অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা
ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৫ সাংবাদিক
অভিবাসন খাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এবার ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৫ জন সাংবাদিক।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’র সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার যাত্রা শুরু
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি অনুবিভাগের প্রধান আয়েশা হক ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে ব্র্যাক প্রথমবারের মতো মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান শুরু করে। এ বছর অষ্টমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হলো।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান।
এবারের বিচারকমণ্ডলীর সদস্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মির্জা শাকিলা দিল হাছিন ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের প্রবাসীরা প্রতি বছর অন্তত ২২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠায় যেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি। জমিজমা বিক্রি করে, নিজের টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে কঠোর পরিশ্রম তারা দেশে যে টাকা পাঠায় এটাই দেশপ্রেমের বড় উদাহরণ। ডলার রিজার্ভের এই সংকটময় সময়ে আমরা সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু অভিবাসীরা তো শুধু অর্থ পাঠানোর যন্ত্র না।
মাহফুজ আনাম বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে আমাদের সবার এই খাতকে দেখতে হবে। অভিবাসন খাতে গণমাধ্যমের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই খাতের সমস্যাগুলো ধরে ধরে গভীরে যেতে হবে। কেন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার খরচ নেপাল বা ভারতের চেয়ে এত বেশি? কেন আমরা আরও বেশি দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারছি না? এই খাতে সরকারের বিনিয়োগ কত? প্রবাসীদের কল্যাণের টাকা কোথায় কীভবে খরচ হচ্ছে? কেন সরকার অভিবাসন খাতের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না? এসব নিয়ে গণমাধ্যমের গভীরে গিয়ে কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতার মাধ্যমে এসব বিষয়ে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। বিশেষ করে অভিবাসন খরচ কমাতে পারলে, অদক্ষ কর্মীকে দক্ষ করে বিদেশ পাঠাতে পারলে আরও বেশি প্রবাসী আয় আসবে। পাশাপাশি যারা বিদেশ থেকে ফেরত আসছে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগানো উচিত।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও নীতি অনুবিভাগের প্রধান ও যুগ্ম সচিব আয়েশা হক বলেন, অভিবাসন খাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে সমাধানের চেষ্টা করে। পাশাপাশি দক্ষ কর্মী তৈরি ও নতুন শ্রমবাজার তৈরির কাজ করছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই।
আরও পড়ুন: ওয়ালটন-ডিআরইউ মিডিয়া ফুটবল-২০২৩ শুরু
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, আজকে রিজার্ভের সংকটের কারণে সবাই প্রবাসী আয় নিয়ে কথা বলছে, প্রবাসীদের নিয়ে কথা বলছে। তবে আমাদের অভিবাসী কর্মীদের অভিজ্ঞতাগুলোও বুঝতে হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। এই যে, ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় আমাদের নির্মাণ শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রবাসে কাজ করেন কতজন সেটা বুঝতে পারি? অভিবাসীদের স্বার্থ ও অধিকারের বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। প্রবাসীদের গল্পগুলোকে গণমাধ্যম আরও কার্যকরভাবে তুলে আনতে পারে।
আসিফ সালেহ বলেন, কর্মীদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানোর জন্যে আমরা কিছু মডেল তৈরি করার চেষ্টা করছি। সিঙ্গাপুর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা কম খরচে দক্ষ কর্মীদের পাঠানোর একটা চেষ্টা করছি। সব জেলা থেকে সমানভাবে বিদেশে যাওয়া যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ যে জেলাগুলো থেকে মানুষ কম বিদেশ যাচ্ছে সেই জেলাগুলো থেকে যেন আরও কর্মী বিদেশে যেতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ বছর সংবাদপত্র জাতীয় বিভাগে দৈনিক সমকালের রাজিব আহাম্মদ প্রথম পুরস্কার পান। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মো. মাসুম বিল্লাহ দ্বিতীয় এবং দৈনিক বাংলার জেসমিন আকতার তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
সংবাদপত্র আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হন একুশে পত্রিকার শরীফুল ইসলাম, দ্বিতীয় দৈনিক চট্টগ্রাম খবরের ইফতেখায়রুল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন দৈনিক জৈন্তা বার্তার শাকিলা ববি।
টেলিভিশন নিউজ বিভাগে যমুনা টেলিভিশনের আহমেদ রেজা প্রথম স্থান অধিকার করেন। যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ দলের দুই অনুসন্ধানী সংবাদিক এনামুল হক ও মো. নাজমুল সাইদ, এবং তৃতীয় হয়েছেন নিউজ ২৪-এর খন্দকার বদরুল আলম।
রেডিও বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা ও রেডিও তেহরানের এম এম বাদশা।
