বক্তা
উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ: বক্তারা
বক্তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকির কারণ এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের এই প্রতিরোধযোগ্য কারণটি মোকাবিলা করা যেতে পারে।
শনিবার (০২ মার্চ) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে 'ইমপ্রুভিং কার্ডিওভাসকুলার হেলথ ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি), প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস (আরটিএসএল) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রেজলভ টু সেভ লাইভসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক পরিচালক ড. টম ফ্রিডেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। সংক্রামক রোগে মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এখন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধেও বিশ্বনেতা হতে পারে দেশটি। চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ২০ গুণ বৃদ্ধি এবং চিকিৎসার মান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ নাটকীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। রক্তচাপের চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রাথমিক যত্ন পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালীকরণে বিনিয়োগ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ এবং বাঁচাতে পারে অনেক জীবন।’
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
তিনি বলেন, বয়স্ক জনসংখ্যা, দ্রুত নগরায়ণ, অলস জীবনযাত্রা বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে আরোপিত অসংক্রামক রোগের বোঝা হ্রাস করতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মধ্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং এই প্রচেষ্টা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
সোডিয়ামকে উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ড. ফ্রাইডেন বলেন, 'সরকারি নীতি সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করতে পারে। বিশ্বব্যাপী, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়। এই পাঁচজনের মধ্যে চারটিই ঘটেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং এনএইচএফবি ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক পরিচর্যায় উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং ফলোআপ জোরদার করার লক্ষ্যে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অলাভজনক সংস্থা আরটিএসএল’র সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
আরও পড়ুন: সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ তালিকায় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করবে
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ‘বর্তমানে ১৭১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কার্যক্রম চলমান এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার ২৬ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ার অর্থ হবে সারা বাংলাদেশে আরও বেশি মানুষের জীবন উন্নত ও বাঁচানো।’
জিএইচএআই তার অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও পরামর্শ দেয়। জিএইচএআইয়ের বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘স্বাস্থ্য কার্যক্রম অবশ্যই ব্যাপক হতে হবে। আমরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি এবং লবণের ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতিকে সমর্থন করতে আগ্রহী।’
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।আরও পড়ুন: বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দিবে কমিউনিটি ক্লিনিক: সাংবাদিক কর্মশালায় বক্তারা
জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে: বক্তারা
জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে, তার ২০গুণ বেশি অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানি ও বাণিজ্যিক কৃষিতে করছে বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক।
২০১৬ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের জন্য ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। তাই জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ ক্যাম্পেইনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: প্রাণঘাতী জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধের দাবি বাংলাদেশি তরুণদের
অ্যাকশনএইডের পরিচালিত সমীক্ষার তথ্য বলছে, বাণিজ্যিক কৃষিতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার, এটিও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। জলবায়ু সংকট সৃষ্টির পেছনে অর্থায়নকারী শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- এইচএসবিসি, সিটিগ্রুপ, জেপি মর্গান চেসসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ব্যাংক।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের শীর্ষ ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি ও বাণিজ্যিক কৃষিতে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে- ইউরোপে এইচএসবিসি, বিএনপি পারিবাস, সোসাইটি জেনারেল, বার্কলেস; আমেরিকায় সিটি ব্যাংক, জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকা; এশিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, চায়না সিআইটিআইসি ব্যাংক, ব্যাংক অব চায়না এবং মিতসুবিশি ইউএফজে ফিন্যান্সিয়াল।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, গ্লোবাল সাউথের বাণিজ্যিক কৃষির অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বায়ের ২০১৬ সাল থেকে ২০ দশমিক ৬ বিলিয়ন অর্থায়ন পেয়েছে।
