিএনজি চালক আবদু রব। মামলায় ১৪২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় উদ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারি গ্রামের ৩৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরির নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন
এদের মধ্যে ৬ জন প্রবাসী, সাংবাদিক, মাদরাসার অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ, মসজিদের খতিব, রিকশা ও টমটম চালক, সিএনজি চালক, মুদি দোকানদার, হার্ডওয়্যার দোকানদার, মাংস ব্যবসায়ীসহ অনেক বিএনপি কর্মী রয়েছেন।
এই মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়া হয়েছেন। এছাড়া নিরীহদের মিথ্যা মামলা থেকে বাদ দিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অহ্বান জানান তারা।
মামলার বাদী আবদুর রব বলেন, মামলার আসামিদের সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ৩ জন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কয়েকটি স্ট্যাম্পে সই নিয়েছে। পরে ঐ কাগজগুলো ফেনী মডেল থানায় তারাসহ জমা দিয়েছি। এছাড়া মামলায় কতজন আসামি বা প্রধান আসামি কে এই বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি আবদুর রব।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার বাদী মামলা দিলে থানায় তা গ্রহণ করতে হয়। তবে মামলা যাচাই-বাচাই করে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন: শ্রীমঙ্গলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির র্যালি ও মানববন্ধন
৩ সপ্তাহ আগে
ফেনী সীমান্তে কোটি টাকার পণ্য জব্দ
ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযানে ভারতীয় ২০ কেজি গাঁজাসহ ১ কোটি ১৮ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বার) রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযানে পণ্যগুলো জব্দ করা হয়।
জব্দ করা পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিপুল পরিমাণ ভারতীয় লেহেঙ্গা, শাড়ি, কাশ্মিরী শাল, থ্রি পিস, চশমা ও ২০ কেজি গাঁজা।
আরও পড়ুন: সিলেট সীমান্তে ৭০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিজিবি জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার রাজেষপুর, দেবপুর, ছাগলনাইয়া, চম্পকনগর ও মধুগ্রাম বিওপির টহলদল সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
এসময় ভারতীয় ২০ কেজি গাঁজাসহ বিপুল পরিমাণ লেহেঙ্গা, শাড়ি, কাশ্মিরী শাল, থ্রি পিস, চশমা জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, বিজিবি’র অভিযানে গাঁজাসহ ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়।
এছাড়া জব্দ করা পণ্যগুলো কাস্টমস এবং গাঁজাগুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুন: সিলেটে ভারতীয় কসমেটিক্সসহ ৫০ লাখ টাকার পণ্য জব্দ
৩ সপ্তাহ আগে
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফেনীতে ছাত্র-জনতার ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগে যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান প্রকাশ ওরফে বোমা কামরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবার দিবাগত রাতে কাজীরবাগ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: সাবেক মন্ত্রী ইমরান গ্রেপ্তার
কামরুল কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন।
যৌথবাহিনী সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কামরুলের সশস্ত্র হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তাকে মুখে কাপড় বেঁধে থাকতে দেখা যায়।
১ মাস আগে
ফেনীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি, তাঁবুতে চলছে শিশুদের চিকিৎসা
ফেনীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে ইউনিসেফের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। তাঁবুতে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ১ অক্টোবর থেকে ২০ শয্যার ওই তাঁবুতে এ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়।
শনিবার (১২ অক্টোবর) থেকে রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুইদিনে প্রায় ৫২ জন শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শয্যার তাঁবুতে স্থাপিত ওয়ার্ডে ১৮ শিশু ভর্তি রয়েছে।
প্রতিটি শয্যার পাশেই একটি করে স্ট্যান্ড ফ্যান, একটি করে স্যালাইন স্ট্যান্ড ও একটি করে রোগীদের ওষুধ রাখার ছোট ক্যাবিনেট রয়েছে।
এসময় কথা হয় ১০ মাস বয়সি মেয়ে সাফওয়ানকে নিয়ে আসা আলাউদ্দিনের সঙ্গে। শুক্রবার সকালে মেয়েকে ভর্তি করেছেন।
