কফি
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কফি
কাজের একঘেয়েমিতা কাটানোতে যে কোনও পানীয় -এর এক যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে কফি। পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও পিছিয়ে নেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে চাষকৃত এই উদ্ভিজ্জ উপাদানটি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নিজের এক সমৃদ্ধ ইতিহাসকে লালন করে এই শক্তিবর্ধক পানীয় এখনও সকলের প্রিয়। শুধুমাত্র যে জীবনধারায় একটি স্বতন্ত্র সংযোজন তা নয়, সামাজিক মর্যাদারও এক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই কফির। স্বভাবতই ধরন ভেদে বিভিন্ন কফিতে দামের বেশ তারতম্য থাকে। শুধু কি তাই, এগুলোর ভেতর কিছু কিছুর দাম একদম চোখ কপালে তুলে দেয়ার মতো! তেমনি কয়েকটি দামী কফির তথ্যসমগ্র এই নিবন্ধটি। চলুন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি কফি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পৃথিবীর সব থেকে দামি ১০টি কফি
ব্ল্যাক আইভরি
থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে সুরিন প্রদেশে এর উৎপত্তি। মূলত চিয়াং সেনের গোল্ডেন ট্রায়্যাঙ্গেল এশিয়ান এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশনে এটি প্রথম উৎপাদিত হয়েছিল।
ব্ল্যাক আইভরি তার অনন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য বিশ্ববিখ্যাত। অ্যারাবিকা কফি বীজগুলো প্রথমে হাতিদের খাওয়ানো হয়। অতঃপর সেগুলো সংগ্রহ করা হয় তাদের বর্জ্য থেকে। বীজগুলো হাতির পেটে বিভিন্ন এনজাইমের মাধ্যমে পরিপাক ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়। হাতির পাচক এনজাইম বীজের প্রোটিন ভেঙ্গে ফেলে, যার ফলে কফি মসৃণ ও কম অম্লীয় হয়। এই অনন্য গাঁজন প্রক্রিয়াটি কফির ব্যতিক্রমী ঐতিহ্যবাহী স্বাদের জন্য দায়ী।
এই স্বাদের জন্য এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কফি হিসেবে পরিচিত, প্রতি কিলোগ্রামে যার মূল্য প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা ২ লাখ ১৮ হাজার ৮৬১ টাকা। বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে এই অসাধারণ কফির এক কাপ প্রায় ৫০ মার্কিন ডলারে পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন: খাদ্যতালিকায় ৫ খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস
কপি লুওয়াক
ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, জাভা, বালি, সুলাওয়েসি এবং পূর্ব তিমুরে উৎপাদিত হয় এর বীজ। এর উৎপাদনের আরও একটি জায়গা ফিলিপাইন, যেখানে এর বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম শোনা যায়। অবশ্য সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনই বহুলাংশে প্রসিদ্ধ।
এই কফি তৈরি পদ্ধতির সঙ্গে এশিয়ান পাম সিভেট নামের বিড়ালের হজম প্রক্রিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই কারণে এটি সিভেট কফি নামেও পরিচিত। সিভেট কফি চেরি খাওয়ার পর এদের মল থেকে সংগ্রহ করা পরিবর্তিত বীজগুলো। সিভেটের পরিপাক প্রণালীর ভেতর দিয়ে যাবার সময় গাঁজনের মাধ্যমে এগুলোর আভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তন হয়। আর এই গাঁজনের ফলেই কফি এক স্বতন্ত্র স্বাদের অধিকারী হয়।
এই ব্যতিক্রমী স্বাদ কফি লুওয়াককে দিয়েছে আকাশচুম্বী দাম। প্রাথমিক অবস্থায় সংগৃহীত এর বীজের জন্য খরচের অঙ্ক প্রতি কেজিতে ১ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে দাড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকা। অবশ্য বীজের উৎপত্তিস্থল এবং গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে খুচরা মূল্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ওসপিনা গ্র্যান ক্যাফে
