প্রতিটি নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে কি না তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো কতটা বড় জনগোষ্ঠির ভালো লাগার কারণ হয়েছে চলচ্চিত্রটি, নিদেনপক্ষে এরই ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে চলচ্চিত্র শিল্প। কিন্তু যখন এ দুয়ের সংমিশ্রণ ঘটে তখনি জন্ম মাস্টারপিসের। আজকের নিবন্ধে ঢালিউড ইতিহাসের ব্যবসা সফল সেরা চলচ্চিত্রগুলো একত্রিত করা হয়েছে। এগুলো সিনেমার বিচারের সকল মানদণ্ডের ঊর্ধ্বে, কেননা এগুলোর অধিকাংশই এখনো অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে বেশি আয় করা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বিষয়ে।
সর্বাধিক ব্যবসা সফল ১০টি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
প্রিয়তমা (৪১.২৩ কোটি টাকা)
২.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিটির পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ লেখক হিমেল আশরাফ। এটি ছিলো তার দ্বিতীয় মুভি নির্দেশনা। ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে আরশাদ আদনান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটির গল্পকার ছিলেন প্রয়াত ফারুক হোসেন।
হৃদয়বিদারক প্রেম কাহিনী নিয়ে বানানো এই মুভির নায়ক সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা শাকিব খান। তার বিপরীতে অভিনয় করেন কোলকাতার ছোট পর্দার অভিনেত্রী ইধিকা পল।
২০২৩-এর ২৯ জুন প্রকাশের পর প্রথম সপ্তাহেই প্রিয়তমার সংগ্রহ ১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে দ্রুততম সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড। এটি ২০২৩ সালের সর্বোচ্চ আয়কৃত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এবং সেই সঙ্গে সর্বকালেরও সর্বাধিক আয়কারী বাংলাদেশি মুভি। শুধু তাই নয়, এটি এখন পর্যন্ত শাকিব খানের ক্যারিয়ারেরও সর্বোচ্চ বক্স অফিস রেকর্ডধারী সিনেমা।
প্রিয়তমা ২২-তম বাবিসাস (বাংলাদেশ বিনোদন সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার) অ্যাওয়ার্ডে বিশেষ সম্মান বিভাগে সেরা অভিনেতা এবং সেরা অভিনেত্রী সহ সর্বমোট নয়টি পুরস্কার জিতে নেয়।
আরও পড়ুন: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ দেখে কাঁদলেন তারকারা
বেদের মেয়ে জোসনা (২০ কোটি টাকা)
তোজাম্মেল হক বকুল রচিত ও পরিচালিত এই মুভিটি বাংলাদেশের মুভি আর্কাইভের সেরা মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর গল্প নেওয়া হয়েছিল একই নামের অনেক পুরনো গ্রাম বাংলার এক নাটক থেকে। রাজপুত্রের ও বেদের মেয়ের প্রেম কাহিনীর এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ।
২০ লাখ টাকা বাজেটের এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালের ৯ জুন। ২০২৩-এর আগ পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ আয়কৃত চলচ্চিত্রের স্থানটি দখল করে ছিল। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে অনুসারে এটি বাংলাদেশের সেরা ১০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি।
চলচ্চিত্রটির গানের অডিও ক্যাসেট মুক্তির এক মাসের মধ্যে এক লাখ কপি বিক্রি হয়। হাসান মতিউর রহমানের লেখা ও মুজিব পরদেশীর গাওয়া 'আমি বন্দি কারাগারে' গানটি পরবর্তী কয়েক যুগ ধরে মানুষের মুখে শোনা যেতো। এটি বাদে বাকি সবগুলো গানই লিখেছিলেন পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল। তন্মধ্যে এন্ড্রু কিশোর ও রুনা লায়লার গাওয়া ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ গানটি আজও অমর হয়ে আছে।
স্বপ্নের ঠিকানা (১৯ কোটি টাকা)
এম এ খালেক পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি এখনও অনুপ্রাণিত করে কিংবদন্তির নায়ক সালমান শাহের বাকি মুভিগুলো দেখতে। নুরুল ইসলাম পারভেজের গল্পে ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ গড়েছিলেন ছটকু আহমেদ। ১৯৯৫-এর ১১ মে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় সালমান শাহের নায়িকা ছিলেন শাবনূর ও সোনিয়া।
মুভিটি ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তথাকথিত ধনী-দরিদ্র পরিণয় এবং ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ভিত্তিক চলচ্চিত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেছিলো।
সালমান শাহের স্বতন্ত্র অভিনয় ছাড়া স্বপ্নের ঠিকানা-এর বিশেষ দিক ছিলো এর গানগুলো। ‘এই দিন সেই দিন কোনও দিন’সহ ছবির প্রায় সব কটি গান ছিলো তখনকার সময়ে রেডিও’র টপচার্টে। গানগুলো পরিচালনা করেছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত নির্দেশক প্রয়াত আলম খান।
আরও পড়ুন: আনকাট ছাড়পত্র পেল শাকিব খানের 'প্রিয়তমা'
হাওয়া (১৬ কোটি টাকা)
করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে যে কাজগুলো দেশীয় সিনেমাকে পুনরায় তুলে ধরেছিলো সেগুলোর মধ্যে এই হাওয়া একটি। মেজবাউর রহমান সুমন রচিত ও পরিচালিত এই রহস্য-নাটক ঘরানার সিনেমাটির প্রযোজনায় ছিলো সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড।
ছবিতে আকর্ষণীয় অভিনয় দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং উদীয়মান তারকা নাজিফা তুশি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, এবং রিজভী রিজু।
মাঝ সাগরে মাছ ধরার সময় এক দল জেলে তাদের মাছ ধরার জালে আবিষ্কার করে সুন্দর ও রহস্যময় এক তরুণীকে। আর এরপর থেকেই ঘটতে শুরু করে অদ্ভূত সব ঘটনা।
এমন রোমাঞ্চকর পটভূমির সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০২২ সালের ২৯ জুলাই। ছবিটি বাংলাদেশের অস্কার কমিটি ৯৫-তম অস্কারের 'সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম' বিভাগের জন্য নির্বাচন করেছিলো। এছাড়াও এটি স্থান পেয়েছিলো ৮০-তম গোল্ডেন গ্লোব প্রতিযোগিতার শর্টলিস্টে।
প্রিয়া আমার প্রিয়া (১৫ কোটি টাকা)
বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই ছবিটির মাধ্যমেই শুরু হয় শাকিব খানের আকাশ-সম তারকা-খ্যাতি অর্জন। ২০০৮ সালের ১৩ জুন মুক্তি পাওয়া এই রোমান্টিক অ্যাকশন ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন সাহারা। ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য ছিলো পুরী জগন্নাদের আর সংলাপ লিখেছিলেন শচীন নাগ।
আশা প্রোডাকশনের ব্যানারে বানানো ছবিটি মুক্তির বছর বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে। মুভিটি ২০০৮ সালের ঢালিউড বক্স অফিসে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। এর মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ উপার্জনকৃত মুভিগুলোর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। এমনকি ২০১৯-এর আগ পর্যন্ত এটিই ছিলো শাকিব খানের অভিনয় জীবনের সর্বোচ্চ আয়কৃত ছবি।
শাকিব খান এই কাজের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার, এবং ইউরো-সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার জিতেছিলেন।
আরও পড়ুন: দর্শক আগ্রহে এগিয়ে ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘প্রহেলিকা’