সুশীল সমাজ
অনলাইনে নারী হয়রানি রোধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান মানবাধিকার সংগঠনগুলোর
অনলাইনে নারী ও মেয়েদের প্রতি যৌন হয়রানি রোধে ব্যাপক সচেতনতার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকারভিত্তিক সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
আগামীকাল রবিবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ইন্টারনেটে আপত্তিকর কনটেন্ট ফাঁস, চাঁদাবাজি, হ্যাকিং ও যৌন হয়রানির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মেয়ে ও নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেট নিরাপত্তা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানের অভাবে হয়রানির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার নিয়ে অত্যন্ত সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে হস্তান্তর করা: শাহরিয়ার
বক্তারা নারী ও মেয়েদের টার্গেট করে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইনগত সহায়তার জন্য বিভিন্ন সরকারি হেল্প ডেস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালন জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান শামীমা আখতারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তামান্না রহমান।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের ফেরদৌস আরা রুমি। জাতীয় কমিটির সদস্য করিম বক্স (সিরাজগঞ্জ), মঞ্জু আরা পারভীন (খুলনা), মো. এনামুল হক (জামলপুর), খন্দকার ফারুক আহমেদ (ময়মনসিংহ), সৈয়দা শামীমা সুলতানা (ঢাকা), মাহিন খান (মানিকগঞ্জ), মোস্তফা কামাল আকন্দ (আইআরডব্লিউডি-সচিবালয়) প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে হয়রানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তামান্না রহমান। বেসরকারি সংস্থা আইন ও শালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক গবেষণায় উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশেরও বেশি মেয়ে অনলাইনে পুরুষ বন্ধুদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হয়, ২৭ শতাংশ পরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক বা আত্মীয়দের কাছ থেকে এবং ১৮ শতাংশ অজানা প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হয়।
একটি বৈশ্বিক জরিপে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫৮ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এবং অনেকে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগেন।
উপরন্তু, প্রতি তিনজন ভুক্তভোগী নারীর মধ্যে একজন নির্যাতনকারীর আইডিতে রিপোর্ট করেছেন। হয়রানির জন্য সবচেয়ে সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হলো ফেসবুক। ৩৯ শতাংশ মেয়ে সেখানে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এ ছাড়া ২৩ শতাংশ ইনস্টাগ্রামে, ১৪ শতাংশ হোয়াটসঅ্যাপে ও ৯ শতাংশ এক্সে (পুরোনো টুইটারে)।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার চর্চা করে যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলের পথ প্রশস্ত করেছে: হাস
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণার ভিত্তিতে ২২টি দেশের ১৪ হাজার কিশোর-কিশোরী, তরুণী ও নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
মঞ্জু আরা পারভীন বলেন, 'ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময় আমাদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
সৈয়দা শামীমা সুলতানা বলেন, 'ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি কারো সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। আমাদেরও ছবি তোলার জন্য নির্জন জায়গায় যাওয়া এড়ানো উচিত।’
ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, অনলাইন সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকারদের জন্য হেল্প ডেস্ক রয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন, হ্যালো সিটি অ্যাপ, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ এবং সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা জানাতে পারবেন।
শামীমা আক্তার অনলাইনে হয়রানি রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন। ভুয়া আইডি, হয়রানিমূলক পোস্ট, অডিও, ভিডিও ও অনুরূপ কনটেন্টের বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আয়োজকদের পক্ষে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হয়।
দিবসটি উপলেক্ষ শোভাযাত্রা, সেমিনার, কমিউনিটি ইভেন্ট, মেলা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়াসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা শান্তিপূর্ণ সমাজের ভিত্তি: গুতেরেস
১ বছর আগে
দমন-পীড়ন ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজের নীরবতার নিন্দা ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে হত্যা ও নির্যাতনের সময় তাদের দলের নেতাকর্মীদের মানুষ মনে করেন না বলে সুশীল সমাজের সদস্যরা চুপ থাকেন।
তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখের সঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যে আমরা ব্যাপক অবিচার ও দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছি এবং গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় পুলিশের গুলিতে আমাদের ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু আমাদের লোকেরা যারা গণতন্ত্র, ভালো সমাজ, উন্নয়ন ও মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলে, তারা আমাদের নেতাকর্মীদের মানুষ মনে করে না।’
এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, দেশে আইনের শাসন না থাকায় পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নিয়ে নাশকতা ও বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমরা শিগগিরই জয়ী হব: ফখরুল
এছাড়া যে কোনো ঘটনা ঘটলেই পুলিশ বিএনপির পরিচিত ১০০ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত আরও এক হাজারের বেশির বিরুদ্ধে মামলা করে বলে জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, তাদের দলের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ ‘মিথ্যা’ মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন। ‘এটা কি ভাবা যায়? কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে একটি গণতান্ত্রিক দলের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীকে কি ৩৫ লাখ মামলায় ফাঁসানো যায়? এটাকে কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায়? আমাদের একমাত্র অপরাধ আমরা জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছি।’ শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে তারা কতটা অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে?
