দর্শনীয় স্থান
রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শত বছরের ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতিফলক দেশের মন্দিরগুলো। এগুলোর কোনো কোনোটির স্থাপত্য সৌন্দর্য্য অভিভূত করে দর্শনার্থীদের। কোনো কোনোটির ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় একে ঘিরে শত শত চড়াই-উৎরাইয়ের কিংবদন্তির কথা। এসব বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুভূতির সবগুলো একসঙ্গে এসে ধরা দেবে রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণে গেলে। কারণ দেশের ভেতর এই একমাত্র অঞ্চলে সর্বাধিক সংখ্যক মন্দিরের সন্নিবেশ ঘটেছে। অল্প দূরত্বে থাকা ছোট-বড় স্থাপনাগুলো ধারণ করে রয়েছে গোটা একটি শতাব্দীকে।
চলুন, দেশের এই প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থানটিতে ভ্রমণ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্সের অবস্থান
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেকগুলো পুরাতন মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত এই কমপ্লেক্সটির অবস্থান রাজশাহীর পুঠিয়ায়। রাজশাহী থেকে নাটোর অভিমুখী মহাসড়কের কাছে বিশাল পরিসর জুড়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে ছড়িয়ে আছে মন্দিরগুলো। জায়গাটি পড়ছে রাজশাহীর ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং নাটোর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে।
পুঠিয়া মন্দিরগুলোর ইতিহাস
১৭ শতকের এই অঞ্চলের প্রভাবশালী রাজবংশের নাম পুঠিয়া, যাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরগুলো। ১৮ এবং ১৯ শতক জুড়ে তাদের শাসনামলে নির্মিত হওয়ায় পুঠিয়া রাজবংশের নামেই অভিহিত হয় এই মন্দিরগুলো। ধর্মীয় কার্যাবলির পাশাপাশি এগুলো ব্যবহৃত হতো তৎকালীন জমিদারের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে।
পুঠিয়া অধ্যুষিত এলাকা ছিল ব্রিটিশ বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য। ১৭৭৮ সালে ভুবনেন্দ্র নারায়ণের নির্দেশে নির্মাণ করা হয় দোল মন্দির। ১৭৯০ থেকে ১৮০০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় চৌচালা ছোট গোবিন্দ মন্দির। ১৮২৩-এ রাণী ভুবনময়ী দেবী শিব সাগরের উপকণ্ঠে গড়ে তোলেন ভুবনেশ্বর শিব মন্দির। পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের গোড়াপত্তন হয় ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের রামসাগর দীঘি ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বর্তমানে পর্যটকদের নিকট সর্বাধিক জনপ্রিয় পুঠিয়া রাজবাড়ি নির্মাণকাল ১৮৯৫ সাল। তৎকালীন পুঠিয়ার রানী হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ি শরৎ সুন্দরী দেবীকে উৎসর্গ করে নির্মাণ করেছিলেন মন্দিরটি। সে সময় স্থানীয়ভাবে এটিকে পাঁচআনি প্রাসাদ নামে ডাকা হত।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স যাওয়ার উপায়
সড়কপথে বাসে যেতে হলে ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী, মহাখালী, বা আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠতে হবে। এসি কোচগুলোতে সম্ভাব্য ভাড়া মাথাপিছু ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর নন-এসিতে ভাড়া পড়তে পারে জনপ্রতি ৭১০ থেকে ৭৫০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন সময়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। এগুলোতে শ্রেণিভেদে ভাড়া নিতে পারে সর্বনিম্ন ৩৪০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৭৩ টাকা পর্যন্ত।
দ্রুত সময়ে পৌঁছানোর জন্য উত্তরা বিমান বন্দর থেকে আকাশপথেও যাওয়া যেতে পারে। তবে এই যাত্রাপথে ভাড়া বেশ ব্যয়বহুল; জনপ্রতি প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণ খরচ
বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড নেমে যাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে মন্দির কমপ্লেক্সের দূরত্ব ৫ থেকে ১০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
ট্রেন বা বিমানের ক্ষেত্রে স্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে লোকাল বাসে করে পুঠিয়ায় যেতে হবে। এছাড়া নাটোরগামী আন্তঃনগর বাস বা রিজার্ভ গাড়িতে করেও পুঠিয়া যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণে কি কি দেখবেন
এখানকার পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী এবং ১৩টি মন্দির।
এগুলো হলো- বড় শিব মন্দির, রথ মন্দির, দোল মন্দির, পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির, কৃষ্ণপুর শিব মন্দির, কেষ্ট ক্ষ্যাপার মঠ, বড় গোপাল মন্দির ও জগদ্ধাত্রী মন্দির।
অধিকাংশ মন্দিরেরই বিশেষত্ব হচ্ছে সূক্ষ্ম পোড়ামাটির ফলক। জোড় বাংলা স্থাপত্য রীতির সাদৃশ্য থাকলেও এগুলোতে বিদেশি নকশারও মিশেল ঘটেছে। যেমন প্রধান পর্যটন আকর্ষণ পুঠিয়ার রাজবাড়িটিতে অনুসরণ করা হয়েছে ইন্দো-সারাসেনিক স্থাপত্য রীতি। কক্ষের দেওয়াল ও দরজায়, কাঠের কাজে, ভবনের সম্মুখের স্তম্ভ, অলংকরনে লতাপাতা ও ফুলের চিত্রকর্ম। এখানে গতানুগতিক হিন্দু স্থাপত্যশৈলীর পাশাপাশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রেনেসাঁ যুগের ইউরোপীয় নকশা। একটি বিশালাকার লেকের চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মন্দিরগুলোর মাঝে রয়েছে একটি নান্দনিক সবুজ চত্বর।
আরো পড়ুন: বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
পঞ্চ রত্ন গোবিন্দ মন্দিরকে বড় গোবিন্দ মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। এর দেওয়ালে চমৎকার পোড়ামাটির অলঙ্করণে প্রকাশ পেয়েছে কৃষ্ণ এবং রাধার ঐশ্বরিক প্রণয়। দরজার দুপাশ ও ভবনের চারপাশের কর্ণারেও পোড়ামাটির ফলকের জয়জয়কার। এগুলোতে ফুটে আছে যুদ্ধের কাহিনী এবং বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবীর চিত্র।
চৌচালা ছোট গোবিন্দ মন্দির নির্মাণে অনুসরণ করা হয়েছে চার চালা শৈলী। দক্ষিণের সম্মুখ ভাগটিতে দেখা যায় ব্যাপক পোড়ামাটির কাজ। এই অঙ্কনের বিষয়বস্তু হচ্ছে বিষ্ণুর দশ অবতার, ফুলের নকশা, জ্যামিতিক আঁকিবুকি এবং তৎকালীন নাগরিক জীবনাচরণ।
ভুবনেশ্বর বা পঞ্চরত্ন শিব মন্দিরটি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিব মন্দির। এর সজ্জায় ব্যবহৃত পাঁচটি চূড়া মূলত পূর্ব ভারতে প্রচলিত মনোমুগ্ধকর পঞ্চ রত্ন শৈলীকে প্রতিনিধিত্ব করে। পাঁচটির মধ্যে চারটি চূড়ার প্রত্যেকটিতে রয়েছে ছোট ছোট ১৭টি উপ-চূড়া। কেন্দ্রীয় বৃহত্তর চূড়াটিতে উপ-চূড়ার সংখ্যা ১০৮।
ছোট শিব মন্দিরের অবস্থান পুঠিয়া রাজবাড়ীর ঠিক পিছনে। চার চালা স্থাপত্য শৈলীতে গড়া ছোট এই মন্দিরের সামনের অংশটি ঢেকে আছে পোড়ামাটির ভারী অলঙ্করণে।
