গলার কাঁটা
বিআরটি প্রকল্প এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে: কাদের
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প সরকারের জন্য বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এই রুটে কিছু জটিলতা আছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই প্রকল্পটি শুরু হয়। প্রকল্পটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, আমি প্রকল্প কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি- যে কোনো মূল্যে এর কাজ শেষ করতে। যাতে আমরা আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে এর উদ্বোধন করতে পারি।’
রবিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উত্তরায় বিআরটি গার্ডার দুর্ঘটনার (১৫ আগস্ট) জন্য দায়ী চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোম্পানিটিকে নির্মাণ কাজ শেষ করার অনুমতি দেয়া হলেও তারা বাংলাদেশে আর কোনো প্রকল্প পাবে না।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ক্রেন পড়ে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিক নিহত
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের আরও বলেন, আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখনই কিছু সময় বের করতে পারবেন তখনই সেতুগুলো খুলে দেয়া হবে। উদ্বোধনের আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনটি র্যালির আয়োজন করা হবে, যেখানে অধিকাংশ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এমআরটি লাইন-৬ ও বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম ধাপের কাজও শিগগিরই শেষ হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশ বিভিন্ন সংকটের মধ্যে থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো ভালো চলছে।
আরও পড়ুন: উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনা: বিআরটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
তিনি বলেন, ‘সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় কারণ আমরা বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাসের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হব। আমরা পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করছি বলে কোনো খাদ্য সংকট হবে না। আমরা ব্রুনাইয়ের সঙ্গে জ্বালানি সমস্যা নিয়েও আলোচনা করব। সংক্ষেপে বললে আমরা যেকোনো সংকট মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’
বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বিআরটি গার্ডার ট্র্যাজেডি: দুর্ঘটনার ১২ কারণ খুঁজে পেয়েছে তদন্ত সংস্থা
২ বছর আগে
সেতু এখন মানুষের গলার কাঁটা!
সেতু আছে রাস্তা নেই। অথচ যানবাহন ওঠা-নামা ও জনসাধারণ চলাচলে সংযোগ সড়ক থাকা বাধ্যতামূলক। রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মিত ‘তালতলা সেতুটি’ এখন এ অঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ‘তালতলা সেতু’। যার মাধ্যমে উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়ন ও টিএসবি ইউনিয়নবাসীর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিন অতিক্রম হওয়ার পর সেতুর এ্যাপ্রোচ রোড (দুই পাশের রাস্তা) না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল তুলেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘সেতুর এ্যাপ্রোচ রোডের জমি নিয়ে জটিলতার কারণে আমরা কাজ করতে পারছি না। জমি অধিগ্রহণ নিয়েও কিছুটা জটিলতা রয়েছে। এছাড়া বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। খুব দ্রুত জমির সমাধান না হলে নকশা অনুযায়ী আমরা রাস্তার কাজ করব।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের ফলে দু’টি ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর দুই পাশের রাস্তা নির্মাণ করেনি। সেতুর ঘাটভোগ ইউনিয়নের নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তা নির্মাণে জটিলতার সৃষ্টির কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানান, নকশা অনুযায়ী রাস্তা করলে কোনো ভারি যানবাহন সেতু থেকে ওঠা-নামা করতে পারবে না। এমনকি ইজিবাইকও সেতুর ওপর উঠতে মারাত্মক কষ্ট হবে। সেতু থেকে নেমেই চাঁদপুর অংশে যে কার্ভ রয়েছে, সেটাই মূলত সব সমস্যার কারণ। এ জন্য সেতুর রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও রাস্তার কাজ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, ‘তালতলা-আলাইপুর- শেখপুরা এফআরবি (পালঘাট) সড়কে ১ হাজার মিটার চেইনেজ ৪০ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার সেতু’ (স্থানীয়ভাবে তালতলা সেতু নামে পরিচিত) নির্মাণের প্রকল্প ব্যয় ৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এটির ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন যৌথভাবে মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স এ্যান্ড মেসার্স কামরুল এন্টারপ্রাইজ। সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। অসম্পূর্ণ রয়েছে সেতুর দুই পাশের এ্যাপ্রোচ রোডের ২০০ মিটারের কাজ, যা চওড়া হওয়ার কথা ২৪ ফুট।
নারিকেলি চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা তুষার কুমার পাল বলেন, ‘সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। গেল রোজার ঈদ থেকে কাজ বন্ধ। সেতু হইছে, কিন্তু রাস্তা নির্মাণের কোনো খবর নেই। রাস্তাটি নির্মাণ হলে তালতলা ও নারখেলী চাঁদপুর গ্রামসহ দু’টি ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে।’
পড়ুন: কুয়েট শিক্ষার্থীরা তৈরি করলেন ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ গাড়ি
ঘানিই যাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন
নারিকেলী চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা লিটন পাইক বলেন, ‘সংযোগ সড়ক হলে এই এলাকার মানুষ অল্পসময়ের মধ্যে কাজদিয়া উপজেলা সদরে যেতে পারবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুর কাজ শেষে হয়ে গেছে অনেক আগে কিন্তু সংযোগ সড়কের কোনো অগ্রগতি নেই। আর সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এখন এলাকাবাসীর কাছে গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।’
একই এলাকার শোভা রানী পাল বলেন, সেতু আছে কিন্তু রাস্তা নেই, তাহলে এই ব্রীজের কি কোনো মূল্য আছে?
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিনয় হালদার বলেন, সেতুর রাস্তা নির্মাণে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কয়েক দফা রাস্তা এ্যাকোয়ারের জন্য জমি মাপামাপিও হয়েছে।
রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সেতুর নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তার কার্ভ সংশোধন ও সেতুর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ১২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফাইলটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রয়েছে। এটার অনুমোদন হলে ১৭-১৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। আর যদি অনুমোদন না হয় তবে নকশা অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হবে।
আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষক এখন চায়ের দোকানদার
এক পায়ে দড়ি লাফে জোড়া বিশ্ব রেকর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেলের
৩ বছর আগে