দোয়ারাবাজার
দোয়ারাবাজারে শুল্কস্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে শুল্কস্টেশন দিয়ে চেলা রুটে চুনাপাথর আমদানি গত সোমবার থেকে বন্ধ রয়েছে।
চলতি মাসের শেষ দিকে পুরোদমে চুনাপাথর আমদানি শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের আইনি নানা জটিলতার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চেলা রুটে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় শতাধিক ছোট-বড় ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েক হাজার বারকি শ্রমিক।
গত ২৫ জুলাই থেকে চেলা রুটে চুনাপাথর রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমদানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
চেলা শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা যায়, বিগত অর্থবছরে চেলা রুটে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আদায় করা হয় দুই কোটির ওপরে।
চুনাপাথর আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক না হলে এবার সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
ছাতক লাইম স্টোন ইম্পোটার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সেক্রেটারি অরুন বাবু ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আইনি জটিলতার কারণে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় এখানে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার বারকি শ্রমিক। ব্যবসায়ীরাও ব্যাংকের লোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চেলা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাদির বলেন, মূলত ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের আইনি নানান জটিলতার কারণে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়েছে। চুনাপাথর আমদানিতে আমাদের কোনো জটিলতা নেই।
তিনি বলেন, ভারতীয় ব্যাবসায়ীদের নানা জটিলতায় কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। আগামী ১৮ আগস্ট কোর্টে রায় না পেলে ভারত থেকে চুনাপাথর রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় চাল আমদানি শুরু
১০ মাস পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে। নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুরমা, লক্ষ্মীপুর, বগুলা, বাংলাবাজার, নরসিংপুর ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘরের আঙিনা ও রাস্তাঘাট থেকে প্রথম দফা বন্যার পানি এখনো সরেনি। সেই রেশে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাওর, মাঠঘাট পানিতে একাকার হয়ে আছে। অনেকের স্যানিটেশন ও টিউবওয়েল ডুবে পেটের পীড়া, চর্মরোগ ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের উপসর্গ এখনও পুরোদমে নির্মুল হয়নি। প্রথম দফার বন্যাতে উপজেলা সদরের সঙ্গে সুরমা, বগুলা ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।
আরও পড়ুন: বন্যায় সুনামগঞ্জে শত কোটি টাকার ক্ষতি
এ ছাড়া আউশ ফসল, আমনের বীজতলা ও সবজি খেতসহ অধিকাংশ মাছের পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। তবুও এক বুক আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ভুক্তভোগী কৃষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। সাহস করে পুকুরে আবারও মাছের পোনা ছাড়েন, তড়িঘড়ি করে বীজতলায় বীজ বুনেন। কিন্তু বিধি বাম! প্রথম দফা বন্যার রেশ না কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় দফা বন্যার অশনি সংকেতে আবারও চোখে সর্ষেফুল দেখছেন তারা।
দোয়ারাবাজারে কমেছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমাসহ মেঘালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদী-নালা, হাওর, খাল-বিলের পানি কচ্ছপ গতিতে হ্রাস পেলেও নিম্নাঞ্চলে রয়েছে অপরিবর্তিত। উপজেলার সুরমা, বগুলা, লক্ষ্মীপুর, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়ন থেকে ধীর গতিতে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে।
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণ বন্ধ হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফসলি জমি ও বীজতলা চাষাবাদের উপযোগী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন কৃষকরা। তবে দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানির স্থিতিশীলতায় আমনসহ আগামী মৌসুমি ফসল উৎপাদন অনিশ্চিতের আশংকা করছেন কৃষকরা। ওইসব ইউনিয়নের অনেক বাড়িঘর এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে শূণ্য বাড়িঘর ফেলে অনেক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছেন। কখন যে আপন ঠিকানায় ফিরে আসবে তা অনিশ্চিত। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় এমনিতেই পরিবার পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে বিশেষত চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন ওই এলাকাবাসী। খাদ্য সংকটে প্লাবিত এলাকার হালের বলদসহ গবাদি পশু-পাখিরা আহাজারি করছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি, গ্রামাঞ্চলে অপরিবর্তিত
এদিকে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বানভাসি অসহায় পরিবারে সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকলেও চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। অচিরেই দোয়ারাবাজারকে বন্যা দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী এবং বন্যা পরবর্তী কৃষি ও আবাসন পূনর্বাসন ও বিনাসুদে কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। এদিকে, জেলা ও উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়কগুলো অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে অনেক ব্রিজ-কালভার্ট ভেসে নেয়াসহ অধিকাংশ স্থানে ভাঙন ও ফাঁটল সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া ইরি-বোরো, আউশ, আমনের বীজতলা ও সবজি খেত বিনষ্ট হওয়াতে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলাবাসী। জমি থেকে পানি না নামায় আমনসহ অগ্রহায়ণী মৌসুমী ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, বর্তমানে সুরমাসহ সকল নদনদী ও হাওর খাল-বিলের পানি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। উপদ্রুত এলাকায় বানভাসি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে হাহাকার