কলম্বিয়ার আন্দিজের আগ্নেয়গিরির উচ্চভূমি বিশেষ করে ফ্রেডোনিয়া ও অ্যান্টিওকিয়া অঞ্চল এই কফি বীজের উৎপাদনস্থল।
কলম্বিয়ান সংস্কৃতিতে ওসপিনা কফি অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে। ১৮৩৫ সালে ডন মারিয়ানো ওসপিনা রদ্রিগেজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই কফি বিশ্বব্যাপী কফির জনপ্রিয়তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং শিল্পের অগ্রগতির প্রতি ওসপিনা পরিবারের নিবেদন এখনও প্রভাবিত করে চলেছে কলম্বিয়ান কফি সংস্কৃতিকে। তাই শুধু তার ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্যই নয়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও ওসপিনা কফি বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত।
এই কফির রেসিপিতে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট উপাদান, কফির উৎপত্তিস্থল এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির কারণের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় এর দাম। এর কিছু সাধারণ জাত প্রতি পাউন্ড ১২০ মার্কিন ডলারে(১৩ হাজার ১৩২ বাংলাদেশি টাকা) বিক্রি হয়। কিন্তু একচেটিয়া ওসপিনা গ্র্যান্ড শ্রেণীর লোকেরা এর প্রতি পাউন্ডের জন্য ১ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার(১ লাখ ৫৩ হাজার ২০৩ বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি খাবার
এল ইঞ্জেরতো পিবেরি
এই কফির উৎপত্তি উচ্চ-মানের কফি উৎপাদনের জন্য স্বনামধন্য মধ্য আমেরিকার গুয়াতেমালায়। এগুলো প্রকৃতপক্ষে সিয়েরা দে লস কুচুমাটানেসের নিকটবর্তী হুয়েহুতেনাঙ্গোর উচ্চভূমিতে জন্মে। খামারের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৯২০ মিটার পর্যন্ত।
আগুইরে পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে গুণমান এবং স্থায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে খামার পরিচালনা করে আসছে। খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এল ইঞ্জেরতো লাভাবিহীন মাটি, প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সর্বোত্তম তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলের সুবিধা পায়।
কফির বিশেষত্ব বাড়ানোর জন্য এটি এক সুক্ষ্মতিসুক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। খামারে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথকীকরণ পদ্ধতিতে পিবেরি বীজগুলো আলাদা করা হয়। অতঃপর এগুলোকে একক-চ্যানেল ওয়াশিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত করা হয়। এখানে দুই রাউন্ডে বীজ ভাঙ্গন চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াগুলো সামগ্রিকভাবে কফিতে একটি দারুণ ঘ্রাণ যুক্ত করে।
এর প্রিমিয়াম মূল্য সঠিক যত্ন ও দক্ষতা সহ ব্যতিক্রমী বীজ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কফিগুলোর সারিতে শামিলকৃত এল ইঞ্জেরতোর মূল্য পাউন্ড প্রতি প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার(৫৪ হাজার ৭১৫ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
এস্মারেল্ডা গেইশা
একে সংক্ষেপে গেইশা কফি নামেই সবাই চেনে। কফির দেশ ইথিওপিয়ার গোরি গেশা বনে এর উৎপত্তি। সর্বপ্রথম ইথিওপিয়াতে উদ্ভূত হলেও, এটি এখন আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। পানামানিয়ান গেইশা জাতটি বিশেষভাবে তার অদ্বিতীয় জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য বিখ্যাত।
