নারাজি আবেদন
পিবিআই’র প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কার্টুনিস্ট কিশোরের নারাজি আবেদন
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ আবেদন করেন কার্টুনিস্ট কিশোর। আবেদনের ওপর আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কিশোরের ওপর নির্যাতনের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সাদা পোশাকে অজ্ঞাতনামা ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।
গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার। তারা কিশোরের শরীরে নির্যাতনের প্রমাণ পাননি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পান কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। পরে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত ১০ মার্চ কার্টুনিস্ট কিশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এরপর গত ১৪ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না তা দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন। এছাড়া মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: কিশোরের ওপর নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি পিবিআই
কিশোর তার মামলায় অভিযোগ করেন, গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কলিং বেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললে অপরিচিত একজন আমাকে বলে, দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আসেন। সঙ্গে একটি ভালো শার্ট পরেন। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে পরিচয় দেয়নি। তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ ও যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়। আমাকে যখন হাতকড়া পরিচয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ী অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে তারা অনেক জোরে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল। হয়তো এজন্য আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন দেখানো হচ্ছিল। সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে সেগুলো আঁকার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচন্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। এভাবে ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
আরও পড়ুন: কার্টুনিস্ট কিশোরের মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিলো আদালত
কার্টুনিস্ট কিশোরের জামিন আবেদনের ওপর আদেশ বুধবার
২ বছর আগে