নবায়নযোগ্য
সেচ পাম্পের জ্বালানি নবায়নযোগ্য করলে সাশ্রয় হতে পারে ৫০০০ মেগাওয়াট: পরিবেশমন্ত্রী
দেশে কৃষিজমির সেচের পাম্পের জ্বালানি নবায়নযোগ্য করতে পারলে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে দ্বিতীয় ঢাকা নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, গ্রিন, ক্লিন ও জলবায়ু সহিষ্ণু অর্থনীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার উপর নির্ভরতা কমাতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, জমির স্বল্পতার কারণে পুকুর বা জলশয়ে ভাসমান সোলার প্যানেল করে নিচে মাছ চাষ করার অথবা বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেছি। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে। এই লক্ষ্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সব খাতের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে, সৌর, বায়ু, বায়োমাস ও জলবিদ্যুৎ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করতে, আমাদের আর্থিক প্রণোদনা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি কেবল কার্বন নির্গমন হ্রাসই করে না বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ও জীবনমান উন্নত করে।
মন্ত্রী এই রূপান্তরে উদ্ভাবনী আর্থিক উপকরণ যেমন গ্রিন বন্ড, জলবায়ু তহবিল এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের গুরুত্বের উপর জোর দেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা উন্নত বিশ্বের কাছে, ঋণ নয় অনুদান প্রত্যাশা করি। এই খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার এবং সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে আমাদের জাতির অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির মূল ভিত্তি করতে পারি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশেষ রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলি আবদুল্লাহ খাসেইফ আলহুমুদ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের অধ্যাপক এ. কে. এনামুল হক, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অলটারনেটিভ ল ইক্লেক্টিভের গবেষণা পরিচালক জেইন মৌলভী।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করতে আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
৬ মাস আগে
কয়লার ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ
কয়লা বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে জলবায়ু সম্মেলনে একমত হয়েছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে এর কোন বিকল্প নেই। সদিচ্ছা থাকলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন কঠিন কিছু নয়।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) গ্লাসগো সময় দুপুর ১টায় মন্ত্রী পর্যায়ের প্ল্যানারি সেশনে ২০৪১ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে একমত হন বিশ্ব নেতারা।
তারা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন কঠিন নয়। কয়লা ব্যবহারে অন্যতম দেশ ইন্দোনেশিয়াও তাদের অবস্থান থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা দিতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া
মন্ত্রী পর্যায়ের প্ল্যানারি সেশনে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। ভারত ও নেপাল থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমদানিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, অত্যাধিক ঘনবসতি ও কৃষি নির্ভরতার কারণে সোলার প্যানেল নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণে পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভারত ও ভুটান থেকে বিদুৎ আমদানির কথা ভাবছে বাংলদেশ।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব নেতারা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শেষ দেখছেন এবং ক্লিন এনার্জির বিবর্তন দেখছেন।
জীবাশ্ম জ্বালানিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিবেশ দূষণকারী হচ্ছে খনিজ কয়লা যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কয়লা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারীরা: প্রধানমন্ত্রী
২৬তম জলবায়ু সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। প্ল্যানারি সেশনে বিভিন্ন দেশের জ্বালানি প্রধানরা বলেন,এ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে না পারলে জলবায়ু মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ জ্বালানি মন্ত্রী বলেন, এক সময় কয়লা থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হতো। এখন সেটা ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০৩০ সালে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে।
যুক্তরাজ্যের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, তার দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে রোড ম্যাপ তৈরি করেছে।
সবাই একমত হলেই সবুজ বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব বলেন বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা। তাছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে আশার আলো দেখছেন বাংলাদশের পরিবেশবিদরা।
গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে অবস্থানরত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্ভরতা থেকে সরে আসায় বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। তবে অঙ্গীকারটি যাতে বাস্তবায়িত হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
৩ বছর আগে