ভুবনেশ্বর শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে রথ মন্দির, যেটি অন্য নাম জগন্নাথ মন্দির। দ্বিতল এই স্থাপনাটির কাঠামো অষ্টভুজাকৃতির। দরজার চৌকাঠে ব্যবহার করা হয়েছে বেলে পাথর, যেটি চমৎকার অলঙ্করণে সজ্জিত।
আরো পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
পুঠিয়া রাজবাড়ির সামনের মাঠ পেরিয়ে গেলেই পড়ে দোল মন্দির। এর নিচতলার প্রত্যেক দেওয়ালে সাতটি করে ২৮টি দরজা রয়েছে। দোতলায় পাঁচটি করে ২০টি, তিন তলায় তিনটি করে ১২টি এবং চতুর্থ তলায় একটি করে চারটি দরজা। সব মিলিয়ে প্রবেশের জন্য মোট দরজার সংখ্যা ৬৪। এ কারণে স্থানীয়রা মন্দিরটি নাম দিয়েছে হাজারদুয়ারী। পুরো কমপ্লেক্সে শুধু এই মন্দিরে কোনো প্রতিমা বা পূজার ঘর নেই। সে কারণে এখানে পুরোহিত বা পূজারিদেরও খুব একটা আনাগোনা দেখা যায় না।
পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দিরের কাছেই ছোট আহ্নিক মন্দিরে ব্যবহার করা হয়েছে দো চালা শৈলী। পুরোটা পাতলা ইট ও চুনসুরকিতে বানানো হলেও মন্দিরের কর্ণার ও কার্নিশগুলো রাঙানো হয়েছে পোড়ামাটির চিত্রফলকে। ভেতরের চার দেওয়ালে চারটি পদ্ম এবং পূর্ব দেওয়ালের বাইরের দিকে পোড়ামাটির কারুকাজে জীবজন্তু ও লতা-পাতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা।
অন্যদিকে, বড় আহ্নিক মন্দিরে নকশাটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যের একটি অভূতপূর্ব মিশ্র রূপ। এখানে দুই পাশে দুটি চার চালা কাঠামো, আর কেন্দ্রীয় ভাগে দেওয়া হয়েছে দোচালা শৈলী।
পাশাপাশি অবস্থিত বড় আহ্নিক মন্দির, গোপাল মন্দির, ও ছোট গোবিন্দ মন্দির মূলত চারআনি জমিদারবাড়ীর অংশ।
পোড়ামাটির নান্দনিক চিত্রকর্ম আরও দেখা যায় কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দিরে, যাকে স্থানীয়রা সালামের মঠ নামে ডাকে। এছাড়া খিতিশ চন্দ্রের মঠ বা কৃষ্ণপুর শিব মন্দিরটিতেও রয়েছে পোড়ামাটির অপূর্ব চিত্রফলক।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
১ মাস আগে
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
পাহাড় চূড়া, দীঘল উপত্যকা ও এক পশলা হৃদের প্রাণবন্ত ঐকতানের অন্য নাম কাশ্মীর। তুষারাবৃত চূড়া এবং ব্যস্ত-সমস্ত তৃণভূমির অবারিত মোহনীয়তায় নিমেষেই খুঁজে পাওয়া যায় ভূস্বর্গ নামটির মানে। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও উষ্ণ আতিথেয়তা যে কোনো পরিব্রাজককে আপন করে নিতে যথেষ্ট। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত বিশ্ব জোড়া পর্যটকদের এই প্রিয় গন্তব্য নিয়েই এবারের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, জেনে নেয়া যাক কাশ্মীর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার উপায়
ভিসা প্রক্রিয়া
কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। এর জন্য ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টটি আনুমানিক প্রস্থানের দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে।
এই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
ভিসা আবেদনের জন্য একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি জেপিজি বা পিএনজি ফাইলের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে।
কাশ্মীরে যেয়ে কোথায় থাকা হবে তার একটা প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোটেলে থাকার ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজপত্র প্রিন্ট করে নিতে হবে।
ভারতে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময়টা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিমান বা ট্রেন যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, আসা-যাওয়ার টিকেট দেখাতে হবে।
সর্বোপরি, কাশ্মীরে যাবতীয় খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ভ্রমণ তহবিল আছে কিনা তার একটা প্রমাণ দেখাতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ঢাকা থেকে কাশ্মীর যাতায়াত
জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ আছে ভারতের দিল্লী অথবা চণ্ডিগড়ের। ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি এই রাজ্যগুলোতে পৌঁছা যায়। স্থলপথে যেতে হলে রেলপথে বা বাসে কলকাতা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।
কাশ্মীরের জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরতে হলে প্রথমে যে পর্যন্ত যেতে হবে সে জায়গাটি হচ্ছে শ্রীনগর। দিল্লী থেকে শ্রীনগর বিমানে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা। এখানে খরচ হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।
রেলপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার হাওড়ার ট্রেন আছে যেখানে শ্রেণীভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৫৯৯ থেকে ৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। তারপর হাওড়া থেকে ট্রেন বদলে যাওয়া যাবে জম্মু। এখানে ননএসি স্লিপারগুলোর ভাড়া ৭৫০ থেকে ৭৯০ রুপি বা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৪২ দশমিক ৮ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)।
ঢাকা থেকে বাসে গেলে কলকাতা পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৬০ টাকা। অতঃপর রেলপথে জম্মু পৌঁছানোর পর শ্রীনগরের বাকিটা পথ গাড়িতে শেয়ার করে কিংবা বাসে করে যেতে হবে। সব মিলিয়ে এভাবে শ্রীনগর পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কাশ্মীরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
শ্রীনগর
কাশ্মীরের প্রবেশদ্বার শ্রীনগরেই মিলবে অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার করা ডাল লেকের স্নিগ্ধতা। এছাড়া এই লেকে রয়েছে এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল। শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের এই রাজধানী শহরটির প্রায় পুরোটা চোখে পড়ে।
৮ মাস আগে
খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া বা হাতি মাথা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও যাবতীয় খরচ
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দর্শনীয় স্থানগুলোতে নান্দনিকতার পাশাপাশি থাকে মৌলিকতার ছোঁয়া। তার অকৃত্রিমতা অপরিবর্তিত রেখে কিছু মানবসৃষ্ট অবকাঠামোর সংযোজন জায়গাটির সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। খাগড়াছড়ির মায়ুং কপাল, হাতিমুড়া, বা হাতি মাথা ঠিক এমনি একটি জায়গা, যার প্রাচীনতায় লেশমাত্র দাগ ফেলেনি মনুষ্য সৃষ্টকর্ম। উল্টো প্রকৃতির এই অপার বিস্ময়কে সাজিয়ে তুলেছে শৈল্পিক অলঙ্করণে। অদ্ভূত আকৃতির এই পাহাড় নিয়েই এবারের ভ্রমণকথা।
এমন মজার নামের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি চলুন জেনে নেয়া যাক- কোন কোন বিষয়গুলো জায়গাটির প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
