মেখ হাসিনা
দেশে নীরব ‘দুর্ভিক্ষ’ চলছে: বিএনপি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশে এখন নীরব 'দুর্ভিক্ষ' চলছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি আরও অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাবে সরকার বাজারের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
‘সারাদেশে প্রকৃতপক্ষে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ বলতে পারে না। ওই টিবিসির ন্যায্যমূল্যে ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় মুখোশ পরে। এরপরে সেখানে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, সেখানে ধাক্কাধাক্কি করে, মারামারি করে কোনো রকমে এক লিটার তেল অথবা একটু ডাল, চালের জন্যে’, বলেন বিএনপি নেতা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
ফখরুল বলেন, যেদিন বাণিজ্যমন্ত্রী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম না কমালে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সেদিনই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এর মানে কী? মানে বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাজার ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা চাঁদাবাজি করছেন, ঘুষও নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা জনগণকে তাদের চর হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য গড়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত একই অবস্থা ছিল এবং দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল এবং লাখ লাখ মানুষ কেবল তাদের অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
আরও বলুন: মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতিই একমাত্র কারণ: বিএনপি
ফখরুল জ্বালানি তেল ও গ্যাসের শুল্ক বাড়ানোর জন্য সরকারের নিন্দা করেন। কারণ তিনি মনে করেন এই পদক্ষেপগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সর্বত্র বেড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যকেও বাতিল করে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমি তাকে (প্রধানমন্ত্রী) জিজ্ঞেস করতে চাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কখন শুরু হয়েছিল? কতদিন ধরে মানুষ তেল, চাল, ডালের দাম কমানোর জন্য চিৎকার করছে?
বিএনপি নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এ বছর বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দুই শতাংশ বেড়েছে।
কলকাতায় ট্রামের ভাড়া চার পয়সা বাড়লে কলকাতা শহর বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামীলীগ) ১৪ বছর ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করছে, কিন্তু আমরা সেভাবে প্রতিহত করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সকল অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করতে, দরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে এবং দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেতে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিকল্প নেই।
বর্তমান সরকার আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিচার বিভাগ, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকরণ করেছে, আমলাতন্ত্র পরিচালনা করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দুর্নীতির প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করেছে,’ বলেন তিনি।
বর্তমান ‘স্বৈরাচারী’ শাসনকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে মানুষ: জিএম কাদের
২ বছর আগে