জলাশয়
জামালগঞ্জে জলাশয় শুকিয়ে অবাধে মাছ নিধন, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা জামালগঞ্জ। অসংখ্য ছোট বড় হাওর, নদী-নালা, খাল-বিল সমৃদ্ধ জামালগঞ্জ এক সময় দেশিয় মাছে ভরপুর ছিল। রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, শোল-গজার, কালি বাউশ, টেংরা, পাবদা, শিং-মাগুর ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার ছিল উপজেলাটি।
কালের বিবর্তনে এবং মনুষ্য সৃষ্ট নানা সমস্যা ও প্রকৃতিবিনাশী কার্যকলাপে ধ্বংস হচ্ছে দেশিয় মাছের ভান্ডারখ্যাত হাওর। অনেক প্রজাতির মাছ এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তির পথে আরও অনেক প্রজাতির মাছ। হাওরে প্রতিবছর মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, চায়না দুয়ারীসহ কারেন্ট জাল ও বিল শুকিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য। হাওরে এখন অর আগের মতো দেশিয় মাছ ও শামুক-ঝিনুক, কচ্ছপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী তেমনটা চোখে পড়ে না।
বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ইজারাদার ও সুবিধাভোগী দল শ্যালো মেশিন বসিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছে। এমনকি বিলের তলা শুকিয়ে কাদা মাটির গভীর থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মাছ বের করে বংশ নিপাত করছেন তারা।
অভিযোগ আছে, বিগত সরকার ব্যক্তির নামে ইজারা প্রথা বাতিল করে মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যাতে করে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। মৎস্যজীবী সমিতির নামে বিল নিয়ে তৃতীয় পক্ষ হচ্ছে সুবিধাভোগী। নামমাত্র টাকায় বিক্রি হয়ে যায় অনেক সমিতি। বছরের পর বছর ধরে চলছে মৎস্য ও জীববৈচির্ত্য নিধন। প্রশাসনের চোখের সামনে মৎস্য আইন ভঙ্গ করে ছোট বড় সরকারি বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছে সুবিধাভোগীরা। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু-একটা অভিযান চালালেও— তা লোক দেখানো। বর্তমান সরকারের আমলেও ধারাবাহিকভাবে বিল শুকিয়ে দেদার মাছ শিকার চলছে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২০ একর পরিমাণের নিচে ৪১টি বিল রয়েছে— যার আয়তন ১৫৬ দশমিক ৩০ হেক্টর। আর ২০ একর পরিমাণের উপরে ৩৯টি বিল— যার আয়তন ১ হাজার ৯১১ দশমিক ৩০ হেক্টর। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দিঘা, বাইম দাইর, গঙ্গাধরপুর নদী জলমহালের একাংশ (উরা বিল) শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হয়েছে। একের অধিক শ্যালো বসিয়ে বিল শুকানো চলছে দিরাই-চাতল গ্রুপ, আয়লা-ছাগাইয়া গ্রুপের চিনাইধরা, ধলাপাকনা, ঢালিয়া ও নয়াখাল নাইন্দা জলমহালে।
দিরাই চাতল বিলের ইজারাদার হরিনগর-নোয়াগাঁও-নলোয়ারপাড়-জগন্নাথপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন বলেন, ছয় বছরের জন্য উন্নয়ন স্কিমে দিরাই চাতল বিল পেয়েছি। বিল ভরাট ও মাটিতে গ্যাস হওয়ার কারণে মাছ থাকে না। বিল খননের জন্য জেলা প্রশাসক স্যার, জামালগঞ্জের ইউএনও স্যার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়েছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে খনন কাজ শেষ করব।
উল্লেখ্য, গত দুই বছরও (২০২৩-২৪) খননের কথা বলে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হয়েছে। অথচ জলমহালে কোনো খনন কাজ করা হয় নাই। বিভিন্ন বিলে বার বার ইজারা আইন ভঙ্গ করছে এসব মৎস্যজীবী সমিতি।
পাগনার হাওরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৎস্যজীবী বলেন, আমরা বর্ষায় মাছ ধরলে জাল পোড়ানো হয়। এখন বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় তাদের কিছুই হয় না। টাকা থাকলে সব কিছু করা যায় এ দেশে। কয়দিন পরে হাওরে আর মাছ পাওয়া যাইত (যাবে) না। বিষ মাইরা মাটির তল থেকে মাছ বের করে। এখন তো আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।
সমাজকর্মী মো. আব্দুর রব বলেন, হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। ইজারাদার বিল শুকিয়ে অবাধে মাছ আহরণ করছে। যারা বিল শুকাচ্ছে তাদের শক্তির উৎস কোথায়? এভাবে বিল শুকিয়ে মাছ ধরলে দেশিয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। যে সমস্ত সমিতি ইজারা আইন ভঙ্গ করে তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
জামালগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. কামরুল হাসান বলেন, আমি বিভিন্ন জলমহালে প্রতিদিন তদারকি করছি। কোথাও শ্যালো মেশিন দিয়ে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করতে দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে মেশিন বন্ধ করছি। দীঘা ও বাইম দাইর জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় সমিতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যে সমস্ত সমিতি ইজারা আইন ভঙ্গ করবে— তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে যারা বিল শুকিয়ে মাছ ধরে— তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি আপনার মাধ্যমে জানলাম জামালগঞ্জে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সমিতির নিবন্ধনের বৈধ-অবৈধতার বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, মৎস্যজীবী সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে সমবায় অফিস। সমিতির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নূর বলেন, দিরাই-চাতল খননের জন্য অনুমতি নিয়েছে। যে অংশটুকু খননের জন্য অনুমতি নিয়েছে সেইটুকুই শুকাবে। যে সমস্ত বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হয়েছে, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ইজারাদার বিল শুকিয়ে মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাদের ইজারা চুক্তি বাতিল করা হবে। কোনো অজুহাত দেখিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ নেই ইজারাদারের।
দিরাই-চাতল বিল শুকানোর প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি দেই নাই।
৪৯ দিন আগে
নানা অব্যবস্থাপনায় জাবিতে কমেছে অতিথি পাখির আগমন
শীতের আড়মোড়া ভাঙতেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জলাশয়ের পানিতে ভেসে থাকা শাপলা পাতার ওপর অতিথি পাখির জলকেলি, দলবেঁধে উড়ে যাওয়া, আবার ফিরে এসে পানিতে বসা, জলাশয়ের বুক চিরে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছোটাছুটি করা ও মনোমুগ্ধকর কিচিরমিচির শব্দ— শীতকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাশয়ের চিত্র এমনই দেখা যেত। কিন্তু এখন যেন সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। জাবিতে কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির সংখ্যা।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় শীতকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে অতিথি পাখিরা আসত। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে জাবির লেকগুলোতে প্রথমবারের মতো অতিথি পাখি আসে। এরপর ২০১৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবন-সংলগ্ন লেক, বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র (ওয়ালইড লাইফ রেসকিউ সেন্টার), জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল-সংলগ্ন লেক ও পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকগুলো অতিথি পাখির মূল অভয়ারণ্য। এখন লেকগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুখরিত ক্যাম্পাস। তবে দুই তিন বছর আগের তুলনায় তা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
অতিথি পাখি আসার আগে তাদের সুস্থ ও সুন্দর আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ দায়িত্বে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত লেকগুলো পরিষ্কার করে থাকে। তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতা ও তথ্যমূলক ব্যানার, ফেস্টুন টানায়। এ বছরও এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার, বিক্রি হচ্ছে বাজারে
অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় জলাশয়গুলোতে ফোটা লাল শাপলা। লাল শাপলার চাদরে পাখিদের বিচরণের দৃশ্য মন কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।
প্রতি বছর শীতপ্রধান দেশ মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সাইবেরিয়া ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর দিকে দেশে আসতে শুরু করে পাখিরা। বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখিদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারি অন্যতম। এ ছাড়াও আছে খঞ্জনা, পান্তামুখী, নর্থগিরিয়া, কমনচিল, কটনচিল, পাতিবাটান, পান্তামুখী, বুটি হাঁস, বৈকাল ইত্যাদি প্রজাতির পাখি। তবে জলাশয়গুলোয় পাতি সরালির বিচরণই বেশি লক্ষণীয়।
অতিথি পাখি দর্শনের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ভোরে ও সূর্য ডোবার আগে। এ সময় পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায় জলাশয়ের ওপর। নিভু নিভু সূর্যের আলো, শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে শত শত পাখির কিচিরমিচির শব্দে এ সময়ে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাইরের অনেক দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন তারা।
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা হৃদয় হাসান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতি বছরই আপনাদের ক্যাম্পাসে আসি অতিথি পাখি দেখতে। ঢাকা শহরে এই সুযোগটি নেই। বাসার ছোট ছেলেমেয়েদের এনেছি এবার। তারাও এই সময়টা খুব উপভোগ করছে।’