হাতিমুড়া বা মায়ুং কপালের অবস্থান ও বিশেষত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার দুর্গম পাহাড় ঘেরা অন্যতম ইউনিয়ন পেরাছড়া। এই ইউনিয়নেরই সবচেয়ে দর্শনীয় পাহাড়টির নাম হাতি মাথা বা মায়ুং কপাল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০৮ ফুট উচু এই পাহাড় নানা জনগোষ্ঠীর মোট ১৫টি গ্রামকে সযত্নে আগলে রেখেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাঙ্গামুড়া, মাখন তাইসা পাড়া, বদলছড়া, হাজা পাড়া, কিনাপা পাড়া, কাপ্তালপাড়া, বাগড়া পাড়া, সাধুপাড়া, ও কেশব মহাজনপাড়া।
হাতি মাথার খাড়া পাহাড় বেয়ে পাহাড়ি জনগণের উঠানামার সুবিধার্থে ২০১৫ সালের ১৩ জুন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় ৩০৮ ফুট দীর্ঘ লোহার সিঁড়ি। এই সিঁড়ি পথ দিয়ে পাহাড় চূড়ায় যেতে ৩০০টি ধাপ পেরোতে হয়।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ার লালন শাহের মাজার ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
মায়ুং কপাল বা হাতি মাথা নামের উৎপত্তি
অদ্ভূত আকৃতির এই পাহাড় প্রাকৃতিকভাবেই গঠন পেয়েছে হাতির মাথার মত আর এ কারণেই ‘হাতি মাথা’ বা 'হাতিমুড়া' নামকরণ। ‘মায়ুং কপাল’ নামের উৎপত্তি এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ত্রিপুরাদের কাছ থেকে। তারা ‘হাতি’ বোঝাতে ‘মায়ুং’ এবং ‘মাথা’ বোঝাতে ‘কপাল’ শব্দ ব্যবহার করে, আর এ দুয়ে মিলেই পাহাড়ের নাম হয়েছে হাতি মাথা।
এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত এই পাহাড়টি। স্থানীয়দের অনেকে একে হাতি মুড়া বলে ডাকে। চাকমাদের কাছে এটি ‘এঁদো সিরে মোন’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন:তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
মায়ুং কপাল পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
পাহাড়ি বনের মাঝ দিয়ে নির্মিত সিঁড়ির নিচ থেকে উপরের দিকে সিঁড়ির প্রান্ত দেখা যায় না। দেখে মনে হয় যেন সিঁড়ির ধাপগুলো আকাশেরও উপরে উঠে গেছে। আর তাই সিঁড়ি নির্মাণের পর থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে পাহাড়ের দারুণ একটি নাম প্রচলিত হয়, আর সেটি হচ্ছে- ‘স্বর্গের সিঁড়ি’। এরকম নাম এবং সিঁড়ির অনিন্দ্য দৃশ্যের জন্যই গত কয়েক বছর ধরে পাহাড় ট্রেকারদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাতি মুড়া
হাতি মুড়া পৌঁছার দীর্ঘ ট্রেইলপথের একঘেয়েমিতা দূর করেছে খরস্রোতা চেঙ্গি নদী। নদীর ওপর দিয়ে পাড়াপাড়ের জন্য রয়েছে কাঠের সাঁকো। এর পরে বিস্তৃত সমতল ভূমির দু’পাশে কোথাও জুম ক্ষেত, কোথাও বা ধু ধু প্রান্তর। এমন মাঠ পেরোতেই দেখা মিলবে অদ্ভূত নামের এক পাহাড়ি গ্রামের। ‘বানতৈসা’ নামের এই গ্রামে ত্রিপুরাদের বসবাস।
বানতৈসার পর স্বর্গের সিঁড়ির আগ পর্যন্ত আর কোনও জনপদ নেই। তবে উঁচু-নিচু রাস্তা ধরে এগোনোর সময় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে চোখে পড়বে ছোট ছোট মাচাঘর। দীর্ঘ পায়ে হাঁটা পথে এখানকার কুয়া থেকে বরফ ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে নেয়া যায়।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
হাতিমাথা পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছতেই সামনে দেখা যাবে প্রায় ১২০ ডিগ্রি কোণ করে বেঁকে উপরের দিকে উঠে গেছে স্বর্গের সিঁড়ি। কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে এই সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় পৌঁছতে।
স্বর্গে নিয়ে না গেলেও এই সিঁড়ির শেষ প্রান্ত পর্যটকদের পৌঁছে দেয় নয়নাভিরাম সুন্দর এক গ্রামে। সেই চূড়া থেকে প্রায় পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাই দেখা যায়। মনে হয় যেন নেপাল বা ভুটানের কোনও পর্যটন স্পট।
১০ মাস আগে
ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ১০ দর্শনীয় স্থান: শীতের ছুটিতে সাধ্যের মধ্যে ভ্রমণ
ইন্দোনেশিয়াকে এশিয়ার সাগর পাড়ের স্বর্গ নাম দেওয়া হলে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না। নিদেনপক্ষে রাজা আমপাত রিজেন্সি, বালি, জাভা, সুমাত্রা ঘুরে বেড়ানোর সময় এমনটাই অনুভব করেন প্রতিটি পর্যটক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরেও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় অভিজাত এই দর্শনীয় স্থানগুলো। তবে এই অবকাশ যাপনের সঙ্গে যে একদমই আপস করা যায় না তা কিন্তু নয়। জায়গা ভেদে প্রতিটি দেশেরই বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক তারতম্য ঘটে। ইন্দোনেশিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনকি জাকার্তার মতো ব্যয়বহুল শহরের কাছেই দারুণ কিছু জায়গা আছে হিসেবি পর্যটকদের জন্য। আজকের নিবন্ধে স্বল্প খরচে শীতের ছুটি কাটানোর মতো ইন্দোনেশিয়ার সেই অপূর্ব দ্বীপাঞ্চলগুলোকে একত্রিত করা হয়েছে।
স্বল্প খরচে ইন্দোনেশিয়ার ১০ মনোরম স্থানে কাটাতে পারেন শীতের ছুটি
গিলি দ্বীপপুঞ্জ
গিলি ট্রাওয়াঞ্জান, গিলি মেনো এবং গিলি এয়ার- ছোট্ট এই তিন দ্বীপ মিলে গিলি দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার লম্বকে। এই তিনটিই বিশ্বমানের ডাইভিং এবং স্নরকেলিংয়ের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপগুলোর যে কোনো স্থান থেকে পানিতে নেমেই উপভোগ করা যায় পানির নিচের মন্ত্রমুগ্ধকর জগত।
বাংলাদেশ থেকে লম্বক পর্যন্ত আকাশপথে যাত্রায় মাথাপিছু সর্বনিম্ন বাজেট রাখতে হবে ৩৩৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৯৭ টাকা (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা)।
লম্বকে থাকার খরচ জনপ্রতি সাধারণত ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৫ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া বা ১ হাজার ২৭ দশমিক ২১ টাকা (১ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া = ০ দশমিক ০০৭ বাংলাদেশি টাকা)। একদিনের খাবারের জন্য বাজেট রাখতে হবে ৪৯ হাজার ৯৯৩ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া যা ৩৪৯ দশমিক ৯৩ টাকার সমতুল্য।
সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
উবুদ
ইন্দোনেশিয়াতে বিশ্ব পরিব্রাজকদের জনপ্রিয় গন্তব্য বালিতে অবস্থিত এই উবুদ। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রয়্যাল প্যালেসে দর্শনার্থীরা বিনামূল্যেই পরিদর্শন করতে পারেন। রাস্তার ঠিক নিচেই রয়েছে মাঙ্কি ফরেস্ট। এছাড়া রয়েছে গোয়া গাজাহর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বেমো রাইড। বেদুলু গ্রামের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হাতির গুহার মূল আকর্ষণ এর জটিল খোদাইগুলো।
