রাজস্ব ঘাটতি
বেনাপোল বন্দরে চারমাসে ভারতের সঙ্গে রাজস্ব ঘাটতি ৩১৩ কোটি
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে পচনশীল ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। উচ্চ শুল্ককরের পণ্য এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে।
মোটরপার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানিকারকেরা বেনাপোল দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ, পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক
আমদানি কমে যাওয়ায় এসব পণ্য থেকে প্রায় ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা যায়।
চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে ২৪০ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, মূল কারণ হচ্ছে ব্যাংক থেকে এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না। ডলার সংকটের কারণেই আমদানি বাণিজ্যে এ ধরনের ধস নমেছে। ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আমদানিকারক আমিনুল ইসলাম আনু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ১১০টাকা ৪২ পয়সা। এলসির সব টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করলেও ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। এলসি করতে গেলে পিআই অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের উচ্চ মহলে ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে এলসি করতে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ছিল ১১২ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। বাণিজ্যিক পণ্যের এলসি না হওয়ায় আমদানি বাণিজ্য কম গেছে এবং রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আশা করছি বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্যে আবারও গতি ফিরবে।’
আরও পড়ুন: বেনাপোল বাঁশ-কাঠের গুঁড়ি দিয়ে রাজস্ব ভবন রক্ষার চেষ্টা
সি অ্যান্ড এফের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা জানান, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। ফলে পচে যায় অধিকাংশ কার্টুনের ফল। পচা মালের রাজস্ব আদায় করায় অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশসেন সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চলছে। ডলার সংকট দেখিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এলসি দিতে চাচ্ছে না। আর এলসি দিলেও ডলারের রেট অনেক বেশি। ডলার বাইরে থেকে কেনার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এলসি না হওয়ার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি অনেক কমে গেছে।’
বেনাপোলের সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে ধস নামার কারণ আমদানি বাণিজ্য কমে যাওয়া। এলসি করতে ব্যাংক ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার কারণে এলসি কমে গেছে। এলসি করতে ব্যাংকে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে নিরুৎসাহী হচ্ছেন।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘জেনেছি ডলার সংকটে এলসি না হওয়ার আমদানি কম হচ্ছে। আগের তুলনায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটরপার্টস থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আপেলসহ অন্যান্য ফলে আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সর্বমোট ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি আছে।’
আরও পড়ুন: বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ‘আতা ফলের’ ঘোষণায় এলো ‘পার্সিমন’!
১ বছর আগে
রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জরুরি: ডিসিসিআই সভাপতি
দেশীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি, রাজস্ব ঘাটতি মেটানো ও অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ স্থিতিশলতা আনায়নে বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করা হচ্ছে তা মোকাবিলায় বাজেটে সরকার ব্যবসা ও অর্থনীতির সমন্বয় করা হয়েছে বলে মনে করেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।
ডিসিসিআই আয়োজিত এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করেছে, তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সেটাকে পাঁচ লাখ টাকা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ডিসিসিআই।
এছাড়া, করযোগ্য নয় এমন টিনধারীদের ওপর ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজতে তুরস্ক যাচ্ছে ডিসিসিআই’র প্রতিনিধি দল
কর আদায়ের জন্য এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে এজেন্টদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখলে করজাল বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
ভ্যাট টার্নওভারের সীমা বৃদ্ধিসহ ভ্যাট রিটার্ন ও অডিট প্রক্রিয়া অটোমেশন করা প্রয়োজন। এছাড়া, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যকার পার্টনারশীপ বাড়নোর প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার।
করপোরেট কোম্পানির উইথহোল্ডিং কর রিটার্নের সংখ্যা ২৯টির পরিবর্তে ১২টিতে নামানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান তিনি। তবে, ডিসিসিআই মনে করে যে কর্পোরেট করের হার না কমানোর ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়বে।
করপোরেট করের হার এবং ক্যাশ লেনদেনের সীমা ৩৬ লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক খরচের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তাই বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য আহ্বান জানান সভাপতি। এছাড়াও নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোনের উৎপাদনের ওপর ভ্যাট আরোপের কারণে এর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমাদের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই এটা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান মো. সামীর সাত্তার। এছাড়াও সফটওয়্যার, ইলেটকট্রনিক্স, সোলার এনার্জি, লিফট ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি খাতের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ১০ হতে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে এ খাতসমূহে স্থানীয় শিল্পের সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: চিনি আমদানিতে শুল্কছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হবে: বাণিজ্য সচিব
