বেনাপোল কাস্টমস
কর ফাঁকি বন্ধে বেনাপোল কাস্টমসের নতুন উদ্যোগ
রাজস্ব সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে একটি তদন্ত, গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা (আইআরএম) বিভাগ চালু করেছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছেন। আইআরএম কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিবেচিত হবেন।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ ও চোরাচালান দমন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ফাঁকির প্রকৃতি, কৌশল ও তথ্য উদঘাটন করবে আইআরএম।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আনা, সময় কমানো, বাণিজ্য সহজীকরণসহ করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সম্প্রতি কাস্টম হাউসে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ছাড়পত্র ত্বরান্বিত করা, রাজস্ব সুরক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শুল্ক ও কর ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এই আইআরএম বেনাপোল নিরীক্ষা, তদন্ত ও গবেষণার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য পর্যালোচনা, রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনারকে অবহিত করবে।
বেনাপোল ইনভেস্টিগেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইআরএম) যেসব কাজ করবে-
(ক) গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বন্দরের অভ্যন্তরে ও বাহিরে ঘোষিত/অঘোষিত পণের চালান শনাক্তকরণ ও উদঘাটন, রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ এবং চোরাচালান রোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
(খ) ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম, এইচএস কোড এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (আইজিএম) পর্যালোচনা করে শারীরিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য কার্গো চলাচল নিয়মিত চিহ্নিত করা।
(গ) সকল আমদানিকৃত স্পর্শকাতর ও কাস্টমস-ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য, যেমন- বিভিন্ন ধরনের পণ্য, সকল প্রকার কাপড়, সকল প্রকার নতুন ও পুরাতন যন্ত্রাংশ (দুই চাকার যানবাহন, তিন চাকার যানবাহন, চার চাকার যানবাহন প্রভৃতি), বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কসমেটিকস ও প্রসাধনী সামগ্রী, বাণিজ্যিক করমুক্ত আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ ও যন্ত্র, শিল্প যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অস্ত্রোপচারের সামগ্রীর ভৌত পরিদর্শন; নকল গহনা, সব ধরনের ব্যাটারি, সব ধরনের টায়ার ও টিউব।
(ঘ) বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহ, রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র প্রক্রিয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং রাজস্ব ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
(ঙ) আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট, কার্গো শাখা, কাস্টমস গেট নিয়ন্ত্রণ (সিজিসি গেট-৯) ও কাস্টমস বিজিবি যৌথ ডাকসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া তদারকি করা।
(চ) কার্গো বন্দরের সংশ্লিষ্ট শেড থেকে দেশিয় ট্রাক/ভ্যানে পণ্য বোঝাই কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে আইআরএম কর্মকর্তাদের নিবিড় তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করা।
(ছ) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থা হতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইজিএম, বিল অব এন্ট্রি লকসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ
(জ) শারীরিক পরীক্ষায় অনিয়ম ধরা পড়লে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নথিসহ কমিশনারের কাছে আটক/অনিয়মের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
(১) যথাযথ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে যেকোনো পণ্যের চালানের অধিকতর যাচাই, পুনঃবাস্তব পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে আইআরএম দলকে সংযুক্ত করা।
(ঞ) আমদানি পরিদর্শনের দায়িত্বে নিয়োজিত পরিদর্শন কর্মকর্তা এবং আইআরএমের দায়িত্বে নিয়োজিত পরিদর্শন কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে যৌথভাবে ভৌত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা।
(ট) রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ হাজারের অধিক পিস (শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, আন্ডার গার্মেন্টস ইত্যাদি) ঘোষিত পণ্য চালান বা তৈরি পোশাকের ভৌত পরিদর্শন।
(ঠ) কাস্টমস কমিশনারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ১৬ বাংলাদেশি আটক
১১৭ দিন আগে
বেনাপোল কাস্টমসে ৬ মাসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকা।
২০১৯-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে একশ এক কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আর রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার তিন মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে আমদানি কিছুটা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
এর জন্য সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় এবং ভারতে পার্কিং ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তের কারণে ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি বছর আমদানি পণ্য থেকে ছয় হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি হলেও দুই হাজার ৫৭ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল তিন হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ তে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঘাটতি।
অপরদিকে চলতি বছরে এত বড় অংকের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সব মহলে সংশয় রয়েছে। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনও এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: ইঁদুরের গর্তে দু-মুঠো খেয়ে বাঁচার স্বপ্ন!
সংশ্লিষ্টরা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ী চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বার বার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, চলতি অর্থবছরে এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্য দিকে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেকারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে চলে গেছে।
তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এই বন্দর থেকে লক্ষ্য মাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষ্যে সম্ভব।
আমদানিকারক মামুন বাবু বলেন, ভারতের কালিতলায় পার্কিংয়ের নামে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে মোট অংকের চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজির পরও এসব ট্রাক দেশে প্রবেশে করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগছে। প্রতিদিন ট্রাক প্রতি দুই হাজার রুপি দিতে হয়। তাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
আরও পড়ুন: বাঁশের সাঁকোই ৩০ হাজার মানুষের ভরসা
তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। আমদানিকারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহাড়া দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন অনেকেই। গত ৯ বছর ধরে আমদানি পণ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সেখানেই আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান তাই ব্যবসায়ী দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া গত আড়াই মাস বেনাপোল বন্দর দিয়ে সোয়াবিন এক্সট্রাক্ট রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমে গেছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে এবার মিলল সাড়ে ছয়শ’ বছর আগের তৈজসপত্র!
তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে কয়েক বছর ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তারপরও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছি। প্রবৃদ্ধির হারও বেশি।
১১৯০ দিন আগে