উবুদে থাকার খরচ সাধারণত ২১ লাখ ৪২ হাজার ১৫১ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া যা ১৪ হাজার ৯৯৩ দশমিক ৯৪ টাকার সমান। সাশ্রয়ী হোটেলগুলোর মধ্যে আগুং ত্রিস্না বাংলো এবং ইনাং ভিলা সেরা পছন্দ হতে পারে। উবুদে খাওয়া-দাওয়ার জন্য দৈনিক চার্জ প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫৯ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া (১ হাজার ৩২৯ দশমিক ৬১ টাকা)।
ঢাকা থেকে উবুদের নিকটতম নুগুরা রাই বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে সবচেয়ে কম বিমান ভাড়া ২৫২ মার্কিন ডলার (২৭ হাজার ৬৮২ দশমিক ২৫ টাকা)।
‘অরোরা বোরিয়ালিস’ বা ‘উত্তরের আলো’ দেখার সেরা ১০টি দেশ
১ বছর আগে
ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক: কীভাবে যাবেন, কী দেখবেন
অবকাঠামোগত উন্নয়নে ধীরে ধীরে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। স্বভাবতই দেশজুড়ে দিন বদলের এই হাওয়ার সবচেয়ে বেশি সান্নিধ্য পেয়েছে রাজধানী ঢাকা। ছোট্ট ভূখণ্ডে আকাশসম জটিলতা নিয়ে বিশ্বমানের সভ্যতার সঙ্গে তাল মেলানো শুরু করেছে প্রায় ৪০০ বছরেরও পুরানো এই শহর। ঢাকার পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক বজ্রকণ্ঠে যেন তারই ঘোষণা দিচ্ছে। উপশহর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ঢেলে সাজানো এই বিস্তৃত অঞ্চলটি ইতোমধ্যে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়েতে। চলুন, খুব শিগগিরই উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নতুন এই মাইলফলকের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্ব মানের ৩০০ ফিট সড়ক
সংশোধিত নকশায় ২৩৫ ফিট হলেও পূর্বের নামেই এখনও পরিচিত কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি। মূলত প্রস্থ বরাবর ৩০০ ফিট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সূচনালগ্ন থেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করে ৩০০ ফিট নামটি।
এখন কুড়িল থেকে সড়কটি ১৪ লেনে ভাগ হয়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার চলে গেছে বালু ব্রিজ পর্যন্ত। ১৪ লেনের ৮টি এক্সপ্রেসওয়ে, যে পথে দ্রুতগামী যানবাহনগুলো ঢাকার বাইরে থেকে যাওয়া-আসা করবে। আর ৬টি হলো সার্ভিস রোড, যেগুলোতে চলাচল করবে স্থানীয় গাড়িগুলো।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলার নায়াগ্রাতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
তারপর বালু ব্রিজের পর থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি ১২ লেনের। এখানে ৬টি এক্সপ্রেসওয়ে, ৬টি সার্ভিস রোড।
এগুলোতে না আছে কোনো স্টপওভার পয়েন্ট, না কোনো ট্র্যাফিক সিগনাল। কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আপন গতিতে চলতে পারবে প্রতিটি যানবাহন। সার্ভিস লেন থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়ার জন্য পুরো সড়কটিতে নির্দিষ্ট দূরুত্ব পর পর রয়েছে মোট ৫টি এ্যাটগ্রেড ইন্টার-সেকশন। এগুলোর নিচের আন্ডারপাস বা পাতাল সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো চলে যেতে পারে এক্সপ্রেসওয়েতে। এরকম পাতাল সড়ক রয়েছে ১২টি।
বালু ব্রিজসহ ৬টি প্রশস্ত সেতু তো আছেই, সেই সঙ্গে হাতিরঝিলের আদলে বানানো হয়েছে ১৩টি আর্চ ব্রিজ। এগুলোর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছোট ও মাঝারি গাড়িগুলো সার্ভিস লেন হয়ে ঢুকতে পারে মূল সড়কে। পাখির চোখে দেখলে ৪টি আইলুপ আলাদা করে দৃষ্টি কাঁড়ে।
এছাড়াও রয়েছে ৩০০ ফিটের সব থেকে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে সড়কের দু’পাশে ১০০ ফুটের দৃষ্টিনন্দন খাল। এর পাশ দিয়ে ৩৯ কিলোমিটার পায়ে হাটা পথ রীতিমতো উদ্যানে পরিণত করেছে জায়গাগুলোকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
৩০০ ফিটে রয়েছে ১টি পাম্প হাউজ এবং খালের পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে ৫টি স্লুইস গেট। পানি গিয়ে মিলিত হয়েছে বালু নদীতে।
বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের আবাসিক এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসণকল্পে আরও খাল খননের কাজ চলছে। পার্শ্ববর্তী ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খালের পানি এক হয়ে এসে মিশবে এই ১০০ ফুট খালের সঙ্গে। এডি-৮ খাল খনন করা হবে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ করে, আর বোয়ালিয়া খাল হবে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ করে খনন করা হবে ডুমনি খাল। ৩০০ ফিট সড়কের খালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনটি খালেরই প্রস্থ ১০০ ফুট রাখা হবে।
বোয়ালিয়া, এডি-৮ ও ১০০ ফুট খালের পানি এক হয়ে গিয়ে পড়বে বালু নদীতে। অন্যদিকে খননের পর ডুমনি খালটি যুক্ত হবে পাশের কাঁঠালিয়া খালের সঙ্গে, যার শেষ গন্তব্য বালু নদী। ফলে ডুমনি খালেরও বালু নদীতে বের হওয়ার পথ থাকবে।
আরও পড়ুন: মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা: যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ
এতে করে নিকুঞ্জ, বারিধারা ডিওএইচএস, বারিধারা, জোয়ারসাহারা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেনানিবাস, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কালাচাঁদপুর, কাওলাসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।
ঢাকার ৩০০ ফিট সড়কের অবস্থান
সড়কটির অবস্থান ঢাকার উত্তর-পূর্ব দিকে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায়। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মাঝখানে প্রায় ৬২১৩ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে মনোরম সড়কটি। ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ স্থাপন করেছে এই বিরতিহীন সড়কটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্চ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ও কিশোরগঞ্জ। মূলত ৩০০ ফিটের মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিমাংশের সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যাতায়াত পথ সুগম হয়েছে।
বিমান বন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সঙ্গে ঢাকার পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসের সংযোগ ঘটায় বহিরাগতরা ঝামেলাবিহীন ভাবে নানা গন্তব্যে যেতে পারবেন।
এছাড়া ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নামে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়েটি পূর্বাচল ১০০ ফিট মাদানী এভিনিউকে সংযুক্ত করবে এই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত ভ্রমণের উপায় ও খরচ
১ বছর আগে
তদন্ত করতে এসে অভিযুক্তকে নিয়ে দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ালেন তদন্তকারী দল!
