ব্যাধি
বাইপোলার ডিসঅর্ডার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
একটি সুস্থ মানসিক অবস্থা একটি উন্নত জীবনযাত্রার রূপকল্প। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমশ বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে নিত্য দিনের জীবনধারাকে। শুধু তাই নয়, গুরুতর রোগের মতোই তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে মানবদেহের ওপর। বাইপোলার ডিসঅর্ডার মনস্তত্ত্বের ঠিক তেমনি একটি অবস্থা, যেখানে মেজাজের স্বাভাবিক কার্যকলাপে দেখা দেয় অসংলগ্নতা। চলুন, মানসিক এই সমস্যাটির কারণ ও লক্ষণ জানার পাশাপাশি এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি
মেজাজের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে যে মানসিক সমস্যার প্রকাশ ঘটে সেটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি নামে পরিচিত। ‘বাইপোলার’ শব্দটির মাধ্যমে মেজাজের দুই বিপরীত মেরুকে বোঝানো হয়, যার একটি উন্মাদনা, এবং অন্যটি বিষণ্নতা। উন্মাদনার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে উচ্ছ্বাসের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি বিরাজ করে। অন্যদিকে, বিষণ্নতা মুহূর্তগুলোতে ব্যক্তি গভীর দুঃখ ও হতাশার ভেতর দিয়ে সময় কাটান।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের কারণ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার মূলত কতগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে অসামঞ্জস্য আচরণের দিকে ধাবিত করে। প্রধানত তিনটি কারণে এমন অবস্থার অবতারণা ঘটে। এগুলো হলো-
জিনগত কারণ
বাবা-মা এবং ভাইবোনদের মধ্যে একজনের এ সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওয়েবএমডি অনুসারে, বাবা বা মা যে কোনো একজনের এই ব্যাধি থাকলে তাদের সন্তানদের এই ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। আর দুজনেরই থাকলে এই সম্ভাবনা ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়। যমজ ভাইবোনের মধ্যে একজনের এই ব্যাধি থাকলে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
জীবনের কোনো স্পর্শকাতর ঘটনা
যাদের পরিবারের পূর্বে কারো দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলো ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। তাছাড়া জিনগত বৈশিষ্ট্য না থাকলেও ট্রমাজনিত অভিজ্ঞতাগুলো এই ব্যাধির দিকে ধাবিত করতে পারে। যেমন শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা, প্রিয়জনের মৃত্যু, জীবনের বড় পরিবর্তন, চাকরি, সম্পর্ক বা আর্থিক চাপ উন্মাদনা বা বিষণ্নতার দশাগুলোর সূচনা ঘটাতে পারে।
মাদকাসক্তি
উত্তেজক রাসায়নিক, ওষুধ বা অ্যালকোহল নেওয়া মেজাজের ভারসাম্যতাকে বিনষ্ট করে। শুধু মাদকের নেশাই নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ ঘন ঘন সেবনের ফলেও মেজাজের অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও অনেক বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্য নিজে থেকে ঔষধ সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে তাদের ব্যাধির উপসর্গগুলো উল্টো বেড়ে গিয়ে মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়
জিনগত কারণগুলো থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা এবং প্রিয়জনের ক্ষতি থেকে সৃষ্ট ট্রমা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। মাদক সেবন থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতার ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিপদের মধ্যে রয়েছে তরুণরা।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের লক্ষণ
মেজাজ ও কার্যকলাপের মাত্রার নাটকীয় পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হতে শুরু করে উন্মাদনা ও বিষণ্নতা এই দুই ভিন্ন পর্যায়ে।
উন্মাদনাকেন্দ্রিক উপসর্গ
এই উপসর্গগুলোর মাধ্যমে মূলত ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যকলাপের মাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়।
· উচ্ছ্বাস বা বিরক্তি: কোনো কোনো সময় ব্যক্তি অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস অনুভব করেন বা নিজেকে সর্বাধিক সুখী মনে করেন। এই অনুভূতির আরেক নাম ইউফোরিয়া। কিছু সময় (অনির্দিষ্ট) পরেই তিনি আকস্মিকভাবে প্রচণ্ড ক্রোধ অনুভব করেন। বিশেষ করে যখন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন তখন তিনি রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় অবস্থান নেন।
· চিন্তা ও কথাবার্তায় দ্রুততা: এ ধরনের ব্যক্তিরা একাধিক বিষয়ের চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে। অথচ নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। তার বহিঃপ্রকাশ তাদের কথাবার্তায়ও দেখা যায়। প্রতিটি বাক্য খুব দ্রুতগতিতে বলার কারণে প্রায় পুরোটা সময় শ্রোতাদের কাছে তা দুর্বোধ্য মনে হয়।
· আবেগপ্রবণতা এবং যে কোনো কিছু ভুলভাবে বিচার করা: এ সমস্যার ভূক্তভোগীরা আর্থিক সিদ্ধান্ত, সম্পদের অপব্যয় বা বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া জীবনের নানা লেনদেন বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় সবকিছুকে ভুল ব্যাখা দাঁড় করান।
· অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম: এ সমস্যায় জর্জরিত ব্যক্তিদের কখনো স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘুমের দরকার হয়। আবার কখনো দেখা যায় যে, দীর্ঘক্ষণ যাবত ঘুমের পরেও জেগে থাকতে (বিশেষ করে দিনের বেলা) সমস্যা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
বিষণ্নতার উপসর্গ
মানসিক অবস্থার এই পর্যায়ে মেজাজ এবং আচরণের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
· ক্রমাগত দুঃখ বা হতাশা: এক্ষেত্রে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে হতাশার মাঝে নিমজ্জিত থাকেন এবং সর্বদা দুঃখী অনুভব করেন।
· আগ্রহ বা আনন্দ কমে যাওয়া: এক সময় যে বিষয়গুলো অত্যন্ত উপভোগ্য ছিল, সেগুলোর প্রতি আর ভালো লাগা কাজ করে না।
· ক্লান্তি: প্রতিদিনের সাধারণ এবং সহজ কাজগুলোতে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে স্পৃহা না থাকায় সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে কর্মদক্ষতা লোপ পায়।
· মনোযোগ নিবদ্ধ করতে অসুবিধা: সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মনোযোগে অপারগতা দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তি যথেষ্ট প্রচেষ্টার পরেও যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
মিশ্র উপসর্গ
অধিকাংশের মধ্যে এই বিষণ্নতা এবং উন্মাদনা একই সঙ্গে শুরু হয়। এতে করে এমন এক মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যেখানে ভুক্তভোগী অযাচিত কোনো ভুল করে বসেন বা বড় কোনো ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। মনের এই মিশ্র অবস্থা সবথেকে গুরুতর, কেননা চরম পর্যায়ে এটি ওই ব্যক্তিকে আত্মহত্যার দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
আরো পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জিনগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এড়ানোটা জটিল। তবে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। যে পদক্ষেপগুলো এখানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলো হলো-
· নিয়মিত সঠিক ব্যায়াম, ইয়োগা ও ধ্যান করার অভ্যাস করা
· প্রতিদিনই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো
· যে কোনো মূল্যে মাদক থেকে বিরত থাকা
· মেজাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন ওষুধ এড়িয়ে চলা
· নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখা
· সুষম খাদ্যাভ্যাস চালু রাখা
· সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত হওয়া
· ইতিবাচক সম্পর্ক লালন করা
আরো পড়ুন: অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগ প্রতিকারের উপায়
শারীরিক ব্যাধির মতো এই মানসিক অবস্থার আসলে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসহ কিছু থেরাপিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক অবস্থার উন্নতি করা যায়। এই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে-
ওষুধ
এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে ওষুধগুলো গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো হলো- মুড স্টেবিলাইজার, অ্যান্টিসাইকোটিক্স ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট্স। এখানে লিথিয়ামের মতো মুড স্টেবিলাইজারগুলো মিশ্র উপসর্গগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, অ্যান্টিসাইকোটিকগুলো উন্মাদনাকে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। এখানে খেয়াল রাখা উচিত যে, ওষুধগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ডোজ সেবনে উল্টো উন্মাদনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তাই এগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া অত্যাবশ্যক।
সাইকোথেরাপি
জ্ঞানগত-আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং আচরণগত অসামঞ্জস্যতাগুলোর চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। ইন্টার্পাসনাল ও সোশ্যাল রিদম থেরাপি দৈনন্দিন রুটিন বজায় এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এই কৌশলগুলো ব্যক্তির ঘুম, খাবার ও অন্যান্য কার্যকলাপের সময়সূচি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
জীবনধারার পরিবর্তন
এই ডিসঅর্ডার থেকে আরোগ্য লাভের সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হলো জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা। তবে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিয়মিত ব্যায়াম দীর্ঘ মেয়াদে মেজাজকে স্বাভাবিক ও আবেগকে স্থিতিশীল রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে মানসিক সুস্থতাকে বিকশিত করে।
মানসিক সমর্থন
জীবনধারাকে পরিবর্তিত করতে যে বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তা হলো পরিবার, বন্ধু ও থেরাপিস্টের মানসিক সমর্থন। দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধির মূল চিকিৎসাটিই হচ্ছে এই সমর্থন নিশ্চিত করা। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তির মনস্তত্ত্বে অনেকটা সাপ্লিমেন্টের মতো কাজ করে।