এস্মারেল্ডার গেইশার মুখে লেগে থাকা স্বাদের নেপথ্যে রয়েছে জুঁই ফুলের নির্যাস, চকোলেট, মধু এবং কালো চা। যথাযথ যত্নের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির ফলাফল এই অস্থিরতা দূর করা পানীয়টি। এর ব্যতিক্রমী স্বাদ সৃষ্টির জন্য বীজগুলো সাবধানে হাতে বাছাই করা হয়, যেন ক্ষেত থেকে কেবল পরিণতগুলোই উঠে আসে। উপরন্তু ভেজা অথবা শুকনো প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কফির চূড়ান্ত স্বাদের বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুন্ন রাখা হয়।
এর আন্তর্জাতিক খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গতিতে বেরে চলেছে এর দাম। কয়েক বছর ধরেই পৃথিবীর সব থেকে ব্যয়বহুল কফিগুলোর একটি হিসেবে এর নাম উঠছে। এস্মারেল্ডা গেইশার রেকর্ড মূল্য পাউন্ড প্রতি ৬০১ মার্কিন ডলার (৬৫ হাজার ৭৬৮ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: মাশরুমের পাঁচ পদের সহজ রেসিপি
সেন্ট হেলেনা
নামকে অনুসরণ করে সঙ্গত কারণে এই কফি জন্মে ব্রিটিশদের বিদেশি অঞ্চল আটলান্টিক দ্বীপ সেন্ট হেলেনাতে। এখানকার আগ্নেয়গিরির মাটি এবং হালকা জলবায়ুতে একচেটিয়াভাবে চলে এই কফির চাষ।
এই কফির নেপথ্যে রয়েছে ১৮ শতকে দ্বীপে আগত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস। তাদের মাধ্যমেই দ্বীপবাসীদের মধ্যে কফির আগ্রহ স্থাপন হয়। এখনও এটি কফি উৎসাহীদের শক্তি বর্ধক তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি দ্বীপের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই কফি তৈরির প্রক্রিয়ার জন্য সেন্ট হেলেনা দ্বীপের অনূকুল পরিবেশ প্রধান প্রভাবক। দ্বীপের আগ্নেয়গিরির মাটি এবং হালকা জলবায়ু সাহায্য করে এর বেড়ে ওঠাতে। সেই সঙ্গে যত্নশীল চাষাবাদ এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি এতে দান করে জগদ্বিখ্যাত স্বাদ। এসব কিছু একত্রে অবদান রাখে আমুল বৈচিত্র্যে, যার জন্য এর একটি আলাদা জায়গা তৈরি হয়েছে কফি শিল্পে।
সেন্ট হেলেনা কফির সীমিত যোগান এবং ব্যতিক্রমী স্বাদ নির্ধারণ করে এর প্রিমিয়াম মূল্য। নিয়মিত জাতগুলো প্রতি পাউন্ডে প্রায় ৮০ মার্কিন ডলারে(৮ হাজার ৭৫৪ বাংলাদেশি টাকা) বিক্রি হয়। এই ধরনের কফির সমকক্ষ না থাকায় কখনো এর দামের পরিধি বিস্তৃত হয় পাউন্ড প্রতি ১৪৫ মার্কিন ডলার(১৫ হাজার ৮৬৭ বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: মধু দিয়ে মজাদার পাঁচ পদ
মোলোকাই প্রাইম
অসাধারণ হাওয়াইয়ান এই ঐশ্বর্য্য স্থানীয় আগ্নেয়গিরির মাটিসহ পুরো মোলোকাই দ্বীপের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু। এই কফির জাতটি প্রাথমিকভাবে লাল কাতুয়াই বীজের সমন্বয়ে গঠিত, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চাষ করা হয়ে আসছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে। মোলোকাই দ্বীপের অনন্য ভৌগলিক অবস্থান এবং খনিজ সমৃদ্ধ মাটি এই গাছের বিকাশের জন্য একটি আদর্শ ভিত্তি প্রদান করে।
এই কফির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্তিশালী, সতেজ ও মজবুত গঠন। এর বীজ অধিক তাপে রোস্ট করার জন্য বেশ উপযুক্ত। এই গভীর শক্ত মেটে ভাবটা এসেছে আগ্নেয়গিরির মাটিতে বেড়ে ওঠার কারণে। ফলশ্রুতিতে, এর প্রক্রিয়াকরণটিও সম্ভব হয় বেশ ঝক্কি-ঝামেলামুক্তভাবে।
ব্যতিক্রমী মানের মোলোকাই প্রাইম কফির দামের তারতম্য ঘটে এর চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় গৃহীত যত্নের উপর ভিত্তি করে। সাধারণত এর প্রতি পাউন্ডের মূল্য ৬০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬ হাজার ৫৬৬ টাকা।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ৬ খাবার
কোনা এক্সট্রা ফ্যান্সি
এই কফি এসেছে হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডের বিখ্যাত কোনা অঞ্চল থেকে। কফি চাষের সর্বোত্তম পরিবেশের জন্য বেশ সুপরিচিত এই জায়গা। হুয়ালালাই এবং মাউনা লোয়া ঢাল সহ কোনা জেলাগুলো এক সুবিধাজনক পরিবেশ প্রদান করে। এই পরিবেশে অন্তর্ভুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল ও বিকালের মেঘ-বৃষ্টি, শীতল রাত এবং খনিজ সমৃদ্ধ আগ্নেয়গিরির মাটি। পরিবেশের অসাধারণ এই সমন্বয় সাধনটিই নামের মত কফিটির স্বাদেও দিয়েছে ফ্যান্সি ফ্লেভার।
এর বিশেষত্ব হচ্ছে- এর স্বাদের ভারসাম্য এবং পানীয়ের রঙের উজ্জ্বলতা। দামের তাৎপর্যটি মূলত কোনা অঞ্চলের নামের সঙ্গে সংযুক্ত। এর সঙ্গে অবদান রাখে যত্ন সহকারে প্রক্রিয়াকরণটিও। পাউন্ড প্রতি ৭৫ মার্কিন ডলার (৮ হাজার ২০৭ বাংলাদেশি টাকা) খরচ করা হয় এই কফির পেছনে।
আরও পড়ুন: চিপসের পরিবর্তে কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার
ফ্যাজেন্ডা স্যান্তা ইনেস
এই ব্রাজিলিয়ান রত্নের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ মিনাস গেরাইসের কারমো দে মিনাস অঞ্চলে। মান্টিকেইরা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান এই খামারের, যেটি কয়েক যুগ ধরে গুণমান নিশ্চিত করে কফি চাষ করে আসছে।
বীজগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। আবাদের সময় বীজের ত্বক শুকানোর কারণে ফলের স্বাদগুলো বীজের মধ্যে ঢুকতে পারে।
ফ্যাজেন্ডা স্যান্তা ইনেসের বিশেষ দিকগুলো হলো এর পানীয় এর মিষ্টি, উজ্জ্বল অম্লতা এবং লেবু-লবঙ্গ ফ্লেভার। এর চকোলাটি বডি এবং ক্রিমি মাউথফিল প্রতিটি চুমুককে স্বাদ এবং একই সঙ্গে সুগন্ধের আমেজ দেয়।
কফির বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং উদ্ভাবনের জন্য এর দামেও বেশ তারতম্য আসে। পাউন্ড প্রতি এই কফির মূল্য ৫০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার ৪৭১ টাকা।
আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
জ্যামাইকান ব্লু মাউন্টেন কফি
জ্যামাইকার বিখ্যাত নীল পাহাড়ে জন্মানো কফির জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঐশ্বর্য্যমন্ডিত কফি হচ্ছে এই ব্লু মাউন্টেন। এই অঞ্চলের উচ্চতা, জলবায়ু এবং মাটির সমন্বয় কফির ব্যতিক্রমী এবং পৃথিবী বিখ্যাত স্বাদে অবদান রাখে। প্রায় ৫ হাজার ফুট উপরে জন্মানো কফি চেরিগুলো সাবধানে হাতে বাছাই করা হয়। অন্যান্য কফি বীজের মত এগুলোতে হালকা তীক্ত স্বাদ নেই। আর এই ভিন্নতা বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে এদের প্রসিদ্ধি।
এই কফিটি টিয়া মারিয়া কফি লিকার তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এটি কফিটিকে শুধুমাত্র এক কাপ পানীয় থেকে নিয়ে গেছে অনেকটা দূরে, যা এর বহুমুখিতার পরিচায়ক।
জ্যামাইকান ব্লু মাউন্টেন কফি বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং সব থেকে কাঙ্ক্ষিত কফিগুলোর মধ্যে একটি। এর দাম প্রতি পাউন্ডে ১৪০ মার্কিন ডলার (১৫ হাজার ৩২০ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর সতেজ রাখতে আইস-টি
পরিশিষ্ট
বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই ১০টি কফি প্রমাণ করে যে, এই পানীয় এর যে কোনও প্রজন্মকে জয় করার শক্তি আছে। হোক সেটা অন্ধ কোনও গলি-ঘুপচির টঙের দোকানে বা চোখ ধাঁধানো আলোয় ভরা কোন পাঁচ-তারকা রেস্তোরাঁয়। কফি উৎসাহী হলেই প্রত্যেকে অকপটে আবিষ্কার করবে নিজেকে কফি কাপ হাতে। প্রতি চুমুকে স্বাদের আহ্বান ছাড়াও হাজারও আড্ডা ও সঞ্জীবনী শক্তির এক অনন্য রহস্যময়তার ধারক এই পানীয়। সেখানে এই কফিগুলোর সীমা ছাড়ানো দামের পরিধিতে বিচরণ করে অসংখ্য মানুষের জীবিকা। আর সেই অগণিত প্রথম চুমুকের শব্দ লুটায় যেন খেত থেকে লাখো লাখো কফি বীজ নিঙড়ানোর ইতিহাসের প্রতিধ্বনিতে।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
১ বছর আগে
কফি, একাকীত্ব বা সুখ: বিশ্বের ‘উদ্ভট’ যত মন্ত্রণালয়
সরকার সৃজনশীল হলে কি সে দেশ ‘উদ্ভট’ সব মন্ত্রণালয় পায়? এই যেমন ধরুন কফি, একাকীত্ব, সুখ অথবা যোগ মন্ত্রণালয়!
