শাহরিয়ার
৫০ তালগাছে কীটনাশক: আ.লীগ নেতা শাহরিয়ারকে তলব
রাজশাহীর বাগমারার বাইগাছা এলাকায় ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘৫০ তালগাছে কীটনাশক’ শিরোনামে গত ৩১ জানুয়ারি প্রথম আলোয় সম্পাদকীয় ছাপা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: কাতারে ফিফা বিশ্বকাপ: নিহত ও আহত বাংলাদেশি কর্মীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
বাংলা ভাষায় আদেশ ঘোষণা করেন বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি, যা চলতি বছর ভাষার মাসের প্রথম দিনে প্রথম বাংলায় দেয়া আদেশ।
রুলে ৫০টি তালগাছ মেরে ফেলতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কেন শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিতে নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া আদেশে আদালত বলেছেন, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে সরেজমিন তদন্ত করবেন। তাঁরা উল্লেখিত গাছগুলোর ছবিসহ প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করবেন। প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদেশের কপি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বরাবর পাঠাতে বলেছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন ও ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠাতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
আদেশে আদালত বলেন, খবরের উল্লেখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্যে অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই আমাদের মনোযোগের বাইরে থাকে। যেমন পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু ও বজ্রপাতে মৃত্যু।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
প্রতিবছর এসব কারণে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদেরও বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায় না।
নানান সময় প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেগুলোর কোনো সুফল মেলেনি, পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায়। বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করেছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটা ও বসানোও হয়েছে।
লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও তালগাছ রোপণের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু দিন শেষে জনগণের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই হয়নি। সেখানে সাধারণ মানুষেরাই স্বেচ্ছায় বছরের পর বছর ধরে তালবীজ রোপণ করে বরং বড় ভূমিকা রাখছেন।
এখন সেসব তাল গাছের ওপরও আসছে আঘাত। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রায় এক দশক আগে স্থানীয় এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কের উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাল বীজ বপন করেছিলেন।
সেসব তাল গাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তাল বীজ গাছ হয়ে উঠতেই সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।
ফলে বোঝা যায়, অনেক নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তাল গাছগুলো বড় করে তুলেছেন বাইগাছার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো নিধনে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন শাহরিয়ার আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা।
প্রকৃতি ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।
এদিকে তালগাছ নিধনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম। সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রথম আলোর প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন তিনি।
তাল গাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আমগাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না। ফলে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যের ডিজিকে সেবা নিশ্চিত করতে বললেন হাইকোর্ট
এমন অমানবিক কাজের জন্য শাহরিয়ার আলমকে আইনের আওতায় আনা হোক।
এছাড়া বন বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, মরতে বসা তাল গাছগুলোকে সারিয়ে তোলার দ্রুত পদক্ষেপ নিন—যোগ করেন হাইকোর্ট।
১ বছর আগে
আওয়ামী লীগ সরকার কখনই লবিস্ট নিয়োগ করেনি, করার পরিকল্পনাও নেই: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার গত তিন মেয়াদে কখনোই কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। বরং বাংলাদেশ ও এর জনগণের সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে এবং দেশের বিরুদ্ধে চালানো বিভিন্ন অপপ্রচারের বদলে দেশের বিভিন্ন সফলতাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য ২০১৫ সালে একটি পিআর ফার্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনকালে এসব কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে আওয়ামী লীগ সরকার তার গত তিন মেয়াদে কোনো লবিস্টকে নিয়োগ করেনি। আর এই মুহূর্তে কোনও লবিস্ট নিয়োগ করার পরিকল্পনাও আমাদের নেই। আমরা যা করেছি তা সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে: তথ্যমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার গতকালের বক্তব্যের পুনরুল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) লবিস্টের পেছনে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
এসময় শাহরিয়ার দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন, যেগুলো গত চার-পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে যখন কোনো নেতিবাচক ধারণা থাকে এবং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ও এর জনগণ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু লেখে, তখন বাংলাদেশকেও সত্য দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জনসংযোগ বা পিআর ফার্ম নিযুক্ত করেছি, কারণ সাধারণত দেশি- বিদেশি গণমাধ্যমে আমাদের অর্জনগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয় না।
শাহরিয়ার বলেন, সরকার শুধু সেই কাজগুলোই করবে যা ‘আইনগতভাবে সঠিক‘’ এবং দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে পরিচালিত কিছু গণমাধ্যম বিএনপি-জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে এবং তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে।
তিনি বলেন, ‘ওই আটটি চুক্তির মধ্যে অন্তত তিনটিতে বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের ঠিকানা মূল ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই টিকা নিতে পারবে: শিক্ষামন্ত্রী
শাহরিয়ার বলেন, ওয়াশিংটনে ব্লু স্ট্র্যাটেজিস, এলএলসি এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল - সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০২০ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বিএনপি কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাঠিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে আটটি চুক্তি সংক্রান্ত এসব নথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত একই মুদ্রার দুই পিঠ। চারটি নথিতে জামায়াতের নাম পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে এই চুক্তির বাইরে আরও অনেক কিছু আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লবিস্টকে কাজে লাগানো দোষের কিছু নয়, তবে ঘটনা আড়াল করে বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করা ঠিক নয়।
আরও পড়ুন: প্রজন্মের উন্নয়নে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এটাকে লবিস্টদের বিরুদ্ধে সরকারের কূটনীতির পরাজয় হিসেবে দেখছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এটাকে আমাদের কূটনীতির বিরুদ্ধে পরাজয় হিসেবে দেখছি না।
র্যাবের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং শিগগিরই উচ্চ পর্যায়ের মতবিনিময় হবে।
তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমরা আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আশা করেন যে তারা কোনো লবিস্টকে নিয়োগ না দিয়েই সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেমে একটি ইতিবাচক ফলাফল আনবে।
শাহরিয়ার বলেন, যেখানে নগদ অর্থ জড়িত সেই পথ ব্যবহার করে তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বিশ্বাসী না।
২ বছর আগে