দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিলো সাড়ে ১০ লাখ বেল ( ১৮০ কেজিতে এক বেল)।
আর চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে ৯ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ
জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাট চাষিরা জানান, চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপণ করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে।
আবার পাট কাটায় ও পাট নেয়া-ধোয়ায় ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
বর্তমানে জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে মণ প্রতি পাটের দর কৃষক পাচ্ছে প্রকার ভেদে ২৬০০ থেকে ৩১০০ টাকা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথিন্দ্র নাথ সিকদার নিপু জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ছিল। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভালো পাটের দর মণ প্রতি ৩১০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানে পাটের দর ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় পাট বাজারে কম তুলছেন।
বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাট চাষি আশুতোষ মালো জানান, খেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে চাষিদের খরচ ও যে কোনও বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।
সালথার চাষি নাছির উদ্দিন জানান, সরকার যেভাবে প্রতিবছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ করা থাকলে চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেতো।
এদিকে পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুট মিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, ‘আমরা যারা পাট কলের সাথে যুক্ত তাদের দাবি হলো মিলের উৎপাদিত পাট পণ্য বিক্রয় মূল্যের সাথে যদি পাট ক্রয় মূল্যের পার্থক্য বেশি থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে পণ্য উৎপাদন মূল্যের সাথে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নির্ধারণ করা দরকার। এতে সকলের লাভ হবে।’
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংকট ও পোকার বিড়ম্বনায় ফরিদপুরের পাট চাষিরা
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, সোনালী আঁশ খ্যাত ফরিদপুরের উৎপাদিক পাটের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে। চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল। তবে এবার বেশি উৎপাদন হয়েছে।
পাটের দরের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম হচ্ছে। কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ করতে খরচ হয়েছে বেশি।
তিনি বলেন, মণ প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা দর কৃষক পেলে তাদের ভালো লাভ পেতো।
৩ বছর আগে