সুইস রাষ্ট্রদূত
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ আলোচনা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেংগলি।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: শ্রম আইন সংশোধনে আরও আলোচনার পরামর্শ দিয়েছে আইএলও: আইনমন্ত্রী
রাষ্ট্রদূত রেংগলি অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
তিনি রোহিঙ্গা মানবিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতায় সুইজারল্যান্ডের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
একটি নির্ভরযোগ্য এবং উদ্ভাবনী উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে সুইজারল্যান্ডের ভূমিকার উপর জোর দেন রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, ভালো ব্যবসায়িক অনুশীলন, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজের মতো মূল সর্বজনীন নীতিগুলো প্রচার করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪৫তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একযোগে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে: জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার: বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে হাইকোর্টে তলব
সুইস রাষ্ট্রদূতের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দাখিল করা এফিডেভিট ইন কমপ্লাইয়েন্সের সঙ্গে যুক্ত করা এক পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে কারও কোন নাম, ঠিকানা ও পদবি না থাকায় বাংলাদেশ ফাইন্যানসিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই তলব আদেশ দেন। বুধবার সকাল ১১ টায় আদালতে হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাসকে এবিষয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদেশ প্রদানকালে আদালত বলেন, ‘নাম পদবি ছাড়া এভাবে প্রতিবেদন দেয়াটা যেন ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’র মত একটা বিষয়। এত ভয় কেন? নাম পদবি দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেটি প্রোপার ওয়েতে দাখিল করা হয়নি। কমপ্লায়েন্সের মধ্যে কারও কোন স্বাক্ষর নেই, কে দাখিল করেছে তা উল্লেখ নেই। এ কারণে আদালত অত্যন্ত মনোক্ষুন্ন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বক্তব্য জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি এটি বিএফআইইউ’র উদাসীনতা। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে বিএফআইইউ’র প্রধানকে তলব করেছেন।’
আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
আরও পড়ুন: অবৈধ স্থাপনা: কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্টে তলব
এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।
এরপর ১১ আগস্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সুই ব্যাংকের কাছে পাচারকারীদেও তথ্য চাওয়া হয়েছিল কিনা সে ব্যাপাওে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পদক্ষেপ জানতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ আগস্ট বিএফআইইউকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে দাখিল করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গত রবিবার সকালে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা।
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ অন্যান্য দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)।
২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউ’র সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ওই একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন ইএসডব্লিউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে অনুরোধ জানানো হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৩ বার তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।
শুনানিকালে দেখা যায় এফিডেভিটের ভেতরে একটি প্রতিবেদনে কারও নাম, স্বাক্ষর, ঠিকানা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিদের অব্যাহতি, দুদকের আইওকে হাইকোর্টে তলব
সন্তানদের জবানবন্দি রেকর্ড: বাবুলের ভাই ও মাগুরার সমাজসেবা কর্মকর্তাকে হাইকোর্টের তলব
অর্থ পাচার নিয়ে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিব্রতকর: হাইকোর্ট
সুইস ব্যাংকের কাছে অর্থ জমা নিয়ে বাংলাদেশ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের এমন বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়ে সরকার নির্দিষ্ট তথ্য চায়নি বলে সুইস রাষ্ট্রদূতের দেয়া বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে সুইস ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং চেয়েও তা পাওয়া যায়নি বলে জানানোর পর আদালত এই মন্তব্য করেন।
রবিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মন্তব্য করে বলেছেন, সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে থাকা তথ্য হলফনামা আকারে আদালতে উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী দিন রাখলাম। একপর্যায়ে আদালত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে তাদের আজকের উপস্থাপিত বক্তব্য এফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে এই বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
আরও পড়ুন: সুইস ব্যাংকের কাছে ৬৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশ
এর আগে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সুইস রাষ্ট্রদূতের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়ার আবেদন করে রবিবার হাইকোর্টকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দুদক ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২’এবং‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ ’এর বিধানাবলীর আলোকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে নির্দিষ্ট ছক মোতাবেক অধিযাচনপত্র পাঠায়। এর আলোকে বিএফআইইউ সংশিষ্ট দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে।’
আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, দুদক ২০১৪ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত তিনটি অনুসন্ধান/তদন্ত সংক্রান্তে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউ’কে অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ দুদককে জানায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তির বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে যে ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এছাড়া অন্য দুটি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ থেকে এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান দুদক আইনজীবী।
হাইকোর্টকে তিনি আরও বলেন, ‘বিএফআইইউ বিদেশি ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে যে তথ্য পাঠায়, তা Egmont Charter এর শর্তানুযায়ী গোপনীয় এবং কেবল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উক্ত তথ্য আলামত হিসেবে কোনো বিচারিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায় না।’
রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক হাইকোর্টকে বলেন, ‘উনি (সুইস রাষ্ট্রদূত) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ওনার বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এবিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।’
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেন, ‘২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ওই একজনের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়েছে বিএফআইইউ।’
‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা সম্পর্কে সরকার নির্দিষ্ট তথ্য চায়নি’ সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পড়েছেন জানিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে বাংলাদেশ সরকার সুইস ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য না চাওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে রবিবারের মধ্যে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। সে অনুযায়ী দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ রবিবার আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: সুইস ব্যাংকের কাছে তথ্য না চাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট
গত বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত ডিকাব টকে সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবির ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরে বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুপক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব এবং সেটি তৈরি করতে হবে। এটি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।’
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অর্থের পরিমাণ ‘পুরোপুরি অনুমাননির্ভর’: সুইস রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ‘সম্পূর্ণরূপে অনুমাননির্ভর’ এবং গণমাধ্যম ও অন্যান্য প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কোনো উপসংহারে আসা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড অবৈধ অর্থ রাখা্র জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয়।’
সুইস দূত বলেন, সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত আমানতের পরিমাণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’- অনুষ্ঠানে এ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনুদ্দিন।
আরও পড়ুন: সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য অংশীদার: রাষ্ট্রদূত চুয়ার্ড
ডিকাব সদস্যরা এবং রাষ্ট্রদূত শুয়ার্ড জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে তথ্য পাওয়া গেছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয়েছে গত বছর। বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এসব অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮৭১ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (সিএইচএফ) (৮৩.১৮ বিলিয়ন টাকা) হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৬৩ মিলিয়ন সিএইচএফ।
এ সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, সুইজারল্যান্ড সত্যিই আন্তর্জাতিক মান বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, এই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য তাদের দেশের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও চুক্তি হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে নির্দিষ্ট করে কারো সম্পর্কে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা নিয়ে কোনো তথ্য চায়নি।
তিনি বলেন, তারা অবশ্যই অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করে না এবং সুইস ব্যাংক ব্যবস্থা সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত সিস্টেম।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই সর্বদা অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে, তবে সুইজারল্যান্ড সরকার সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধন করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বেইজিং
এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র: সিসন
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে ‘বিশাল সম্ভাবনা’ দেখছেন সুইস রাষ্ট্রদূত
জ্ঞানের অংশীদারিত্বের ওপর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণে ‘বিশাল সম্ভাবনা’ দেখছে সুইজারল্যান্ড।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাগ করে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ন্যাথালি চুয়ার্ড বলেছেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হলো একটি ডোমেইন যা ধীরে ধীরে বাছাই করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে এই ক্ষেত্রে আরও বেশি ফোকাস করতে চাই।’
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও সুইস রাষ্ট্রদূত আরও দুটি উপাদান উল্লেখ করেছেন-উন্নয়ন ও স্থায়িত্ব, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ ও বহু পাক্ষিকতাবাদ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সম্পর্ক নিয়ে কসমস ডায়ালগের প্রিমিয়ার বুধবার
কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপে মূল বক্তব্যে সুইস রাষ্ট্রদূত দুই দেশ কীভাবে একটি উন্নত ভবিষ্যত এবং উদ্ভাবনের দিকে একসাথে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যেতে পারে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সম্পর্ক: ভবিষ্যতের জন্য পূর্বাভাস’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে কসমস গ্রুপের জনহিতকর শাখা কসমস ফাউন্ডেশন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল এই সংলাপের প্রিমিয়ার হবে।
সংলাপে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাহার খান।
অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কূটনীতিক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
আলোচক প্যানেলে ছিলেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আনিস এ খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দিল্লির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নাহার খান বলেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা, সেইসাথে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিনিময়সহ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃহত্তর ও গভীরতর হয়েছে।
খান বলেন, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অবদান রাখছে।
নতুন সহযোগিতা কর্মসূচীটি জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সাথে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের টেকসই এলডিসি উত্তরণ,সমৃদ্ধ, ন্যায্য ও স্থিতিস্থাপক সমাজকে উন্নীত করা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অবদান রাখার সামগ্রিক লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন: জয়শঙ্কর সুখবর নিয়ে আসতে পারেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী