বিশ্ব সম্প্রদায়
জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও সহায়তার আহ্বান মোমেনের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আরও বেড়ে যাওয়া; কোনো কিছুই পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়ন হ্রাস বা অন্য কোন সিদ্ধান্তের অজুহাত হতে পারে না।
রবিবার লোকালি লেড অ্যাডাপ্টেশন (এলএলএ) এর গ্লোবাল হাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে মোমেন এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: কূটনীতিকদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ: মোমেন
তিনি বলেন, গ্লোবাল হাবের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনকে (জিসিএ) পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
মোমেন বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি আমাদের প্রতি তার অবিরাম সমর্থনের স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এসময় বান কি মুন এবং সমগ্র জিসিএ দলকে আবারও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে জিসিএ গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে কাজ করতে পেরে আনন্দিত বোধ করছি। সত্যিই ঢাকায় আজ এই জিসিএ আঞ্চলিক অফিসের গ্লোবাল হাবের উদ্বোধনের আয়োজন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শিগগিরই আমরা অন্যান্য আয়োজন করার পরিকল্পনা করছি।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব এবং বোর্ডের চেয়ার, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন বান কি-মুন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন প্রফেসর ড. প্যাট্রিক ভারকুইজেন এবং ব্রিটিশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বক্তব্য দেন।
মোমেন গ্লোবাল হাব প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে অন্যান্য দেশ/প্রতিষ্ঠানগুলো উদার অর্থায়নে এগিয়ে আসবে।’
মোমেন বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশের ছয় লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং নদী ভাঙনের কারণে তাদের ঘরবাড়ি, তাদের পূর্বপুরুষের পেশা থেকে উৎখাত হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিচ্ছে সরকার, যদিও তাদের উৎপাটনে সরকারের কোন ভূমিকা নেই।
বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর প্রায় ২০ শতাংশ বন্যায় প্লাবিত হবে এবং কয়েক লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যূত হবে।
মোমেন বলেন, ‘যদি কয়েক লাখ লোক তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যূত হয়, তবে এটি একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি হওয়ার আগে আমি বিশ্ব নেতাদের তাদের পুনর্বাসনের দায় ভাগ করে নিতে এবং এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার অনুরোধ করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জিসিএ-এর সঙ্গে আমাদের যাত্রা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ও অগ্রগতিশীল। এটা দেখে আমি আনন্দিত যে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে জিসিএ ও বাংলাদেশ সরকার অভিযোজন কার্যক্রম গড়ে তুলেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই গ্লোবাল হাবের মাধ্যমে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে ভাসমান কৃষি, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, জলবায়ু প্রতিরোধী ফসলের জাতগুলোর মতো ঘরোয়া সমাধানগুলো বিনিময় করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: জাপানি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে ‘চিন্তিত নন’, তাকে সরল ও ভালো মানুষ বললেন মোমেন
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক আরও গভীর হবে: মোমেন
২ বছর আগে
রোহিঙ্গা সংকট: বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্রুত উদ্যোগ চান শেখ হাসিনা
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে কথামালার ঊর্ধ্বে এসে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কথামালার ঊর্ধ্বে এসে আমাদের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই সংকটের সমাধান না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ সবার সাথে কাজ চালিয়ে যাবে।’
বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ‘হাই-লেভেল সাইড ইভেন্ট অনফোরসিবলি ডিসপ্লেস মিয়ানমার ন্যাশনালস (রোহিঙ্গা) ক্রাইসিস: ইম্পারেটিভস ফর এ সাস্টেইনেবল সলিউশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের মোট ২৩ জন বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের পর স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সকল বক্তারা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বার বার বলে আসছি যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং তাদের অবশ্যই নিরাপদে এবং আত্মমর্যাদার সাথে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে।’
তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগীদের এই বিষয়ে বাংলাদেশের চেষ্টার সহযোগিতা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: কোভিড টিকাকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী’ হিসেবে ঘোষণা করা দরকার: প্রধানমন্ত্রী
সম্ভাবনাময় খাতে মার্কিন বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
৩ বছর আগে
রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তার জন্য বুধবার আবারও বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক চিন্তা করে তাদের আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু এতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেয়া আমামাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী রেকর্ড করা তিন দিনের 'আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে' বক্তব্যের সময় এ আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভর রোহিঙ্গাদের টিকাদান
তিনি বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি এই অঞ্চলে একটি বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে দেশে সংঘাত আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন যে, নিরাপত্তার ধারণার মধ্যে এখন সামরিক ঝুঁকি, ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন, অস্বেচ্ছাপ্রণদিত গণ অভিযোজন, পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং অন্যান্য নতুন নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
‘এমনকি সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, গণবিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক সংঘাত এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে,’বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ 'জিরো-টলারেন্স' নীতি বজায় রেখেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
হাসিনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির প্রশংসা করে বলেন, আমি আশা করি মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে।
কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি, কারণ এর মাধ্যমে মানুষ কেবল মারাই যাচ্ছে না, অর্থনীতিকেও বাধাগ্রস্ত করেছে এবং সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা নিশ্চিত করার এবং বিভিন্ন খাতে যথাযথ প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলা করে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
তিনি সকল নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এর জন্য সরকার সকল উৎস থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশের
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার ভ্যাকসিনের জন্য রুশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। আমি উল্লেখ করতে চাই যে, বাংলাদেশের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এবং যদি উৎপাদনে যেতে পারি, তবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে পারব।’
জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এর প্রতি যথাযথ নজর দেয়া।
৩ বছর আগে