প্লাবন
উপকূলে অশনিসংকেত: কয়রায় অসময়েও ভাঙছে বাঁধ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নদী ভাঙনে প্রতি বছর প্লাবিত হওয়া খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে কয়রার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার-ভাটার তীব্রতা এবং নদীর গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা উপকূলীয় এই অঞ্চলের প্লাবন-ঝুঁকিও বাড়ছে।
এদিকে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন আশার আলো জাগালেও কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্পে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার পরও অবৈধভাবে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে নদী চরের সবুজ বনায়ন। যার ফলে বাঁধের স্থায়িত্ব কমছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, গেল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দোশহালিয়া থেকে হোগলার মধ্যকার একটি অংশের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করেন। এ ছাড়া নদীতে পানির চাপ ও কোনো প্রকার ঝড়ো বাতাস ছাড়াই গত ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বাঁধটির বিশাল অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে প্লাবিত হয় সংলগ্ন এলাকা। পরের দিন ভাটার সময় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হলেও তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার পর থেকেই নদীর পাড়ের মাটি সরে যাওয়ার অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, বাঁধের বড় বড় খণ্ড নদীতে ধসে পড়ে ২০০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের স্থায়ী সংস্কার এবং নদী খননে অবহেলার কারণে এই অঞ্চলে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ধানচর, শামুকপোতা, কুতুবেরচর, গাবতলা ও খোলপেটুয়া পাড়ের বেশ কয়েকটি এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাটিয়াভাঙ্গার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ সেদিন রাতের ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনে দিয়ে বাঁধটা নদীতে চইলে গেল। মনে হচ্ছিল, আজই বুঝি সব শেষ; বাড়িঘর সবকিছুই বুঝি তলাই যাবেনে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ‘প্রতিদিনই নদী এগিয়ে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে জরার্জীণ থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
মাটিয়াভাঙ্গা বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুই বছর যাবৎ বিভিন্ন প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও তাতে রয়েছে চরম ধীরগতি। মাটিয়াডাঙ্গার ওই অংশটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় থাকলেও সংস্কারে গুরুত্ব দেননি ঠিকাদার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৪/১ ও ১৩–১৪/২) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চরবনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙনকবলিত এলাকাটিও এই প্রকল্পের অংশ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘সুন্দরবনঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনার পাশে থাকা এ বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তার ভাষ্যে, ‘অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। তাই গতরাতে আগের ফাটলটা হঠাৎ বড় রূপ নিয়ে ধসে গেছে।’
রাতে গ্রামবাসী ও পাউবো মিলে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নদীর ভাঙন ঠেকাতে রিং বাঁধ কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, রিং বাঁধের স্থায়িত্ব খুব স্বল্প। যেকোনো মূহুর্তে সেটি ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত যদি মূল বাঁধ সংস্কার করা না হয়, তাহলে ধ্বসের পরিধি আরও বাড়তে পারে।
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেখানে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, তার আশপাশ থেকেই বালু উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া নদীর চর থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে নদীর চরের গাছ কেটে বনায়ন নষ্ট করা হচ্ছে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাগরিক সমাজের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালের ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রত্যেক বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো না কোনো এলাকা ভেঙে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এলাকা প্লাবিত হাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেও শীত মৌসুমে প্লাবিত হলো। শীতকালে এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখিনি।
‘আমাদের প্রাণের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে সরকার বরাদ্দ দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু বরাদ্দের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিষয়টি কি শুধুই প্রকৃতির তাণ্ডব, নাকি বাঁধের কাঠামোগত দুর্বলতাও—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর মাটিয়াডাঙ্গা এলাকার মেগা প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে পাউবোর সাতক্ষীরা–২ বিভাগ। ওই বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, ‘কাজ চলমান অবস্থায়ই বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি। সকাল থেকে জোরেসোরে আমাদের বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’
১৭ দিন আগে
বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করার উপায়