বিশ্বের এরকম ‘উদ্ভট’ কিছু মন্ত্রণালয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
পাপুয়া নিউগিনির কফি মন্ত্রণালয়
পাপুয়া নিউগিনিতে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া ফসলের মধ্যে কফি অন্যতম। দেশের কৃষি রপ্তানির প্রায় ২৭ শতাংশই কফি। তাছাড়া দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে ছয় শতাংশ কফি শিল্পের অবদান।
সম্ভবত সে কারণেই পাপুয়া নিউগিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে ২০২২ সালের আগস্টে জো কুলিকে দেশের প্রথম কফিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। মারাপেকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যম উল্লেখ করেছে, ‘মন্ত্রীর কাজ কফি, কফি ও কফির দিকে মনোযোগ দেয়া।’
জাপানের একাকীত্ব মন্ত্রণালয়
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান সরকার তেতসুশি সাকামোটোকে একাকীত্ব মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অনন্য এক মন্ত্রিসভার দৃষ্টান্ত তৈরি করেন।
জাপানি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে জাপানে এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো; বিশেষ করে নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার হার মোকাবিলা করাই মন্ত্রণালয়টির লক্ষ্য।
একাকীত্ব মন্ত্রী সাকামোটো তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি সামাজিক একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা দূর করতে এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার জন্য নানা কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
জাপান সম্ভবত যুক্তরাজ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মন্ত্রণালয়টি শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য ২০১৮ সালে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো সমস্যাগুলোয় মানুষকে সাহায্য করতে ট্রেসি ক্রাউচকে একাকীত্বের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করে।
আরও পড়ুন: গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুখ মন্ত্রণালয়
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি সুখ মন্ত্রণালয় স্থাপন করে এবং ওহুদ আল রৌমিকে তার নাগরিকদের মধ্যে সুখ বাড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করে এর মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করে।
একাধিক টুইট বার্তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম আরও সুখী মানুষ দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রৌমি পরিকল্পনা, প্রকল্প, প্রোগ্রাম ও সূচক প্রকাশ করার মাধ্যমে জনগণের সাধারণ মেজাজের উন্নতি করবে।
আরও পড়ুন: ‘সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল’ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রপতি
এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২০১৪ সালে জাপান হারুকো আরিমুরাকে দেশের প্রথম বেসরকারি টয়লেট মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়।
ভারতের যোগ মন্ত্রণালয়
একই বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় চিকিৎসা ও যোগব্যায়ামকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি অনন্য মন্ত্রণালয় তৈরি করেন, যোগ মন্ত্রণালয়। আর শ্রীপদ নায়েককে যোগমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এক বছর পরে দেশটি প্রথমবারের মতো যোগ দিবস উদযাপন করে।
আরও পড়ুন: করোনা: উদ্বেগ দূর আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে যোগব্যায়াম
২ বছর আগে
গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
সুস্থ জীবনধারণ বজায় রাখা ব্যক্তিদের অনেকেরই খাদ্যাভাসে আজকাল শোভা পাচ্ছে গ্রীন কফি। গ্রীন কফি আসে মূলত গ্রীন কফির বীজ থেকে। সাধারণ কফির ন্যায় এটি কোন রকম প্রক্রিয়াজাত করা বা ভাজা হয় না; একদম কাঁচা থাকে। গ্রীন কফি বীজের নির্যাস সুইস ওয়াটার প্রক্রিয়ায় কফিকে ডিক্যাফিনেটিং করতে ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই প্রক্রিয়াটি ১৯৮০-এর দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামের এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর মাত্রায় ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকেই গ্রীন কফিকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি পানীয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। চলুন, জেনে নেয়া যাক গ্রীন কফির উপকারিতা সহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কিভাবে গ্রীন কফি বানাতে হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গ্রীন কফির উপকারিতা