তিনি বলেন, মেয়ের অবস্থা এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। তাঁবু হলেও এখানে খুব সুন্দর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার এক বছর বয়সি ছেলে আবদুল্যাহকে ভর্তি করেন। এরইমধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে স্যালাইনসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বন্যার পর থেকে ডায়রিয়া পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। বন্যার পানিতে ফেনী সদর হাসপাতালের নিচ তলা ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভিড় জমান। দিনে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক রোগীকে হাসপাতালের বারান্দা ছাড়াও বাইরে গাছের নিচে বসেও চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর ইউনিসেফের পক্ষ থেকে তাঁবু স্থাপন করে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু করে।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল বলেন, হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য শয্যা বরাদ্দ মাত্র ১৮টি। অথচ ভর্তি করতে বা চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে শতাধিক রোগীকে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্যই নতুন ওয়ার্ডটি চালু করা হয়েছে। এখনও প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তবে অক্টোবরে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর হার কিছুটা কম রয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় স্থাপিত তাঁবুতে শিশুদের জন্য আলাদাভাবে ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ড চালু করা অত্যন্ত সময় উপযোগী হয়েছে। যদিও হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকা স্বল্পতা রয়েছে তবুও এ পৃথক ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন গড়ে ফেনী সদর হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকেন। ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এ তাঁবুটি এখানে থেকে যাবে। তাঁবুতে ইপিআই ক্যাম্পসহ বিভিন্ন রকম সেবা কার্যক্রম চলবে। এ ছাড়া বিশেষ জরুরি সেবাও সেখানে দেওয়া হবে।
২ মাস আগে
ফেনীতে ৮ হত্যা মামলায় হাসিনাসহ আসামি ৩০৩৭ জন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে জেলায় ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত আটটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭ জনকে।
এর মধ্যে একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আসামি করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সর্বশেষ মামলাটি দায়ের হয়েছে। গত ৫ আগস্ট দুপুরে শহরের জেলরোডে স্বামী জাফর আহম্মদকে (৫৩) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ করে স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে আইভীসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে এক নম্বর ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহকে আসামি করে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি করা হয়।
নিহত জাফর আহম্মদ পেশায় ব্যাটারি চালিত রিকশাচালক ছিলেন। তার বাড়ি সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুরের মোমিন টেইলার বাড়ি।
এছাড়া গত ৪ আগস্ট মহিপালে নির্বিচারে গুলিতে মাহবুবুল হাসান মাসুম
(২৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে একই থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এদিকে শিহাব হত্যা মামলায় ৩০১ জন, শ্রাবণ হত্যা মামলায় ৩০৫ জন, মাসুদ হত্যা মামলায় ৩৩৪ জন, সবুজ হত্যা মামলায় ৪৬৫ জন, সাকিব হত্যা মামলায় ৩৭১ জন এবং অপর একটি হত্যা মামলায় ২৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতুড়িপেটা করে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়ার ঘটনায় অধ্যক্ষের মামলা
তাদের নিহতের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দায়ের করা পৃথক মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার মোহাম্মদ মমতাজুল হকের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. এনামুল হক, সদর উপজেলার মোটবী এলাকার মো. হানিফের ছেলে মো. আলা উদ্দিন, শহরের বারাহীপুর এলাকার মৃত মো. সাদেকের ছেলে যুবলীগ কর্মী শাহাদাত হোসেন শাহীন ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শিহাবসহ ৬ জন।
তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে এসব ঘটনায় দায়ের করা পৃথক আটটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথমদিন ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে অস্ত্রধারীরা। এতে নয়জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি এবং সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, অস্ত্রধারীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
আরও পড়ুন: জামালপুরে দুই বছর আগে মারা যাওয়া ছাত্রলীগ নেতার নামে মামলা
৩ মাস আগে
ফেনীতে বন্যায় বাড়ি ফিরতে পারেনি ৮৩৫০ পরিবার, ক্ষতি ৫৩৩ কোটি টাকার
