দর্শন
বুক রিভিউ লিখবেন যেভাবে
সুনিপুণভাবে সৃষ্ট শিল্পের সার্থকতায় নতুন মাত্রা যোগ করে তার গঠনমূলক বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা। প্রবন্ধ বা গল্প-উপন্যাস নির্বিশেষে সযত্নে লেখা একটি বইও তার ব্যতিক্রম নয়। বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলী নিয়ে পক্ষপাতহীন অন্তর্দৃষ্টি নিছক কতক কাগজের গণ্ডি ছাড়িয়ে বইকে দান করে অবর্ণনীয় বিশালতা। এই দৃশ্যমানতা পাঠকদের কাছে বইকে আরও স্বচ্ছ করে তোলে। সঙ্গত কারণেই একটি বই ঠিক কতটা পাঠক পৃষ্ঠপোষকতা পাবে- তার রূপরেখা গড়ে দেয় বই রিভিউ। এই সৃজনশীলতারই সাতকাহন নিরূপণ করা হবে আজকের নিবন্ধে। চলুন, একটি সার্থক বুক রিভিউ লেখার ধারাবাহিক পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।
বুক রিভিউ লেখার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা উচিত
স্পয়লার ব্যতিরেকে বইয়ের সারাংশ উত্থাপন
সারসংক্ষেপের মাধ্যমে বইয়ের নির্যাস সংগ্রহ রিভিউয়ের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ঘটনাপ্রবাহ ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার সময় ক্লাইমেক্স বা প্লট টুইস্টের ক্ষেত্রে পরিমিতি বোধের পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে চূড়ান্ত পরিণতি এড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অক্ষুণ্ন থাকে বইয়ের প্রধান আকর্ষণ।
এর পরিবর্তে যে ভিত্তির ওপর বইটির পটভূমি দাঁড়িয়ে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এতে করে রহস্য উদ্ঘাটনের স্বাধীনতাটা পাঠকদের হাতে থাকে। এটি বইয়ের মতো একটি সৃষ্টিকর্মের সার্থকতার জন্য অতীব জরুরি। তাছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ সারাংশ থেকেই বিকশিত হয় সমালোচনা ও পর্যালোচনার খোরাকগুলো।
আরো পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
বইটির কেন্দ্রীয় বিষয় বিশ্লেষণ এবং যুক্তি খণ্ডন
প্রতিটি লেখার মাঝে নিহিত থাকে লেখকের দাবি ও নিজস্ব দর্শন। এই স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি লেখকের দিক থেকে তার রচনাকে ন্যায়সঙ্গত করে। আর এই মতার্দশের ওপর ভিত্তি করেই একটি লেখার অবকাঠামো তৈরি হয়। একজন রিভিউদাতার দায়িত্ব এই ভিত্তিগুলোকে জনসমক্ষে নিয়ে আসা।
একইসঙ্গে প্রয়োজন লেখকের দাবিগুলোকে সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা। এই নিরীক্ষণের আওতায় আসে ঘটনার প্রতীকীকরণ, চরিত্রের বিকাশ ও প্লট গঠন। এখানেই লুকিয়ে থাকে একটি লেখার অন্য লেখা থেকে আলাদা হওয়ার মৌলিক উপাদানগুলো। তাই এই পর্যালোচনা কেবল সমালোচনাই নয়, রচয়িতার সৃজনশীলতা খুঁজে বের করাতেও সাহায্য করে।
লেখকের রচনাশৈলী ও লেখার মূল্যায়ন
একটি বই কতটুকু নিখুঁত তা যাচাইয়ের জন্য একজন রিভিউদাতারও উপযুক্ত যোগ্যতার প্রয়োজন। সাধারণত যে কোনো শিল্পের কারিগরি দিকগুলো সাধারণ দর্শক বা পাঠকদের জন্য নয়। বিশেষজ্ঞদের বিচরণটাই এখানে বরং বেশি থাকে। তবে ব্যাকরণগতভাবে সিদ্ধ লেখা অবচেতনেই পাঠকদের হৃদয়স্পর্শ করে যায়। আর এই কারণেই বইয়ের প্রমিত রূপ মূল্যায়নে অংশ নেওয়া উচিত রিভিউদাতাদের।
সুস্পষ্ট করে বলতে গেলে বাক্যের গঠন, শব্দভাণ্ডার ও সামগ্রিক বর্ণনামূলক প্রবাহ পঠনযোগ্যতাকে উন্নত করে। রূপকের ব্যবহারটি অভিনব হলেও তার প্রাসঙ্গিকতার মাত্রা ও সাহিত্যিক আমেজ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। পাশাপাশি বইয়ের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু বা জনরার সঙ্গেও বাক্য গঠন ও শব্দ চয়নের সমন্বয় সাধন জরুরি।
আরো পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
বইয়ের শক্তিমান ও দুর্বলতম অংশগুলো তুলে আনা
একটি রিভিউকে এক নজরে দেখে বোঝার উপযোগী করার মোক্ষম উপায় হচ্ছে তুলনামূলক বিশ্লেষণ। আর এই পর্যালোচনার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রভাবকগুলো হচ্ছে শক্তি ও দুর্বলতাগুলো।
চরিত্রের বিকাশ বা উদ্ভাবনী প্লটের মতো বিভিন্ন বিষয় রয়েছে যেগুলো বইটির প্রতি পাঠকদের আকর্ষণ বাড়ায়। এই শক্তিগুলোকে উদাহরণসহ লিপিবদ্ধ করে ব্যাখ্যা করা যায়। অন্যদিকে, ঘটনার ধারাবাহিকতার আকস্মিক ছন্দ পতন এবং চরিত্রের পূর্ণতা না পাওয়ার মত বিষয়গুলো বইয়ের দুর্বলতাকে জাহির করে। এগুলোর বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্ভাব্য সমাধান দাড় করানো যেতে পারে। এটি রিভিউয়ের সময় গঠনমূলক সমালোচনার অন্যতম একটি উপাদান।