তিনি বলেন, সুশীল সমাজের সদস্যরা এ ধরনের দমন-পীড়নের বিষয়ে নীরব থাকেন। কারণ, তারা মনে করেন নিহতরা বিএনপির এবং তারা মানুষ ও দেশের নাগরিক নয়।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপিপন্থী প্ল্যাটফর্ম জিয়া পরিষদ এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ তার ৫২ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। কারণ, আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। ‘তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে, সর্বত্র মানুষকে এত প্রতারিত করছে, যা কল্পনাও করা যায় না।’
তিনি বলেন, সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের সর্বব্যাপী দুর্নীতি অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে: ফখরুল
যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদের চিহ্নিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘মানুষ আগে কাকে চিহ্নিত করবে? জনগণ ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছে যে তারা (আ.লীগ) প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, ধ্বংসও করছে। সংসদসহ এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেনি।
তিনি বলেন, সরকার দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাসের পর মাস ঘরে থাকতে পারছে না।
তিনি বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছে এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে জীবন দিয়েছে। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের ধারণা নয়, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত মিলে ধারণা নিয়ে এসেছিল’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, আবার জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া পুনরুদ্ধার করেছে। ‘এটাই সত্য এবং এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন: এবার নির্বাচন নিয়ে সরকারি কোনো চক্রান্ত কাজ করবে না: ফখরুল
১ বছর আগে
হিরো আলমের যুদ্ধ চলবেই
হিরো আলম একজন বাজে গায়ক এবং ততোধিক খারাপ অভিনেতা। তিনি তার নিতান্ত ‘অনাকর্ষণীয়’ রূপ নিয়েই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে শুরু করেছেন। তার আগেও অল্পকিছু মানুষ এমনটি করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন।
সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা তাকে ‘অসৎ, সংস্কৃতি জ্ঞানহীন, নিচু শ্রেণির ও অশিক্ষিত’-বলে সম্বোধন করলেও, তার ভক্তরা এসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের শহুরে অভিজাত সুশীল শ্রেণির অনেকেই আলমকে ‘অচ্ছুৎ’ বলে মনে করেন। তার ব্যক্তিত্ব ও কর্মকাণ্ড সবকিছুরই অপব্যাখা করেন তারা। কিন্তু এরপরেও কোনোভাবেই তারা আলমকে আটকাতে পারছে না, এটাই তাদের মূল সমস্যা।
তারা সবচেয়ে খুশি হয়েছিল যখন পুলিশ হিরো আলমকে গ্রেপ্তার করে এবং সেসব গান গাইতে নিষেধ করে; বিশেষত যেগুলো রবীন্দ্র অনুরাগী সুশীলদের ‘সংবেদনশীলতায়’ আঘাত করে।
সেসময় বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় সুশীল ও কণ্ঠশিল্পী পুলিশের কাছে হিরো আলমের গান গাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রণীত সংগীত আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল।
তবে বলতেই হয় আলম একজন ভাগ্যবান মানুষ, তাই র্যাব তাকে তুলে নিয়ে যায়নি। ভাগ্যিস, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছিল!
আরও পড়ুন: এবার জরিমানার ফাঁদে হিরো আলম!