ব্লাড সুগার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
গ্রীন কফি বা এর নির্যাস পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং সামগ্রিক লিপিড প্রোফাইল উন্নতি করতে পারে। এই প্রত্যেকটি বিষয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বিকাশ বা অগ্রগতির সাথে যুক্ত। গ্রীন কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে। এছাড়া বিপাকীয় সিনড্রোমের চিকিৎসা করতে পারে, যেটি মূলত প্রিডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
উচ্চ রক্তচাপ কমানো
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ কমাতে গ্রীন কফি বীজ অথবা এর নির্যাসে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের ক্ষমতা অভাবনীয়। এর পাশাপাশি রক্তনালীর কার্যকারিতাও উন্নত করার প্রমাণ বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে।
পড়ুন: জবা ফুলের চা: গুণাগুণ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও বানানোর পদ্ধতি
উচ্চ কোলেস্টেরল কমানো
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গ্রীন কফি বীজের নির্যাসের প্রভাব দুর্দান্ত। গ্রীন কফি নির্যাস সাপ্লিমেন্টেশন ব্যবহার করে রোগীদের মধ্যে হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বা ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এবং লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) বা খারাপ কোলেস্টেরলের হ্রাস হতে দেখা গেছে।
শরীরের ওজন কমানো
কফি পান করা একটি সাধারণ উপায় যা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য বেছে নেয়। কফিতে থাকা ক্যাফেইন থার্মোজেনেসিসকে উদ্দীপিত করে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের শক্ত অনুশীলগুলো করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ধরে পাকস্থলি পূর্ণতার পাশাপাশি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সাময়িকভাবে হ্রাসের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। শরীরের বিপাক বৃদ্ধি জন্য দায়ী হরমোন অ্যাডিপোনেক্টিন গ্রীন কফি বীজের নির্যাস গ্রহণে বৃদ্ধি পায়।
ত্বকের উন্নতি
গ্রীন কফি বীজ নির্যাস ত্বককে হাইড্রেটেড রেখে তার গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শুধুমাত্র ত্বকের আর্দ্রতা বাষ্পীভবন থেকেই রক্ষা করে না, বরং ত্বকে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে। ফলশ্রুতিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো ত্বকে পৌছতে পারে এবং ত্বককে সুগঠিত এবং মসৃণ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে। গ্রীন কফি বীজের নির্যাস সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতাও বাড়ায়।
পড়ুন: অপরাজিতা ফুলের নীল চা: জাদুকরী স্বাস্থ্যগুণ, বানানোর পদ্ধতি
তারুণ্য বজায় রাখা
ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো শরীরকে বার্ধক্য প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী ফ্রি-র্যাডিকেলগুলো দূর করতে সহায়তা করে। ফ্রি-র্যাডিকেলগুলো ডিএনএ ভেঙ্গে ফেলে সময়ের সাথে সাথে শরীরের তারুণ্য ভাবকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
শক্তি বর্ধক পানীয়
গ্রীন কফি বীজের নির্যাসে থাকা ক্যাফেইন একটি দারুণ দিনের সূচনা করতে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তিতে মাঝারি পরিমাণের জ্বালানি সরবরাহ করে। সাধারণ কফিতে ব্যবহৃত ভাজা বীজগুলোর তুলনায় কাঁচা সবুজ কফি বীজগুলোতে কম ক্যাফেইন থাকে। গ্রীন কফি বীজের বর্ধিত ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ায় যার ফলে দৈনন্দিন কাজের প্রতি মনযোগ বৃদ্ধি পায় এবং সেগুলো সর্বোত্তমভাবে সম্পাদন করা যায়। অনেকেই দিনের বেলা কাজ করতে গিয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাদের জন্য গ্রীন কফি সঠিক বাছাই হতে পারে।
ভালো লাগার অনুভূতি বজায় রাখা
গ্রীন কফি বীজের ক্যাফিন সামগ্রী শরীরের যাবতীয় ব্যবস্থায় বৃহত্তর পরিমাণে ডোপামিন উপস্থিত থাকতে দেয়। ডোপামিন মুলত মস্তিষ্কে উৎপাদিত একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা শরীর ও মনে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। গ্রীন কফির নির্যাস গ্রহণে ক্যাফেইন শরীরে হরমোনের পুনঃশোষণে বাধা দেয়। এর ফলে মস্তিষ্ক সর্বাঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়।
পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
