দুবলারচর
দুবলারচরে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৩ দিনের রাস উৎসব
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নোনা জলে পূণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে দুবলারচরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তিনদিনের রাস উৎসব শেষ হয়েছে।
বাগেরহাটের সুন্দরবনের দুবলারচরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব উপলক্ষ্যে সোমবার রাতভর পূজা অর্চনা আর প্রার্থনা করা হয়। মঙ্গলবার সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণার্থীরা সাগরে নোনা জলে পূণ্যস্নানে অংশ নেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ পূর্ণার্থীরা শান্তি ও মঙ্গলকামনায় পূণ্যস্নান করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস রাস উৎসবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা অর্চনা আর প্রার্থনা করার পর সাগরে পূণ্যস্নানে অংশ নিলে সব পাপ মোচন হবে। মিলবে সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি।
এবছরও দুবলারচরে রাস উৎসবে ধর্মীয় রীতি মেনে পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলা বা কোন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল না। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই অংশ নিয়েছে পূজায় আর পূণ্যস্নানে।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে শেষ হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দানোৎসব
রবিবার বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে নৌযানে করে সনাতনধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসবে অংশ নিতে যান সুন্দরবনের দুবলার চরে। সোমবার পূজা অর্চনা আর মঙ্গলবার পূণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় তিনদিনের রাস উৎসব।
জানা গেছে, লোকালয় থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় আলোর কোলে প্রায় ২০০ বছর ধরে শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজা অর্চনার পাশাপাশি দরবেশ গাজী ও দরবেশ কালুর স্মরণে মানত দেয়া হয়।
মেলার প্রবর্তক হিসেবে কারও কারও মতে মতুয়া গুরু সন্ন্যাসী হরিজন ও রাজা প্রতাপাদিত্যর নাম শোনা যায়।
২০১৯ বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুবলারচরে রাস উৎসব হয়নি। আর করোনার কারণে গত দুই বছর ২০২০-২০২১ সালে শুধু ধর্মীয় রীতি রক্ষার্থে পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। এবছরও শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতি রক্ষায় পূজা অর্চনা ও পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, দুবলারচরে এবছরও রাস মেলা হয়নি। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলবম্বীরা পূজা অর্চনা আর পূণ্যস্নান অংশ নিয়েছে। নির্ধারিত পাঁচটি পথ (রুট) দিয়েই শুধুমাত্র পূণ্যার্থীরা দুবলারচরে প্রবেশ করেছে। আবার একই পথে তাদেরকে ফিরতে হয়। অন্য ধর্মের মানুষদের রাস উৎসবে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।
আরও পড়ুন: কাল থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন সাঁই’র তিরোধান উৎসব
কক্সবাজারে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপিত
২ বছর আগে
সুন্দরবনে ২১ বছরে ৪০ বাঘের মৃত্যু
সুন্দরবনে গত ২১ বছরে ৪০টি বাঘ মারা গেছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে পূর্ব বন বিভাগের বাগেরহাটের দুবলারচরের কাছে রুপার খাল থেকে একটি মৃত বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে। বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে বলে ধারণা করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বন বিভাগের সদস্যরা শুক্রবার সকালে টহল দেয়ার সময় বনের রূপার খালে মৃত অবস্থায় একটি বাঘ ভাসতে দেখে। পরে তারা গিয়ে মৃত বাঘটি উদ্ধার করে। বাঘটির আনুমানিক বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর এবং বাঘটি পুরুষ প্রজাতির। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
ডিএফও আরও জানান, বন বিভাগের সদস্যরা বাঘটিকে তীরে উঠানোর পর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে বাঘের শরীরের কোথাও কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। ধরাণা করা হচ্ছে, বাঘটি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে।
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে ৪০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২৪টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মৃত বাঘ উদ্ধার
কখনও শিকারির হাতে কিংবা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে বের হলে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যায় বাঘ। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণেও বাঘ মারা গেছে।
এ সময়ে ২০টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। তবে এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত তা বলতে পারেনি বন বিভাগ। বাঘ রক্ষায় নানামুখী উদ্যোগ নেয়ায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে- এমনটাই প্রত্যাশা বন বিভাগের।
বাঘ রক্ষায় উদ্যোগ
ডিএফও মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বাঘ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সুন্দরবনে বাঘসহ বন্যপ্রাণির আবাসস্থল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০০ হেক্টর বনের মধ্যে এখন তিন লাখ ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর অভয়ারণ্য এলাকা। আগে ছিল মাত্র এক লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ হেক্টর।
২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভায়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে। সুন্দরবনে বাঘের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল ফাঁড়ির কার্যক্রমের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল করা হচ্ছে সুন্দরনে। এছাড়া বনের সীমান্ত এলাকায় বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ডিএফও জানান।
জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রতিটি বাঘ তাদের আবাসস্থলের জন্য ১৪ থেকে ১৬ বর্গ কিলোমিটার (হোমরেঞ্জ) চিহ্নিত করে সেখানে বাস করে। আর গোটা সুন্দরবন জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ।
আরও পড়ুন: মতলবে খাঁচায় বন্দি মেছো বাঘ, জনমনে আতঙ্ক
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে লবণাক্ততা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করছে বাঘ।
নদী-খাল ভরাট হওয়ার কারণে বাঘ মাঝে মধ্যে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বন সংলগ্ন গ্রামে ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীর হাতে মাঝে মধ্যে বাঘের প্রাণহানি ঘটে। আর সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের তৎপরতা একেবারে বন্ধ করাও সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন সূত্র মতে, বাঘের আট উপ-প্রজাতির তিনটি ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে। সারা বিশ্বের বন উজাড়, শিকারি ও পাচারকারীদের কারণে বাঘ ‘বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
২ বছর আগে