ভৌগলিক দিক থেকে নিম্নাঞ্চল ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে ফি বছর বন্যাপ্লাবিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল। প্রতিবার দুর্যোগের সময় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এবং সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আগের থেকে বহুগুণে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাবার, ভিটে-বাড়ি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে বন্যাদুর্গত মানুষগুলো। এ অবস্থায় তাদের সহায়তায় প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তাই চলুন, বন্যাদুর্গতদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর উপায়গুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে যে কার্যকর পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নেওয়া
একদম প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা রাখতে পারে স্বেচ্ছাসেবকরা। এই বিপর্যস্ত সময়ে দুর্যোগের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিভিন্ন সেবামূলক কাজের চাপ থাকে অনেক বেশি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- যাতায়াতের অযোগ্য জায়গা থেকে মানুষকে উদ্ধার কাজ, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান। এর সঙ্গে আরও রয়েছে খাদ্য, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহগুলো সুসংগঠিত এবং বিতরণ করা। এরকম চাপের মধ্যে আলোকবর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হয় স্বেচ্ছাসেবকরা, যাদের মাধ্যমে সংস্থাগুলো অসহায় মানুষদের কাছে আরও বেশি সাহায্য পৌঁছাতে পারে।
এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবীরা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের কাজেও সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও বন্যা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের মানসিক সমর্থন এবং মনোবল বাড়াতেও স্বেচ্ছাসেবীদের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
জরুরি সামগ্রী সরবরাহ
বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অপুষ্টি ও ডিহাইড্রেশন স্বাভাবিক বিষয়। এগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে অপচনশীল খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ।
কাটা-ছেঁড়া বা জখমের চিকিৎসা এবং রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য ফার্স্ট এইড কিট, ওষুধ এবং স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলো অতীব জরুরি। এই সরবরাহগুলো অবশ্যই স্কুল-কলেজ বা স্থানীয় বহুতল ভবনগুলোর মতো অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানো উচিত। মূলত তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত এই স্থাপনাগুলোতে আশ্রিতদের প্রত্যেকের চাহিদা পূরণের জন্য সরবরাহগুলো সুসংগঠিত বিতরণ আবশ্যক।
স্থানীয় সংস্থা বা এলাকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা উচিত। এতে করে যাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন সর্বপ্রথম তাদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বাড়বে।
আরও পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান
বন্যায় আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে যেহেতু পানি পেরিয়েই যেতে হয়, তাই এখানে সাধারণত নৌকাই বেশি ব্যবহৃত হয়। এই নৌকাগুলোর মাধ্যমে উদ্ধারকারীরা জলমগ্ন রাস্তা পেরিয়ে ভাসমান লোকদের কাছে পৌঁছাতে পারে। তবে দ্রুত পৌঁছাতে এবং কম সময়ে বেশি সংখ্যক এলাকার লোকদের উদ্ধার কাজে স্পিডবোট ব্যবহার করা উচিত। যাতায়াতের একদম অযোগ্য স্থানগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে হেলিকপ্টার। এর মাধ্যমে বিপজ্জনক জায়গা থেকে অনায়াসেই অসহায় মানুষদের তুলে নেওয়া যেতে পারে।
প্রাণিসম্পদ উদ্ধার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা
গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারেরই জীবন-জীবিকার প্রধান উপায় হচ্ছে গবাদিপশু। বন্যার সময়ে এই প্রাণীসম্পদের ক্ষতি পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা ও আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের রক্ষার্থে অর্থায়ন কিংবা প্রাণীগুলোর উদ্ধার কাজে সরাসরি যোগদান করা উচিত।
এরই ধারাবাহিকতায় পশুর খাদ্য, পশুচিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবার প্রসঙ্গও আছে। কেননা এর ওপর বন্যা পরবর্তীতে তাদের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি নির্ভর করছে। এমনকি অল্প কিছু আর্থিক অনুদানও পরিবারগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্যে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
প্রসিদ্ধ এনজিওগুলোতে অর্থ দান
দেশব্যাপী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন দুর্যোগে ব্যাপক পরিসরে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে অভিজ্ঞতার সঙ্গে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবার মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। এমনকি তারা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও স্যানিটেশন অবকাঠামোও স্থাপন করে থাকে।
এই কার্যক্রমগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র অর্থদানও করা যেতে পারে। এই অর্থ সংস্থাগুলোর জরুরি দ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও পরিবহন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং জরুরি সহায়তা দানকারী দল গঠনে সাহায্য করতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পৌঁছানো, তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের প্রয়োজন মেটানো নিশ্চিত করতে এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষতিকারক পোকামাকড় এবং সাপ নির্মূল অভিযান
প্লাবনকালে বেড়ে যায় মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের উপদ্রব। আর এর রেশ ধরে পরবর্তীতে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু জ্বর এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি। এমতাবস্থায় মশার ফাঁদ, মশা তাড়ানোর উপকরণ এবং রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে দরকারি শিক্ষা উপকরণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