সরাসরি বই থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া
পর্যালোচনার সময় লেখকের দাবিগুলোকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে তা খণ্ডন করার জন্য প্রয়োজন প্রমাণের। এর জন্য সরাসরি লেখকের লেখা বইয়ে থাকা উদ্ধৃতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ আর হয় না। উদ্দেশ্যটি একদম নিরেটভাবে ব্যক্ত থাকলে পুরো বাক্য বা অনুচ্ছেদটি তুলে আনা যেতে পারে। তবে একদম স্পষ্ট করে বলা নেই তবে ইঙ্গিত দেওয়া আছে বা বোঝানো হয়েছে, এমন দাবিগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিরীক্ষণ দরকার।
এক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা সাধারণ উদাহরণ হলো দীর্ঘ সংলাপের মাধ্যমে চরিত্রগুলোর মাঝের সম্পর্ক ও তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে যাচাই করা। বইয়ের শক্তি বা দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করার জন্যও এই গবেষণা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপায়
অনুরূপ সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে তুলনা
তুলনামূলক পর্যালোচনার আরও একটা উপায় হলো একই ধারার বা একই লেখকের অন্যান্য কাজের সঙ্গে বইটির তুলনা করা। এই বিশ্লেষণে উঠে আসবে রচনাশৈলী, বিষয়বস্তু বা চরিত্রের বিকাশ, প্রাঞ্জলতা এবং বোধগম্যতার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য। এছাড়া অন্য বইটি পাঠকের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তার স্বাপেক্ষে রিভিউকৃত বইটির জনপ্রিয়তা পাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করা যায়।
এমনকি এই তুলনামূলক বিবৃতির মাধ্যমে কোন উপাদানগুলো বেশি চাহিদাসম্পন্ন সেগুলো চিহ্নিত হয়। ফলশ্রুতিতে বিষয়টি পাঠকদের উপলব্ধিতে আসার পাশাপাশি স্বয়ং লেখকের দৃষ্টিতেও তা ধরা পড়ে। এমনকি এটি বইয়ের মার্কেট রিসার্চের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং পাঠকদের নতুন বই কেনার সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করে।
সুসংগঠিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ
একটি সফল রিভিউয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটি পরিচ্ছন্ন ও যৌক্তিক কাঠামো। প্রথমে তথ্যপূর্ণ সারাংশ দিয়ে শুরু হবে বইয়ের প্রাথমিক উপাদানগুলোর রূপরেখা। অতঃপর এর নিরিখে ধীরে ধীরে গভীর বিশ্লেষণ হবে লেখার শৈলী এবং যুক্তি তর্ক নিয়ে। প্রতিটি পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে পরের পর্যায়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকা উচিত, যা পাঠকদের পরবর্তীতে কি আছে তা জানার জন্য উদ্যত করবে।
আরো পড়ুন: কালের বিবর্তনে বঙ্গদেশের যে ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথে
এককভাবে শুধুমাত্র লেখা ও লেখকের কথা না বলে প্রাসঙ্গিকভাবে অন্যান্য অনুরূপ কাজেরও হস্তক্ষেপ ঘটানো প্রয়োজন। পরিশেষে ব্যক্তিগত মতামতের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে একটি তথ্যনির্ভর সুপারিশ বা বইটি পড়ার প্রতি নিরুৎসাহিতকরণ অন্তর্ভূক্ত হবে।
ব্যক্তিগত প্রতিফলন
একটি বই একজন পাঠকের ব্যক্তিগত পর্যায়ে কতটা অনুরণন ঘটাতে পারছে তার ওপর নির্ভর করে বইটির সফলতা। তাই বইটি পড়ার পর রিভিউদাতার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল সেটাও রিভিউয়ে থাকা জরুরি। বিশেষ করে পাঠকের ভালো বা খারাপ লাগা যেখানে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেখানে অন্য পাঠকের অনুভূতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া স্বাভাবিকভাবেই পাঠক যখন কোনো বই পড়ার কথা ভাবেন তখন আগেই তার রিভিউ খোঁজার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে সেই রিভিউকে তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেন যেখানে ব্যক্তিগত অভিমতের উপস্থিতি রয়েছে। এই অনুভূতিগুলোর সঙ্গে তারা নিজেদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও আবেগের সম্পর্ক খুঁজে পান। রিভিউ পড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা বইটির কিনতে বাধ্য হন।
ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতার মাঝে ভারসাম্যপূর্ণতা বজায় রাখা
