এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে করণীয়
এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে কি করবেন ? এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম বুথ আর্থিক লেনদেনের একটি নিরাপদ ও ঝামেলা বিহীন মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরেও প্রগতিশীল এই সেবাটি ব্যবহারের সময় পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটি হলো এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়া। জরুরি ভিত্তিতে টাকা তোলার প্রয়োজন হলে এটিএম মেশিন থেকে কার্ডটি আর বের না হলে চরম বিড়ম্বনায় পড়ে যান গ্রাহকগণ। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার হলে এ অবস্থায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাই এটিএম কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চলুন সেই বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়ার কারণ
পরপর তিনবার ভুল পিন নাম্বার প্রবেশ
গ্রাহকরা তাড়াহুড়ো বা বেখেয়ালে অনেক সময় দ্রুত টাকা তুলতে গিয়ে কার্ডের পিন নাম্বার ভুলে যান। আবার অসাবধানতায় ভুল বাটনে চাপ দিয়ে ভুল পিন নাম্বার প্রবেশ করিয়ে ফেলেন। এটা এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে যে, যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে পরপর তিন বার ভুল পিন নাম্বার বা পাসওয়ার্ড দিলে সিস্টেম সাময়িকভাবে ব্লক হয়ে যায় । আর এটিএম মেশিনের ক্ষেত্রে কার্ডটি আটকে যায়।
আরও পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক জনিত জটিলতা
এই বিষয়টি একদমি সকলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। যন্ত্র মানেই সেখানে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকবে। কার্ড ব্যবহারের সময় এটিএম মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগে ব্যাঘাত ঘটার দরুণ নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর তখন গ্রাহকের দেয়া তথ্যগুলো ঠিকমত কাজ নাও করতে পারে। যার পরিণতিতে কার্ডটি মেশিনের ভেতরে থেকে যায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ কার্ড ব্যবহার
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডগুলো সাধারণত দুই বা তিন বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। মেয়াদ অতিক্রান্ত কার্ড এটিএম-এ বারবার প্রবেশ করালে এটিএম কার্ডটি আটকে দেয়। কিছু মাস্টার কার্ড আছে যেগুলো ব্যবহারের জন্য কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে স্বল্প মেয়াদ নেয়া হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের গিফ্ট কার্ডের ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলে যান যে তার কার্ডের অল্প মেয়াদটি অতিক্রম হয়ে গেছে। এ ধরনের কার্ডের ক্ষেত্রে প্রায়ই কার্ড বের করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
এটিএম সার্ভার সমস্যা
এটিএম কার্ড আটকে যাওয়া এমনকি সরাসরি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যার ক্ষেত্রেও একটি সাধারণ কারণ সার্ভার সংক্রান্ত জটিলতা। সার্ভারের গতি স্বাভাবিকের থেকে কম থাকলে অনেক সময় কার্ড এটিএম মেশিনে আটকে যেতে পারে।
বাহ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কার্ড ব্যবহার
এটিএম কার্ডটি মুলত একটি আয়তাকার পাতলা প্লাস্টিক বা ধাতব টুকরো। সব সময় সঙ্গে থাকায় বিভিন্ন কারণে কার্ডটিতে হাল্কা ফাটল বা কোন এক প্রান্তের দিকে অল্প ভেঙে যেতে পারে। এমন অবস্থা হলে ব্যবহারের সময় কার্ড আটকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
অসমর্থিত কার্ড ব্যবহার
অধিকাংশ এটিএম মেশিন মাস্টার ও ভিসা কার্ড সাপোর্ট করে থাকে। এগুলো ব্যতীত ব্যাংকের অন্য কার্ড এটিএম মেশিন অসমর্থিত হতে পারে। এ ধরনের কার্ড ব্যবহারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়
লেনদেন বাতিলের চেষ্টা ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা
প্রথমেই লেনদেন বাতিলের জন্য ক্যানসেল বাটনে প্রেস করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুরো কার্যকলাপটি সম্পন্ন হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে ছোট ছোট লেনদেনও ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে যায়। এসময় সাথে সাথেই বুথ থেকে বেরিয়ে না এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত। কেননা এমনও হতে পারে যে, সময় বেশি নিলেও টাকা ঠিকই বেরিয়ে আসছে।
আর লেনদেন যদি বাতিল হয়েই যায়, তাহলে সেই অতিরিক্ত সময় পর কার্ডটি বেরিয়ে আসতে পারে। তাই বুথ ত্যাগ করার পূর্বে আর্থিক লেনদেনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরি।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
ঘটনার খুঁটিনাটির রেকর্ড নেয়া
এ অবস্থায় অস্থির না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যার খুটিনাটি লিখে নিতে হবে। কোন ব্যাংকের কার্ড, কার্ডের নাম্বার, মেয়াদ, কোন অ্যাকাউন্টের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তার নাম্বার, ঘটনার সঠিক সময় এবং কার্ড আটকানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত কিভাবে কার্ডটি ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি মনে করে নোট করে ফেলতে হবে।
বুথ কর্মকর্তা ও কাস্টমার কেয়ারে জানানো
সব নোট করা হলে এবার ধীর স্থির ভাবে প্রথমে বুথের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সব জানাতে হবে। প্রায় ক্ষেত্রে কর্মকর্তা সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। সমস্যার সমাধান না হলে তিনি রেজিস্ট্রি খাতায় তা লিপিবদ্ধ করে নিবেন। কর্মকর্তা না থাকলে নিদেনপক্ষে গার্ডকে জানিয়ে রাখতে হবে।
পরিশেষে ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা জানাতে হবে। বিশেষ করে কার্ডের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করতে বলতে হবে। সমস্যাটি চূড়ান্তভাবে সমাধানের জন্য কাস্টমার কেয়ার থেকে সম্ভাব্য সব রকম নির্দেশনা দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য ঢাকার কাছাকাছি সেরা কয়েকটি রিসোর্ট
ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করা
ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের সাথে যোগাযোগ সম্ভ না হলে একমাত্র উপায় হলো ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় চলে যাওয়া। এখানে যে বুথে সমস্যা হয়েছে সেটি আর কার্ডটি যদি একই ব্যাংকের তাহলে কার্ডটি দ্রুত ফিরে পাওয়া যাবে। কিন্তু বুথটি অন্য ব্যাংকের হলে কার্ডটি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় কার্ড প্রতিস্থাপন অর্থাৎ যে ব্যাংকের কার্ড সেখানে যেয়ে নতুন কার্ড-এর আবেদন করাই একমাত্র উপায়।
নতুন কার্ড হাতে পেতে ব্যাংকভেদে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আবেদনের সময় সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র, বর্তমান ঠিকানার যে কোন ইউটিলিটি বিল ও দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকতে হবে।
শেষাংশ
মুলত গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই কার্ড নির্ভর ব্যাংকিং সেবার অবতারণা হয়েছে। এটিএম কার্ডের উপযুক্ত ব্যবহারে এর শতভাগ সুবিধা আদায় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
চলমান এই ট্রেন্ডটির সাথে মানিয়ে নিতে সাবধানতার সাথে এটিএম কার্ডটি বুথে কার্ড প্রবেশ করতে হবে এবং যে কারণগুলোতে কার্ড আটকে যেতে পারে সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। উপরোল্লিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া হলে এটিএম বুথে কার্ড আটকে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। এরপরেও এটিএম বুথে কার্ড আটকে গেলে আতংকিত না হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
২ বছর আগে