পানির অভাব
খুলনায় ইয়াসের প্রভাবে সুপেয় পানির অভাব, মরছে মাছ
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে খুলনার উপকূল কয়রার বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসলি জমি। এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের সীমাহীন দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে।
চারিদিকে এতো পানি, কিন্তু সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। খাবার পানির উৎস বন্ধ। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার স্যালাইন। রান্না তো দূরের কথা, ঘরের চৌকির ওপর থাকাও দুরূহ ব্যাপার হয়ে পরেছে। ফলে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষজন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের শিমলারাইট পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মুজিবুর রহমান বলেন, পানি রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও মসজিদে পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। পুকুর ও ঘেরগুলো নোনা পানিতে ভেসে গিয়েছে। বিশেষ করে রুই, কাতলাসহ মিষ্টি পানির মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরা এসব মাছ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না কি অবস্থা।
দশহালিয়া গ্রামের বিকাশ চন্দ্র মৃধা বলেন, ঘর-বাড়ি ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। মাছ মরে যাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল হাসান বলেন, 'এই সময় মৎস্য চাষের একটা উপযুক্ত সময়। কিন্তু নদী ভাঙনে সবকিছু শেষ। একবছরেও টেকসই বাঁধ পেলাম না। যে কারণে সামান্য জোয়ারেও পানি প্রবেশ করছে। আমার ঘর-বাড়ি, ঘেরসহ সবকিছু শেষ।'
বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা কোমড় সমান পানি সাঁতরিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করা খাবার দিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অনেকেই একবেলা খেয়ে অন্যবেলা না খেয়ে দিন পার করছেন। এছাড়া গরু-ছাগল, হাস-মুরগি এক ঘরে নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক কষ্টে পানি জোগাড় করতে হচ্ছে তাদের।
মহারাজপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্ভোগের শেষ নেই। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের সময় ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। ভাটার সময় কিছুটা কমছে। তবে মাঝামাঝি লোকালয়ে যারা থাকে ভাটার টানে ওই এলাকার পানি কমে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকায় কিছু উঁচু টিউবওয়েল রয়েছে সেটা থেকে পানি খাচ্ছে এই এলাকার মানুষ। তবে অন্য এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। হাটু পানি পেরিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার মানুষের।
তিনি বলেন, ‘মাছের ঘের-পুকুর তলিয়েছে। নোনা পানি প্রবেশ করায় অনেক স্থানে মাছ মরেছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দিন জানান, উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর এলাকা তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ১০০টি ঘের এবং ৭৫০টি পুকুর তলিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, মিষ্টি পানির পুকুরগুলোর মাছ মরে ভেসে উঠেছে। যেসব এলাকায় মাছ মরেছে সেখানে কিছুটা দুর্গন্ধও ছড়িয়েছে। সার্বিক বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদীপ বালা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েট, খাবার স্যালাইন, ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। কর্মী স্বল্পতা রয়েছে ১১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ফিল্ডে কর্মী রয়েছে ৫২ জন। এই জনবল দিয়ে উপজেলায় কাজ করতে হচ্ছে। তাদের নিজেদের বাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষ লবণ পানিতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পুকুর এবং নলকূপের পানি খেয়ে অভ্যস্ত তারা।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পানি সরবরাহ করছে। ফলে বড় ধরনের কোন সমস্যা হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় ডায়রিয়া হতে পারে। তবে প্রকোপ আকার ধারণ করেনি।’
৩ বছর আগে