রিভিউ মানেই বইয়ের কেবল ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করা নয়। আবার এমনও নয় যে, শুধু মন্দ দিকগুলোকেই তুলে আনতে হবে। একটি পক্ষপাতহীন স্বচ্ছ পর্যালোচনার জন্য ভালো-মন্দ দুটোর মধ্যেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ সুর বজায় রাখা অপরিহার্য। এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিশ্লেষণটি ব্যক্তিগত পছন্দের বাইরে যেয়ে সুষ্ঠু প্রমাণের ভিত্তিতে করা হয়েছে। গুণগুলো অকপটে স্বীকার করার পাশাপাশি ত্রুটিগুলোর সন্নিবেশ ঘটাতে হবে গঠনমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে। এই ভারসাম্যপূর্ণতা রিভিউয়ের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং একই সঙ্গে তা পেশাদারিত্বেরও পরিচয় বহন করে।
আরো পড়ুন: ঢাকার জনপ্রিয় ১০টি বুক ও স্টাডি ক্যাফে: বইপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য
বইটি পড়ার জন্য সুপারিশ বা নিরুৎসাহিতকরণ
সবশেষে বইটি পড়ার জন্য সময় দেওয়া পাঠকের জন্য সমীচীন হবে কিনা তার একটি স্পষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত। এই ঘোষণা শেষে দেওয়া হলে তা ন্যায়সঙ্গত হয় কেননা এরই মধ্যে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে পরিবেশন করা হয়ে গেছে। সেই অর্থে চূড়ান্ত মতামতটি অবিসংবাদিতভাবে তথ্যবহুল ও যৌক্তিক হিসেবে প্রতীয়মান হবে।
বইটি সুপারিশযোগ্য হলে কোন ধরনের পাঠক সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে, তা উল্লেখ করা যায়। আর যদি তা না হয় তবে কেন বইটি পড়া উচিত নয় তার নেপথ্যে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে। এতে করে পাঠকরা তাদের নিজ নিজ সাহিত্যিক রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
শেষাংশ
একটি বুক রিভিউ লেখার মাধ্যমে মূলত প্রমাণ ও ব্যক্তিগত অন্তর্দৃষ্টির পটভূমিতে একত্রিত হয় বইয়ের মূল নির্যাস ও রচয়িতার লেখনী। সেই সঙ্গে বইয়ের শক্তি ও দুর্বলতা এবং ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতার ভারসাম্যপূর্ণ মূল্যায়ন একটি উন্মুক্ত মঞ্চ পায়। অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের সহিত তুলনা, রিভিউদাতার ব্যক্তিগত প্রতিফলন ও সুপারিশে স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাঠকশ্রেণীর প্রতি বইয়ের আবেদন। সর্বোপরি, বইয়ের সুসংগঠিত বিশ্লেষণ পর্যালোচকের সুসংহত চিন্তার পরিচায়ক, যা বইয়ের মতো রিভিউকেও পরিণত করে শিল্পে।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
২ মাস আগে
দেশের উন্নয়ন দর্শনের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু: পলক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশের উন্নয়ন দর্শনের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৯তম অধিবেশনে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, সেই ভাষণে- বঙ্গবন্ধু বিশ্বের সব নেতৃত্বের প্রতি সব সম্পদ, কারিগরি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবার জন্য সঠিক ও সমান ব্যবহার এবং প্রয়োগের মাধ্যমে মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার উপর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: দেশের প্রতিটি ডায়াবেটিস হাসপাতাল ইন্টারনেটের আওতায় আসবে: পলক
রবিবার (১৯ নভেম্বর) আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারে উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি (আইডিয়া) ফ্লোরে এটুআই এর উদ্যোগে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপদেশ, পরামর্শ, সুপারিশ, লিখিত ও মৌখিক প্রস্তাব প্রদান শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ মানবসম্পদ, সবার জন্য সুলভমূল্যে ইন্টারনেট, প্রযুক্তিনির্ভর সরকারি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশ ঘটানো; এই চারটি মূল লক্ষ্যে সামনে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ এ চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন। স্মার্ট বাংলাদেশের এ চার পিলার নির্ধারণ করে দিয়েছেন আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে, তা এ চার স্তম্ভের কথা চিন্তা করলেই বোঝা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে একজন স্মার্ট নাগরিক হবে- বুদ্ধিদীপ্ত, দক্ষ, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক এবং সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী মানসিকতা সম্পন্ন।