শেষাংশ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার সনাক্ত করার জন্য এর কারণ ও লক্ষণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা প্রয়োজন। মানসিক সমস্যাটির নেপথ্যে রয়েছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক আঘাত ও মাদকাসক্তি। লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলোকে সূচনালগ্নেই খেয়াল করা উচিত। এর ফলে প্রাথমিক অবস্থাতেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
অপরদিকে, এরইমধ্যে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওষুধ ও থেরাপির পাশাপাশি দরকার মানসিক সমর্থন। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা বজায় রাখার সার্বিক প্রচেষ্টাকে সফল করে তুলতে পারে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলের কামড় কতটা ভয়ংকর? সাবধানতা ও করণীয়
১ মাস আগে
অসংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যু হ্রাস করে এসডিজি অর্জনে কাজ করছে ডিএনসিসি: মেয়র তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অসংক্রামক ব্যাধিজনিত অপরিপক্ক মৃত্যু হ্রাস করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে প্রথম জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাপস এ কথা বলেন।মেয়র বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা নেই, পর্যাপ্ত পার্ক নেই, উদ্যান নেই, খেলার জায়গা নেই। এগুলো আমাদেরকে এখন করতে হবে। সেজন্য আমরা ৩০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। যাতে ২০৫০ নাগাদ এই অবকাঠামোগুলো আমরা বৃদ্ধি করতে পারি। কারণ, এ সকল অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে হলে আমাদেরকে এই সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। ‘
আরও পড়ুন: সব সংস্থাকে নিয়ে উন্নত ঢাকা গড়বো: মেয়র তাপস
তিনি বলেন, ‘এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি অসংক্রামক ব্যাধি নির্মূল করা যায়, কমিয়ে আনা যায়। এর ফলে অকাল মৃত্যু আমরা কমিয়ে আনতে পারব এবং এর মাধ্যমে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।’শেখ তাপস বলেন, ‘বায়ু দূষণ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্য জটিলতার অন্যতম কারণ। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি। কিন্তু দুভার্গ্যবশত ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে আমরা কাজ করছি। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও পার্ক প্রতিষ্ঠা, প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি, হাঁটার জায়গা সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে আমরা সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি।’সংক্রামক ব্যাধির চাইতে অসংক্রামক ব্যাধিতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করেন মেয়র বলেন, ‘আমাদের দেশে দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী অসংক্রামক ব্যাধির কারণে মারা যাচ্ছে। যেটাকে আমাদের জীবনের যে সীমা ৭২ বছর, ৭০ বছরের আগেই এ সকল অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর খননকাজ পুনরায় শুরু হবে: মেয়র তাপস
যথাযথ জনবল ও ডাক্তার পদায়নের অভাবে সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া যাচ্ছে না মন্তব্য করে শেখ তাপস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদিও সরকার ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছে, ব্যাপক বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তারপরও সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সেখানে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দু'টো হাসপাতাল আছে - মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মহানগর শিশু হাসপাতাল। সেখানকার অবকাঠামোগত বিষয়াবলী আমাদের এবং সেগুলোর উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। সেখানে সরকার থেকেই প্রয়োজনীয় জনবল, ডাক্তারের (মেডিকেল কনসালটেন্ট) নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের হাসপাতালগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও ডাক্তার পদায়ন করা হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, পর্যাপ্ত লোকবল ও ডাক্তারের অভাবে আমরা আমাদের মহানগর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি শাখাকে এখনো কার্যক্ষম (ফাংশনাল) করতে পারিনি।’অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওনুর রহমান, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন বক্তব্য দেন।ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল সেল (এনসিডিসি), বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম (বিডিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামসহ ৩০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন আগামী ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে: মেয়র তাপস
২ বছর আগে