নদীর বাঁধ
বাঁধ ভেঙে ফেনীতে ৭ গ্রাম প্লাবিত
তৃতীয় দফার বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
রবিবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে দুইটি গ্রামসহ সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে ফেনী পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে ১ জুলাই, ২৬ আগস্ট ও সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর মোট তিনবার বন্যার কবলে পড়েছেন তারা। নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে এ বন্যার সৃষ্টি হয়। বার বার বাঁধের মেরামত হয় আবার ভেঙে। এই অবস্থায় সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেটে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বিশ্বনাথের গোবিন্দনগর গ্রাম
স্থানীয়দের বরাতে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রবিবার সকালে ভারতী থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানির চাপে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর অংশের একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
এতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া ও কিসমত ঘনিয়ামোয়া, জয়পুর, উত্তর দৌলতপুর দক্ষিণ দিনাজপুর বৈরাগপুর প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী পশুরাম আঞ্চলিক সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও বন্যার পানিতে পুকুরের মাছ, ফসলের জমি ও অনেকের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বাঁধে আশ্রয়!
এ বিষয়ে ফুলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের জয়পুর অংশে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে।
পূর্ব ঘনিয়া মোড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে গেছে। সেই সাথে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গঙ্গাধর নদীর তীব্র ভাঙন, দিশেহারা ৩ গ্রামের মানুষ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি হলে পানি আরও বাড়বে।
৩ বছর আগে
ছাগলের সাথে বসবাস আম্পানে বিধ্বস্ত খাদিজার
এক সময় খাদিজাদের ঘর ছিল, ছিল জমিও। ৪৫ বছর আগে আবুল হোসেন শেখের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন তার স্বামীর অনেক জায়গা জমি ছিল। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে একটু একটু করে নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে তাদের জমি ও বাড়ি।
নদী ভাঙনের সাথে সাথে তারাও দূরে সরে এসে নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকে। এক সময়ে শুধু বসতভিটা ছাড়া সব জমিই কপোতাক্ষ নদীর বুকে চলে যায়। কোন রকমে নদীতে মাছ ধরে টানাপোড়নের সংসার চলতে থাকে।
আরও পড়ুন: করোনা ও আম্পানের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান গদখালীর ফুল চাষিরা
এদিকে, তার স্বামী আবুল হোসেন শেখ এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে ২০০৮ সালে অন্য একজনকে বিয়ে করে পাড়ি জমায় ভারতে। শুরু হয় খাদিজার একলা চলার জীবন সংগ্রাম।
এরপর নদীতে জাল টেনে কোন দিন ১০০ কোন দিন ১৫০ টাকা আয় করে চলতে থাকে মা, মেয়ে ও ছেলের সংসার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় তার শেষ সম্বল বসত ভিটাও নদী গর্ভে চলে যায়। রাস্তার স্লোভে পুনরায় ঘর বেধে জীবনযুদ্ধে লড়াই চলতে থাকে অভাবের সংসার।
তিনি নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি সেখানে ছাগলও পালতে থাকেন।
আরও পড়ুন: আম্পান: সাতক্ষীরায় ৬ মাসেও দুর্গত এলাকার মানুষ বাড়ি ফিরতে পারেনি
এদিকে ছেলেও বড় হয়ে অভাবের সংসার ফেলে অন্য জায়গায় চলে যায়।
গেল বছরের আম্পানে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই ঝুঁপড়িও পানিতে ভেসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আসবাবপত্র ও ঘর, নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সেখানে ঘর বাধার জায়গা না পেয়ে সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা খালের গোড়ায় রাস্তার স্লোভে ছোট ঝুঁপড়ি বেধে কোন রকমে বসবাস করছেন। সেখানে চৌকির উপরে থাকেন তিনি আর চৌকির নিচে থাকে তার পালিত ৮ থেকে ১০টি ছাগল।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা গোড়ায় ঝুপড়িতে বসবাসকারী খাদিজার সাথে স্বাক্ষাতকালে এসব কথা জানালেন তিনি।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আব্দুল গফ্ফার বলেন, আমি তাকে চিনি। তারা খুবই অসহায়। কোন জায়গা জমি নেই। আম্পানের পরে তাদেরকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সহায়তা তাকে করা হয়নি। তবে এনজিও থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের যে ঘর দিচ্ছেন সেই তালিকায় তার নাম রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনিও পাবেন। আমার ওয়ার্ডের ৪২ জনের নাম পাঠানো আছে। এর মধ্যে লটারির মাধ্যমে সাত জনকে ঘর দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য লটারি করায় তার চেয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর পাচ্ছেন।’
৩ বছর আগে