প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে এসে খোদ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে দুইদিন ধরে কুষ্টিয়া এবং পাশের মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেরিয়েছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।
শুধু দুই জেলার দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণই নয়,অভিযুক্ত ব্যক্তি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিমকে ভূরিভোজও করিয়েছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচিত এই ঘটনাটি ঘটেছে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মোছা. কাঞ্চন মালার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ইউপি সদস্য হলেন তৃতীয় লিঙ্গের পায়েল
ইনচার্জ কাঞ্চন মালার স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষার্থীসহ প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ অফিসকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ইতোপূর্বে দুইবার তদন্ত হলেও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন ইনচার্জ কাঞ্চন মালা।
ইনচার্জের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সম্প্রতি ইনচার্জ কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শারীরিক লাঞ্ছনাসহ অসদাচরণ, প্রতিষ্ঠানের ৩০ সিটের কোচ ব্যবহার করে নিয়মিত নিজ বাড়ি মেহেরপুরে যাতায়াত, অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর প্রদান, অবৈধভাবে পরিবার নিয়ে হোস্টেলে বসবাস করা, পছন্দের শিক্ষকদের পরীক্ষার ডিউটি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সুযোগ প্রদান, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজ বাড়ি মেহেরপুর নিয়ে যাওয়াসহ ১৩টি অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষিকা মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপসচিব পরিচালক (শিক্ষা) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর স্বাক্ষরিত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়-সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর সুলতানা পারভীন, খুলনা নার্সিং কলেজের প্রভাষক লীলাবতী বিশ্বাস এবং ঢাকা নার্সিং কলেজের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর মো. খোরশেদ আলমকে।
ওই কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
ইনচার্জ কাঞ্চন মালার অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম কুষ্টিয়ায় আসে।
প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, তদন্তকালে অভিযোগকারীদের সঙ্গে পৃথক-পৃথকভাবে মৌখিক কথা বলেন তদন্ত দল। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই তদন্ত টিমের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন অভিযুক্ত ইনচার্জ কাঞ্চন মালা। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকালে অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত দল প্রতিষ্ঠানের কোচে চড়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট লালন সাঁই’র আখড়া বাড়ি পরিদর্শনে যান এবং লালন একাডেমির শিল্পীদের গান উপভোগ করেন।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় কৃষকের ধানের গাদায় আগুন দেয়ার অভিযোগ
১ বছর আগে
মধ্যটিলা ইকোপার্ককে সেরা দর্শনীয় স্থান করতে প্রকৃতিবান্ধব সমীক্ষার নির্দেশনা
প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যের সমাহার, সবুজ-শ্যামলিমা আর ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ প্রকৃতির আধার মধুটিলা ইকোপার্ক। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা মধুটিলা ইকোপার্ককে জেলার সেরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে তৈরি করতে উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। প্রকৃতিবান্ধব সমীক্ষা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যেই প্রকৃতিবান্ধব সমীক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী।
আরও পড়ুন: হংকংয়ে রেকর্ড ৪৯.৯ মিলিয়ন ডলারে গোলাপী হীরা বিক্রি
৮ অক্টোবর শনিবার দুপুরে মধুটিলা ইকোপার্কে সামাজিক বনায়নের ১৪৫ জন উপকারভোগীর মাঝে তিন কোটি ২০ লাখ ৪৬ হাজার হাজার ৬৯৮ টাকা চেক বিতরণকালে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এ উদ্যোগের কথা জানান।
প্রধান বন সংরক্ষক বলেছেন, ইকোপার্ক বা জাতীয় উদ্যান তৈরির জন্য আদর্শ জায়গা মধুটিলা ইকোপার্ক। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের মতো একটি বন এখানে আছে। এখন আমাদের প্রয়োজন পর্যটকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দেয়া। সেজন্য ইতোমধ্যেই আমাদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষককে বলেছি, এখানে একটি সমীক্ষা তৈরি করার জন্য।
২ বছর আগে
ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজার অথবা ইতালির ভেনিসের রিও সান বার্নাবা বাজার নয়। ভাসমান পেয়ারা বাজার বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে বাংলার ভেনিস বরিশালের ভাসমান হাটকে।
বিগত কয়েক বছর ধরে দর্শনীয় স্থানটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যাওয়ায় দেশীয় পর্যটকদের ভাসমান বাজারের অভিজ্ঞতা নিতে আর বিদেশমুখী হতে হচ্ছে না। উল্টো বাইরে থেকে বিদেশি পরিব্রাজকরা হাতে ডিএসএলআর নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন বাংলাদেশের দক্ষিণের এই ভাসমান কাঁচাবাজারে। চলুন, ঐতিহাসিক বরিশালের সৌন্দর্য্যে দারুণ এই সংযোজনটির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভাসমান পেয়ারা বাজারের অবস্থান
ভাসমান পেয়ারা বাজার বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনটি খালের সঙ্গমস্থলে এই ভাসমান বাজার। ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করায় এটি এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারা বাজার। বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ২৬টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ৩১ হাজার একর জমিতে বিস্তৃত এই পেয়ারা বাগানের ওপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
ভাসমান পেয়ারা বাজারের নামকরণ
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভাসমান পেয়ারা বাজারটি গড়ে উঠেছে। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর সীমারেখায় অবস্থিত ছোট্ট গ্রামের নাম ভিমরুলি। এখানেই চর্তুমুখী ছোট-বড় খালের মোহনায় প্রতিদিন বিপণী শুরু হয়। তাই ভিমরুলি গ্রামটির নাম-ই শেষমেষ বাজারটির নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জুড়ে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মুখে অবশ্য এই বাজারকে উদ্দেশ্য করে কথা বলার সময় গোইয়ার হাট নামটা শোনা যায়।