জ্বালানি খাতে মূল্য সহনীয় রাখতে বাজেটে ১৩ ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু ও ভ্যাট প্রত্যাহরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে ডিসিসিআই এবং ডিজেল আমদানিতে পাঁচ শতাংশ ডিউটি কমানোর পাশাপাশি উৎসে কর সমন্বয় করার বিধানের কারণে তেলের মূল্য কমবে, যেটি মূল্যস্ফীতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সারের দাম কম রাখতে গ্যাসের মূল্য কমানোর পাশাপাশি এ খাতে ব্যবহৃত ডিজেলে দাম কমানো প্রয়োজন এবং কৃষিখাতের আধুনিকায়নে যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর অব্যাহত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
বাজেটে ব্যাংকিং খাত হতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। সরকারের এ ব্যাংক নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে ব্যাগেজ রুল সংশোধন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
আরও পড়ুন: ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খান আর নেই
১ বছর আগে
নির্বাচনী বছরের বাজেটের আগে মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি ও ডলার সংকট অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রস্তুতিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের সঙ্গে নির্বাচনী বছরে প্রত্যাশার ভারসাম্য রাখতে হবে এবং মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে।
এক্ষেত্রে জনসন্তুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অর্থনীতি রক্ষা করা একটি প্রধান বিষয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনী বছরের বাজেটে প্রায়ই অর্থনীতির উন্নতির চেয়ে, জনগণের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন বিশিষ্ট ফেলো এবং সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ওজননীতি বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এবার সন্তোষজনক বাজেট পেশ করার সুযোগ খুবই সীমিত।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সব সরকারই জনগণকে সন্তুষ্ট করে এমন বাজেট দিতে চায়। কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতি, রাজস্ব ঘাটতি ও বাণিজ্য ঘাটতির কারণে সরকারের জন্য সেই সুযোগ খুবই সীমিত। যদি এ বিষয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াও হয়, তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি সরকার এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে। এই বাজেটে নমনীয়তাও রক্ষা করতে হবে। কারণ, সরকার যদি বড় কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে তারা কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ৩১ মে সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু
১ বছর আগে
বেনাপোল কাস্টমসে ৬ মাসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকা।
২০১৯-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে একশ এক কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আর রপ্তানি হয়েছে দুই লাখ ৭৬ হাজার তিন মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে আমদানি কিছুটা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
এর জন্য সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় এবং ভারতে পার্কিং ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্তের কারণে ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি বছর আমদানি পণ্য থেকে ছয় হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি হলেও দুই হাজার ৫৭ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল তিন হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ তে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঘাটতি।
অপরদিকে চলতি বছরে এত বড় অংকের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সব মহলে সংশয় রয়েছে। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনও এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: ইঁদুরের গর্তে দু-মুঠো খেয়ে বাঁচার স্বপ্ন!
সংশ্লিষ্টরা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ী চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বার বার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, চলতি অর্থবছরে এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্য দিকে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানিসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যেকারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে চলে গেছে।
তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এই বন্দর থেকে লক্ষ্য মাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষ্যে সম্ভব।
আমদানিকারক মামুন বাবু বলেন, ভারতের কালিতলায় পার্কিংয়ের নামে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে মোট অংকের চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজির পরও এসব ট্রাক দেশে প্রবেশে করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগছে। প্রতিদিন ট্রাক প্রতি দুই হাজার রুপি দিতে হয়। তাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
আরও পড়ুন: বাঁশের সাঁকোই ৩০ হাজার মানুষের ভরসা
তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। আমদানিকারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহাড়া দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন অনেকেই। গত ৯ বছর ধরে আমদানি পণ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সেখানেই আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান তাই ব্যবসায়ী দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া গত আড়াই মাস বেনাপোল বন্দর দিয়ে সোয়াবিন এক্সট্রাক্ট রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমে গেছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে এবার মিলল সাড়ে ছয়শ’ বছর আগের তৈজসপত্র!
তিনি বলেন, বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে কয়েক বছর ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তারপরও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছি। প্রবৃদ্ধির হারও বেশি।
২ বছর আগে