কানেক্টিভিটি
বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কানেক্টিভিটির প্রশংসা জয়শঙ্করের
বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কানেক্টিভিটি এবং দুই দেশের জন্য বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এর ব্যাপক প্রভাবের প্রশংসা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এর ব্যাপক প্রভাবের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তারা প্রকৃতপক্ষে ভারতীয়দের বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।’
জয়শঙ্কর বলেন, আসল কথা হলো তারা চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি সেখানে চলাচলকারী বাস ও ট্রেনের মাধ্যমে যোগাযোগের কথাও উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাই কমিশনারের সাক্ষাৎ
নেপাল প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি হিমালয়ের দেশটির জন্য একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ লেনদেন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন যে প্রতিযোগিতা আছে। আমি আজ বলব- আমাদের প্রতিযোগিতায় ভয় পাওয়া উচিৎ নয়। আমাদের প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানানো উচিৎ এবং বলা উচিৎ যে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রয়েছে।’
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট মুম্বাই ড. বিজয় চৌথাইওয়ালে’র সঞ্চালনায় একটি জ্ঞানগর্ভ কথোপকথনে ড. জয়শঙ্করকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী পাচার রোধে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে ভারত: পরিবেশমন্ত্রী
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনার ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
কানেক্টিভিটির মূলে থাকা অংশীদারিত্বের তাৎপর্যের ওপর গুরুত্বারোপ ভারতীয় হাইকমিশনারের
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জনগণ থেকে জনগণের (পিটুপি) মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে কানেক্টিভিটির দীর্ঘমেয়াদি তাৎপর্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, একটি সমন্বিত ভূগোল এবং অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগের সুযোগ এবং গুণমান বৃদ্ধি একটি সাধারণ আকাঙ্ক্ষা, পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের চালিকাশক্তি।
শনিবার এক সেমিনারে হাইকমিশনার বলেন, সড়ক ও রেল, অভ্যন্তরীণ নৌপথ, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, জ্বালানি ও ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে দু'দেশের মধ্যে ভবিষ্যত সংযোগ গড়ে তোলা হবে।
তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্যকে শক্তিশালী কানেক্টিভিটি উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ভারত-বাংলাদেশের বিশেষ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে: হাইকমিশনার
হাইকমিশনার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের যৌথ আত্মত্যাগের শিকড় বলে বর্ণনা করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংযোগের উদ্যোগগুলোও পারস্পরিক সহানুভূতি এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একই চেতনা দ্বারা পরিচালিত হয়। যা আমাদের জনগণ এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণ ও মঙ্গলকে কেন্দ্র করে।
সেমিনারে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পণ্ডিত, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমকর্মী এবং অন্যান্য অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
'ডেভেলপমেন্ট অব চট্টগ্রাম থ্রু ইনহ্যান্স কানেক্টিভিটি: প্রস্পেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস' শীর্ষক সেমিনারে হাইকমিশনারকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐক্য পরিষদের সহযোগিতায় শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
আরও পড়ুন: ভারত পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ঠিকানা: ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
বাঙালির সহস্র বছরের আকাঙ্ক্ষা ধারণ ও বাস্তবায়ন করেন বঙ্গবন্ধু: হাইকমিশনার এম আল্লামা সিদ্দিকী
প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রান্তিক পর্যায়ে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ও হুয়াওয়ের আয়োজিত ‘স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাড্রেসিং দ্য এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ড্রাইভ-ইনক্রিজিং কানেক্টিভিটি টু ড্রাইভ ইকোনোমি রিকোভারি’ শীর্ষক সেমিনারে এ আহ্বান জানান তারা।
গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের খরচ কমাতে ও ডিজিটাল শিক্ষার বিকাশে সকল খাতের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন; যা বৈশ্বিক মহামারিকালীন সময়ে ডিজিটাল বৈষম্য হ্রাসে ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুনঃ থাইল্যান্ডে ‘প্রাইম মিনিস্টার অ্যাওয়ার্ড’ পেলো হুয়াওয়ে
হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের চিফ ডিজিটাল অফিসার মাইকেল ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘এটা শুরুই হবে যারা এখনও ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত নয়, তাদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে।’
তিনি এ অঞ্চলে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে তিনটি প্রধান স্তম্ভকে একত্রিত করে হুয়াওয়ের এজেন্ডা তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলোআইসিটি সংযোগ, দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ও সবুজ প্রযুক্তি।
সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্টাই কলেজ অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ইয়িন হাইতাও এর বক্তব্যেও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব উঠে এসেছে। সম্প্রতি, তার অর্থনৈতিক বিকাশ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে আইসিটি সমাধান ব্যবহারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রফেসর ইন ও কর্নেল ইউনিভার্সিটির স্যামুয়েল সি জনসন কলেজ অব বিজনেসের প্রফেসর ক্রিস মারকুইস ‘ডিজিটাল ইনভলবমেন্ট অ্যান্ড প্রোভার্টি অ্যালেভিয়েশন: এ হুয়াওয়ে অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটির সহ-রচয়িতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুরালস্টার প্রোগ্রামের লক্ষ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে আইসিটি ব্যয় হ্রাস করা, যাতে স্থানীয় ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে টেকসই ডিজিটাল সংযোগ সেবা সরবরাহ করতে সক্ষম হন।
অনুন্নত অঞ্চলে পৌঁছাতে ও ডিজিটাল কভারেজ উন্নত করতে হুয়াওয়ে ২০১৭ সাল থেকে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বব্যাপী স্থানীয় অপারেটরদের সাথে রুরালস্টার প্রোগ্রাম শুরু করে। এ সমাধানটি আগের টাওয়ারগুলোর পরিবর্তে সাধারণ টাওয়ার প্রতিস্থাপন করে এবং ডিজেল জেনারেটর শক্তি থেকে সৌরবিদ্যুতে স্থানান্তরিত করে। ২০২০ সালের মধ্যে, ৬০টিরও বেশি দেশে রুরালস্টার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল এবং ৫ কোটি মানুষ এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হয়েছে।
ডিজিটাল বৈষম্যের অন্যতম মূল কারণ আইসিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিভার সঙ্কট। ডিজিটাল অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ সম্পর্কে হুয়াওয়ের কৌশলের সাথে সহমত হওয়া ছাড়াও শ্রম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইনের (এসইউটিডি) লি কুয়ান ইইউ সেন্টার ফর ইনোভেটিভ সিটির পরিচালক পুন কিং ওয়াং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও সময়পোযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও টেকসই সহযোগিতা এবং ডিজিটাল রূপান্তরে শ্রমিকদের সুস্থতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা ।
এশিয়া ফাউন্ডেশনের ইকোনোমিক প্রোগ্রামের পরিচালক সোফিয়া শাকিল নারী বেকারত্বের ওপর মহামারির নেতিবাচক প্রভাব এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
২০১৭ সালে হুয়াওয়ে, বাংলাদেশ সরকার (আইসিটি বিভাগ) ও রবি আজিয়াটা যৌথভাবে দেশের গ্রামীণ পর্যায়ের কেন্দ্রে নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে ডিজিটাল ট্রেনিং বাস প্রকল্প চালু করে। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি নারী এখান থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার জন এর থেকে উপকৃত হবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মাইকেল ম্যাকডোনাল্ডের মতে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আসন্ন শ্রম ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য হুয়াওয়ের শিক্ষা বিষয়ক ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে আরও ৪ লাখ ডিজিটাল দক্ষ ব্যক্তি তৈরি হবে হবে আশা করা যায়। এমন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সিডস ফর দ্য ফিউচার, আসিয়ান অ্যাকাডেমি ইত্যাদি।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকার, সংশ্লিষ্ট খাত, তৃতীয় পক্ষের চিন্তাশীল নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে একসাথে ইকোসিস্টেম তৈরির বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।