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট অর্থনীতি হবে ক্যাশলেস, সার্কুলার, উদ্যোক্তামুখী, গবেষণা ও উদ্ভাবন নির্ভর এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। স্মার্ট সরকার হবে নাগরিককেন্দ্রিক, আরও বেশি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট সরকার-ব্যবস্থায় সব ধরনের সেবা প্রদান ও কার্যসম্পাদন করা হবে- কাগজবিহীন, ডেটানির্ভর, আন্তঃসংযুক্ত, আন্তঃচালিত, সমন্বিত এবং স্বয়ংক্রিয়, অর্থাৎ যখন যেখানে দরকার, সেখানেই থাকবে সরকার এবং স্মার্ট সমাজব্যবস্থা হবে সব ধরনের বৈষম্যবিহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক।
তিনি আরও বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ ও সহনশীল, সমাজ হবে উন্নত, নিরাপদ ও টেকসই।
আরও পড়ুন: টোকিওতে জাতীয় সংবিধান দিবস উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেমিনার
১১ মাস আগে
ইমাম খোমেইনী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদ: ইরানি রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ রেজা নাফার বলেছেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেইনী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যার ব্যক্তিত্বের প্রভাব কেবল ইরানের ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল না; বরং তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতি এবং মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।
বৃহস্পতিবার বিকালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেইনীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইমাম খোমেইনী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ, যিনি ধর্ম, দর্শন, নৈতিকতা, ইরফান এবং রাজনীতির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এমন এক রসায়ন তৈরি করেছিলেন যার স্বাদ মানুষ এর আগে কখনই পায়নি। ইমাম খোমেইনী ছিলেন তৎকালীন সময়ের অন্যতম অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি বস্তুবাদ ও ধর্মবিদ্বেষের যুগে ধর্মের পুনর্জাগরণের পতাকা উড্ডয়ন করেছিলেন এবং বিশ্বব্যাপী এতটাই আলোড়ন তৈরি করেছিলেন যে, এই শতাব্দীর সাথে তার পবিত্র নামটিই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইরানের বিপ্লব ছিল একটি নজিরবিহীন বিপ্লব, ইসলামের নামে এ ধরনের বিপ্লব আর দ্বিতীয়টি হয় নি। এ বিপ্লব সমগ্র বিশ্বের জন্য ছিল একটি বিস্ময়। যদিও ইরান একটি মুসলিম প্রধান দেশ ছিল, কিন্তু এর সংস্কৃতি হয়ে গিয়েছিল ইউরোপ-আমেরিকার মতো। ইমাম খোমেইনী ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে এতে আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। আর এতে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতাও ছিল ব্যাপক।
তিনি বলেন, ইমাম খোমেইনী অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন উদার দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে ধর্মপালন এর প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেছিলেন, আমরা ইহুদিদের বিরোধী নই, তবে আমরা যায়নবাদীদের বিরোধী।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ উদীয়মান বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি: ইরানের রাষ্ট্রদূত
বর্তমান ইরানের কথা উল্লেখ করে সাখাওয়াত বলেন, ইরান একটি আধুনিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। ইরানের অবকাঠামোগত অগ্রগতি ইউরোপের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। ইরান একটি পরিচ্ছন্ন দেশ। একটি দেশের উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন সকল কিছু ইরানে বিদ্যমান।
ড. আব্দুল কুদ্দুস বাদশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশে অবস্থিত ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, খুলনায় অবস্থিত ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রিন্সিপাল হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ আফতাব হোসাইন নাকাভী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নূরে আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
৩ বছর আগে