বাপ্পি লাহিড়ী
বাপ্পি লাহিড়ী: বলিউড সাম্রাজ্যে ডিস্কো সঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ
ভারতীয় উপমহাদেশের ডিস্কো সঙ্গীতের কথা বলতে গেলে যে নামটি বারংবার অনুরণিত হয়, তা হচ্ছে বাপ্পি লাহিড়ী। ৮০ ও ৯০ দশক জুড়ে বলিউডের সঙ্গীতাঙ্গন দাঁপিয়ে বেড়ানো এই কন্ঠের গায়কীর সমাপ্তি ঘটলো ৬৯ বছর বয়সে। গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সকলের প্রিয় বাপ্পি দা ভক্তদের হাজারো নতুন গানের অপেক্ষায় রেখে নিরবেই পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। বলিউড চলচ্চিত্রের উপর তাঁর কন্ঠের এতটাই প্রভাব যে, দর্শক মাতানো গান মানেই ভাবা হয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আন্দোলিত হওয়া বাপ্পি লাহিড়ী কন্ঠের দীর্ঘ টান। এই সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীত জীবনচরিত নিয়েই আজকের ফিচার।
সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারের সৃষ্টি বাপ্পি লাহিড়ী
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর ভারতের জলপাইগুড়ির এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবার; গানের দম্পতি অপরেশ লাহিড়ী এবং বাঁসুরি লাহিড়ীর কোল আলোকিত করে এলেন অলোকেশ লাহিড়ী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে লাহিড়ী দম্পতির দুজনেরই বেশ ভালো দখল ছিল। গান ও তবলার সূত্রগুলো রপ্ত করতে একমাত্র সন্তান অলোকেশের তেমন বেগ পেতে হয়নি। ভারতের স্বনামধন্য গায়ক কিশোর কুমার ছিলেন তাঁর মামা। সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশের পর এই অলোকেশ পরিণত হন বাপ্পি লাহিড়ীতে।
একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তাঁর নিজস্ব বেশভূষা তাকে অন্য শিল্পীদের থেকে আলাদা করে রাখতো। গায়কীর পাশাপাশি তাঁর বিশেষত্ব ছিল সোনার অলঙ্করণ, মখমলের কার্ডিগান এবং সানগ্লাস।
আরও পড়ুন: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
১৯৭৭ সালের ২৪ জানুয়ারি বাপ্পি লাহিড়ী চিত্রানি লাহিড়ীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাপ্পি লাহিড়ীর মেয়ে রেমা লাহিড়ীও একজন গায়িকা। ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী বাবা পথ অনুসরণ করে সঙ্গীত পরিচালনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বাপ্পা লাহিড়ীর ঘরে বাপ্পির এক নাতিও আছে; নাম কৃষ লাহিড়ী।
ডিস্কো কিং বাপ্পি লাহিড়ী ও সঙ্গীতের সোনালী অধ্যায়
সঙ্গীত জীবনের প্রথম ১৫ বছর সুরকার হিসেবেই কাজ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। ১৯ বছর বয়সে মুম্বাই এসে দাদু (১৯৭৪) নামের পশ্চিমবঙ্গের একটি বাংলা সিনেমায় প্রথম সুযোগ পান। সেখানে তাঁর পরিচালনায় গান গেয়েছিলেন ভারতের বিখ্যাত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। ১৯৭৩-এর নানহা শিকারি ছিল প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্র যার জন্য তিনি সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। এখানে তাঁর রচিত গান ছিল তু হি মেরা চান্দা। তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ১৯৭৫ এর হিন্দি ছবি জাখমি। এই ছবির নাথিং ইজ ইম্পসিবল শিরোনামের গানটির সঙ্গীত পরিচালনায় তাঁর সাথে ছিলেন কিশোর কুমার এবং মহম্মদ রফি। এছাড়া তাঁর একক পরিচালনায় একই ছবির গান ‘জালতা হ্যায় জিয়া মেরা’ গানটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার ও আশা ভোশলে। ‘আভি আভি থি দুশমানি’ এবং ‘আও তুমে চান্দ’ গান দুটিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সবগুলো গান-ই সে সময় হিট করেছিল।
আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই
তাঁর সুরে কিশোর ও লতার ডুয়েট ‘ফির জানাম লেঙ্গে হাম’ গানটি ভারতবর্ষ জুড়ে বেশ সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৭৬ এর চালতে চালতে চলচ্চিত্রের সমস্ত গানই ব্যাপকভাবে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় অঙ্গনে সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে স্বীকৃতি পান বাপ্পি লাহিড়ী।
একই বছর নিজের গায়কী নিয়ে প্রথমবারের মত হাজির হন সুলক্ষণা পণ্ডিতের সাথে দ্বৈত গান ‘জানা কাহান হ্যায়’-এর মাধ্যমে।
১৯৭৯-এর আপ কি খাতির, দিল সে মিলে দিল, পতিতা, লাহু কে দো রাং, হাতিয়া এবং সুরাক্ষা’র মতো চলচ্চিত্রের গানগুলো তাঁর সুরেলা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য বেশ খ্যাতি পেয়েছিল।
পড়ুন: চমকে দেওয়ার দিনটিই ছিল বাপ্পিজির সঙ্গে শেষ দেখা: রুনা লায়লা
২ বছর আগে