মানবেতর জীবন
দাকোপের ঝুলন্ত পাড়ায় ৪০০ পরিবারের মানবেতর জীবন!
চারিদিকে শুধু কাদা আর কাদা। নদী ভাঙনের পর জেগে ওঠে কর্দমাক্ত চরের মাঝে বাঁশের খুঁটি আর বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে টংঘর। এই টংঘরের কারণে এই পাড়ার নাম হয়েছে ঝুলন্ত পাড়া।
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী এলাকার এ ঝুলন্ত পাড়ায় প্রায় চারশ’ পরিবারের গৃহহীন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
সুতারখালী ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে কালবগী ঝুলন্ত পাড়ায় সহায় সম্বলহীন অসহায় মানুষগুলো খরস্রোতা শিবসা নদীর তীরে টংঘর বেঁধে নিয়ে জীবন যাপন করে আসছে। তাদের নেই কোন যাতায়াতের রাস্তা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা করার সুব্যবস্থা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এখানে বসবাসকারী মানুষ নদী ও জঙ্গলে মাছ, কাকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
কথা হয় ৮ নং ওয়ার্ড এ বসবাসকারী আবদুর রউফ সরদার (৬০)-এর সঙ্গে।
আরও পড়ুন: দাকোপে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে নদী-খাল খননের দাবি
তিনি বলেন, আমার বাব দাদারা এখানে বসবাস করত। তখন আমি আমার বাবার সঙ্গে জমিতে ধান রোপন করতে গেছি। এখন তা শুধুই স্মৃতি। শিবসা নদীর খরস্রোতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেই জমি। এ পর্যন্ত ১০/১২ বার ভাঙনের কারণে ঘর সরাতে হয়েছে। এখন আর জায়গায় জমি কিছুই নেই।
বিধবা সকিনা বেগম (৫৫) বলেন, পাগল ছেলেকে নিয়ে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তবে জায়গা জমি না থাকার কারণে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য দাবি করছি।
৯ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য নিমাই রায় বলেন, আমার ওয়ার্ডে বেশকিছু মানুষের জায়গা জমি আছে। যাহা ৩২ নং পোল্ডারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চায়না কোম্পানি তাদেরকে বেড়ি বাঁধের বাইরে রেখে রাস্তা করার জন্য প্রায় ৪০০ বিঘার ওপরে জমিতে ধান রোপন করতে পারছে না।
শিবসা নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন হাবুডুবু খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দাকোপে ফসলি জমি ৫ বছরে কমেছে দেড় হাজার হেক্টর
বাব-দাদার ভিটা বাড়ি কিছুই নেই। জমি থাকতেও ফসল উৎপাদন করতে পারছে না তারা।
এছাড়াও নদী ভাঙনের কারণে ওয়ার্ডে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে নৌকায় চড়ে। সরকারি স্কুল, মন্দির, মসজিদ, ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
এলাকার মানুষ কোন মতে টংঘর বেঁধে ছেলে সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।
তিনি আরও বলেন, ঝুলন্ত পাড়ায় বসবাসকারী মানুষের জন্য মৌলিক অধিকারের কোনটাই সঠিক নেই। এলাকায় কোন মানুষ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে নিয়ে যেতে হয় প্রায়ই ৩০ কিলোমিটার দূরে দাকোপ হাসপাতালে।
তবে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে এলাকার অসহায় ছিন্নমূল ভুক্তভোগীরা।
আরও পড়ুন: দাকোপে বাঁধ ভাঙা পানিতে আমন হারানোর শঙ্কায় কৃষকরা
২ বছর আগে
সিরাজগঞ্জে বন্যায় তাঁত শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি
সিরাজগঞ্জে বন্যায় তাঁত সমৃদ্ধ এলাকার হাজার হাজার তাঁত কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও অনেক তাঁত কারখানা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে তাঁত মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছে। সেইসাথে লাখ লাখ তাঁত শ্রমিক এখন কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, এনায়েতপুর, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় ৫ লাখ পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম মেশিনে তাঁত-পণ্য তৈরি হয়। বিশেষ করে তাঁত সমৃদ্ধ শাহজাদপুর, বেলকুচি ও এনায়েতপুরে তাঁত পণ্য বেশি তৈরি হয়। এবারের বন্যায় তাঁত সমৃদ্ধ এলাকাসহ এসব এলাকার হাজার হাজার তাঁত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