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আগের তুলনায় গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোর পাখিদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জলাশয়ে পাখিরা থাকে, সেগুলো এখন তাদের বসবাস-উপযোগী নয়। জলাশয়গুলোর আশপাশে অধিক লোকসমাগম ও শব্দদূষণই এর প্রধান কারণ।’
‘পরিবহন চত্বরের পেছনে যে লেক, সেই লেকের ধারে সারা দিনই লোকজন থাকে। এর জন্য পাখিরা ওই লেকে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাছাড়া অন্যান্য লেকেও এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম।’
ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় যে লেক, সেটি হচ্ছে ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার-সংলগ্ন লেকটি। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় ওই লেকে পাখির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে লেকটি এখন পানা দিয়ে ভরে গেছে। পরিষ্কার না হওয়ায় পাখিরা পুরো লেকজুড়ে বসতে পারে না। অল্প কিছু অংশে পাখি বসে। তবে এবার প্রশাসন লেকটি পরিষ্কার করেনি। আমি নিজে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কয়েকবার অবগত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত না করা হলে পাখির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগরের অতিথি পাখি তথা সকল বন্যপ্রাণীর জন্য সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘এ বছর গতবারের তুলনায় পাখি বেশ কম এসেছে। আটটি লেকের মধ্যে মাত্র দুটিতে পাখি বসতে দেখা গিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই পাতি সরালি। ডব্লিউআরসি-সংলগ্ন লেক বাদে, অপর একটি লেকে পাখি বসলেও মাত্র দুই হাজারের কাছাকাছি পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে । অধিকাংশ লেক কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় পাখিরা সেখানে বসতে চায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য, কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে দেখছি উল্টো চিত্র। আগের মতো আর পাখি নাই। জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘অতিথি পাখির সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে— এ ব্যাপারে আমরা অবগত। কিন্তু প্রশাসনের উচ্চ স্তরের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।’
অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, গাছ কাটা, লেক ভরাট ও পরিষ্কার না করাসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে পারলেই অতিথি পাখির আগমন আবারও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব লেক পরিষ্কার করা হয়েছে সেখানে আবার স্থানীয় জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ কম হওয়ায় বুনো হাঁসগুলো বসছে না, যদিও মাছ শিকারি পাখিগুলো, যেমন— পানকৌড়ি, সাপপাখি, মেটে মাথা কুড়া ঈগল ইত্যাদি এখানে পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘আসলে এটা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের সমস্যা নয়, পুরো দেশেই বর্তমানে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের জাবিতে যে বিষয়টা, পাখির আবাসস্থল লেকগুলো ঠিক আছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন এবং এগুলোর আলো পাখির আবস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কেননা পাখিদের বিচরণ স্বভাবতই রাতে বা ভোরবেলায় বেশি হয়ে থাকে।’
‘আমরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে গত ৩ জানুয়ারি পাখি মেলার আয়োজন করে দেশবাসীকে আসলে পাখি আবাসস্থল সংরক্ষণ আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মেসেজটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘পাখি কমে যাওয়ার জন্য বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু উচু ভবন নির্মাণ, যা পাখিদের বিচরণে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও রয়েছে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ (অতিরিক্ত যানবাহন থেকে তৈরি শব্দদূষণ) ও পাখির খাদ্য সংকট। পাখি আসলে ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে, কিন্তু এই খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা কমে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখবেন যে, পুকুরগুলো পরিষ্কার করে প্রতিটি পুকুরে পাখির বসার জন্য নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লেক সংস্কার করেছি আট লাখ টাকা ব্যয়ে। এছাড়া আগে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হতো, কিন্তু বর্তমানে পাখির খাদ্যের কথা চিন্তা করে আর লিজ দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা বিবেচনায় রেখেছি, কীভাবে পাখির আগমন বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশে আবহমান জীববৈচিত্র্যের এক অপরুপ সৌন্দর্য এই অতিথি পাখির আগমন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেই অতিথি পাখি জাহাঙ্গীরনগর থেকে সরে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
