পশ্চিমা দেশ
আশা করি পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যারা নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে, তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করবে বলে প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গাজায় ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন ব্রিটিশ নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করি পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ফিলিস্তিনিদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে গাজায় নিষ্পাপ শিশু ও নারীসহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।
ড. হাছান বলেন, ‘এমনকি ত্রাণকর্মীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এটা কল্পনার বাইরের ঘটনা। আমরা আশা করছি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতা ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। তারা জাতিসংঘের প্রস্তাবটিও বিবেচনায় নিচ্ছে না।
দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের মাধ্যমে গাজার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাতজন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা শোক করছেন।
নিহতদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ, একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন পোল্যান্ড, একজন মার্কিন-কানাডিয়ান ও একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক রয়েছেন। নিহতদের কেউ কেউ যুদ্ধ, ভূমিকম্প ও দাবানলের পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সব আন্তর্জাতিক ফোরাম ও এর বাইরে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি এবং বেসামরিক জীবন ও অবকাঠামো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার জানিয়ে মাহমুদ আব্বাসকে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি
ন্যায়বিচার, শান্তি ও সম্প্রীতি সমুন্নত রাখা ইসলাম ও সব ধর্মের মূল শিক্ষা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এটিকে সব সংঘাত ও দুর্ভোগের প্রতিষেধক বলে বিবেচনা করেন।
তিনি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের লাগামহীন গণহত্যায় শিশু, নারী ও পুরুষসহ নিরীহ মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য ফিলিস্তিনের সরকার ও ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯ মার্চ আপনার দূত এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আমাকে লেখা আপনার চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করছি। গাজায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি জানি এবং এ নিয়ে আপনার গভীর উদ্বেগকে সমর্থন করছি।’
চিঠিতে বলা হয়, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে অবমাননা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির লঙ্ঘন।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে পরিকল্পনাটি এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কোনো বাস্তব পথ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এর লক্ষ্য গাজায় ফিলিস্তিনিদের বৈধ জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা এবং ভূমির ওপর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ চিরস্থায়ী করা।’
আরও পড়ুন:৭ ও ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসছেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ৪ সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা
এমন প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘গাজার যেকোনো অংশ দখলে ইসরায়েলের যেকোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করছি আমরা।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীদের তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা হবে না, গাজার ভূখণ্ড হ্রাস করা হবে না, ইউএনআরডব্লিউএ'র ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের ক্ষমতার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে না এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হবে না।
তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি সামরিক উপায়ে এই সংঘাতের সমাধান নয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের আদেশের ভিত্তিতে চলমান সংকট সমাধানে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময় এসেছে, যা কেবল ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের পাশাপাশি বসবাসের মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রের সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দখলদারিত্ব ও গণহত্যার শিকার একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই দখলকৃত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা অনুভব করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সুতরাং, আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করছি এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পক্ষে সমর্থন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আপনার বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
আরও পড়ুন: নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত ও চীন যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
৭ মাস আগে
পশ্চিমা দেশের কাছে আরও অস্ত্রের আবেদন ইউক্রেনের
পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরও অস্ত্রের আবেদন করেছে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা নৃশংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য তার যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে আরও অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ন্যাটোর কাছে অনুরোধ জানান।
সামরিক সংস্থাটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ন্যাটো সদরদপ্তরে যান কুলেবা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার এজেন্ডা খুবই সহজ... এটি অস্ত্র, অস্ত্র ও অস্ত্র।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
তিনি বলেন, ‘আমরা যত বেশি অস্ত্র পাব এবং যত তাড়াতাড়ি সেগুলো ইউক্রেনে পৌঁছাবে তত বেশি মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।’
ন্যাটোর কিছু দেশ রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে; তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে ৩০ সদস্যের কেউ যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন পদক্ষেপ এড়াতে চেষ্টা করছে সামরিক জোটটি। এরপরও ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধে লড়ছে। তাই আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্যের প্রকৃত কোনো অর্থ নেই।’
আরও পড়ুন: মারিউপোলে ৫ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে পোর্টেবল অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে ইউক্রেনীয় সেনাদের ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া লাগবে এমন কোনো সরঞ্জাম যেমন বিমান, ট্যাঙ্ক, সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক তারা।
ইউক্রেন আর কী চাইছে জানতে চাইলে কুলেবা বলেন, বিমান, স্থল ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
২ বছর আগে