প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ প্রত্যাখ্যান
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বারবার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়েছেন মো. নূরুল হুদা নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ভালো ফল অর্জন সত্বেও নিজে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির কাছে হার মেনেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কোটার ভিত্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদকও ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নূরুল হুদা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যানের এই ঘোষণা দেন।
লিখিত বক্তব্যে নূরুল হুদা বলেন, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করছি।’
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ, ৯৩৩৭ জন উত্তীর্ণ
নূরুল হুদা লালমনিরহাট জেলার মৃত আহর উদ্দীনের ছেলে। তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভর্তি হন। এলএলবিতে (সম্মান) সিজিপিএ-৩.৬৫৪ এবং এলএলএমে ৩.৬০৭ অর্জন করেন।
এলএলবি পরীক্ষার ফলাফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে প্রথম স্থান অর্জন করায় ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা: ১২ পরীক্ষার্থী আটক, বহিষ্কার ৩
নুরুল হুদা জানান, ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদন করেন তিনি। নিয়োগ বোর্ড বসার আগে বোর্ডের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও বিভাগীয় তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ করেন। এসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া নুরুল হুদার চেয়ে যাদের জিপিএ কম এমন তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত ইউজিসির তদন্ত কমিটির সামনে ২০২০ সালের ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর উপস্থিত হয়ে আমি ও আমার স্ত্রী শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরি। ইউজিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১ ও ২ নম্বর পর্যবেক্ষণে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানানো হয়।’
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা: ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ আটক ৩৫
১০ মাস আগে
প্রথম হয়েও মিলছে না স্বর্ণপদক!
অনুষদে প্রথম হয়েও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী। সময়মতো সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ায় এমনটি ঘটেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ’মেধার মূল্যায়নে আমরা অনুষদে প্রথম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু সেশনজট ও ফলাফল প্রকাশে বিভাগের ব্যর্থতায় আমরা এ পদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যা কাম্য নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুষদে সর্বোচ রেজাল্টধারীদের প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক দেয়া হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি। সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা আবেদন করে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শেষ বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কথা ২০১৮ সালে। কিন্তু বিভাগগুলো সেই ফলাফল প্রকাশ করে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে। এদিকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের শেষের দিকে। একই বছরে দুই শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় পদকের তালিকা থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বাদ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্থানীয়দের হামলায় ইবির সাত শিক্ষার্থী আহত, প্রতিবাদে বিক্ষাভ
৪ জানুয়ারী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে পদকের জন্য ইউজিসি বরাবর চূড়ান্ত চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি শাখা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, এবছরে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে আইন অনুষদ থেকে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন আইন বিভাগের রুবাইয়া ইয়াসমিন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত ফলাফলে তার সিজিপিএ ৩.৫৯। অপরদিকে একই অনুষদের আল ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল ইসলামের ফলাফল প্রকাশিত হয় একই বছরের শুরুর দিকে। তার মোট সিজিপিত্র ৩.৫৯। ফলাফল একই হলেও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আশরাফুল।
একইভাবে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আল ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ইলিয়াস আলমগীরের প্রাপ্ত সিজিপিত্র ৩.৬২। কিন্তু তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালে। যা প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো ২০১৯ সালে। বিভাগের ভুলে তিনিও পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। একইভাবে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের একজন, জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজনসহ ধর্মতত্ত্ব অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। এভাবে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার ইবির ‘ডি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আল ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ’শিক্ষা জীবনের সবথেকে বড় অর্জন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক। সেশনজটের কবলে পড়ে আমরা মেধাবী হয়েও এই পদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিভাগকে অভিহিত করেছি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আমাদের মেধার মূল্যায়ন করা হোক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখার কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন বলেন, ’ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী আমরা প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের তালিকা পাঠিয়েছি। নীতিমালা অনুযায়ী, একই বর্ষে একাধিক ফলাফল প্রকাশিত হলে সর্বোচ্চ রেজাল্টধারীকে মনোনীত করা হয়। সেই হিসেবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম বাদ গেছে।’
এ বিষয়ে আল ফিক্হ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আনোয়ারুল ওহাব বলেন, ’করোনাকালীন সময়ে পরীক্ষা গ্রহণের কারনে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ’প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তাতে কোনোরকম ভুল নেই। বিভাগুলোকে যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের জন্য আমরা বলেছি। যাতে সেশনজট না হয়।’
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে ইবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ
২ বছর আগে