৫২ দিন আগে
বগুড়ায় হাত-মুখ বেঁধে ইজিবাইক ছিনতাই, চালককে জলাশয়ে নিক্ষেপ
বগুড়ার নন্দীগ্রামে হাত-মুখ বেঁধে চালককে জলাশয়ে ফেলে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ করেছেন ইজি বাইকচালক সেলিম হোসেন।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রাম উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এলাকায় এ ছিনতাই হয়।
আরও পড়ুন: বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়িতে হামলা, আহত ৪
চালক সেলিম হোসেন (৪২) নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কাথম গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।
অভিযোগে জানা গেছে, শনিবার ভোরে প্রতিদিনের মতো সেলিম হোসেন বাড়ি থেকে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইক নিয়ে নন্দীগ্রামের উদ্দেশে বের হন।
আরও পড়ুন: বাকৃবি অধ্যাপক আব্দুল কাফির মৃত্যু, বগুড়ায় দাফন
পথিমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এলাকায় পৌঁছিলে হঠাৎ পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা একটি প্রাইভেটকার ইজিবাইকের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাইভেটকার থেকে চারজন নেমে ইজিবাইকের চালক সেলিমের হাত-মুখ বেঁধে গাড়িতে তোলে।
এরমধ্যে একজন সেলিমের ইজিবাইক ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িতে থাকা অন্য তিনজন সেলিমকে হাত, মুখ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কুন্দারহাট-রুপিহার বাজারের মাঝামাঝি সড়কের জলাশয়ে ফেলে দিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: বগুড়ার মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পিকআপে আগুন
পরে স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে চালক সেলিম হোসেনকে উদ্ধার করে।
নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজমগীর হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের আটক ও ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য নিহত
৪৪২ দিন আগে
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে
চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। বৃষ্টির না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে খাল, বিল, পুকুর। ফলে বাড়ছে পানির তাপমাত্রা। এই তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাছচাষিরা।
কই, জিয়লসহ সব ধরনের মাছের রেণু, পোনা মরে যাওয়ার কারণে মাছচাষিদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মাছ চাষ ব্যাহত হবে। মাছের সংকট দেখা দেবে।
মাছের আড়তের পাইকারি বিক্রেতারাও হতাশ। কারণ পর্যাপ্ত মাছ তারা আমদানি করতে পারছেন না। আবার যাও পারছেন, সেই মাছ অধিকাংশ গরমে স্ট্রোক করে মরা। এই অবস্থার জন্য তীব্র লোডশেডিংকে দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এঅবস্থায় পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে পানি ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পুকুরে গেলে দেখা যায়, মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর পানি সেচসহ নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ১০০ দিন ও বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ
আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা গ্রামের হালদারপাড়ার মদন হালদার জানান, এই দুই দিনে গরমের কারণে আমাদের প্রায় ৩শ’ মণ মাছ মরে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার গরমেই এই দুইদিনেই আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা লস।
জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফুলবগাদী গ্রামের জব্বার আলী ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার সব থেকে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে মাছ পাইকারি দরে কিনতে এসেছেন।
জব্বার আলী বলেন, ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না, পানি নেই। আবার দাম বেশি।’
আমিরুল নামের একজনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা মাছপট্টিতে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘পানি নেই, পানি হলি মাছের দাম কম হবে। এতি করে চাষিরাও বাচবে, যারা ফোড়ে তারাও বাঁচবে। মিয়ারাও বাঁচবে। তাড়াতাড়ি পানি হোক।’
