বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
ঈদুল ফিতর ২০২৫-এ ঢালিউডে মুক্তির অপেক্ষায় যে সকল বাংলাদেশি সিনেমা
বাণিজ্যিক ঘরানার পাশাপাশি অভিনব গল্প ও আধুনিক চিত্রনাট্যে সমৃদ্ধ সিনেমা সাদরে গ্রহণ করেছে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রপ্রেমিরা। বিশেষ করে ঈদ উৎসবে এখনও সিনেমা হলগুলোতে থাকে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরেও নানান উদ্দীপনার খোরাক যোগাচ্ছে নতুন কিছু ছবি। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আসন্ন ঈদে ২০২৫ ঈদুল ফিতরে ঢালিউডে মুক্তি পাচ্ছে যে সকল চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় থাকা চলচ্চিত্রগুলো।
২০২৫ ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাচ্ছে যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
.
বরবাদ
ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান ও কলকাতার ইধিকা পল জুটির এই দ্বিতীয় কাজটি নিয়ে ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ হৈচৈ চলছে। এর আগে প্রিয়তমা (২০২৩)-তে বেশ সাড়া ফেলেছিলো এই জুটি। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ভারতের যীশু সেনগুপ্তের যুক্ত হওয়া ছবিটির প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি আইটেম গানে ক্যামিও চরিত্রে থাকবেন কলকাতার আরেক তারকা নুসরাত জাহান-কে।
রোমান্টিক অ্যাকশন থ্রিলারটি পরিচালনার মধ্য সিনেমা নির্মাণে পদার্পণ করেন মেহেদী হাসান হৃদয়। প্রযোজনায় রয়েছেন শাহরিন আক্তার সুমি (রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন) এবং আজিম হারুন (রিধি সিধি এন্টারটেইনমেন্ট)।
অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, মামুনুর রশীদ, এবং ইন্তেখাব দিনার।
আরো পড়ুন: ‘কৃশ ৪’-এর বিশাল বাজেটে অনিশ্চিত বিনিয়োগ, কেন সরে দাঁড়ালেন রাকেশ রোশান
সংগীত আয়োজনে আছেন প্রীতম হাসান। ২০২৪ সালের তুফান চলচ্চিত্রে তার ‘লাগে উড়া ধুরা’ গানটি বিভিন্ন মহলে বেশ সমাদৃত হয়। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার কাজ করছেন শাকিব খানের সঙ্গে। প্রীতমসহ ছবির বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বলিউডের কয়েকজন গায়ক।
অ্যাকশন দৃশ্য পরিচালনা করেছেন বলিউড ও তেলুগু ইন্ডাস্ট্রির অ্যাকশন ডিরেক্টর রবি বর্মা। নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন বলিউডের আদিল শেখ।
জংলি
বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়ে অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র জংলি। এম রাহিম পরিচালিত রোমাঞ্চকর নাট্য চলচ্চিত্রটির প্রধান ভূমিকায় আছেন এ সময়কার দর্শকনন্দিত তারকা সিয়াম আহমেদ। তার প্রধান সহশিল্পীরা হলেন শবনম বুবলী ও প্রার্থনা ফারদিন দীঘি।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে সিনেমার গল্প লিখেছেন আজাদ খান। মেহেদী হাসান ও সুকৃতি সাহা যৌথভাবে গল্পটিকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: গৌরী স্প্রাট কে? আমির খানের বান্ধবী, বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক উদ্যোক্তা
অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, দিলারা জামান, রাশেদ মামুন অপু, সোহেল খান, এবং এরফান মৃধা শিবলু।
প্রিন্স মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় একটি বিশেষ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তাহসান খান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে এমআইবি স্টুডিও এবং টাইগার মিডিয়া।
দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে ২৫ এপ্রিল চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত হবে।
দাগি
২০২৩ সালে শাকিব অভিনীত প্রিয়তমার সাথে প্রতিযোগিতা করেছিলো আফরান নিশোর সুড়ঙ্গ। এবার তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে আসন্ন ঈদে। প্রথম ছবি সুড়ঙ্গ-এর পর প্রায় দেড় বছরের বিরতিতে ছিলেন ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেতা। তারপর ভক্তদের হতবাক করে দিয়ে দিলেন দ্বিতীয় চলচ্চিত্র দাগি’র সংবাদ। তার বিপরীতে নায়িকার অবস্থানও থাকছে অপরিবর্তিত। দেড় বছর সিনেমা থেকে দূরে থাকার পর দ্বিতীয়বারের মতো নিশোর সাথে জুটি বদ্ধ হয়েছেন তমা মির্জা।
আরো পড়ুন: অস্কার ২০২৫: ৯৭তম অ্যাকাডেমি পুরষ্কারের আসর মাতালেন যারা
