বীর নিবাস
বীর নিবাস: অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ হাজার বাড়ির চাবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিকভাবে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাঁচ হাজার ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তর করেছেন।
বুধবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে পাঁচ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িগুলো দেয়া হচ্ছে।
গত বছরের ২১ মার্চ একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদিত 'অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারি তহবিল থেকে চার হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা ও সন্তানদের জন্য ৩০ হাজার 'বীর নিবাস' নির্মাণ করা।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, বঙ্গভবনে বর্তমান রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
'বীর নিবাস' নামে পরিচিত প্রতিটি ৬৩৫ বর্গফুট বাড়িতে দুটি শোবার ঘর, দুটি শৌচাগার, একটি খাবার ঘর ও একটি রান্নাঘর রয়েছে।
এই প্রকল্পটি আর্থিকভাবে প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা ও সন্তানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নড়াইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ এলাকায় চাবি হস্তান্তর করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন ডায়াবেটিক সমিতির নেতারা
শাহরাস্তিতে ১০ মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন ‘বীর নিবাস’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলার শাহরাস্তি উপজেলাতে ১০ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সরকারি ঘর পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৭৩২ বর্গফুটের এ ঘরগুলো নির্মাণে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না সরকারের এমন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সারা দেশে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ৩০ হাজার পাকাঘর নির্মাণ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় শাহরাস্তি উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১০ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাচ্ছেন এ ঘর।
আরও পড়ুন: শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিবারের জন্য দিঘলিয়ায় তৈরি হচ্ছে ‘বীর নিবাস’
১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৪২ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রতিটি বাড়ির রং হবে জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজের সমন্বয়ে। এসব বাড়ির নাম হবে ‘বীর নিবাস’। প্রতিটি বাড়ির আয়তন হবে একই সমান (৭৩২ বগর্ফুট)। দুই কক্ষ, বারান্দাসহ একতলা বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে থাকবে আলাদা বাথরুম ও টিউবওয়েল।
শাহরাস্তি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবু ইসহাক জানান, শাহরাস্তি পৌরসভার নিজমেহার, কাজিরকাপ, সূয়াপাড়া, টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের সোনাচোঁ, টামটা, আলীপুর, মেহের উত্তর ইউনিয়নের তারাপুর ও চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের আয়নাতলী গ্রামের ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার বীর নিবাস পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো সোনালী ব্যাংক
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন (ইউএনও) জানান, বীর নিবাস প্রদানে লটারির মাধ্যমে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাকা ঘরগুলো নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের কার্যাদেশ দানের মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। দ্রুতই এসব কাজ শেষ হবে।
শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিবারের জন্য দিঘলিয়ায় তৈরি হচ্ছে ‘বীর নিবাস’
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় ১২ জন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য এক কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘বীর নিবাস’। এর মধ্যে কাজের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, পর্যায়ক্রমে সরকার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দিবে। এমন সংবাদে দিঘলিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
দিঘলিয়ায় ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে মেসার্স জামাল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লটারির মাধ্যমে কাজটি পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ হাতেও পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধারা ‘ডিজিটাল সনদ’ পাবেন: মন্ত্রী
এব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার সারাদেশে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেন।
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প নির্মাণের সিলেকশন কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম গত অক্টোবর মাসে ১৮ জনের নামের প্রস্তাবনা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠান। ১৮ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ১২ জনের নামে অনুমোদন দেয়।
তারা হলেন, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল লতিফ, মো. মন্টু বিশ্বাস, মো. হায়দার আলী, শেখ নজির আহমেদ, মো. নুর ইসলাম সরদার, মো. মঞ্জুরুল আলম, মো. আজাহার আলী, মো. কায়সেদ শেখ, মো. আব্দুল জব্বার, শেখ জালাল উদ্দিন, শেখ সাহেব আলী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় অত্র উপজেলায় মৃত ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য আবাসনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ৪১৬ টাকা। প্রতিটি আবাসন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ টাকা। আবাসন নির্মাণের পর এসব ঘরের নাম দেয়া হবে ‘বীর নিবাস’।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো সোনালী ব্যাংক
সূত্র জানায়, ঘরগুলো নির্মাণের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস হয়। গত ১১ অক্টোবর দরপত্র গ্রহণের শেষ দিনে মোট ৭৭ জন ড্রপিং করে। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে মেসার্স জামাল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) উপজেলা পিআইও অফিস থেকে ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।