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ৭০ হাজার ৪১৫টি আধা পাকা ও কাঁচা ঘর, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বানভাসি মানুষের আনুমানিক ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর, ফেনীর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে বলা হয়েছে, বন্যায় ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার এখন অন্যের ঘরে (আত্মীয় বা প্রতিবেশীর) আশ্রয় নিয়েছে, প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে মাথার উপরে প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে বসবাস করছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৫টি ঘরের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ফেনী সদর উপজেলায় ২৫৫টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। এতে প্রায় ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়া আধা পাকা ঘর আংশিকভাবে ক্ষতি হয় ফেনী সদরে ৬৮২টি, ফুলগাজীতে ৩৫টি, দাগনভূঞায় ৮২০টি, ছাগলনাইয়া ১ হাজার ৫০টি, সোনাগাজীতে ৪৫টি। এসবের ক্ষতির পরিমাণ ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কাঁচাঘরের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৯৫টি যার মধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ২০০টি, দাগনভূঞা ৯৬০টি, ছাগলনাইয়ায় ৫ হাজার ৭০টি, পরশুরামে ৫৬৯টি, ফেনী সদরে ৬৯৬টি, সোনাগাজীতে ৬০০টি। এতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার।
আরও পড়ুন: বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: ত্রাণ উপদেষ্টা
ফেনীতে আংশিকভাবে কাঁচাঘরের ক্ষতি হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৩৩টি ঘর। যার মধ্যে ফুলগাজীতে ১ হাজার ৪৬৫টি, দাগনভূঞায় ১ হাজার ৯৮০টি, ছাগলনাইয়ায় ২ হাজার ২৭০টি, পরশুরামের ২ হাজার ৮২৫টি, ফেনী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৩৮টি ও সোনাগাজীতে ৪১ হাজার ৩৫৫টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যমতে, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী উপজেলার মোট ঘরের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৭৮টি। পৌরসভার পশ্চিম ছাগলনাইয়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় পানির প্রবল স্রোতে ঘরের পাকা দালানের পেছনের অংশ ধ্বসে পড়েছে। মেরামতে খরচ করতে হবে অন্তত ৬ লাখ টাকা।
মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর মির্জানগর গ্রামের রাকিব হোসেন বলেন, ২০ আগস্ট রাতে হঠাৎ ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এক বুক পানিতে ঘর ছেড়ে প্রতিবেশীর বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পানিতে ডুবে ঘরে থাকা মোটর, ফ্রিজ ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০২২ সালের জনশুমারি তথ্য অনুযায়ী, পরশুরাম উপজেলায় ঘরের সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৩৭টি। এ উপজেলায় ২৮ হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ঘর বন্যার পানিতে ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আনুমানিক ২৪ হাজার ৭৮৭ পরিবার।
দাগনভূঞা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, দাগনভূঞার কয়েকটি ইউনিয়নে এখনো পানি না নামায় প্রায় এক হাজার পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জনশুমারিতে ফুলগাজীতে মোট পরিবারের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৭৫টি। এসব পরিবারের মধ্যে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নে ৭ হাজার ৮৩৪টি, মুন্সীরহাট ইউনিয়নে ৫ হাজার ১৬টি, দরবারপুর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৮৩৮টি, আনন্দপুর ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৩৬টি, আমজাদহাট ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫৮৫টি এবং জিএমহাট ইউনিয়নে ২ হাজার ৯৩৬টি পরিবার রয়েছে। যাদের সবাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু করবেন। এবারে বন্যায় ফেনীতে ১০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু করবেন।
আরও পড়ুন: বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১, ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধকোটি মানুষ
কুমিল্লায় কমছে বন্যার পানি, বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছে মানুষ
৩ মাস আগে
বন্যায় বিপর্যস্ত ফেনীতে গাছতলায় দিতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটে ব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়া ও চর্মরোগসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকটে মেঝে, বারান্দা, সিঁড়ি ও গাছতলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ফেনী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক। এছাড়া রোগীদের কারও ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, সিঁড়িতে বা হাসপাতালের সামনে গাছতলায়।
