বন সংরক্ষণকারী
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে; তদন্ত কমিটি গঠন
সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় লাগা আগুন অবশেষে মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে দমকল বাহিনী কাজ করছে।’
শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পানিছিটানো শুরু করেছি।’
আরও পড়ুন: সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকরী কৌশলপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে: মন্ত্রী
শরণখোলা, মোংলা এবং বাগেরহাট থেকে তিনটি ইউনিট আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
ইতোমধ্যে বন বিভাগ আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য শরণখোলা রেঞ্জের প্রধান বন সংরক্ষণকারী মোহাম্মদ জয়নালকে প্রধান করে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে: ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন
এর আগে সোমবার দুপুরে দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরে দিনের আলো ফুরিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কাজ বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র
মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৫ একর বনজুড়ে আগুন জ্বলছিল বলে জানায় এলাকাবাসী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শরণখোলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার জানান, সোমবার দুপুরে সুন্দরবনে আগুন লাগার খবর আসে। খবর পেয়ে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ স্টেশনের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই এলাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক তেমন ভালো না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পারস্পারিক যোগাযোগ করতে পারছিল না। পরে বাগেরহাট থেকে আরও একটি ইউনিট আসে।
এর আগে মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেছেন, ‘সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় অল্প কিছু জায়গায় আগুন লেগেছে। যে এলাকায় আগুন লেগেছে ওই এলাকায় সুন্দরী গাছের পরিমাণ কম। ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আগুন যাতে বনে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য ফায়ার লাইন কেটে তাতে পানি ভরে দেয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্য মতে, গত ২০ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সুন্দরবনের প্রায় ৭৫ একর বনভূমির গাছ, বিভিন্ন ধরনের ঘাস, লতাপাতা পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনে ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়, ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় ও আড়ুয়াবের খালে এবং ২০০৫ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের আড়ুয়াবের খালের পশ্চিমে তুলাতলা ও খুটাবাড়ি এলাকায় আগুন লাগে। এর পরের বছর ২০০৬ সালে তেরাবেকা খালের পাড়ে, আমুরবুনিয়া, কলমতেজিয়া, পচাকুড়ালিয়া বিল ও ধানসাগর স্টেশন এলাকায় মোট ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও ২০০৭ সালে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নলবন, পচাকুড়ালিয়া বিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী, ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, ২০১৪ সালে আবারও ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, পচাকুড়ালিয়া, তুলাতলী এবং ২০১৭ সালে একই স্টেশনের মাদরাসার ছিলা এলাকায় আগুন লাগে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগার স্টেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
৩ বছর আগে