পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার গত তিন মেয়াদে কখনোই কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। বরং বাংলাদেশ ও এর জনগণের সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে এবং দেশের বিরুদ্ধে চালানো বিভিন্ন অপপ্রচারের বদলে দেশের বিভিন্ন সফলতাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য ২০১৫ সালে একটি পিআর ফার্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনকালে এসব কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে আওয়ামী লীগ সরকার তার গত তিন মেয়াদে কোনো লবিস্টকে নিয়োগ করেনি। আর এই মুহূর্তে কোনও লবিস্ট নিয়োগ করার পরিকল্পনাও আমাদের নেই। আমরা যা করেছি তা সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে: তথ্যমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী পার্লামেন্টে তার গতকালের বক্তব্যের পুনরুল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) লবিস্টের পেছনে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে।
এসময় শাহরিয়ার দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন, যেগুলো গত চার-পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে যখন কোনো নেতিবাচক ধারণা থাকে এবং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ও এর জনগণ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু লেখে, তখন বাংলাদেশকেও সত্য দিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জনসংযোগ বা পিআর ফার্ম নিযুক্ত করেছি, কারণ সাধারণত দেশি- বিদেশি গণমাধ্যমে আমাদের অর্জনগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয় না।
শাহরিয়ার বলেন, সরকার শুধু সেই কাজগুলোই করবে যা ‘আইনগতভাবে সঠিক‘’ এবং দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে পরিচালিত কিছু গণমাধ্যম বিএনপি-জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে এবং তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে।
তিনি বলেন, ‘ওই আটটি চুক্তির মধ্যে অন্তত তিনটিতে বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের ঠিকানা মূল ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই টিকা নিতে পারবে: শিক্ষামন্ত্রী
শাহরিয়ার বলেন, ওয়াশিংটনে ব্লু স্ট্র্যাটেজিস, এলএলসি এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল - সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০২০ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, বিএনপি কীভাবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাঠিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে আটটি চুক্তি সংক্রান্ত এসব নথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত একই মুদ্রার দুই পিঠ। চারটি নথিতে জামায়াতের নাম পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে এই চুক্তির বাইরে আরও অনেক কিছু আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লবিস্টকে কাজে লাগানো দোষের কিছু নয়, তবে ঘটনা আড়াল করে বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করা ঠিক নয়।
আরও পড়ুন: প্রজন্মের উন্নয়নে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এটাকে লবিস্টদের বিরুদ্ধে সরকারের কূটনীতির পরাজয় হিসেবে দেখছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এটাকে আমাদের কূটনীতির বিরুদ্ধে পরাজয় হিসেবে দেখছি না।
র্যাবের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে এবং শিগগিরই উচ্চ পর্যায়ের মতবিনিময় হবে।
তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমরা আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আশা করেন যে তারা কোনো লবিস্টকে নিয়োগ না দিয়েই সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেমে একটি ইতিবাচক ফলাফল আনবে।
শাহরিয়ার বলেন, যেখানে নগদ অর্থ জড়িত সেই পথ ব্যবহার করে তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বিশ্বাসী না।