যমুনায় পানি কমতে থাকলেও এখনও অনেক তাঁত কারখানা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে তাঁত কারখানার সুতা প্রস্তুত করার ভিম, লোহার ল্যাংগোজ, মেশিনের পায়া ও ইলেকট্রনিক মটরসহ সুতা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তীতে এসব তাঁত কারখানা চালু করতে নতুন করে সুতা ক্রয় ও ভিম তৈরি করতে হবে। মেরামত ও পরিবর্তন করতে হবে পাওয়াররুম-হ্যান্ডলুমের অনেক যন্ত্রাংশ।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা বাড়ছে
সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
বন্যা ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত মালিকরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ কারণে তারা আবারও তাঁত কারখানা চালু করতে হিমশিমে পড়েছে এবং চরম আর্থিক সংকটের কারণে অনেক তাঁত কারখানা চালু করার সম্ভাবনা নেই।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত কারখানা পুনরায় চালু করতে সরকারি প্রণোদনা ও স্বল্প-সুদে ঋণের দাবি করছেন তাঁত মালিকেরা।
জেলা প্রশাসক ড.ফারুক আহম্মেদ বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া তাঁত মালিক ও শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
৩ বছর আগে
খুলনা শহরের অসহায় পথবাসী নারীদের মানবেতর জীবন
খুলনা শহরের অসহায় পথবাসী নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের সহায়তা বা অন্য কোন সাহায্য মেলেনি তাদের ভাগ্যে। রাস্তায় রাস্তায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় খুলনাভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে এসব গৃহহীন মানুষের দুর্দশার বিষয় তুলে ধরতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের কার্যকরী সাহায্য পায়নি তারা।
আরও পড়ুন: খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
রূপসা ঘাট এলাকার এটলাস সী ফুডের সামনের ফুটপাতে রোদের মধ্যে কোমরের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন ভানু বেগম। গত পাঁচ বছর থেকে শহরের বিভিন্ন ফুটপাতেই থাকেন তিনি। স্বামী-সন্তান, পরিবার সবই ছিল, এখন কিছুই নেই তার। পাঁচটা বস্তা, একটি প্লাস্টিকের ড্রাম, একটা বালতি আর একটা ছেড়া তোষক নিয়েই তার রাস্তার সংসার।
আরও পড়ুন: করোনা: ঝিনাইদহে বন্ধ পার্ক কর্মীদের মানবেতর জীবন
তিনি জানান, ছোট বেলায় ফুপুর সাথে বরিশাল থেকে খুলনায় এসেছিলেন। বিয়ের পরে গর্ভবতী অবস্থায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর চাকরি করতেন এটলাস সী ফুড কোম্পানিতে। ফাতেমা নামের একটি মেয়েও ছিল তার। গত পাঁচ বছর আগে মেয়েকে হারিয়েছেন। তারপর থেকে ফুটপাতে থাকেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, রাস্তায় রাত কাটাতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। আগে থাকতেন টুটপাড়া কবর খানার মোড়ে। সেখানে একজন নাইটগার্ড রাতে নিপীড়ন করতো তাকে। আর এখন রূপসা সন্ধ্যা বাজারের কয়েকজন নাইটগার্ড ও বখাটেরা বিরক্ত করে। সোমবার রাতে তাদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় মারধর করেছে তাকে।
আরেকজন মহিলা এক বছর থেকে সন্তান নিয়ে থাকছেন খুলনা জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী রেঞ্জ অফিসের সামনের ফুটপাতে। সকাল থেকে শিশু সন্তানটিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। সন্তান হারিয়ে রাস্তার পাশে লাঠি হাতে পাগলের প্রলাপ বকছেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মানবেতর জীবন: বিচারের জন্য নিরলস লড়াই
রেঞ্জ অফিসের অপর পাশে আতিক এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ইমারুল ইসলাস জানান, গত এক বছর থেকে সাত বছরের মেয়ে নিয়ে এখানে আছে মহিলাটি। রোদ, শীত, ঝড়, বৃষ্টিতে বাচ্চা নিয়ে রাস্তাতেই থাকেন। মানুষের দেয়া খাবারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে মহিলাটির।
রাস্তায় দিনযাপন করা এসব মানুষগুলোর সরকারি সহায়তা পাওয়া সম্ভব কি না, এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খাঁন মোতাহার হোসেন বলেন, ‘পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সমাজ সেবা অফিসের সহায়তার সুযোগ নেই। ভবঘুরে হলে ময়মনসিংহ ভবঘুরে পুনর্বাসন সেন্টারে পাঠানো সম্ভব। তবে তারা বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী হলে আবেদন করলে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।’
৩ বছর আগে