একটি বিশেষ ভূমিকায় দেখা যাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জয়ী অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালকে। সিনেমায় আরও রয়েছেন মনোজ কুমার প্রামানিক, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, রাশেদ মামুন অপু, মনিরা আক্তার মিঠু, এবং মিলি বাশার।
পরিচালনার পাশাপাশি ছবির কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য গড়েছেন শিহাব শাহীন। এখানে বলা হয়েছে একজন সাধারণ মানুষের অপরাধজগতে জড়ানোর গল্প। এই পটভূমিকে উপজীব্য করেই কাহিনী এগিয়ে গেছে মূল চরিত্রের প্রায়শ্চিত্য ও মুক্তির দিকে।
২০১৫ সালে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর পর ‘দাগি’ নির্মাতার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। এটি এসভিএফ আলফা-আই এবং দেশীয় ওটিটি (ওভার দ্যা টপ) চরকির একটি যৌথ প্রযোজনা।
চক্কর ৩০২
মোশাররফ করিম ভক্তদের জন্য এবারের ঈদে রয়েছে দারুণ চমক। শরাফ আহমেদ জীবনের গল্প, পরিচালনা এবং সহ-প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘চক্কর ৩০২’। সহ-প্রযোজনায় আরও ছিলেন আবুল ফজল মোহাম্মদ রিতু, সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, সরদার সানিয়াত হোসেন, এবং আদনান আল রাজীব।
আরো পড়ুন: ভালোবাসা দিবস ২০২৫: ভ্যালেন্টাইনস ডেতে মুক্তি পাচ্ছে যেসব নাটক
সিনেমাতে মোশাররফ করিম একটি মার্ডার কেসের তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু।
সংলাপ লিখেছেন নাহিদ হাসনাত, যিনি সৈয়দ গাউসুল আলম শাওনের সাথে যৌথভাবে ভূমিকা রেখেছেন চিত্রনাট্যে।
বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয়ে ছিলেন তারিন জাহান, ইন্তেখাব দিনার, মৌসুমী নাগ, রওনক হাসান, শাশ্বত দত্ত্ব, সুমন আনোয়ার, সারা আলম, ফারজানা বুশরা, আহমেদ গোলাম দস্তগীর শান, এবং ডিকন নূর।
সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছেন ইমন চৌধুরী, জাহিদ নিরব, অমিত চ্যাটার্জি।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালের রূপালি পর্দায় সুপারহিরোদের রোমাঞ্চকর অভিযান
বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্রের অনুদানে নির্মিত ছবিটি মুক্তি পাবে কারখানা প্রোডাকশন এবং গামাফ্লিক্স-এর ব্যানারে।
২২ দিন আগে
এবারের ঈদ আয়োজনে বড় পর্দার ১০টি চলচ্চিত্র
নতুন সিনেমার মাধ্যমে ঈদ বিনোদনটা বেশ পুরনো। বিগত কয়েক দশকে ঢালিউড চলচ্চিত্রের অনেক চড়াই- উৎরাই হলেও ঈদের সময় বাংলা ছবির শোরগোলটা ছিল স্বাভাবিক। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসায়িক সিনেমাগুলোর পাশাপাশি মূলধারার কাতারে শামিল হচ্ছে শৈল্পিক ও নিরীক্ষাধর্মী ছবিগুলোও। তাই ভিন্ন স্বাদে বাড়ছে দর্শকদের প্রত্যাশা। চলুন, ঈদুল ফিতর ২০২৪-এ মুক্তির অপেক্ষায় থাকা তেমনি কিছু বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
আসন্ন ঈদুল ফিতর ২০২৪ এ যে ১০টি বাংলাদেশী সিনেমা দর্শক মাতানোর অপেক্ষায়
রাজকুমার
২০২২ সালের ২৯ মার্চ সিনেমার ফার্স্ট লুক প্রকাশের পর থেকেই হৈচৈ শুরু হয়েছে ‘রাজকুমার’ নিয়ে। রোমান্টিক-অ্যাকশন ঘরানার এই মুভিতে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের নায়িকা হয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী কোর্টনি কফি। আর এ নিয়ে মোট ৩টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করলেন পরিচালক হিমেল আশরাফ।
এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মোস্তফা, আফজাল হোসেন, ফারুক আহমেদ এবং ডা. এজাজ।
‘রাজকুমার’ বাংলাদেশের একটি গ্রাম্য যুবকের আমেরিকার যান্ত্রিক শহরে তার মাকে খোঁজার গল্প। এই অক্লান্ত যাত্রায় একে একে যুবকটি সম্মুখীন হয় অভিবাসন বাধা, ভিন্ন সংস্কৃতি, এমনকি প্রেম-ভালবাসার।
আরও পড়ুন: অ্যামাজন প্রাইমের পর এবার টফির পর্দায় আসছে ‘ওরা ৭ জন’
কাজলরেখা
দেশের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রকার গিয়াস উদ্দিন সেলিমের দীর্ঘ ১২ বছরের গবেষণার ফসল এই চলচ্চিত্র। মৈমনসিংহ গীতিকার ‘কাজলরেখা’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটির গল্প, পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেছেন সেলিম নিজেই। সিনেমার পটভূমিক আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের।
মুভির নাম ভূমিকায় দেখা যাবে মন্দিরা চক্রবর্তীকে। সুচ কুমারের ভূমিকায় থাকছেন শরিফুল রাজ। আর খলচরিত্র কঙ্কণ দাসী হিসেবে রয়েছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা।
