বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য, নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য এবং যেকোনও উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য বিএনপি ক্রমাগত মিথ্যাচারের রাজনীতি করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একটি আলোচনাসভার বক্তারা।
বিএনপির মিথ্যাচার শুধু দেশের গণ্ডির মধ্যেই নয়, দেশের বাইরেও ছড়িয়েছে এবং বিদেশি দূতাবাস এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের নিয়ে মিথ্যাচার করতেও ছাড়ছে না তারা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েই শুধু মিথ্যাচার নয়, বিএনপি নামক দলের উত্থান, জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হওয়া এমনকি পরবর্তীতে বিএনপির গঠণতন্ত্র পযন্ত সংশোধনেও অজস্র মিথ্যাচার লুকিয়ে রয়েছে বলে আলোচনা সভায় উঠে আসে।
শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘রাজনীতির সাতকাহন: বিএনপির রাজনীতি মিথ্যাচারের পর্ব-১’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা।
আওয়ামী লীগের ভেরাফায়েড ফেসবুক থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত এই ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক শ.ম রেজাউল করিম।
সঞ্চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারের হত্যার পর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রেসক্রিপশনে যে দল জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং যার জন্মদাতা ছিলেন স্বৈরাচারি জিয়াউর রহমান। সেই বিএনপিই মিথ্যাচারের রাজনীতি এমন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন যে, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, মিথ্যাচারের রাজনীতির জনক গোয়েবলসও হয়তো আজকে লজ্জা পেতেন বিএনপির এই মিথ্যাচারের সামনে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাশগুপ্ত ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর সাঁজোয়া যান চলে আসছে। চারিদিকে গুলি হচ্ছে। সেইসময় বঙ্গবন্ধু ধীরস্থিরভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবার কাছে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণার খবর পাঠিয়ে দিলেন ওই রাতে যেসময় ট্যাংকের গোলাবর্ষণ হচ্ছে, তার বাড়ির দোড়গোড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী পৌঁছে গেছে। সেই রাতে চট্টগ্রামে খবর পৌঁছে গেছে, সেই রাতে গোটা বিশ্বে খবর চলে গেছে। সেই রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় পরেরদিন খবর ছাপা হয়ে গেছে। সেই স্বাধীনতার ঘোষণায় মানুষ কিন্তু প্রতিরোধে নেমে গেলো।’
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যে দল পরবর্তীতে মিথ্যাচার করতে পারে, সেই মিথ্যাচার তারা করে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার জন্যে। সেই মিথ্যাচার তারা করে, বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই স্মৃতি ভুলিয়ে দেয়ার জন্যে।
তিনি বলেন, ‘সেই পাকিস্তানি অপশক্তি, ৫১ বছর ধরেই কিন্তু তারা যে ভুল করেছে, তারা যে অপরাধ করেছে, শুধু যে বাংলাদেশের মানুষের সাথে নয় গোটা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে, সেটাকেই আড়াল করতে চায়। সেই মিথ্যাচারের রাজনীতি কিন্তু এখনো চলছে।’
সম্প্রতি জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের ব্রিফিং নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলা হয়েছে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে। এর আগে ভারতের বিজেপি প্রধান অমিত শাহের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ নিয়ে নিয়েও মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল। শুধু বাংলাদেশ না দেশের বাইরে এসব মিথ্যাচারের প্রসঙ্গ তোলেন উপস্থাপক।
বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ, ছয়জন কংগ্রেসম্যানের সাক্ষর জাল করা, নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ এবং বিএনপির নেতার সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচারের কথা উল্লেখ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, বিএনপি চায় যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে, যেমনটা তারা গিয়েছিল। এই যেনতেনটা হলো অসাংবিধানিক উপায়ে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, এই বাইরে কীভাবে যাওয়া যায় এটাই বিএনপির মূলমন্ত্র। জিয়াউর রহমান যে প্রক্রিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলেন সেটাও বেআইনি ছিলো। সে কারনে পঞ্চম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমান ও তার সহযোগীদের বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহী, তস্কর, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। এবং ক্ষমতা দখলের দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সকল কৃতকর্মকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন।
আরও পড়ুন: অপরাজনীতির চর্চার কারণে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত প্রশ্নবিদ্ধ: কাদের