আরও পড়ুন: শেরপুরে চিকিৎসক-নার্স সংকট, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৬ জন। আরেকটি ওয়ার্ডে ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৮০ জন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও ২৬ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩৬ জন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতাল আঙিনা ও বাহিরে গাছতলায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেলার ৭টি হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৪৭ হাজার ৯৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৫৪ জন। এর ভেতর ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৪৯৮ জন, সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ২২৫ জন। হাসপাতালগুলোতে নতুন ভর্তি ৫২৪ জন, এরমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৮৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে রোগী আছেন ৯১৩ জন।
উপজেলাগুলোতে দেখা যায়, সোনাগাজীতে ৬১০ জন, পরশুরামে ৫৩৬ জন, ফুলগাজীতে ৩১৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ১ হাজার ২৭২ জন, দাগনভূঁঞাতে ৬৩০ জন ও ফেনী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৭৯০ জন চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঈদে চিকিৎসাসেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
৩ মাস আগে
বন্যা নিঃস্ব করে দিয়েছে ফেনীর পোল্ট্রি খামারিদের, ক্ষতি ৩৯৬ কোটি টাকা
বিদেশ থেকে ফিরে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা শরিফ। চারটি পোলট্রি খামার ছিল তার। বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেল তার খামারে থাকা ৭ হাজার মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার। কিছু সরিয়ে বাড়ির ছাদে নিতে পারলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সেগুলোকেও বাঁচাতে পারেননি।
শরিফ বলেন, ‘কোনোদিন বন্যা হয়নি এই এলাকায়। এরকম কিছু একটা যে এসে আমাদের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা ভাবতে পারিনি। প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। আমরা পাইকারিভাবে পোল্ট্রির খাবার বিক্রি করতাম। যাদের কাছে বিক্রি করেছি তারাও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
আরও পড়ুন: নেই দাফনের সুযোগ, লাশ ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলা গাছের ভেলায়
ফেনী সদরের খাইয়ারা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে পোল্ট্রি খামার করেছিলেন মোহাম্মদ আলম। তবে সেটি এখন পানির নিচে। খামারে ২ হাজার ৮০০ মুরগি ও মুরগির বাচ্চা ছিল। বন্যার পানিতে পাঁচ শতাধিক মুরগি ও বাচ্চা ভেসে গেছে। বাকি মুরগি ও মুরগির বাচ্চাগুলো আলম ও তার ছেলে মহাসড়কের বিভাজকের ওপর এনে রাখতে পেরেছেন। কিছু মুরগি অর্ধেক দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
আলম জানালেন, ক্ষতি গুনতে হবে প্রায় দুই লাখ টাকা।
ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের আবদুল কুদ্দুস সৌদি আরব থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ধার দেনা, ব্যাংক ঋণ ও নিজের সঞ্চয় করা ৬০ লাখ দিয়ে শুরু করেন পোল্ট্রি ব্যবসা। দুই বছর ধরে বেশ ভালোভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। বন্যা কেড়ে নিলো তার সব স্বপ্ন। ২৩ আগস্ট পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হারালেন তার খামারের ৩ হাজার লেয়ারসহ বয়লার ও ৫ হাজার সোনালী মুরগি। সহায় সম্বল সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব।
এমন বিপর্যস্ত ও অসহায় অবস্থায় পড়েছেন ফেনীর আড়াই হাজারেরও বেশি পোল্ট্রি, গবাদি পশু ও ডেইরি শিল্পের উদ্যোক্তারা। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা কেড়ে নিয়েছে তাদের সবকিছু।
বন্যা ভেসে গেছে লেয়ার, বয়লার ও সোনালী মুরগীসহ ২ হাজার ৫শ মুরগির খামার। বন্যায় জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এ ছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।
আরও পড়ুন: বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২, ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮ লাখ মানুষ
সূত্র জানায়, ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।
এই অবস্থায় ক্ষতি সামলে নিজেদের সব গুছিয়ে নিতে সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনার আশ্বাস চান এই উদ্যোক্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যায় ৬৪ হাজার ১৬১টি গবাদিপশু ভেসে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ২৩ লাখ ৪ হাজার ৪১০টি হাঁস-মুরগির। সব মিলিয়ে ফেনীতে ৩৯৬ কোটি ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
প্রাণ সম্পদ অধিদপ্তর খামারিদের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খাদ্যসহ সব ধরনের সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
৩ মাস আগে
নেই দাফনের সুযোগ, লাশ ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলা গাছের ভেলায়
