রায় কার্যকর
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: রায় কার্যকর দেখে মরতে চান রেনু
‘কী যে কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি, বোঝাতে পারবো না। বিচার হয়েছে, খুশী হয়েছি। কিন্ত অপেক্ষায় আছি, রায় কার্যকরের। মরার আগে বিচারের রায় কার্যকর দেখে মরতে চাই। আল্লায় যেন সেই পর্যন্ত হায়াতে বাঁচাই রাখেন’- একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার শিকার শেরপুরের সৈয়দা উম্মে কুলছুম রেনু সেদিনের বিভীষিকার কথা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।
শুক্রবার বিকালে শেরপুরে নকলা উপজেলার ধানহাটি এলাকার বাসিন্দা সৈয়দা উম্মে কুলছুম রেনুর সঙ্গে ইউএনবি’র প্রতিবেদকের কথা হয়।
গ্রেনেড হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রেনু বলেন, ‘ওটা ছিল জামাত-বিএনপি জোট সরকারের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা। একুশে আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলার শিকার হই, তখন আমি ছিলাম ঢাকা মহনগর দক্ষিণ মহিলা আ’লীগের সদস্য। আইভী আপা (তৎকালীন মহিলা আ’লীগের সভাপতি আইভী রহমান) আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার সঙ্গে সঙ্গেই থাকতাম। হামলায় আইভী আপা শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আল্লাহর বিশেষ রহমতে বেঁচে যান। আমিও সেই গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছি।’
রেনু বলেন, ‘ভয়ংকর ছিল গ্রেনেড হামলার সেই ঘটনাটি। আমি মঞ্চের কাছেই বসেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ, চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, চিৎকার, চেঁচামেচি। চোখ দু’টি মরিচের মতো জ্বলছিল। তারপরই চোখেমুখে অন্ধকার। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমি কোমায় ছিলাম। ১৪ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলে দেখি ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে। শুনেছি কে যেন আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে রেনাল জেনারেল হাসপাতাল। আমার স্মৃতিশক্তি তখন লোপ পেয়েছিল। কিছুই মনে করতে পারিনি। মাথায়-পায়ে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার ঢুকেছিল। অপারেশনের পর সাভারের সিআরপিতে আট মাস ছিলাম। তারপর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে আ.লীগের নানা কর্মসূচি
রেনু আরও বলেন, ‘পায়ে এখনও সাতটি স্প্রিন্টার রয়েছে। সেগুলো মাঝেমধ্যেই জ্বালাতন করে। অসহ্য সে যন্ত্রণা। নিজেই এখন ফিজিওথেরাপি করে কোনমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। জীবনে যতদিন বাঁচবো, এ নরক যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে।’
তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে। যেদিন রায় হয়েছে, সেদিন অঝোরে কেঁদেছি। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এখন বিচারের রায় কার্যকর দেখে মরতে চাই।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে (তৎকালীন বাংলাদেশ আ’লীগের সভাপতি) হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর জনসভায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিচালিত হয়েছিল নারকীয় গ্রেনেড হামলা। ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন উম্মে কুলছুম রেনু। ওই হামলায় নিহত আইভী রহমানসহ অন্যান্যদের পাশেই গুরুতর আহত, রক্তাক্ত, অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলেন উম্মে কুলছুম রেনু। সে সময়কার পত্র-পত্রিকায় মৃতদের সঙ্গে তারও নিথর দেহের ছবি ছাপা হয়। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে এখনও যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটা সূদুর পরাহত।
আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দু’দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা এফডিআর হিসেবে অনুদান দেয়া হয় তাকে। সেই অনুদানের টাকার লভ্যাংশের পুরোটা দু’বছর আগে তিনি জেলা প্রশাসকের করোনা প্রতিরোধ সহায়তা তহবিলে দান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নকলা উপজেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা উম্মে কুলছুম রেনু বর্তমানে নকলা উপজেলা আ’লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) মহিলা আ’লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্ট হামলায় নিহতদের লাশ গুমের চেষ্টা করেছিল খালেদা সরকার: প্রধানমন্ত্রী
২১ আগস্ট রাজধানীতে যান চলাচল সীমিত
২ বছর আগে
বঙ্গবন্ধুর ২ খুনিকে দেশে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাকা, ১৫ আগস্ট (ইউএনবি)- কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতির পিতার দু’জন খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত পাঁচজন পলাতক খুনির মধ্যে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত দু’জন খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
রবিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় পলাতক অন্যান্য খুনিদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশির সহযোগিতা কামনা করেন ড. মোমেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে চারাগাছ রোপণ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শোক দিবসের এসব কর্মসূচিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং মহাপিরচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতেই সিলেট বিভাগের প্রথম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মিত হয়
শ্রদ্ধাভরে পালিত হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস
৩ বছর আগে