গলার কাঁটা
গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার জন্য সাপে বর হয়ে যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিরো আলম আরও বেশি আলোচিত হয়ে ওঠেন। এমনকি সেসময় হিরো আলম নিজেও সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের অবস্থান ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে জড়ানোর কথা বলাটা আসলেই হাস্যকর ছিল।
কারণ, বাজে গান যদি আইন-শৃঙ্খলার জন্য সমস্যা হয়; তবে দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য ও হাস্যরসাত্মক মন্তব্যের জন্য পুলিশকে প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা নষ্ট করতে হবে।
দুঃখজনকভাবে, সুশীলদের জন্য এরপর আরও বড় ধামাকা অপেক্ষা করছিল।
গান গাওয়ার ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হলেও, এরপরই শোনা যায় এবার হিরো আলম সংসদ উপনির্বাচনে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
অনেক ব্যঙ্গবিদ্রুপের পরে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, হিরো আলমকে মাত্র ১ হাজারেরও কম ভোটে হারানো হয়েছে।
দুঃখজনকভাবে বিজয়ী জাসদের প্রার্থী তানসেন জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ না হওয়ায়, তার জয়ের চেয়ে হিরো আলমের পরাজয়ই বড় খবর হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: মাইক্রোবাস উপহার নিতে হিরো আলম যাচ্ছেন হবিগঞ্জ
তানসেন যেহেতু আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন, অতীতের নির্বাচনী অভিজ্ঞতার আলোকে স্বভাবতই জনগণ মনে করছে হিরো আলমকে সংসদে যেতে না দেয়ার জন্যই জোর করে তাকে হারানো হয়েছে।
ইসি অবশ্য নির্বাচনে কারচুপির কথা অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে হিরো আলমের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখান করেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সবার মাথাব্যাথা আরও বেড়ে যায় তখন, যখন মানুষ ইসির কথা না বিশ্বাস করে হিরো আলমের কথাই বিশ্বাস করে।
তবে এখন মনে হচ্ছে এই মানুষটিকে (হিরো আলম) ঘিরে অনেক কিছু চলছে এবং গান গাওয়া ও ভোট দেয়ার বাইরেও তার আরও অনেক বড় বড় ‘শত্রু’ হয়ে গেছে।
আলো ঝলমলে ঢাকা থেকে অনেক দূরের কোনও এক গ্রামীণ পশ্চাৎপদ পরিবেশ থেকে উঠে আসা ‘একগুঁয়ে' মানুষটির একটি অনিশ্চিত পেশা, কিছু নোংরা প্রেমের সম্পর্ক এবং জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের দক্ষতা; সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষদেরকে বিভ্রান্ত ও হতবুদ্ধি করে তুলেছে।
শুধু তাই নয়, একজন তাকে একটি মাইক্রোবাস উপহার দিল এবং কেউ যা করে না আলম তাই করলো; সেটি দান করে দিলেন। আর এ বিষয়টি এতটাই আলোচিত হয়ে উঠল, যে সংসদেও এসব নিয়ে আলোচনা উঠল।
সুশীলদের ওপর ফের আঘাত
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় যাওয়ার পথে হিরো আলমকে ২৫০০ টাকা জরিমানা করে হাইওয়ে পুলিশ। ওই উপজেলার নরপতি গ্রামের আব্দুল জব্বার গাউছিয়া একাডেমির প্রিন্সিপাল এম মখলিছুর রহমানের কাছ থেকে উপহারের মাইক্রোবাস আনতে গিয়েছিলেন তিনি।
কারণ মখলিছুর সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে ওয়াদা করেছিলেন যে বগুড়া দুই আসনে উপনির্বাচনে জিতলে বা হারলে হিরো আলমকে তিনি গাড়ি উপহার দেবেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে হিরো আলম গাড়িটি গ্রহণ করেন এবং তারপর লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এটি দান করেন।
আরও পড়ুন: যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গেছে: হিরো আলম
আলমকে জরিমানা করা পুলিশের এই পদক্ষেপটিতে কি কিছুটা প্রতিহিংসার গন্ধ ছিল! যে দেশে মন্ত্রীরা ঢাকার ব্যস্ত সড়কে জাতীয় পতাকা লাগানো তাদের সরকারি গাড়ি নিয়ে রংসাইড দিয়ে যাওয়া দোষের কিছু মনে করেন না, মোটরসাইকেলগুলো ফুটপাতকে সাব-রোড হিসেবে ব্যবহার করে, ফুটপাতে পার্ক করা গাড়ির জ্বালায় জনগণের হাঁটা দুষ্কর এবং এমনকি ‘ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন’- বলে যে কিছু আছে, অনেকে তা জানেই না। সেখানে আলমকে নিয়ে সরকারি বাহিনীর এত উদ্বেগ কিসের?
নিম্নশ্রেণির উত্থান
হিরো আলম ব্যক্তিগতভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে নিম্নশ্রেণির মানুষের উত্থানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শিল্পের মানদণ্ড কি তা নির্ধারণ করে রেখে সুশীলরা এতদিন যে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করছে, প্রথমেই তা হুমকির মুখে পড়েছিল গ্রামীণ ধর্মীয় সংস্কৃতির উত্থানের ফলে।
রাজনীতি ছাড়াও, হেফাজতের ঢাকা অবরোধের মধ্যদিয়ে দেখা যায় যে, জেগে উঠলে মুহূর্তে তারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক যে কোনও বাধা অতিক্রম করতে পারে।
‘আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ সুশীল সংস্কৃতির জন্য ওয়াজ মাহফিল বা হেফাজত ও তাবলিগ সংস্কৃতিকে প্রত্যাখান করা সহজ, কারণ তারা একটি রাজনৈতিক ও বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু এখানেই হিরো আলম তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
সারা বাংলাদেশের শহুরে অভিজাত বা সুশীলদের চর্চিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আর হিরো আলমের কর্মকাণ্ড তো একই।
হিরো আলম হয়তো ভালোভাবে কাজগুলো করতে পারে না, তবে অভিজাত বা সুশীলরা তাদের কমন স্পেসে যা করে সেও ঠিক তাই করে ।
আলম তাদেরই মতো গান করেন, তাদের মতো বিভিন্ন নায়ক ও আইকনদের নকল করেন এবং এমনকি তাদের অনেকের মতো নারীও সাজেন।
কেউ তাকে অপছন্দ করতেই পারে, যেমনটি অধিকাংশ সুশীলই তা করেন। তবে কেউ তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বন্ধ করতে পারে না, কারণ সুশীল অভিজাতরাও ঠিক এ কাজগুলোই করে।
হিরো আলম ও তার সমগোত্রীয়রা ক্রমে উঠে আসছে এবং শিগগিরই সুশীলদের একচেটিয়া দখলদারিত্বের ভিত্তি নড়িয়ে দিতে পারে তারা। মূলত এ ভয়েই তারা এত উদ্বিগ্ন।
কিন্তু ইতিহাস বলে, এ শ্রেণির মানুষেরা আজীবনই অপ্রতিরোধ্য। নিম্নশ্রেণির মানুষেরাই হয়তো একদিন শখের গায়ক ও তথাকথিত সৌন্দর্য্য সর্বস্ব শ্রেণির মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: হিরো আলমকে তাচ্ছিল্য করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শিষ্ঠাচার বহির্ভূত ও বৈষম্যমূলক: টিআইবি
১ বছর আগে
কপ-২৭ এর ফলাফলে সুশীল সমাজের হতাশা প্রকাশ
বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবারের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৭) ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার মিশরের কপ-২৭ সম্মেলন কেন্দ্রের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘এলডিসি অ্যান্ড এমভিসি পিপলস এক্সপেকটেশন অ্যান্ড কপ২৭’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই মতামত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ২০৫০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার লক্ষ্য অর্জনে বড় দূষণকারীদের প্রতিশ্রুতি এবং কপ-২৭ আলোচনার সময়সীমার মধ্যে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ কর্মসূচির জন্য আর্থিক সুবিধার বিষয়ে উন্নত দেশগুলো থেকে অবিলম্বে ঘোষণার দাবি জানান।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সিএসও নেতাদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আলী আকবর টিপু (প্যানেল মেয়র, খুলনা সিটি কর্পোরেশন), শামীম আরেফিন (অ্যাওসেড), ড. মোস্তফা সারোয়ার (প্রফেসর, কুয়েট), সৌম্য দত্ত (ফেলো, অশোকা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ভারত), প্রয়াশ অধিকারী (ডিগবিকাস ইনস্টিটিউট, নেপাল), এনআরসি (নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল) এর সামাহ হাদিদ এবং অ্যাটলে সোলবার্গ (প্ল্যাটফর্ম অব ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট সচিবালয়ের প্রধান)।
আরও পড়ুন: কপ-২৭: ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থ দিতে এখনও একমত হয়নি ধনী দেশগুলো
এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বাংলাদেশ থেকে আমিনুল হক (ইক্যুইটিবিডি)।
আমিনুল বলেন, ‘১ দশমিক ৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত। তাদের উচিত অবিলম্বে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি’ ঘোষণা করা। কারণ তাদের প্রশমন ও অভিযোজনে ন্যায্য অংশ বজায় রেখে তা পরিশোধ করার নৈতিক দায় রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধনী দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে ইউএনএফসিসিসি কনভেনশন ও প্যারিস চুক্তি অনুসরণ করে অভিযোজন সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণের কাজ শুরু করা।’
আরও পড়ুন: কপ-২৭ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবারের কপ-২৭ আলোচনার মূল ফোকাস: তথ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে
বাংলাদেশে নির্বাচনকালে সুশীল সমাজের আরও স্পেস প্রয়োজন: ব্যাচেলেট
বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় সুশীল সমাজের জন্য আরও ‘স্পেস’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী দল, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের কর্মীদের সভা সমাবেশের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন৷ বাংলাদেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দূর করতে রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের মধ্যে আরও সংলাপের ‘স্পেস’ থাকা প্রয়োজন।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।
ব্যাচেলেট বলেন, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং বিশেষ করে তরুণদের চাওয়া শোনা দরকার।
প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনো মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
ব্যাচেলেট বলেন, ‘আমি আশা করি আমার এই সফর জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা গড়ে উঠবে এবং সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সহায়তা করবে।’
সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন ও শিক্ষামন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্যাচেলেট জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
পড়ুন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত করার এখতিয়ার নেই: কাদের
২ বছর আগে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন: গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্তির দাবি টিআইবির
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে আইনটি পর্যালোচনা ও সংস্কারে গঠিত কমিটিতে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন, তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তার বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছে।’