ভাসমান বিপণীর প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য
ছোট খাল জুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজার চলে। পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা দেখলে বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ফল চাষিরা ফল দিয়ে নৌকা বোঝাই করে এবং ক্রেতাদের সন্ধান করে। ভিমরুলির আশেপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান রয়েছে। কৃষকরা এসব বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে নৌকায় করে সরাসরি হাটে নিয়ে আসে। ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের ওপর একটি ছোট সেতু আছে, যেটি এখানকার মূল আকর্ষণ। কেননা সেতু থেকে বাজারের পুরোটা খুব ভালোভাবে দেখা যায়।
মজার ব্যাপার হলো এই বাজারে পেয়ারা বহনকারী সব নৌকার নকশা ও আকার প্রায় একই। মনে হয় একই কারিগর সব নৌকা বানিয়েছে।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
পেয়ারা বাগানে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট পরিখা করা হয়েছে। ছোট নৌকা নিয়ে সেখানে ঢুকে চাষিরা পেয়ারা পাড়েন। খাল সংলগ্ন প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা থাকে। স্থানীয়রা এগুলোকে কষা নৌকা বলে। এগুলো দিয়েই বাজার-হাট, যাতায়াত যাবতীয় কাজ করা হয়। ছোট নৌকাগুলো সরাসরি পরিখা দিয়ে বাগানে ঢুকে পড়তে পারে। বড়গুলোকে পাড়ে রেখে চাষিরা বাগানে নেমে পড়ে।
খাল সংলগ্ন বাড়িঘর, স্কুল, ব্রিজ, রাস্তাঘাটের দৃশ্য যে কাউকে বাংলার বুকে এক টুকরো থাইল্যান্ড বা ইতালির ভেনিসের অনুভূতি দেবে। আর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে কোনো ভ্রমণপিপাসু মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ার অবকাশ পাবেন না।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
ভিমরুলি বাজারে ব্যস্ততম সময় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে খালে নৌকা সংখ্যার চমকপ্রদভাবে বেড়ে যায়। এমনকি কয়েকশ ছাড়িয়ে যায়। সারা বছর ভাসমান বাজার বসলেও পেয়ারার মৌসুমে প্রাণ আসে। মৌসুম জুলাই ও আগস্ট মাস হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে। ভাসমান পেয়ারা বাজার ঘুরে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় আগস্ট মাস। পেয়ারা বাজারের ভিড় বেলা ১১টার পর হালকা হয়ে যায়, তাই এর আগে বাজারে উপস্থিত থাকা ভালো।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
ঢাকা থেকে ভাসমান পেয়ারা বাজার যাবার উপায়
ঢাকা থেকে বরিশালে পৌঁছানোর জন্য সড়কপথ, নৌপথ দুইভাবেই যাওয়া যেতে পারে। তবে জলপথে ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক, সুবিধাজনক এবং আনন্দদায়ক।
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু লঞ্চ বরিশালের পথে যাতায়াত করে এবং ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে পৌঁছায়। ডেকের ভাড়া জন প্রতি ২০০ টাকা, যেখানে নন এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৯০০ টাকা এবং নন এসি ডাবল কেবিন ভাড়া ১৮০০ টাকা।
বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে অটোরিকশার মাধ্যমে চৌরাস্তায় এসে তারপর বাসে স্বরূপকাঠি লঞ্চ ঘাটে যেতে হবে, যেখানে ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। স্বরূপকাঠি লঞ্চ ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে অপরূপ সন্ধ্যা নদী পেরিয়ে আটঘর, কুড়িয়ানা এবং ভীমরুলি বাজার ঘুরে দেখা যায়। ভালো দর কষাকষি করলে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকায় ট্রলার ঠিক করে নেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার সেরা ১০টি জাদুঘর: ইতিহাস রোমন্থনের সঙ্গে জ্ঞান আহরণের অভাবনীয় সুযোগ
আরেকটি বিকল্প উপায় হচ্ছে- স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ২০ টাকায় অটো ভাড়ায় কুরিয়ানা বাজারে পৌঁছা। তারপর সেখানকার আশেপাশের বাজার এবং খালগুলো দেখার জন্য ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করা। তবে এ পথে ভিমরুলিতে গেলে ভাড়া বেশি পড়ে।
এছাড়া রাস্তা ভালো থাকলে অটোতে করে আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলি বাজার ঘোরা যায়। তবে রাস্তা ও সেতুর অবস্থা ভালো কিনা তা এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অটোতে করে ব্রিজপ পর্যন্ত এসে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে আবার অটো নিতে হবে।
আর বাসের পথটা এখন অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। যে পথ অতিক্রমে আগে দুই দিন লাগতো পদ্মা সেতুর কল্যাণে সেই যাত্রা এখন একদিনেই শেষ করা যাবে। এমনকি পানিপথের প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কায় পড়া লাগবে না। এখন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে পিরোজপুর বাসে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: কমলদহ ও সহস্রধারা-২ ঝর্ণা ভ্রমণ গাইডলাইন: ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় ঝিরিপথ
অতঃপর পিরোজপুর থেকে ওপরে উল্লেখিত পথে ভিমরুলি চলে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ খুব ভোরে রওনা হলে দুপুরেই মধ্যেই ভাসমান বাজারে পৌঁছে যাওয়া যাবে। অতঃপর ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে আবার রাতেই ঢাকায় ফেরা যাবে।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
রাত্রি যাপন করতে হলে চলে আসতে হবে ঝালকাঠি শহরে। সেখানে ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়। নদীর ধারে রাত্রিযাপন করতে চাইলে স্বরূপকাঠিতে নদীর ধারে হোটেল পাওয়া যাবে। তবে ভালো মানের হোটেল নির্বাচনের জন্য চলে যেতে হবে বরিশাল সদরে।
ভোজন রসিকদের জন্য ভিমরুলি দারুণ একটি জায়গা। এখানকার ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভিমরুলি বাজারের সাদা ও লাল মিষ্টি, কুরিয়ানা বাজারের ঋতুপর্ণার গরম মিষ্টি, বউদির হোটেলে দুপুরের খাবার এবং গুঠিয়ার মিষ্টি। এ ছাড়া বটতলা এলাকার শশির রসোমালাই, নয়াবাজার মোড়ের নিতাইয়ের স্পঞ্জ মিষ্টি।
আরও পড়ুন: বান্দরবান ট্যুর গাইড: সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ
তাছাড়া বিবি পুকুর পাড়ের ছোটপটি, দধিঘরের দই, ঢেঁড়স, ও ঝোলা চালের মিশ্রণ লোকালয়ে বেশ জনপ্রিয়। সুযোগ পেলে বরিশাল শহরের পুরান বাজারে রসোমালাই, রসগোল্লা এবং ছানা চেখে দেখা যেতে পারে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ
ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ঘুরে দেখা যেতে পারে গুঠিয়া মসজিদ এবং দুর্গাসাগর দীঘি। ২০০৮ সালে গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু নিজ উদ্যোগে গুঠিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের স্তম্ভগুলো কাবা শরীফ, মসজিদে নববী, যমযমের পবিত্র পানিসহ বিশ্বের পবিত্র স্থানগুলোর মাটি দিয়ে তৈরি।
