চুইঝালের কদর বাড়ছে
বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
প্রাকৃতিক ভেষজগুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় উদ্ভিদ চুইঝালের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাতা, কাণ্ড, শেকড়, ফুল, ফল, ডাল সবই ঔষধি গুণসম্পন্ন। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই মসলা মাংসের পাশাপাশি মাছের তারকারিতেও ব্যবহার হয়। আর এই গুড়া মশলা শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, বিদেশে আর্থাৎ থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, দেশে খুলনার চুই ঝালের চারার কদর রয়েছে। মাটিতে কিংবা অন্য গাছের আশ্রয়ে লতার মতো বেড়ে ওঠে চুই ঝাল গাছ। কাণ্ড, বাকল, শেকড় তরকারিতে ব্যবহার করা হলেও এবার চুই ঝালের মসলার স্থায়িত্ব বাড়াতে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চুই ঝালের পাউডার (গুড়া) মশলা তৈরি করে নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক বলেন, ‘২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে কাজ শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকে আমি ও নিউটন দেশের বিভিন্ন স্থানে চুইয়ের চারা বিক্রি শুরু করি । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের। নিজেদের উৎপাদিত চুই ঝালের পাশাপাশি অন্য কৃষকদের কাছ থেকে এই চুই ঝালের শেকড়, কাণ্ড, লতা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। তবে চুই লতা কাটার পর এর শেকড়, বাকল, ডাল বেশিদিন রাখা সম্ভব হয় না। শুকিয়ে কাঠে পরিণত হলে সেটি আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। আবার চুইয়ের কাঁচা ডাল, শেকড় ও লতা কুরিয়ার করে পাঠাতে অনেক সময় তিন দিন লেগে যায়। এতে চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘চুই ঝাল নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে ও নতুন রূপ দিতে কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেনের পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুযায়ী, গুড়া মশলা তৈরি করে খেয়েছি, যা খুবই সুস্বাদু। তবে চুইঝাল চিবিয়ে খেয়ে যেই স্বাদ পাওয়া যায়, সেটি গুড়া মসলায় পাওয়া যায় না। কিন্তু গুড়া মসলায় দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে। এখন এই চুইয়ের পাউডার সাতক্ষীরার সাঈদ ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড পাঠানো হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে।
কৃষক নিউটন মন্ডল বলেন, ‘চুই গাছের শেকড়, ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত দাম পায় না কৃষকরা। আমরা সেই বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির কাজ শুরু করি। প্রথমবার পাউডার তৈরি করে খেয়েছি, এটি খুবই ভালো সুস্বাদু। এবার আমরা এক কেজি চুই ঝালের গুঁড়ামসলা থাইল্যন্ডে পাঠাচ্ছি। থাইল্যান্ড পাঠানোর পরে সাড়া মিললে যারা আমাদের কাছ থেকে চারা নেয় তাদের উৎপাদিত চুই কিনে নিয়ে পাউডার করব। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশি চুই রপ্তানি করব।’
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি বলেন, ‘১২ কেজি চুইয়ের শেকড়, ডাল শুকিয়ে এক কেজি পাউডার তৈরি হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা পাউডারের মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি। কেজি প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মানভেদে চুইঝালের পাউডার বিক্রি করা হবে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চুই একটি উচ্চমূল্যের ফসল ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। চুই খেলে অনেক রোগের উপকার হয়। দীর্ঘদিন ধরে খুলনা এলাকাতে বিক্ষিপ্তভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। লোকজন বাগান বা ঘরের আশপাশে দু-একটি চাষ করতেন। কিন্তু আমাদের সহযোগিতায় কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকীকরণের জন্য আমাদের একটি প্রকল্পের সহযোগিতা পেয়ে প্রথমে প্রদর্শনী আকারে মাতৃগাছ তৈরি করে। এরপর থেকে চারা গাছ তৈরি করে বিক্রি করেছেন।’
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বছর থেকে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চুইঝালেরচাহিদা রয়েছে। চুই ঝালের কাণ্ড, শেকড় পাঠলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই তারা চুইয়ের যে প্রকৃত স্বাদ সেটি গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য আমাদের নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে চুইঝালের গুঁড়ো তৈরি করে এর পাউডারটি বিদেশে পাঠাচ্ছে। প্রথম চালান তারা থাইল্যান্ডের পাঠাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, চুইঝাল যাতে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে যায়, সে জন্য আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের প্রত্যেকটা উপজেলায় পাঁচটি চুইগ্রাম হবে। গ্রামের প্রতিটি সদস্যের বাড়িতে অন্তত দু’টি করে চুইঝাল গাছ লাগানো হবে।
৩ বছর আগে