মাছচাষি মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমার দুইটি পুকুর রয়েছে। একটা এক বিঘার। আরেকটা ৭ বিঘার খননের কাজ চলছে। কিন্তু এ বছর পুকুরের মাছগুলো বাচিঁয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। যে পাওয়ার পাম্প মেশিন কিনেছি, তাতে ঠিকঠাক পানি উঠছে না। গরমে মাছ ছটফট করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবগুলো পুকুরের পানিই তলানিতে নেমেছে। প্রচণ্ড গরমে মাছের রোগ দেখা দিচ্ছে। আমরা চুনসহ শ্যালো চালিয়ে পুকুরে পানির উচ্চতা বাড়াচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় প্রায় ১১ হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। যার জলকরের আয়তন প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমি। আর পুরো জেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জলকর রয়েছে।
এছাড়া এ জেলায় ১২ নদী ও ১০টি হাওড় আছে। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বার্ষিক উৎপাদন ২৩ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন লক্ষ মাত্রা রয়েছে।
তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে লক্ষযমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে মিলল সাকার মাছ
৬৬২ দিন আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জলাশয়ে ডুবে ২ ভাইয়ের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পানিতে ডুবে দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের বাছিদপুর গ্রামে বাড়ির পাশে পরিত্যাক্ত জলাশয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের বাছিদপুর গ্রামের প্রবাসী মাঈন উদ্দিনের ছেলে উসমান (৩) ও বাচ্চু মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (৪)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে বাড়ির পাশে খেলাধুলা করছিল উসমান ও আবদুল্লাহ। কিছুক্ষণ পর থেকে তাদের আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশের জলাশয়ে তাদের ভাসতে দেখে। এ সময় তাদের উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূরে আলম জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় শিশু দু’জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু
দিনাজপুরে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
১০৫১ দিন আগে
দেশের জলাশয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়া সাকার মাছ-এর ক্ষতিকর দিক
বিগত প্রায় চার দশক জুড়ে অ্যাকোয়ারিয়ামের শোভা বর্ধক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সাকার মাছ এখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জলাশয়গুলোতে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে ধরে এনে অনেকেই এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন সাকার মাছ। খাবারের জন্য চওড়া দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছেন অনেকেই। তবে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে দেশের মাছ চাষে মাছটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বদ্ধ এবং উন্মুক্ত উভয় জলাশয়েই এর ক্ষতিকর দিকগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া? চলুন জেনে নিই সাকার মাছের বৈশিষ্ট্য ও এর ক্ষতিকর দিকগুলো।
সাকার মাছ-এর বৈশিষ্ট্য
মাছটির পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ (Suckermouth Catfish)। অ্যাকোয়ারিয়াম পালনকারীদের কাছে প্লেকোস্টোমাস বা কমন প্লেকো নামেই বেশি পরিচিত। বর্মযুক্ত ক্যাটফিশ গোত্রের অন্তর্গত এই মাছটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় মিঠা পানির মাছ। এর মাথা এবং শরীরের উপরের অংশকে আবৃত করে রাখে বর্ম-সদৃশ কাটার অনুদৈর্ঘ্য সারি আর মাথা এবং পেটের নীচের পৃষ্ঠটি নগ্ন নরম ত্বক। মুখটি যেন যে কোন কিছু চুষে নেয়ার জন্য উদ্যত, আর এর জন্যই এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে হাইপোস্টোমাস প্লেকোস্টোমাস। মুখের এই আকৃতিটি মাছটিকে জলাশয়ের পৃষ্ঠের সাথে লেগে থেকে স্রোতের প্রতিকূলেও খাবার শুষে নিতে সাহায্য করে।
এই সর্বভুক প্রজাতির মাছটি শেওলা, জলজ উদ্ভিদ এবং ছোট ছোট পোনা মাছ খেয়ে থাকে। আশেপাশের যেকোন নড়াচড়ার প্রতি এরা বেশ সংবেদনশীল। এই বৈশিষ্ট্যটি তাদের যেকোনো ধরনের শিকারীকে নিমেষেই এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। অপরদিকে কোন কারণে এদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এরা শরীর থেকে ফেরোমোন নিঃসরণ করে এবং কোনো বিপদ দেখা দিলে লড়াই করার জন্য পূর্ব সংকেত দেয়।
প্রায় ৩৯ ইঞ্চির উত্তর আমেরিকান এই মাছগুলোর ওজন হয় প্রায় দেড় কেজি। তবে বাংলাদেশিগুলো ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা ও ওজনে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: মাছ, মাংস, ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা খামারিদের অনন্য অর্জন: স্পিকার
সাকার মাছ-এর ক্ষতিকর দিকগুলো
অন্যান্য মাছ খেয়ে ফেলে
এই সর্বভূক মাছটি জলাশয়ের পোকামাকড় ও শ্যাওলার পাশাপাশি অন্য ছোট ছোট মাছ বা মাছের পোনাও খেয়ে ফেলে। ফলে চাষিদের মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
১১৭৮ দিন আগে