১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ পরগণার রাজা শিবনারায়ণ স্থানীয়দের পানির সংকট দূর করার জন্য মাধবপাশায় দুর্গাসাগর দীঘি খনন করেন। দীঘির কাছে ৩০০ বছরের পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ শহর
কুড়িয়ানা বাজার থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকায় অটোতে করে প্রথমে নারায়ণকাঠি নামতে হবে। সেখান থেকে অটো বদলে মাথাপিছু ১০ টাকা ভাড়ায় গুটিয়া মসজিদ যাওয়া যায়। সেখান থেকে দুর্গাসাগর দিঘীর দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার।
পরিশেষে
ভাসমান বাজারে নৌকায় ভেসে যাওয়ার সময় লাইফ জ্যাকেট পরে নেয়া ভালো। বাগান থেকে কিছু খেতে চাইলে বাগান মালিকের অনুমতি নিতে হবে। পানিতে ময়লা ফেলে খালের পরিবেশকে নষ্ট করা যাবে না।
শেষ কথা হচ্ছে, বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার দারুন একটি ডে-ট্যুর হতে পারে। গ্রাম্য চাষিদের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া নিমেষেই ভুলিতে দিতে পারে শহরের কৃত্রিম শপিং মলের যান্ত্রিকতা। আগস্টের যে কোনো ব্যস্ত দিনে দলবেধে হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে এই অদ্ভুত কোলাহলে।
আরও পড়ুন: হাকালুকি হাওর ভ্রমণ: এক নিঃসীম জলজ মুগ্ধতা
২ বছর আগে
ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ গাইড: দর্শনীয় স্থান সমূহ, খরচ
ধর্মীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে বহুজাতি সংস্কৃতি, আগ্নেয়গিরির দ্বীপাঞ্চল সহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ; এসব কিছু একসাথে পাওয়া যাবে ইন্দোনেশিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোতে। বিশ্বের এই ৪র্থ জনবহুল দেশটি এর দিগন্ত জোড়া সৈকত ও পাহাড়ের ল্যান্ডস্কেপ বিশ্ব পরিব্রাজকদের বিশালতা ও বিচিত্রতা অন্বেষণের খোরাক জোগায়। জুলাই থেকে আগস্টের শুষ্ক মৌসুম ইন্দোনেশিয়ার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এ সময় ২৫ থেকে ২৭ সেলসিয়াস ডিগ্রি তাপমাত্রা হাল্কা বৃষ্টিপাতের সাথে আরামপ্রদ অনুভূতি দেবে। এর কোন কোন দর্শনীয় স্থান সংস্পর্শ পেয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির, কোনটা মিশেছে মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইয়ের সাথে। ইন্দোনেশিয়ার সব চেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবারের ফিচারে।
ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানসমূহ
উবুদ, বালি
একদিকে ধান ক্ষেত্র চলে গেছে পাম-রেখাযুক্ত পাহাড়ের নিচে আর বাগান ঘেরা উপত্যকার বাতাসে বাজতে থাকে স্থানীয় গেমলান সঙ্গীত। এমনি দৃশ্য চোখে পড়বে বালির সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম উবুদে গেলে। সিমিয়ান দেখার জন্য যাওয়া যেতে পারে মাঙ্কি ফরেস্টে, অথবা স্থানীয় শিল্পের সাথে পরিচিত হতে প্রবেশ করা যেতে পারে আগুং রাই মিউজিয়ামে। অন্ধকারের নামলে স্থানীয় মন্দিরগুলোতে দর্শনার্থীদের সৌজন্যে শুরু হয় লেগং ব্যালে বা বন্য কেকাক ফায়ার নাচ।
সুলুবান সৈকত, বালি
প্রকৃতির অপার বিস্ময় এই সুলুবান সৈকতে আছে রোমাঞ্চকর গুহা, যা যে কোন দক্ষ স্কুবা ডাইভারকে নিমেষেই চমকে দিতে পারে। সুলুবান সৈকত উলুওয়াতু বালির একটি দর্শনীয় সৈকত। ব্লু পয়েন্ট বিচ এবং পান্তাই সুলুবান বালি নামে পরিচিত এই সৈকতে সার্ফিয়ের সময় ঢেউগুলোকে মনে হবে যেন সঙ্গীতের তালে তালে স্পন্দিত হচ্ছে।
পড়ুন: ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
গিলি দ্বীপ, লম্বক
লোম্বকের উপকূলে প্রবাল সহ তাদের স্ফটিক ফিরোজা রঙের পানি, সাদা-বালির সৈকত, স্বাস্থ্যকর খাবারের রেস্তোরাঁ, অভিজাত সৈকত পার্টিগুলোর জন্য গিলি দ্বীপের কোন তুলনা হয় না। গিলি ট্রাওয়ানগান (ওরফে 'গিলি টি') হল দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উন্নত দোকান, ম্যাসেজ পার্লার এবং ক্যাফেতে ভরপুর। আর গিলি মেনো হল সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ।
বাটাম, রিয়াউ
রিয়াউ প্রদেশের বৃহত্তম শহর বাটাম একটি শৈল্পিক শহর। এটি ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেলের একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের অংশ। এখানে আছে বিখ্যাত বেরেলাং ব্রিজ, যার রয়েছে ছয়টি অত্যাধুনিক ফুল সুইং অংশ, যা বাটাম, রেম্পাং এবং গালাং দ্বীপ তিনটিকে সংযুক্ত করেছে।
বালি দ্বীপ, বালি
ইন্দোনেশিয়ায় সকল সৌন্দর্য যেন অল্প অল্প করে অঙ্গে ধারণ করে আছে ঈশ্বরের দ্বীপ নামে পরিচিত এই বালি দ্বীপ। যার কারণে সুন্দর মন্দির থেকে সুউচ্চ পর্বত, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি থেকে উত্তেজনাপূর্ণ নাইটলাইফের এই মিলনকেন্দ্রটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। বালির অভিমুখে গমনকারি ভ্রমণপিপাসুরা সানুর বিচ, পুরা লুহুর উলুওয়াতু এবং তুকাদ সেপুং ঝর্ণা দেখতে ভোলেন না।
পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
ইয়োগিয়াকার্তা, জাভা
ইয়োগিয়াকার্তা জাভার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রায় ৫ লাখ মানুষের এই শহরটি বোরোবুদুর এবং প্রম্বানানের মন্দিরগুলোর জন্য বিখ্যাত। এর জাভানিজ চারুকলা থিয়েটার থেকে শুরু করে ব্যালে পারফরম্যান্স বিশ্ব দরবারে সপ্রতিভভাবে তুলে ধরে। ছোট্ট এই শহরটি পায়ে হেঁটেই পুরোটা ঘোরা যেতে পারে। মেরাপি লাভা ট্যুরে শক্ত লাভা দ্বারা আটকে থাকা আশেপাশের শান্ত গ্রামগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।
কেলিমুতু হৃদ, সুমাত্রা
কেলিমুতু আগ্নেয়গিরি দ্বারা গঠিত তিনটি অংশে বিভক্ত হ্রদটিকে একসাথে কেলিমুতু ডাকা হয়। একই আগ্নেয়গিরির শিখরে অবস্থিত হলেও হ্রদ তিনটির রঙগুলোও ভিন্ন- লাল, নীল এবং সাদা। যথেষ্ট দুঃসাহসের পরিচয় দিতে হবে এই ক্রেটার হ্রদগুলো ঘুরতে যেতে হলে। কিন্তু দেখার পর মনে হবে যে, জীবন বোধ হয় ষোল কলা পূর্ণ হলো।
নুসা পেনিদা, বালি
শামুকের খোলসের আবরণে গুপ্ত ঝিনুকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে এই অফবিট জায়গাটিকে। বালির জাকজমক সৌন্দর্য্যে অনেকেই এ জায়গাটির কথা ভুলে যান। কিন্তু এর চমৎকার পর্বতময় উপকূলরেখাগুলো থেকে চোখ ফেরানো যায় না। বালি থেকে এক দিনের ক্রুজ নিয়ে এই দ্বীপটিতে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।
পড়ুন: সিঙ্গাপুর ভ্রমণ: সাগরের উপকন্ঠে অভিজাত উদ্যাননগরী
টোবা হৃদ, উত্তর সুমাত্রা
পৃথিবীর বৃহত্তম ক্যালডেরাতে অবস্থিত টোবা হ্রদের সংস্পর্শে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে গঠিত হওয়া আগ্নেয়গিরির উৎস। এটি হয়ত একটি ধাঁধার মত শোনাতে পারে যে, এই টোবা হ্রদটি একটি দ্বীপে অবস্থিত, যেটি আবার জেগে আছে একটি হ্রদের মধ্যে। এই ধাঁধার উত্তর পেতেই উৎসকু পর্যটকরা ছুটে যান উত্তর সুমাত্রায়।