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী। বন্যা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। এই সব কেড়ে নেওয়ার মিছিলে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বেদনার ভয়াবহতা হৃদয়বিদারক। সব তলিয়ে যাওয়ায় মাটির অভাবে মৃত মানুষটির দাফন বা সৎকারের সুযোগ না পেয়ে ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলা গাছের ভেলায়। স্বজনের মরদেহ যেন একটু মাটির ছোঁয়া পায় সে আশায় অনেকে মরদেহর সঙ্গে কাগজে দাফনের অনুরোধ লিখে দিচ্ছেন। জীবনের এমনই ভয়াবহতা ছুঁয়ে যাচ্ছে ফেনীবাসীকে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নাজমুল হক শামীম জানান, শনিবার রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি শিশুর (৫) মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখি। কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় সেটি দাফন করা হয়েছে তা আর জানা যায়নি।
রবিবার ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে আরেকটি শিশুর লাশ।
উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা পপি মজুমদার বলেন, ‘রবিবার সকালে আমার স্বামী ডোবায় আনুমানিক পাঁচ বছরের এক শিশুর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেন। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে মরদেহটি এনে সড়কের পাশে রাখেন।’
স্থানীয় জয়নাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির চোখ দুটো ফুলে সাদা হয়ে গেছে। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শিশুটির শরীরের ভেতর পানি ঢুকে একদম ফুলে গেছে। লাশের সঙ্গে একটি কাগজে অনুরোধ করে লেখা হয়েছে- বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ লাশ পেলে যেন কবর দেওয়া হয়।
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক আ ন ম আব্দুর রহিম জানান, শনিবার সদর উপজেলার মৌটবী ইউনিয়নের সাতসতী গ্রামের নুরুল আলম (৬৫) মারা যান। পরে তার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেন।
একই দিন সদরের কালীদহ রেললাইনের পাশে একটি অর্ধগলিত মরদেহ ভাসতে দেখেছেন বলে জানান তিনি।
ওমানপ্রবাসী মাসুদ খান ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, তার বাবা আলীম উল্লাহ (৭৩) মারা যাওয়ার পর লাশ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আলীম উল্লাহ সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা। শুক্রবার ভোরে মারা যান তিনি। তখন পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে থাকায় তার দাফনের ব্যবস্থা করা যায়নি।
শনিবার স্বজনরা মরদেহ কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। সঙ্গে একটি চিরকুটে তাকে দাফনের অনুরোধ করা হয়। সেখানে ঠিকানাও দেওয়া হয়।
চিরকুটে লিখে দেওয়া হয়, ‘এই মৃতদেহটি অতিরিক্ত বন্যার কারণে আমরা দাফন করতে পারিনি। দুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আমরা পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছি। সঙ্গে আমাদের এলাকার নাম-ঠিকানাসহ ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ শুকনো জায়গা পান, তাকে কবর দিয়ে দেবেন এবং আমাদের এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন। আপনাদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব’।
ফেনী সদর উপজেলার একটি গ্রামে বন্যার পানিতে মরদেহ ভাসছে উল্লেখ করে সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ তার ফেসবুকে একটি লাশের তথ্য জানিয়ে লেখেন, কলার ভেলায় মরদেহ ভাসছে। প্লাস্টিকে লেখা, মুসলিম মহিলা। পারলে জানাজা পড়ে দিয়েন।
জানা যায়, দাফনের জন্য জায়গা না পেয়ে বানের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় শিফু (৪২) নামের ওই নারীকে। বৃহস্পতিবার বন্যায় মারা যান তিনি।
ফেনী সদর উপজেলার উত্তর ধলিয়া গ্রামের লতিফ হাজী বাড়ির মৃত নুরুল আমিনের মেয়ে শিফু। তার ভগ্নিপতি শাহেদুল হক জুয়েল জানান, শিফুর দাফনের ব্যবস্থা করে দিতে প্রশাসনের কাছে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। সহযোগিতা না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে পানিতে ভাসিয়ে দিতে হয়েছে।
এদিকে ফেনী নদীতে পড়ে নিখোঁজের তিন দিন পর মো, জাহেদুল ইসলাম (১৭) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী ফেনী নদীর আমলীঘাট সীমান্তে নিখোঁজ হওয়া যুবকের লাশটি ভাসমান অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এর আগে রবিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে রেখার জিরো পয়েন্টের আমলীঘাট এলাকার মেরকুম নামকস্থানে নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হন জাহেদুল। তিনি পূর্ব অলিনগর গ্রামের মো. ফারুক ইসলামের ছেলে।
ফেনী আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া আশ্রায়ন প্রকল্পের মো. আজিজুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ভেসে আসা পাঁচটি লাশ গত শনিবার ও রবিবার দাফন করেছেন। এছাড়াও আশ্রয়ন প্রকল্পে স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া তিনজনের লাশও দাফন করেছেন।
বন্যার পানিতে লাশ ভেসে আসার আরও কিছু তথ্য ফেসবুক পোস্টে দিয়েছেন অনেকে। তবে তাদের তথ্য যাচাই করা যায়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যায় একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার।
৩ মাস আগে