চলচ্চিত্রটিতে আরও আছেন ছোট পর্দার তারকা খায়রুল বাশার, সাদিয়া আয়মান, ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, ও শাহানা সুমি।
লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী
ওটিটি (ওভার-দ্যা-টপ) প্ল্যাটফর্ম চরকি’র ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রজেক্টের ১২টি ওয়েব ফিল্মের একটি ‘মনোগামী’। পরিচালনায় আছেন স্বয়ং প্রজেক্ট তত্বাবধায়ক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রজেক্টের অধীনে ইতোমধ্যে তার পরিচালিত ও অভিনীত ‘অটোবায়োগ্রাফি’ ফিল্মটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারের ঈদুল ফিতরে ‘মনোগামী’র মাধ্যমে তিনি তুলে ধরতে যাচ্ছেন নারী-পুরুষের সম্পর্কের তীক্ত সত্য কিছু দিক। এর আগে তার এই প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছিলো ‘ব্যাচেলার’ (২০০৪) ছবিতে। এবারে আলোকপাত করা হয়েছে বিবাহিত জীবনের দিকে।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ আয়কারী ১০ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
সিনেমার শ্রেষ্ঠাংশে রয়েছেন এ সময়ের বিনোদন পাড়ার সবচেয়ে পরিচিত মুখ চঞ্চল চৌধুরী। তার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে আছেন সঙ্গীতশিল্পী ও ইউটিউবার জেফার রহমান এবং নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমাকে।
দেয়ালের দেশ
বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত এই রোমান্টিক ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চিত্র-পরিচালনা করলেন মিশুক মনি। ছবির কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্যও সবই তার লেখা। চলচ্চিত্রের গল্প এগিয়েছে দুটি ভিন্ন সময়কে কেন্দ্র করে।
‘দেয়ালের দেশ’-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জুটিবদ্ধ হয়েছেন শরিফুল রাজ ও শবনম বুবলী। ব্যবসায়িক ছবির নায়িকা হিসেবে সুপরিচিত বুবলীকে এবার দেখা যাবে অকৃত্রিম বাস্তবধর্মী চরিত্রে।
চলচ্চিত্রের অন্যান্য সহশিল্পীরা হলেন জিনাত শানু স্বাগতা, আজিজুল হাকিম, সাবেরী আলম, শাহাদাত হোসেন, এ কে আজাদ সেতু, সমাপ্তি মাশুক, এবং দীপক সুমন।
আরও পড়ুন: ঈদের কেনাকাটায় জনপ্রিয় ১০টি বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড
মেট্রো সিনেমার ব্যানারে যৌথ ভাবে ছবির প্রযোজনা করেছেন মাহফুজুর রহমান ও মিশুক মনি।
ওমর
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্রকার মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ দীর্ঘদিন পর বিনোদন পাড়ায় ফিরছেন ‘ওমর’-এর মাধ্যমে। মুভির শিরোনামটি ঠিক করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। ছবির গল্প নিয়ে এখনও ‘ওমর’ টিমের কেউই তেমন কিছু প্রকাশ করেননি। তবে চিত্রনাট্য লিখেছেন সিদ্দিক আহমেদ।
চলচ্চিত্রের নাম চরিত্রে রয়েছেন শরীফুল রাজ। বিশেষ একটি চরিত্রে আবির্ভূত হবেন কলকাতার অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। এছাড়া আরও থাকছেন ফজলুর রমান বাবু, নাসির উদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, এরফান মৃধা শিবলু, ও আয়মান সিমলাকে। মাস্টার কমিউনিকেশন্সের ব্যানারে মুভির প্রযোজনায় ছিলেন খোরশেদ আলম।
আরও পড়ুন: টুয়েলভথ ফেইলের মতো অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী ১০ সিনেমা
৩৭৯ দিন আগে
সর্বোচ্চ আয়কারী ১০ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
প্রতিটি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কি না তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো কতটা বড় জনগোষ্ঠির ভালো লাগার কারণ হয়েছে চলচ্চিত্রটি, নিদেনপক্ষে এরই ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে চলচ্চিত্র শিল্প। কিন্তু যখন এ দুয়ের সংমিশ্রণ ঘটে তখনি জন্ম মাস্টারপিসের। আজকের নিবন্ধে ঢালিউড ইতিহাসের ব্যবসা সফল সেরা চলচ্চিত্রগুলো একত্রিত করা হয়েছে। এগুলো সিনেমার বিচারের সকল মানদণ্ডের ঊর্ধ্বে, কেননা এগুলোর অধিকাংশই এখনো অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে বেশি আয় করা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বিষয়ে।
সর্বাধিক ব্যবসা সফল ১০টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
প্রিয়তমা (৪১.২৩ কোটি টাকা)