গ্রীন কফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গ্লুকোমা
গ্রীন কফিতে থাকা ক্যাফেইন খেলে চোখের ভিতরে চাপ বাড়তে পারে। এই চাপের বৃদ্ধি ৩০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় এবং কমপক্ষে ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)
এই কফির ক্যাফিন সেবনে বিশেষ করে যখন প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তখন ডায়রিয়ার অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে এবং আইবিএসের লক্ষণগুলোর আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
হাড় পাতলা হয়ে যাওয়া বা অস্টিওপোরোসিস
সবুজ কফি এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া ক্যাফিন প্রস্রাবে বের হয়ে যাওয়া ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অস্টিওপোরোসিস জটিলতার ক্ষেত্রে ক্যাফেইন গ্রহণকে প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে নামিয়ে আনতে পরামর্শ দেয়া হয় যা প্রায় ২ থেকে ৩ কাপ সাধারণ কফির সমান। এতে ক্যালসিয়ামের পরিপূরক ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণেও কাজ হয় না। পোস্টমেনোপজাল অথবা যেসব মহিলাদের উত্তরাধিকারসূত্রে ভিটামিন ডি প্রক্রিয়াজাতকরণ হয় না, তাদের ক্যাফিন ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
সবুজ কফিতে থাকা ক্যাফিন ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ প্রক্রিয়া করার উপায় পরিবর্তন করতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবন রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাসের কারণও হতে পারে। এটি এখনো গবেষণাধীন রয়েছে, তাই সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্রীন কফি পান থেকে বিরত থাকা।
হোমোসিস্টাইনের অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রা
অল্প সময়ের জন্য ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা গ্রহণের ফলে প্লাজমা হোমোসিস্টাইনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা হৃদরোগের মতো জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যান্য ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া
নির্দিষ্ট কোন রোগের জন্য নিয়মিত কোনো ওষুধ চললে গ্রীন কফির সম্পূরক ব্যবহার শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত। গ্রীন কফি অনেক ওষুধের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে সেগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে রক্ত পাতলা, হার্টের সমস্যা, দুর্বল হাড়, ফুসফুসের রোগ, মেনোপজ, বিষণ্নতা এবং সিজোফ্রেনিয়ার ওষুধ। ভেষজ উদ্দীপক বা ক্যাফিনের অন্যান্য পরিপূরকগুলোর সাথে গ্রীন কফি গ্রহণ করা উচিত নয়।
পড়ুন: বাংলাদেশের বাহারি আম এবং তাদের উৎপাদনকারী অঞ্চল
গ্রীন কফি বানানোর নিয়ম
প্রথমে রাতের বেলা গ্রীন বীজগুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতি কাপ পানিতে প্রায় এক টেবিল চামচ বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ যোগ করার সাথে সাথে অবিলম্বে পানি সবুজ হতে শুরু করবে। এভাবে কাপে ঢাকনা দিয়ে পানিতে ভেজা বীজগুলো ঢেকে রাখতে হবে।
এবার কফি বানানোর সময় বীজ ডোবানো পানি একটি পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। অতঃপর তা চুলায় বসিয়ে দিতে হবে এবং অল্প তাপে সিদ্ধ করতে হবে। এভাবে স্বল্প আঁচে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চুলায় রেখে দিতে হবে। পানি ধীরে ধীরে আরো সবুজ হয়ে যাবে এবং তা থেকে সুগন্ধি বের হওয়া শুরু হবে। এবার চুলা বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হয়ে গেলে গ্রীন কফি একটি ছাঁকনির মাধ্যমে একটি মগ বা কাপে ঢেলে নিতে হবে। অবশেষে এবার গ্রীন কফি পান করার জন্য প্রস্তুত হলো। ঘন গ্রীন কফি সরাসরি পান করা যেতে পারে। আবার আরেকটু পানি যোগ করে কিছুটা পাতলাও করে নেয়া যেতে পারে। এছাড়া স্বাদ ভালো করতে প্রয়োজন মত মধু বা চিনি যোগ করে নেয়া যেতে পারে।
পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
এই প্রক্রিয়াটি খুব ঘনীভূত গ্রীন কফি তৈরি করবে। কিছু পান করে বাকি কফি রেফ্রিজারেটরে একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
