বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ রেজা নাফার বলেছেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেইনী ছিলেন মুসলিম বিশ্বের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যার ব্যক্তিত্বের প্রভাব কেবল ইরানের ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল না; বরং তিনি ছিলেন গোটা মানবজাতি এবং মুসলিম বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।
বৃহস্পতিবার বিকালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেইনীর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইমাম খোমেইনী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ, যিনি ধর্ম, দর্শন, নৈতিকতা, ইরফান এবং রাজনীতির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এমন এক রসায়ন তৈরি করেছিলেন যার স্বাদ মানুষ এর আগে কখনই পায়নি। ইমাম খোমেইনী ছিলেন তৎকালীন সময়ের অন্যতম অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি বস্তুবাদ ও ধর্মবিদ্বেষের যুগে ধর্মের পুনর্জাগরণের পতাকা উড্ডয়ন করেছিলেন এবং বিশ্বব্যাপী এতটাই আলোড়ন তৈরি করেছিলেন যে, এই শতাব্দীর সাথে তার পবিত্র নামটিই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইরানের বিপ্লব ছিল একটি নজিরবিহীন বিপ্লব, ইসলামের নামে এ ধরনের বিপ্লব আর দ্বিতীয়টি হয় নি। এ বিপ্লব সমগ্র বিশ্বের জন্য ছিল একটি বিস্ময়। যদিও ইরান একটি মুসলিম প্রধান দেশ ছিল, কিন্তু এর সংস্কৃতি হয়ে গিয়েছিল ইউরোপ-আমেরিকার মতো। ইমাম খোমেইনী ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে এতে আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। আর এতে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতাও ছিল ব্যাপক।
তিনি বলেন, ইমাম খোমেইনী অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন উদার দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে ধর্মপালন এর প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেছিলেন, আমরা ইহুদিদের বিরোধী নই, তবে আমরা যায়নবাদীদের বিরোধী।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ উদীয়মান বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তি: ইরানের রাষ্ট্রদূত
বর্তমান ইরানের কথা উল্লেখ করে সাখাওয়াত বলেন, ইরান একটি আধুনিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। ইরানের অবকাঠামোগত অগ্রগতি ইউরোপের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। ইরান একটি পরিচ্ছন্ন দেশ। একটি দেশের উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন সকল কিছু ইরানে বিদ্যমান।
ড. আব্দুল কুদ্দুস বাদশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশে অবস্থিত ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, খুলনায় অবস্থিত ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রিন্সিপাল হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ আফতাব হোসাইন নাকাভী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নূরে আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।