২.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিটির পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক হিমেল আশরাফ। এটি ছিলো তার দ্বিতীয় মুভি নির্দেশনা। ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে আরশাদ আদনান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটির গল্পকার ছিলেন প্রয়াত ফারুক হোসেন।
হৃদয়বিদারক প্রেম কাহিনী নিয়ে বানানো এই মুভির নায়ক সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা শাকিব খান। তার বিপরীতে অভিনয় করেন কোলকাতার ছোট পর্দার অভিনেত্রী ইধিকা পল।
২০২৩-এর ২৯ জুন প্রকাশের পর প্রথম সপ্তাহেই প্রিয়তমার সংগ্রহ ১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে দ্রুততম সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। এটি ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ আয়কৃত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এবং সেই সঙ্গে সর্বকালেরও সর্বাধিক আয়কারী বাংলাদেশি মুভি। শুধু তাই নয়, এটি এখন পর্যন্ত শাকিব খানের ক্যারিয়ারেরও সর্বোচ্চ বক্স অফিস রেকর্ডধারী সিনেমা।
প্রিয়তমা ২২-তম বাবিসাস (বাংলাদেশ বিনোদন সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার) অ্যাওয়ার্ডে বিশেষ সম্মান বিভাগে সেরা অভিনেতা এবং সেরা অভিনেত্রী সহ সর্বমোট নয়টি পুরস্কার জিতে নেয়।
আরও পড়ুন: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ দেখে কাঁদলেন তারকারা
বেদের মেয়ে জোসনা (২০ কোটি টাকা)
তোজাম্মেল হক বকুল রচিত ও পরিচালিত এই মুভিটি বাংলাদেশের মুভি আর্কাইভের সেরা মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর গল্প নেওয়া হয়েছিল একই নামের অনেক পুরনো গ্রাম বাংলার এক নাটক থেকে। রাজপুত্রের ও বেদের মেয়ের প্রেম কাহিনীর এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ।
২০ লাখ টাকা বাজেটের এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালের ৯ জুন। ২০২৩-এর আগ পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ আয়কৃত চলচ্চিত্রের স্থানটি দখল করে ছিল। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে অনুসারে এটি বাংলাদেশের সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি।
চলচ্চিত্রটির গানের অডিও ক্যাসেট মুক্তির এক মাসের মধ্যে এক লাখ কপি বিক্রি হয়। হাসান মতিউর রহমানের লেখা ও মুজিব পরদেশীর গাওয়া 'আমি বন্দি কারাগারে' গানটি পরবর্তী কয়েক যুগ ধরে মানুষের মুখে শোনা যেতো। এটি বাদে বাকি সবগুলো গানই লিখেছিলেন পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল। তন্মধ্যে এন্ড্রু কিশোর ও রুনা লায়লার গাওয়া ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ গানটি আজও অমর হয়ে আছে।
স্বপ্নের ঠিকানা (১৯ কোটি টাকা)
এম এ খালেক পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি এখনও অনুপ্রাণিত করে কিংবদন্তির নায়ক সালমান শাহের বাকি মুভিগুলো দেখতে। নুরুল ইসলাম পারভেজের গল্পে ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ গড়েছিলেন ছটকু আহমেদ। ১৯৯৫-এর ১১ মে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় সালমান শাহের নায়িকা ছিলেন শাবনূর ও সোনিয়া।
মুভিটি ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তথাকথিত ধনী-দরিদ্র পরিণয় এবং ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ভিত্তিক চলচ্চিত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেছিলো।
সালমান শাহের স্বতন্ত্র অভিনয় ছাড়া স্বপ্নের ঠিকানা-এর বিশেষ দিক ছিলো এর গানগুলো। ‘এই দিন সেই দিন কোনও দিন’সহ ছবির প্রায় সব কটি গান ছিলো তখনকার সময়ে রেডিও’র টপচার্টে। গানগুলো পরিচালনা করেছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত নির্দেশক প্রয়াত আলম খান।
আরও পড়ুন: আনকাট ছাড়পত্র পেল শাকিব খানের 'প্রিয়তমা'
হাওয়া (১৬ কোটি টাকা)
করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে যে কাজগুলো দেশীয় সিনেমাকে পুনরায় তুলে ধরেছিলো সেগুলোর মধ্যে এই হাওয়া একটি। মেজবাউর রহমান সুমন রচিত ও পরিচালিত এই রহস্য-নাটক ঘরানার সিনেমাটির প্রযোজনায় ছিলো সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড।
ছবিতে আকর্ষণীয় অভিনয় দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং উদীয়মান তারকা নাজিফা তুশি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, এবং রিজভী রিজু।
মাঝ সাগরে মাছ ধরার সময় এক দল জেলে তাদের মাছ ধরার জালে আবিষ্কার করে সুন্দর ও রহস্যময় এক তরুণীকে। আর এরপর থেকেই ঘটতে শুরু করে অদ্ভূত সব ঘটনা।