একইসঙ্গে এই বক্তব্যের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে আইনটি মানবাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা পর্যালোচনা ও সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটিতে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়া সকলের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুধু সাংবাদিক নয়, দেশের সাধারণ নাগরিকদেরকেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার দাবিও জানিয়েছে টিআইবি।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত দাবি টিআইবির
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, ‘আইনমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন এবং বিশ্বের সেরা চর্চাসমূহ অনুসরণ করে আইনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভিন্নমতাবলম্বীদের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এমন ধারাগুলো পর্যালোচনা করে আইনটি সংশোধনের জন্য আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারের সদিচ্ছা ফুটে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের শুরু থেকেই এই আইনটির বেশ কিছু ধারা বিশেষ করে ২৫ ও ৩১ নিয়ে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিলো। মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এটি খড়গহস্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু সরকার কর্নপাত করেনি। এটির অপব্যবহার রোধে আইনমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটিরও বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি, বরং অল্প দিনেই আইনটি ভিন্নমত দমন ও ভয়ের পরিবেশ তৈরির কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের কাছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় আইনটির অপব্যবহার রোধে যে কোনো ধরনের সংশোধনে গঠিত কমিটিতে সকল অংশীজন, বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। নয়তো নতুন উদ্যোগটিও ভেস্তে যাবার শঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।’
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় উল্লেখ করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্যানুযায়ী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২১ সালের এগারো মাসে মামলা হয়েছে ২২৫টি, যেখানে ৪শ’র বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৬ জনকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার এসব মামলার বড় অংশই হয়েছে ক্ষমতাসীনদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তির জন্য। অর্থাৎ আইনটি শুধু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধই নয়, সাধারণ নাগরিকের ভিন্নচিন্তা ও সরকারের সমালোচনা রোধে ব্যবহারের সুস্পষ্ট নজির তৈরি করেছে। যার বড় উদহারণ এই আইনের করা মামলায় কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু। সুতরাং শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নীতি থেকে সরে আসতে হবে।’
একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার না করার যে সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর আলোচনার পর মৌখিকভাবে থানাগুলোতে জানানো হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, তা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ও সকলের জন্য সমানভাবে বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার নিশ্চিতের আহ্বান টিআইবির
২ বছর আগে
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ ঢাকা ও লন্ডনের
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্ব, জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে সুশীল সমাজের উপস্থিতি, মতপ্রকাশ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য।
শুক্রবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছে, এফসিডিও এর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে উঠে আসা বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রভাব, বিধিবহির্ভূত আটক, বিধিবহির্ভূত বিচারপ্রক্রিয়া, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসে (এফসিডিও) চতুর্থ বারের মত বার্ষিক যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত সংলাপের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন কেসিএমজি ওবিই ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, উইম্বলডনের লর্ড তারেক আহমেদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে স্বাগত জানান।
লর্ড আহমদ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আমি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যেকার দৃঢ় সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। আমরা উভয়েই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতে আমাদের দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেছি।’
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিবেশমন্ত্রীর মতবিনিময়
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চলাকালীন যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এই সংলাপে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা। দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি বিশেষ করে কোভেক্স থেকে প্রাপ্ত টিকার মাধ্যমে পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানায়।
সংলাপে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যু, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাসহ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো সশরীরে সাক্ষাতের সুযোগকে স্বাগত জানিয়ে সংলাপ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে অনুষ্ঠিত এবারের কৌশলগত সংলাপ যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রবাসী সংযোগ ও কমনওয়েলথের সদস্যপদের কারণে মানুষের সাথে মানুষের সুদৃঢ় সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন: ভারত সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ: তথ্যমন্ত্রী
সংঘাত প্রতিরোধ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, নিয়ম ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সমর্থনসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে উভয় দেশই প্রশিক্ষণ, পেশাগত সামরিক শিক্ষা ও ইন্সট্রাকশনাল এক্সচেঞ্জসহ যৌথ সহযোগিতাকে স্বাগত জানায় এবং এই বছরের শেষের দিকে একটি প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংলাপ উদ্বোধনের আশা ব্যক্ত করেন।
৩ বছর আগে