চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। বৃষ্টির না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে খাল, বিল, পুকুর। ফলে বাড়ছে পানির তাপমাত্রা। এই তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাছচাষিরা।
কই, জিয়লসহ সব ধরনের মাছের রেণু, পোনা মরে যাওয়ার কারণে মাছচাষিদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মাছ চাষ ব্যাহত হবে। মাছের সংকট দেখা দেবে।
মাছের আড়তের পাইকারি বিক্রেতারাও হতাশ। কারণ পর্যাপ্ত মাছ তারা আমদানি করতে পারছেন না। আবার যাও পারছেন, সেই মাছ অধিকাংশ গরমে স্ট্রোক করে মরা। এই অবস্থার জন্য তীব্র লোডশেডিংকে দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এঅবস্থায় পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে পানি ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পুকুরে গেলে দেখা যায়, মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর পানি সেচসহ নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ১০০ দিন ও বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ
আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা গ্রামের হালদারপাড়ার মদন হালদার জানান, এই দুই দিনে গরমের কারণে আমাদের প্রায় ৩শ’ মণ মাছ মরে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার গরমেই এই দুইদিনেই আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা লস।
জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফুলবগাদী গ্রামের জব্বার আলী ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার সব থেকে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে মাছ পাইকারি দরে কিনতে এসেছেন।
জব্বার আলী বলেন, ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না, পানি নেই। আবার দাম বেশি।’
আমিরুল নামের একজনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা মাছপট্টিতে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘পানি নেই, পানি হলি মাছের দাম কম হবে। এতি করে চাষিরাও বাচবে, যারা ফোড়ে তারাও বাঁচবে। মিয়ারাও বাঁচবে। তাড়াতাড়ি পানি হোক।’
মাছচাষি মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমার দুইটি পুকুর রয়েছে। একটা এক বিঘার। আরেকটা ৭ বিঘার খননের কাজ চলছে। কিন্তু এ বছর পুকুরের মাছগুলো বাচিঁয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। যে পাওয়ার পাম্প মেশিন কিনেছি, তাতে ঠিকঠাক পানি উঠছে না। গরমে মাছ ছটফট করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবগুলো পুকুরের পানিই তলানিতে নেমেছে। প্রচণ্ড গরমে মাছের রোগ দেখা দিচ্ছে। আমরা চুনসহ শ্যালো চালিয়ে পুকুরে পানির উচ্চতা বাড়াচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় প্রায় ১১ হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। যার জলকরের আয়তন প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমি। আর পুরো জেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জলকর রয়েছে।
এছাড়া এ জেলায় ১২ নদী ও ১০টি হাওড় আছে। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বার্ষিক উৎপাদন ২৩ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন লক্ষ মাত্রা রয়েছে।
তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে লক্ষযমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে মিলল সাকার মাছ