টমেটো এবং বেগুনের মতো অনেক খাবারেই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকলেও গ্রীন কফিতে এর মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। কফির বীজ যখন ভাজা হয়, তখন এই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। সেই সাথে ক্যাফেইনের পরিমাণও কমে যায়। গ্রীন কফির স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে বেশ বিতর্ক থাকলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ব্যাপার সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই অতিরিক্ত গ্রীন কফি গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। স্বাভাবিক সুস্থ ব্যক্তির খাদ্যাভাসে দিনে ২-৩ কাপ গ্রীন কফি রাখাটা তেমন জটিলতা সৃষ্টি করে না। এছাড়া অসুস্থতা বা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা; এমনকি জীবনধারণে পরিবর্তন আনতে গ্রীন কফি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমেই পেশাদারের নিকট থেকে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
২ বছর আগে
অপ্রচলিত ফসল চাষে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে: কৃষিমন্ত্রী
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এখন কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
তিনি বলেন, কৃষিকে লাভজনক করতে হলে কাজুবাদাম, কফি, গোলমরিচসহ অপ্রচলিত অর্থকরী ফসল চাষ করতে হবে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এসবের বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও বেশি। সেজন্য এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে হবে। পাহাড়ের বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে এসব ফসল চাষের সম্ভাবনা অনেক। এছাড়া, আনারস, আম, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল চাষের সম্ভাবনাও প্রচুর।
আরও পড়ুন: মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
শনিবার সকালে বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় কাজুবাদাম বাগান, কফি বাগান ও আমসহ অন্যান্য ফলবাগান পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, 'আমরা কাজুবাদাম ও কফির উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এটি করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। পাহাড়ী এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের দর্শনীয় উন্নয়ন হবে। একইসাথে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে।'
আরও পড়ুন: টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে দেশে অল্প পরিসরে কাজুবাদাম এবং কফি উৎপাদন হচ্ছে। শুধু পাহাড়ী অঞ্চল নয়, সারাদেশের যে সব অঞ্চলে কাজুবাদাম এবং কফির চাষাবাদের প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে; কিন্তু বর্তমানে চাষাবাদ হচ্ছে না পর্যায়ক্রমে এমন এলাকাও কাজুবাদাম ও কফির চাষের আওতায় আনা হবে। সেলক্ষ্যে সম্প্রতি ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
এসব অপ্রচলিত ফসলের চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এসব ফসলের চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষক ও উদ্যোক্তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, প্রযুক্তি ও পরামর্শসেবা দিচ্ছি। গতবছর কাজুবাদামের ১ লাখ ৫৬ হাজার চারা বিনামূল্যে কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে; আর এ বছর ৩ লাখ চারা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: হাওরের শতভাগ বোরো ধান কাটা শেষ: কৃষিমন্ত্রী
এছাড়া, দেশে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতের সমস্যা দূর করা ও প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির উপর শুল্কহার প্রায় ৯০% থেকে নামিয়ে মাত্র ৫% নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
পরিদর্শনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো: বখতিয়ার, বান্দরবনের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশ সুপার জেরিন আখতার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবনের উপপরিচালক একেএম নাজমুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএইর মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমতল জমির অভাবে মাঠ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। তবে, এ এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শত্যাংশ উদ্যান ফসলের আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম, উদ্যান ও মসলা জাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলের পার্বত্য বৈশিষ্ট্য অনুরূপ জমিও কাজুবাদাম ও কফি চাষের উপযোগী। এসব জমিতে কাজুবাদাম ও কফির আধুনিক জাত ও উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কাজুবাদাম ও কফির উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
৩ বছর আগে