অনলাইন সংবাদপত্র বিভাগে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন জাগো নিউজের জাহাঙ্গীর আলম। দ্বিতীয় হয়েছেন ঢাকা পোস্টের আদনান রহমান ও তৃতীয় ঢাকা মেইলের মো. ইমরুল কায়েস।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে বাংলা টিভি। বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, স্বীকৃতির সনদ ও পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক পেয়েছেন।
অনুষ্ঠান শেষে অভিবাসন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে ব্র্যাকের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এতে স্বাক্ষর করেন।
এই সমঝোতার আওতায় নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত, মানবপাচার প্রতিরোধ, ও বিদেশফেরতদের পুনরেকত্রীকরণে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি অভিবাসীদের কাজের নানা ধরনের স্বীকৃতির জন্য কাজ করবে ব্র্যাক ও ডেইলি স্টার।
আরও পড়ুন: ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে মিডিয়া প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
১১ মাস আগে
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা তুলে আনে মানুষের না বলা কাহিনী: তথ্যমন্ত্রী
সমাজের সুষ্ঠু বিকাশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'সমাজ যাদের দিকে তাকানোর সুযোগ পায় না, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সেই মানুষের না বলা কাহিনী তুলে ধরে।'
সোমবার রাতে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১১ জন সাংবাদিককে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য প্রত্যেককে আড়াই লাখ টাকা, মফস্বল সাংবাদিকতায় ৬৪ জন প্রবীণ সাংবাদিক প্রত্যেককে এক লাখ টাকা ও সকলকে সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়।
তথ্যমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন ও বসুন্ধরা গ্রুপকে বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই ধরনের পুরস্কার প্রদান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও সার্বিকভাবে সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করবে।
হাছান বলেন, সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যা সমাজকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করতে সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দিতে এবং অবহেলিত দিকগুলোতে সমাজের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে যেভাবে ভূমিকা রাখে, তা অন্য কোনো পেশার মানুষ পারে না।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিন্ন মাত্রার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ ধরনের সাংবাদিকতায় ঝুঁকি থাকে, জীবন বিপন্ন হতে পারে। সেসব অতিক্রম করে সাংবাদিককে কাজ করতে হয়। পথের পাশের বিপন্ন মানুষগুলোর জীবনের যে গল্প, যে বেদনা, সেটিও তুলে আনতে পারে অনুসন্ধানী সাংবাদিককেই।
গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে গণমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ নিহিত উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'সেকারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৩ বছরে সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিটি ক্ষেত্র যুগান্তকারী বিকাশ লাভ করেছে। একইসঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও আইনবিরোধী চর্চা কমে এসেছে।'
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিতে আমরা বিশ্বাস করি, লালন করি। সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে, কাজকে বিশুদ্ধ করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তার বক্তব্যে অতিথিদেরকে উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সায়েম সোবহান আনভীর পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান এবং পুরস্কারের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা বুবলির উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে ডেইলি স্টারের আহমাদ ইশতিয়াক, মাছরাঙা টেলিভিশনের কাওসার সোহেলী, জাগো নিউজ ২৪.কম-এর সালাহ উদ্দিন জসিম, অপরাধ ও দুর্নীতি ক্যাটাগরিতে দেশ রূপান্তরের শোয়েব চৌধুরী, জিটিভির জান্নাতুল ফেরদৌসী, নিউজ বাংলা২৪.কম-এর জেসমিন পাপড়ি, নারী ও শিশু ক্যাটাগরিতে সমকালের রাজীব আহাম্মদ, আনন্দ টিভির শওকত সাগর, ঢাকা পোস্টের আদনান রহমান, অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে মাছরাঙা টেলিভিশনের মাজাহারুল ইসলাম এবং আলোকচিত্রে প্রথম আলোর দীপু মালাকার পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পুরস্কারের জুরিবোর্ডে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক দেশ রূপান্তর সম্পাদক অমিত হাবিব, লেখক নাসির আলী মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার ও সাংবাদিক জুলফিকার আলি মানিক।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ উসকানি দেয়নি, দিয়েছে ছাত্রদল: তথ্যমন্ত্রী
পদ্মা সেতু হওয়ার পর ড. ইউনুসদের মুখে কথা নেই: তথ্যমন্ত্রী
মানুষের মুক্তি আর সাম্যের জয়গানে স্বতন্ত্র নজরুল: তথ্যমন্ত্রী
২ বছর আগে