এমন রোমাঞ্চকর পটভূমির সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০২২ সালের ২৯ জুলাই। ছবিটি বাংলাদেশের অস্কার কমিটি ৯৫-তম অস্কারের 'সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম' বিভাগের জন্য নির্বাচন করেছিলো। এছাড়াও এটি স্থান পেয়েছিলো ৮০-তম গোল্ডেন গ্লোব প্রতিযোগিতার শর্টলিস্টে।
প্রিয়া আমার প্রিয়া (১৫ কোটি টাকা)
বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই ছবিটির মাধ্যমেই শুরু হয় শাকিব খানের আকাশ-সম তারকা-খ্যাতি অর্জন। ২০০৮ সালের ১৩ জুন মুক্তি পাওয়া এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন সাহারা। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য ছিলো পুরী জগন্নাদের আর সংলাপ লিখেছিলেন শচীন নাগ।
আশা প্রোডাকশনের ব্যানারে বানানো ছবিটি মুক্তির বছর বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে। মুভিটি ২০০৮ সালের ঢালিউড বক্স অফিসে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। এর মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ উপার্জনকৃত মুভিগুলোর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। এমনকি ২০১৯-এর আগ পর্যন্ত এটিই ছিলো শাকিব খানের অভিনয় জীবনের সর্বোচ্চ আয়কৃত ছবি।
শাকিব খান এই কাজের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার, এবং ইউরো-সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার জিতেছিলেন।
আরও পড়ুন: দর্শক আগ্রহে এগিয়ে ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘প্রহেলিকা’
৫২৫ দিন আগে
জেকে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ইংরেজি ভাষার প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অবিসংবাদিত ল্যান্ডমার্ক হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলো। তথ্যচিত্র থেকে শুরু করে নাটকীয় ঘরানার সিনেমাগুলো নিপুণভাবে পরিবেশন করেছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে। তবে চলচ্চিত্র বিশারদ ও দর্শকদের কাছে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও বরাবরের মতই প্রশ্ন থেকে গেছে চলচ্চিত্রগুলোর আন্তর্জাতিক অবস্থানের। আর সেই চাহিদা মেটাতেই যেন আবির্ভাব হলো জেকে ১৯৭১-এর।
গত ২৮ মে শনিবার প্রকাশিত ছবির চমকপ্রদ টিজারটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে সমূহ সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রথমবারের মত কোনো বাংলাদেশি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সম্পূর্ণ ইংরেজি ভাষায় নির্মিত হলো। সিনেমাটির ব্যাপারে কিছু তথ্য বিস্তারিত দেয়া হলো।
জেকে ১৯৭১-এর গল্প
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যখন শেষের দিকে, তখন ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মাইল দূরের দেশ ফ্রান্সের অর্লি বিমানবন্দরে ঘটে এক বিস্ময়কর ঘটনা। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু জ্যন কে নামে ২৮ বছর বয়সী এক ফরাসী যুবক। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজ (পিআইএ)-এর বোয়িং-৭২০-এ উঠে তিনি সরাসরি চলে যান ককপিটে। দুপুর ১১টা ৫০ মিনিটে অস্ত্রের মুখে পাইলটকে জিম্মি করে গোটা বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন: ঈদে ৩৪ হলে মুক্তি পাচ্ছে সিয়াম-পূজার ‘শান’
তার দাবি ছিল ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধ ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী এই বিমানের মাধ্যমেই বহন করে নিয়ে যেতে হবে। নতুবা তার ব্যাগে থাকা বোমা দিয়ে যাত্রীসহ পুরো বিমান উড়িয়ে দেয়া হবে। পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এই দাবি নিয়ে জ্যন কে বিমানটিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন রানওয়েতে। এই যুগান্তকারি ঘটনাটি তৎকালীন গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় হতবাক হয়ে গিয়েছিল সারা বিশ্ব।
এই টান টান উত্তেজনাকর সত্য ঘটনাটিই এবার আসতে যাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য পর্দায়।
আন্তর্জাতিক অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে জেকে ১৯৭১
ছবিতে অংশ নেয়া মোট ৩৬ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় ছাড়াও রয়েছেন রাশিয়ান ও আমেরিকান অভিনয় শিল্পীরা। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কলকাতার শুভ্র সৌরভ দাশ। পূর্বে তিনি কাজ করেছেন ব্যোমকেশ ফিরে এলো, ব্যোমকেশ, চিরিয়াখানা ও জুলফিকার’র মতো চলচ্চিত্রে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ছোট পর্দায়ও তিনি বেশ পরিচিত মুখ।
