কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র
বাঁশখালীতে নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে আপাতত পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
একইসাথে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন কোটি টাকা ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, ১৭ এপ্রিলের ওই সংঘর্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৭ শ্রমিক নিহত এবং প্রায় ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এবং হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের পরবর্তী নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা-ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ডিসি ও এসপির নেতৃত্বে গঠন করা দুটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ৪৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও চিকিৎসার খরচের বিষয়ে এস আলম গ্রুপ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওখানকার শ্রমিক ও এলাকবাসীকে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত: আরও ৫ সংগঠনের রিট
জনস্বার্থে দায়ের করা পৃথক দুটি রিটের শুনানি করে মঙ্গলবার (৪ মে) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরিসহ প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত ২২ এপ্রিল আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) একটি রিট করে। অন্যদিকে একই ঘটনায় ২৮ এপ্রিল অপর রিটটি করে পাঁচ সংগঠন। সংগঠনগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) নিজেরা করি, সেফটি অ্যান্ড রাইটস ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
আদালতে এই দুটি রিটের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সৈয়দা নাসরিন শুনানি করেন। এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আরশাদুর রউফ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায় ও বিপুল বাগমার।
গত ১৭ এপ্রিল সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারায় সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান। আহত হন ৩ পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, পবিত্র রমজান মাসে কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা, শুক্রবার ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪ ঘণ্টা করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন কিছু শ্রমিক। তখনই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।
বাঁশখালী সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে।
৩ বছর আগে