‘ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ ক্যাম্পেইন উদ্বোধনের সময় আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমাধানের চেয়ে আমরা দ্রুত সমস্যা তৈরি করছি। সমস্যা সমাধান ও নীতি কার্যকর করতে আমাদের একটি সামগ্রিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের কোনও সুস্পষ্ট নেট শূন্য গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা নেই, যেটি স্থাপন করা প্রয়োজন এবং টেকসই সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের সমাধানের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না, আমাদেরই সঠিক পথ খুঁজে বের করতে হবে।
আইসিসিসিএডির পরিচালক ড. সালেমুল হক বলেন, সরকারকে আমাদের বিশ্বের দূষণকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বে কিছু সরকার আছে, যারা দূষণকারীদের পক্ষে কথা বলে। ধনী ব্যক্তিরা সমস্যা তৈরি করছে এবং দরিদ্র মানুষ তার পরিণাম ভোগ করছে। জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যে কীভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের জলবায়ু সংকটের মূল চালক। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ, জবাবদিহি ও পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সুন্দর পৃথীবির জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের দায়িত্বের সঙ্গে অর্থায়ন করতে বলি। আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি থেকে সরে এসে বিকল্প টেকসই রুটের জন্য তা কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা ভালো যে সরকার নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য যদি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাস, তাহলে আমাদেরও একটি হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক পরিচালক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত বলেন, আমাদের বাসযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংকগুলো টেকসই রেটিং পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন৷ অর্থ যেমন জলবায়ু সংকটে ইন্ধন জোগাচ্ছে, তেমনি নিয়ন্ত্রকদের উচিত টেকসই ও নবায়নযোগ্য বিনিয়োগের দিকে ব্যাংকগুলোকে ধাবিত করা।
প্যানেল আলোচনায় আনোয়ার ফারুক, সাবেক সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার; শুভাশীষ বড়ুয়া, হেড অব ইমপ্যাক্ট বিজনেস, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ; ড. আতিক রহমান, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ; সামিয়া চৌধুরী, সিইও, এমটিবি ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য বিশিষ্ট আলচকরা বক্তব্য রাখেন।
প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোকে অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের জন্য প্রকল্প এবং করপোরেট অর্থায়ন বন্ধ করার এবং অন্যান্য সব জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ক্ষতিকারক বাণিজ্যিক কৃষি কার্যক্রমের অর্থায়ন দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
এতে আরোও সুপারিশ করা হয় যে- ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই কমিউনিটির অধিকার রক্ষার জন্য উপযোগী পলিসি গ্রহণ করতে হবে করতে হবে।
প্রতিবেদনে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণে অর্থায়ন বন্ধ করতে জাতীয় ও আঞ্চলিক সরকারকে অবশ্যই ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়।
পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে অধিক বিনিয়োগ ও গুরত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ১৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন: নসরুল
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা।
তারা বর্ধিত অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসডিজি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের আগে শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সামিট-২০২৩’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই আহ্বান জানান।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহাম্মদ।
ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এসডিজির প্যারিস চুক্তি এবং বর্ধিত অর্থায়ন, প্রযুক্তি বিনিময় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ন্যায্য রূপান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সংহতির জন্য ‘বৈশ্বিক পুনঃপ্রতিশ্রুতি’ করার জন্য একটি জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন।
মন্ত্রী মোমেন বলেন, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর ৬ দশমিক ৬ লাখ বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত ও চাকরি হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তারা এই ধরনের বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে ধনী দেশগুলোর ত্রুটির কারণে যেগুলো বিপুল গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টি করে’।
কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.৪৭ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।
তাই অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো বাংলাদেশও চায় ধনী দেশগুলোর বোঝা ভাগাভাগি করুক।
এসডিজির ১৭ লক্ষ্য অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলো এসডিজি অর্জনের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি দেবে।