আরও পড়ুন: তাহসান-তিশা জুটির ওয়েবফিল্ম ‘মানি মেশিন’
পাইলটের ভূমিকায় দেখা যাবে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা-খ্যাত সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। এছাড়াও আছেন এ সময়ের ব্যস্ত বলিউড অভিনেতা ইন্দ্রনীল।
বিদেশি অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে আছেন বৃটিশ মুভি কুইন ওয়ারিওর অফ ঝাঁসি-খ্যাত মার্কিন অভিনেতা ফ্রান্সিসকো রেমন্ড। রেমন্ড দ্য টাশকেন্ট ফাইল্স নামে একটি ভারতীয় সিনেমাতেও কাজ করেছেন।
বিদেশি আর্টিস্ট টিমে আরও আছেন রাশিয়ার নতুন অভিনেত্রী ডেরিয়া গভ্রুসেনকো ও নিকোলাই নভোমিনাস্কি।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্কে প্রিমিয়ার হচ্ছে ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার
ফখরুল আরেফিন খান-এর জেকে ১৯৭১
২০১৭ সালে সরকারি অনুদানে নির্মিত নিজের প্রথম ছবি ভুবন মাঝি দিয়েই বেশ আলোচনায় চলে আসেন ফখরুল আরেফিন খান। ২০২০ সালে তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র গণ্ডি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচনায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করে। তাছাড়া প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন আরও আগে। তার আল-বদর মুভিটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারে ভূষিত হয়।
একটি পোস্টার ও অফিসিয়াল ট্রেইলারের পর চলতি বছরেই ডিসেম্বর মাসে ছবিটির শুভমুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেন পরিচালক।
জেকে ১৯৭১-এর নির্মাণের নেপথ্যে যারা আছেন
পর্দা অন্তরালে দক্ষ এক টিমের নেতৃত্ব দিয়েছে ফখরুল আরেফিন খান। বিভিন্ন লোকশনে ছবিটির নজরকাড়া সব দৃশ্য ধারণ করেছেন রানা দাশগুপ্ত। সঙ্গীত আয়োজন করেছেন দেবজ্যোতি মিশ্র ও সম্পাদনায় ছিলেন প্রণয় দাশগুপ্ত।
আরও পড়ুন: স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘টপ গান’-এর দ্বিতীয় কিস্তি
সত্য ঘটনাটিকে চিত্রনাট্যে রূপ দিয়েছেন মাসুম রেজা। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন চিত্রনাট্যকার লিজা আহমেদ। ভিজুয়াল ইফেক্ট-এর দায়িত্বে ছিল ফোর্থ ডায়মেনশন ভিজুয়াল ইফেক্ট। প্রযোজনা করেছেন ইসরাত সুলতানা এবং স্বয় পরিচালক ফখরুল আরেফিন খান। সর্বপরি সিনেমাটির পরিবেশনায় ছিল গড়াই ফিল্ম্স।
সব শেষে বলা যায় যে জেকে ১৯৭১ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি মুভি নির্মাণের অগ্রদূত হতে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে নিজের একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এবার সেই অবস্থানে থেকে প্রতিযোগিতায় প্রবেশের পালা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের কাহিনীগুলো নিঃসন্দেহে বিশ্বমানের চিত্রনাট্য হওয়ার দাবি রাখে। শুধু প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণশৈলী এবং সার্বজনীন ভাষার মাধ্যমে তা বিশ্বের সর্বত্রে ছড়িয়ে দেয়া।
আরও পড়ুন: শুধু ট্রেলার দেখে সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না: শ্যাম বেনেগাল
১০৪৩ দিন আগে
রেহানা মরিয়ম নূর: কানের সম্মানজনক তালিকায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে কান-এর ৭৪তম আসরে সম্মানজনক জায়গা পেলো রেহানা মরিয়ম নূর। আগামী ৬ থেকে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। আর তাই মহাসমারোহে গত ৩ জুন এক যোগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সহ কানের সবগুলো সামাজিক মাধ্যম থেকে ঘোষণা করা হয় নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোর নাম।
কানের আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের ১৮টি ছবির তালিকায় সহমহিমায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের রেহানা মরিয়ম নূর-এর নাম। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে এ এক বিশাল অর্জন। চলুন, নতুন এই চলচ্চিত্রটি ও এর অর্জনের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই।
রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্রের পটভূমি
একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা ৩৭ বছর বয়সী রেহানা মরিয়ম নূর আর দশজনের মতোই তার কর্ম ও সংসার জীবনকে শত ঝামেলার মাঝেও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার জীবনটা হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করে যখন একদিন সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় তিনি কলেজের এক ছাত্রীকে জড়িয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি এক ছাত্রীর পক্ষ নিয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এদিকে স্কুলে তার ৬ বছরের মেয়ে অপ্রীতিকর আচরণের সম্মুখীন হয়। এমন প্রতিকূল অবস্থায় রেহানা চিরাচরিত নিয়মের বেড়াজাল কাটিয়ে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।
চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ
চিত্রনাট্য লেখা এবং সিনেমায় রূপ দান দুটোই করেছেন তরুণ সিনেমা নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াকালীন টিভি নাটকের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শর্টফিল্মও নির্মাণ করেন।
নির্মাতা ওয়াহিদ তারেকের ‘আলগা নোঙর’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন সাদ। পূর্বে ২০০৯ সালে ওয়াহিদ তারেক পরিচালনা করেছেন সাদের লেখা ‘অগাস্টে লেখা গল্পসমগ্র’, ‘লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডায়িং’ এবং ‘একটি যথাযথ মৃত্যু’সহ বেশ কিছু টিভি নাটক।
তার প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ (২০১৬) ২৭ তম সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালক এবং সেরা পারফরম্যান্সের (মোস্তফা মনোয়ার) জন্য সিলভার স্ক্রিন পুরষ্কার লাভ করে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব রটারড্যামে (আইএফএফআর) এটি প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে সম্পূর্ণরূপে ফিচার করা হলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ সাড়া পড়ে যায়। এছাড়া ২০১৭ সালে ছবিটি ফাইভ ফ্লেভার এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনয়ন পায়। সাদাকালো পর্দার এই ছবিতে একাধিক ভিগনেটের মাধ্যমে ঢাকা শহর ছেড়ে যাবার চেষ্টায় এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা ও বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রেমকাহিনী
চলচ্চিত্রের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সাদ লো-প্রোফাইল থাকতেই বেশী পছন্দ করেন। তাই ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ মুক্তির বছর ২০১৯ সালে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন অনেকটা গোপনেই। দেড় বছরের মধ্যে শেষ করেছেন ছবির শুটিং-এর কাজ। এমনকি ছবির নাম, প্লট, নায়ক-নায়িকা নিয়েও মিডিয়ার সামনে তেমন কিছুই প্রকাশ করেন নি।
অবশেষে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ তৈরি হয় পোটোকল ও মেট্রো ভিডিওর ব্যানারে। ছবিটির প্রযোজনায় আছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া ও সহ-প্রযোজনায় সেন্সমেকার্স প্রডাকশনের পাশাপাশি আছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব ও সাঈদুল হক খন্দকার। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন এহসানুল হক বাবু। এছাড়া চিত্রগ্রহণে তুহিন তমিজুল, পোশাক পরিকল্পনায় নাবিলা হক, শিল্প নির্দেশনায় মাসুম মেহেদি এবং সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন শৈব তালুকদার। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির আন্তর্জাতিক পরিবেশনার জন্য পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ফিল্মস বুটিক।
রেহানা মরিয়ম নূর নাম ভূমিকায় বাঁধন
রেহানা মরিয়ম নূর ছবির প্রধান চরিত্রে কাজ করেছেন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৬ এর রানার আপ আজমেরি হক বাঁধন। ছোট পর্দায় বেশী নিয়মিত এই অভিনেত্রী ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘নিঝুম অরণ্যে’ (২০১০) নামক একটি মাত্র সিনেমায় কাজ করেছেন। মাঝে মিডিয়া থেকে প্রায় দেড় বছরের একটা বিরতি নিয়ে এই সিনেমায় কাজ শুরু করেন বাঁধন। অতঃপর এ সিনেমায় কাজ করাটা তার ক্যারিয়ারের সব থেকে ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো বলে তিনি মনে করেন। সহকর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক সব মহল থেকেই বাঁধনসহ সব কলাকুশলীরা অভিনন্দিত হয়ে আসছেন তাদের এই অসামান্য অর্জনের জন্য।
আরও পড়ুন: ২০২১ সালের অন্যরকম ৭টি বাংলা থ্রিলার সিনেমা
