বাবার হাতে স্যালুট!
বাবার হাতে স্যালুট!
বাবা কী করেন, মেয়ে কী করেন সেটা বিষয় নয়, বিষয়টা স্যালুট। বাবা কেবল নিজের মেয়েকে নয় গোটা বাংলাদেশের সকল কন্যাকে এই অভিবাদন জানিয়েছেন তার মেয়েকে স্যালুট করে। একই ভাবে মেয়ে স্বীকৃতি দিয়েছে বাবাকে। যারা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি দেখেছেন সবার একই অনুভূতি। আমাদের দেশের মেয়ে, আমার দেশের বাবা। এটিই আমার দেশের চিরায়ত সত্য, কারণ সকল বিজয়ের পিছনে আছে সংগ্রাম। আর আমাদের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস।
যুদ্ধে স্যালুট
কয়েকদিন আগে আমাদের তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখিয়েছি আমার ফেসবুক পেজে। ‘যুদ্ধে নারী, যোদ্ধা নারী‘ শিরোনামে। ওতে আছে সেই সব নারীদের মধ্যে কয়েকজনের অভিজ্ঞতার বিবরণ। যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, তার দাম প্রায় প্রত্যেককে দিতে হয়েছে অনেক চড়া ও নির্মমভাবে। কেউ হারিয়েছেন স্বামী। কেউ পাকিস্তানি আর্মির হাতে নির্যাতিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি, যেমন হালিমা খাতুন। নিপা লাহিড়ী বরং ভাগ্যবতী, রণক্ষেত্রে সেবা দেন করতে করতে শহীদ হয়েছেন। আরো কত নাম আছে , আমরা কয়েকজনের নাম এনেছি, কত নাম সবাই মিলে ভুলে গেছি।
সোহাগপুর কতদূর ? ( ১৯৭১)
যখন প্রথম সোহাগপুর (শেরপুর) যাই- যে গ্রামকে সবাই বলে বেওয়াদের (অসহায় বিধবা) গ্রাম- তখন মনে হয়েছিল, এত কষ্ট আর সংগ্রাম মানুষ ধারণ করে কীভাবে? পাকিস্তানি আর্মি গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে মেরে ফেলেছিল, শুধু নারী ও শিশুরা ছিল। স্বামী-পুত্রদের লাশ দাফন করার কী যে কষ্ট কেবল তারাই বোঝে যারা করেছে।
কিন্তু এই বেওয়ারা সংসার টিকিয়ে রেখেছে, ছেলে-মেয়েদের অনাহার থেকে রক্ষা করেছে। সবাই বেঁচে থেকেছে, কাজ করেছে বাজারে মিনতি হয়ে, যা পেয়েছে সেটা নিয়েই সংগ্রাম চলছে যুদ্ধের পরেও বহুদিন। এই সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের সমান সমান, বাঁচার আর বাঁচাবার সংগ্রাম। বাংলাদেশের নারীর রক্তে সংগ্রাম, আমরা দেখিনা কারণ দেশকে আর তার মানুষদের দেখি নষ্ট চোখে!
সেবা, চাকরি, পড়াশোনা (২০২১ )
এবার আমার এক ছাত্রীর গল্প শোনাই। মেয়েটা ক্লাসে খুব ভালো ছিল, কিন্তু হঠাৎ পড়াশোনা থেকে উধাও হয়ে গেলো। এমন ছাত্রীকে সবাই খোঁজে, তাই বহু ডালপালা ঘুরে তাকে পেলাম। মেয়েটা তার কোভিড আক্রান্ত মা-বাবাকে দেখছে, যাদের দেখার কেউ নেই। চাকরি করে রোগীর সেবা করে পারছে না, ভালোভাবে পড়াশোনাও করতে পারছে না। বললাম, ‘বলোনি কেন ?’ উত্তরে বললো, ‘আপনি যদি ভাবেন আমি অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি।’ পরীক্ষা দিতে বললাম, ও রাজি হলো না। এ বছর এসে জানালো আবার ভর্তি হবে, মা- বাবা অনেক ভালো আগের চেয়ে। এ কেমন মানুষ, আমি তো ওকে সুযোগ করে দিতাম, সেটা জানে বলেই আসেনি।
আজ মেয়েরা স্যালুট পাবেই
প্রতিদিন কোনো না কোনো মেয়েকে ধরছে। মদ, ইয়াবা, ব্ল্যাকমেইল নানা অনুষঙ্গে এক অদ্ভুত নতুন নারীর অবয়ব নির্মিত হচ্ছে যেন। এতে না চাইলেও ভূমিকা রাখতে হচ্ছে মিডিয়াকে। যদিও এরা সমাজে সব সময় ছিল, তবু যেন আমরা নতুন করে দেখছি। এদের প্রতি মানুষের অবজ্ঞা, শ্লেষ সব আছে, কিন্তু কজন বলছে এদের মুরুব্বি কারা, টাকা দেয় কারা, সেই নষ্ট সমাজের কী নাম ?
আমরা ভাবি, এসবের ভিড়ে আমাদের স্যালুটগুলো ভেসে যাবে। কিন্তু আমি মাস্টার-সাংবাদিক, ৫০ বছর ধরে। আমি জানি আমাদের মেয়েরা আজ যে স্থানে এসেছে, ইতিহাসে কোনোদিন তারা আসেনি। যে যাই করুক আজ, আগের কাল শেষ। আজ মেয়েরা স্যালুট পাবেই, যতই মানুষ ঢিল ছুঁড়ুক! আমার মতো বাবারা এটা বোঝে সবচেয়ে বেশি।
লেখক: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
৩ বছর আগে