কমোডো ন্যাশনাল পার্ক, নুসা টেঙ্গারা তৈমুর
এই জায়গাটি পশ্চিম নুসা টেঙ্গারা তৈমুর বরাবর সুম্বাওয়া এবং ফ্লোরেসের মাঝে অবস্থিত। এখানে দেখা মেলে কোমোডো ড্রাগন নামে পরিচিত জায়ান্ট মনিটর লিজার্ডের। শুষ্ক, রুক্ষ এবং অনুর্বর দ্বীপটিতে পার্কটির পাশাপাশি মেরিন রিজার্ভের একটি অংশও পড়েছে। এছাড়াও ভ্রমণ অভিলাষীদের ভিড় জমতে দেখা যায় পিঙ্ক বিচ ও লাওয়া দারাত গিলিতে।
ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণকে উপভোগের সেরা এক্টিভিটিসগুলো
স্নরকেলিং, সার্ফিং এবং ডাইভিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য ইন্দোনেশিয়াকে স্বর্গ বলা যেতে পারে। এছাড়া নৌকায় করে দ্বীপে দ্বীপে ঘোরা, মাছ ধরা অথবা সৈকতের পাশের ক্যাফে বা খুপরিতে বসে দৃষ্টিতে দিগন্ত ধরতে ধরতে সময়টা কাটিয়ে দেয়া যায়। পাহাড় ট্র্যাকিং এবং বিস্ময়কর লেক ঘুরে দেখার রোমাঞ্চটা পরিপূর্ণতা পেতে পারে পর্বত চূড়া থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার মাধ্যমে। সুপ্ত আগ্নেয়গিরির লেকের ঈষৎ উষ্ণ পানিতে সাঁতার কাটাটা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি অতুলনীয় অভিজ্ঞতার অবতারণা করবে।
পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
গলফ উৎসাহীদের জন্য বাটাম নোংসা উপকূল এবং ওয়াটারফ্রন্ট সিটি বরাবর স্পোর্টস ক্লাব এবং রিসোর্টগুলো দারুণ পছন্দ হতে পারে।
দুর্লভ প্রাণী অভয়ারণ্যতেও সুযোগ আছে কায়াকিং, ডাইভিং, ট্রেকিং বা দ্বীপ ভ্রমণের। বহু রঙের হ্রদগুলো আর পর্বত চূড়ার মন্দিরগুলো অবশ্য কোন কার্যকলাপের দাবি রাখে না। শুধু সেগুলোর পাশে বসে থেকেই কাটিয়ে দেয়া ঘন্টার পর ঘন্টা।
হাইকিং, সাইক্লিং, বালি সুইং, জেটপ্যাকিং, রিভার রাফটিং-এর স্মৃতিগুলো ফ্রেমবন্দি করে রাখার জন্য ফটোগ্রাফির সময়টাও উপভোগ করার মত। যা বহু বছর পরেও অফিসের ডেস্কে কাজের বিরতিতে নিমেষেই নিয়ে যেতে পারে ইন্দোনেশিয়ার গোধুলি আর রাতের অভূতপূর্ব জনজ্জীবনে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
বাংলাদেশে থেকে ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ খরচ
ঢাকা থেকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যেতে হলে মালয়শিয়া বা সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয়। কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট হয়ে বালি পৌছতে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে। এয়ার টিকেট মূল্য কত আগে টিকেটটি কাটা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে। কমপক্ষে দুই মাস আগে কিনলে বালির টিকেটের দাম পড়তে পারে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
এয়ারপোর্টের যাবতীয় ঝামেলা শেষে ব্লু বার্ড ট্যাক্সিগুলো মিটারে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পৌছে দিতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার ম্রুদ্রা বা রুপিয়ার দাম বাংলাদেশের টাকার থেকে কম। বালিতে ভেতরে বিভিন্ন জায়গা মিটারে ট্যাক্সিতে যেতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার রুপিয়া লাগে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মত।
মালয়শিয়া হয়ে লম্বকের বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা লাগতে পারে। এয়ারপোর্ট থেকে বাসে ও ফেরীতে করে গিলিসে যেতে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। বাটাম ঘোরার জন্য সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দর হতে বাস বা ট্যাক্সিতে করে হারবারফ্রন্ট স্টেশনে আসতে হবে। ফেরিতে যাওয়া আসার খরচ পড়তে পারে মাথাপিছু ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। তবে এজন্য সিঙ্গাপুরের ডাবল এন্ট্রি ভিসা নেয়া আবশ্যক।
পড়ুন: ফ্লাই ডাইনিং: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশের প্রথম ঝুলন্ত রেস্টুরেন্ট
বাংলাদেশ থেকে ইয়োগিয়াকার্তা যেতে বিমান ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। সেখান থেকে বাসে করে দর্শনীয়স্থানে যেতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগতে পারে।
সুমাত্রা যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে মেদান। মালয়শিয়া ট্রানজিট হয়ে কুয়ালানামু পর্যন্ত যেতে বিমানভাড়া ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে মেদানের ট্রেন ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
কেলিমুতু আগ্নেয়গিরি লেক দেখতে হলে যেতে হবে এন্ডে শহরে। ৪৭ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে বিমান যোগে এন্ডেতে নামতে। অতঃপর ট্যাক্সি করে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘোরা যাবে।
পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
কমোডো দ্বীপে যেতে প্রথমে নামতে হবে লাবুয়ান বাজো এয়ারপোর্টে, যেখানে বিমানভাড়া নিতে পারে ৩৭ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তারপরে লাবুয়ান বাজোতে নৌকায বা ফেরিতে করে কমোডো দ্বীপ।
পরিশিষ্ট
আজকের আলোচনায় আমরা ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো এবং ভ্রমণের আনুষঙ্গিক খরচ তুলে ধরেছি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশের তুলনায় বালিকে সাধারণত একটি সস্তা গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খাবার থেকে আবাসন পর্যন্ত সবকিছুই সাধারণত সাশ্রয়ী এবং বাজেট ভ্রমণের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত বিষয়গত প্রশ্ন কিন্তু নুসা পেনিডা দ্বীপের দর্শকরা একমত হবেন যে এটিকে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। উবুদ ইন্দোনেশিয়ায় দেখার জন্য সেরা শহরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
২ বছর আগে
কলকাতা ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার উপায় ও খরচ
ভারতীয় উপমহাদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী প্রাচীন নগরী কলকাতা। হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এই জনবহুল শহরটি ভারতের সবচেয়ে পুরোনো ও একমাত্র প্রধান নদী বন্দর। বিখ্যাত সব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের পদরেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে আনন্দ নগর হিসেবে খ্যাত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ভ্রমণের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নিন।
কলকাতার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
বিশাল শ্বেত-শুভ্র এই মার্বেল ভবনটি কলকাতার গর্ব বুকে ধারণ করে সমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। রাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত এই স্থাপনাটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট।
২ বছর আগে