১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের এই সিনেমাটিতে বাঁধন ছাড়াও আরও যারা যারা কাজ করেছেন তারা হলেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াসির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী প্রমুখ।
কানের আন সার্তেইন রিগার্দ
কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনের চারটি বিভাগের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিভাগের পরের বিভাগটিই ‘আন সার্তেইন রিগাদ’। প্রতিযোগিতা বিভাগের পর এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি নিয়ে মৌলিক ও ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রগুলোর মুলত এ বিভাগে স্থান পেয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লাইমলাইটে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে বিভাগটি চালু করা হয়। আন সার্তেইন রিগাদ ফরাসী শব্দ যার অর্থ হলো ‘অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে’। সুতরাং চলচ্চিত্র বিচারের ক্ষেত্রে এখানে চিরাচরিত নিয়মের বাইরের কাজগুলোকে বেশী মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর দক্ষিণ ফ্রান্সের সাগর তীরবর্তী শহর কান-এর পালে দ্যা ফেস্টিভাল ভবনে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত এই ভবনটির স্যালে ডিবাসি প্রেক্ষাগৃহে আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়ে থাকে।
এ বছর বাংলাদেশ সহ মোট ১৫টি দেশের ১৮টি ছবি নির্বাচিত হয়েছে বিভাগটিতে। গত ৩ জুন প্যারিসের ইউজিসি নর্ম্যান্ডি হলে অন্যান্য সিনেমাগুলোর সাথে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর নাম। সেখান থেকেই সরাসরি অনলাইন মাধ্যমগুলোতে সম্প্রচার করা হয়। আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কান উৎসবের জেনারেল প্রতিনিধি থিয়েরি ফ্রেমো এবং সভাপতি পিয়েরে লেস্কিউর। উৎসবের শেষ দিন ১৭ জুলাই বিচারকদের সভাপতি স্পাইক লি স্বর্ণ পাম বিজয়ী চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করবেন।
বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি বড় পদক্ষেপ
এর আগে প্রথমবারের মত কান চলচ্চিত্র উৎসবে নাম লেখায় প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবিটি। ২০০২ সালে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয়েছিলো এটি। এছাড়া সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক (ফিপ্রেস্কি) পুরষ্কার অর্জন করে।
আর এবারে আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এই অর্জন এখন সিনেমাটির পোস্টারেও সংযুক্ত হবে এবং সর্বসাকুল্যে প্রতিটি প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের মান বহন করবে। সর্বপরি এটাই প্রমাণিত হবে যে, বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন বাংলাদেশেও সম্ভব।
আরও পড়ুন: সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে আবারও আলোচনায় ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ জুটি
পূর্বে যদিও বেশ কিছু বাংলা সিনেমা ও নির্দেশক কানসহ আরো মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় বাংলা চলচ্চিত্রকে সগর্বে তুলে ধরেছে। কিন্তু বাংলাদেশ জন্ম নেয়ার পর বাংলাদেশি নির্মাতাদের তৈরি বাংলা সিনেমার নাম করা হলে নিঃসন্দেহে উঠে আসবে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ এবং আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
সাদের সিনেমা কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে থাকার খবর পেয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ তাকে অভিনন্দন জানান।
শেষ কথা
আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বাংলাদেশে সমসাময়িক একটি অবস্থাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত একটি সিনেমা। সমস্যার জটিলতার পাশাপাশি এর নিরূপণেরও একটি যথোপযুক্ত বার্তা দেয়ার এক সুনিপূণ প্রয়াস। কান চলচ্চিত্র উৎসবে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে এধরনের রূপরেখা নিয়ে আরো কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অতঃপর এই বিশাল অর্জন বিশ্বমানের সিনেমা নির্মাণের তাগিদে বাংলাদেশের তারুণ্য নির্ভর পরিশ্রমী দলের প্রয়োজনীয়তা জানান দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ তরুণ নির্মাতাদের আরো বেশী এগিয়ে আসতে হবে চলচ্চিত্র নির্মাণে। তবেই তথাকথিত মুলধারার সিনেমার সীমানা পেরুনো সম্ভব।
১৪০২ দিন আগে