উন্নত দেশগুলো তাদের জিডিপির ০.৭ শতাংশ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু মাত্র ছয়টি দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে।
মোমেন বলেন, অর্থ ও প্রযুক্তি ছাড়া এসডিজি আদৌ অর্জন করা সম্ভব নয়।
আমিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত এবং শরণার্থী সংকট এসডিজিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে।
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সবুজ প্রযুক্তিতে মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্যের রূপান্তরে প্রচুর বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
বিএনপির অপপ্রচারের রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে দিচ্ছে: বক্তারা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য, নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য এবং যেকোনও উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য বিএনপি ক্রমাগত মিথ্যাচারের রাজনীতি করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একটি আলোচনাসভার বক্তারা।
বিএনপির মিথ্যাচার শুধু দেশের গণ্ডির মধ্যেই নয়, দেশের বাইরেও ছড়িয়েছে এবং বিদেশি দূতাবাস এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের নিয়ে মিথ্যাচার করতেও ছাড়ছে না তারা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েই শুধু মিথ্যাচার নয়, বিএনপি নামক দলের উত্থান, জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হওয়া এমনকি পরবর্তীতে বিএনপির গঠণতন্ত্র পযন্ত সংশোধনেও অজস্র মিথ্যাচার লুকিয়ে রয়েছে বলে আলোচনা সভায় উঠে আসে।
শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘রাজনীতির সাতকাহন: বিএনপির রাজনীতি মিথ্যাচারের পর্ব-১’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা।
আওয়ামী লীগের ভেরাফায়েড ফেসবুক থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত এই ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম।
সঞ্চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যার পর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রেসক্রিপশনে যে দল জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং যার জন্মদাতা ছিলেন স্বৈরাচারি জিয়াউর রহমান। সেই বিএনপিই মিথ্যাচারের রাজনীতি এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন যে, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মিথ্যাচারের রাজনীতির জনক গোয়েবলসও হয়তো আজকে লজ্জা পেতেন বিএনপির এই মিথ্যাচারের সামনে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর সাঁজোয়া যান চলে আসছে। চারিদিকে গুলি হচ্ছে। সেইসময় বঙ্গবন্ধু ধীরস্থিরভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবার কাছে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার খবর পাঠিয়ে দিলেন ওই রাতে যেসময় ট্যাংকের গোলাবর্ষণ হচ্ছে, তার বাড়ির দোড়গোড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী পৌঁছে গেছে। সেই রাতে চট্টগ্রামে খবর পৌঁছে গেছে, সেই রাতে গোটা বিশ্বে খবর চলে গেছে। সেই রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় পরেরদিন খবর ছাপা হয়ে গেছে। সেই স্বাধীনতার ঘোষণায় মানুষ কিন্তু প্রতিরোধে নেমে গেলো।’
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যে দল পরবর্তীতে মিথ্যাচার করতে পারে, সেই মিথ্যাচার তারা করে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার জন্যে। সেই মিথ্যাচার তারা করে, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই স্মৃতি ভুলিয়ে দেয়ার জন্যে।
তিনি বলেন, ‘সেই পাকিস্তানি অপশক্তি, ৫১ বছর ধরেই কিন্তু তারা যে ভুল করেছে, তারা যে অপরাধ করেছে, শুধু যে বাংলাদেশের মানুষের সাথে নয় গোটা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে, সেটাকেই আড়াল করতে চায়। সেই মিথ্যাচারের রাজনীতি কিন্তু এখনো চলছে।’
সম্প্রতি জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের ব্রিফিং নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে। এর আগে ভারতের বিজেপি প্রধান অমিত শাহের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ নিয়ে নিয়েও মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল। শুধু বাংলাদেশ না দেশের বাইরে এসব মিথ্যাচারের প্রসঙ্গ তোলেন উপস্থাপক।
বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ, ছয়জন কংগ্রেসম্যানের সাক্ষর জাল করা, নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ এবং বিএনপির নেতার সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের কথা উল্লেখ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, বিএনপি চায় যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে, যেমনটা তারা গিয়েছিল। এই যেনতেনটা হলো অসাংবিধানিক উপায়ে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, এই বাইরে কীভাবে যাওয়া যায় এটাই বিএনপির মূলমন্ত্র। জিয়াউর রহমান যে প্রক্রিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলেন সেটাও বেআইনি ছিলো। সে কারনে পঞ্চম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমান ও তার সহযোগীদের বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহী, তস্কর, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। এবং ক্ষমতা দখলের দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সকল কৃতকর্মকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: অপরাজনীতির চর্চার কারণে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত প্রশ্নবিদ্ধ: কাদের