এছাড়াও, বিষধর সাপের উপস্থিতি বন্যাগ্রস্ত অসহায় মানুষদের আরও একটি হুমকি। বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত ও ভাসমান জনগোষ্ঠীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে। তাই এমন একটি নিবেদিত দল থাকা প্রয়োজন যাদের উদ্দেশ্যই হবে সাপ খুঁজে বের করে তা নিধন করা। একই সঙ্গে এরা জনসাধারণকে সাপবিরোধী বাধা স্থাপন এবং সাপে কাটার প্রাথমিক চিকিৎসাও শেখাবে।
গণসচেতনতা সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকাভিত্তিক মাইকিংয়ের মতো অফলাইন পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে বন্যাকালীন জরুরী প্রয়োজনগুলো প্রচার করা যায়। এখানে বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাব, চিকিৎসা সরবরাহ, বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র-এর বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত। এর ফলে বিভিন্ন সংস্থানগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায় থেকেও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অবস্থা সৃষ্টি হবে।
সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানগুলো অনুদান এবং স্বেচ্ছাসেবী কাজকেও উৎসাহিত করতে পারে। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী সংহতি বোধের অনুকূলে সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে। এই গণসচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে নিকট ভবিষ্যতে দুর্যোগের বিষয়ে এমনকি উপযোগী নীতি নির্ধারণের দিকে ধাবিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষা: বন্যা, খরা ও শৈত্য প্রবাহে করণীয়
৪৯১ দিন আগে
পাহাড়ি ঢল: ঝিনাইগাতীতে নতুন এলাকা প্লাবিত, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ি ঢলের পানি উজান থেকে নেমে গেলেও ভাটি অঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢলের পানিতে ডুবে শুক্রবার বেলা ২টার দিকে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের সারি কালিনগর (বালুর চর) এলাকায় ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত দিয়ামনি ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল হক জানান, দিয়া মনি বাড়ির উঠানে খেলা করার সময় হঠাৎ তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশেই ঢলের পানিতে দিয়ামনিকে ভাসতে দেখা যায়। পরিবারের লোকজন তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
ঢলের পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া।
এদিকে, ঢলের পানির তোড়ে অনেক এলাকায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাড়ছে পথচারীদের দুর্ভোগ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। মহারশি নদীর দিঘিরপার, খৈলকুড়া, রামেরকুড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। শুক্রবার উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে ভাটি এলাকায় চারটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতশত মানুষ। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে শতাধিক পুকুরের কয়েক লাখ টাকা মূল্যের মাছ ভেসে যায় বলে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষী ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ধানশাইল-পানবর রাস্তার সূতিপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আহাম্মদনগর-মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদরে মহারশি নদীর পূর্বপাড় থেকে নলকুড়া রাস্তা, ডাকাবর থেকে শালচূড়া রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলের পানিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি। ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় সামান্য কিছু শাক সবজির ক্ষতি সাধিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
বন্যায় সুনামগঞ্জে শত কোটি টাকার ক্ষতি
১২৯৫ দিন আগে
কুড়িগ্রামে বাড়ছে পানি: বাঁধের দিকে ছুটছে মানুষ
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অথবা অন্যত্র আশ্রয় নিতে ছুটছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটের কারণে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার ই দিনে একবেলা খেয়ে জীবনযাপন করছেন। তৃণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় পশু খাদ্যেরও ব্যাপক সংকটা দেখা দিয়েছে।
এদিকে এলাকাগুলোর শৌচাগার ব্যবহার অনুপোযগী হয়ে ওঠায় শৌচ কাজ সম্পন্ন করতে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের অনেক সমস্যার মধ্যে পরতে হচ্ছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় পরিবেশ ও পানি দূষণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অববাহিকায় প্রায় ১লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানান।
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দী জীবনযাপন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে করোনা: সীমাহীন চিকিৎসা ব্যয় অনেক মানুষকে দরিদ্র করে তুলেছে
অপরদিকে উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, উলিপুরে ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারে পানিবন্দী হয়ে আছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যার ফলে জেলায় প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর রোপা আমন, শাকসবজি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ২২ বছরের অপেক্ষা শেষে ভেঙে পড়ল সেতু
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরসহ তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও ভ্রাম্যমাণ লেট্রিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও উপ-বরাদ্ধকৃত ২৮০ মে.টন চাল ও ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দুর্গত এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে।
১৫৭৫ দিন আগে